ঈমান ও ইসলাম - ১৫ ৫। - TopicsExpress



          

ঈমান ও ইসলাম - ১৫ ৫। ঈমানের পঞ্চম মূলনীতি হলো “শেষ বিচার দিবস (আল-ইয়াওমুল আখির)-এর প্রতি বিশ্বাস”। এটা আরম্ভ হয় কোনো মানুষের মৃত্যু বিদস থেকে এবং এটা কেয়ামত দিবস পর্যন্ত চলতে থাকে। এটাকে শেষ দিবস বলা হয় এ কারণে যে, এর পরে আর কোনো রাত আসবে না; অথবা এ কারণে যে, এটা পৃথিবীর পরে আগমনকারী। এই হাদীসে উল্লিখিত “দিবস”-টি কিন্তু আমাদের জ্ঞাত দিবারাত্রির মতো নয়। এটা কিছু সময়ের প্রতি ইঙ্গিত করে। কেয়ামত কবে হবে তা জ্ঞাত করানো নয়। তথাপি আমাদের প্রিয়নবী (দ:) কেয়ামতের বহু আলামত (লক্ষণ) বর্ণনা করেছেন: হযরত ইমাম আল্ মাহ্দী আগমন করবেন; হযরত ঈসা (আ:) আসমান মতে দামেশকে অবতরণ করবেন, দাজ্জাল আবির্ভূত হবে; ইয়াজুজ ও মা’জুজ সম্প্রদায় সমস্ত পৃথিবীতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করবে। সূর্য পশ্চিম দিকে উদিত হবে, প্রাণ-সংহারী ভূমিকম্পসমূহ সংঘটিত হবে; ধর্মীয় জ্ঞান বিস্মৃত হবে; দুর্নীতি ও বদমায়েশী বৃদ্ধি পাবে; অধার্মিক, দুর্নীতিপরায়ণ, দুশ্চরিত্র লোকেরা শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হবে; আল্লাহতা’লার আজ্ঞাসমূহ বিস্মৃত হবে; সর্বত্র হারাম কাজ সংঘটিত হবে; ইয়ামেন রাজ্যে আগুন দেখা দেবে; সাগর ও পর্বতমালা টুকরো টুকরো হয়ে যাবে; সূর্য ও চাঁদ অন্ধকার হয়ে যাবে; মহাসাগরগুলো একে অপরের সাথে মিশ্রিত হয়ে ফুটন্ত পানি হবে এবং শুকিয়েও যাবে। যে মুসলমান ব্যক্তি পাপ সংঘটন করে, তাকে “ফাসিক” (পাপিষ্ঠ) বলা হয়। ফাসিক এবং সকল অবিশ্বাসী মানুষদেরকে তাদের কবরে মর্মন্তুদ আযাব (শাস্তি) প্রদান করা হবে। এগুলোতে নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করতে হবে। দাফন করার পর মৃতজন একটি অজ্ঞাত জীবনে প্রত্যাবর্তন করবেন এবং শান্তি নয়তো শাস্তি পেতে থাকবেন। একটি হাদীস শরীফে ঘোষিত হয়েছে যে “মুনকার” ও “নকির” নামের দু’জন ফেরেশতা দুইটি অজ্ঞাত, ভয়ংকর মানুষের ছদ্মবেশে মৃতজনের কবরে এসে তাঁকে প্রশ্ন করবেন। কতিপয় উলামার মতানুযায়ী কবরে প্রশ্নগুলো ঈমানের কিছু মূলনীতি সম্পর্কেই করা হবে; আর কতিপয় উলামার মতানুযায়ী সমগ্র ঈমান সম্পর্কেই প্রশ্ন করা হবে। এ কারণেই আমাদের সন্তানদেরকে নিম্নোক্ত প্রশ্নগুলোর জবাব শিক্ষা দেয়া উচিৎ: তোমার রব্ব (আল্লাহ্) কে? তোমার দ্বীন (ধর্ম) কী? তুমি কোন্ নবী (আ:)-এর উম্মত? তোমার পবিত্র ধর্ম গ্রন্থের নাম কী? তোমার কিবলা কী? ঈমান ও এবাদতের (অর্থাৎ, আমলের) ক্ষেত্রে তোমার মযহাবগুলো কী কী? ’তাযকেরাতুল কুরতুবী’ গ্রন্থে লিপিবদ্ধ আছে যে, যারা আহলে সুন্নাতের অন্তর্ভুক্ত নয়, তারা সঠিকভাবে জবাব দিতে সক্ষম হবে না। যাঁরা সঠিক উত্তর দেবেন, তাঁদের কবরগুলো প্রশস্ত হয়ে যাবে এবং বেহেশতের একটি বাতায়ন কবরে খুলে দেয়া হবে। প্রতি সকাল ও সন্ধ্যায় তাঁরা বেহেশতে নিজেদের স্থান দর্শন করবেন, আর ফেরেশতাগণ তাঁদের সেবা করবেন এবং তাঁদেরকে শুভসংবাদ দেবেন। যারা সঠিক জবাব দিতে ব্যর্থ হবে, তাদেরকে এমন কঠোরভাবে লাঠি দ্বারা প্রহার করা হবে যে মানব ও জ্বীন জাতি ছাড়া বাকি সকল সৃষ্টি-ই তাদের আর্তনাদ শুনতে পাবে। তাদের কবরগুলো এতো সংকীর্ণ হয়ে যাবে যে তারা তাদের হাড়গুলোকে এলোমেলোভাবে জড়ানো মনে করবে। দোযখ অভিমুখে একটি ছিদ্র করা হবে। প্রত্যেক সকাল ও সন্ধ্যায় তারা দোযখে তাদের স্থান দেখতে পাবে। পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত তাদেরকে তাদের কবরে চরম শাস্তি প্রদান করা হবে। ইন্তেকালের পরের (আরেকটি) জীবনে বিশ্বাস স্থাপন করা জরুরি। মাটিতে দাফন হবার পর আবারও দেহে আত্মা প্রবেশ করবে এবং শরীর সমেত তা কবর থেকে পুনরুথ্বিত হবে। অতএব, এই সময়টিকেই কেয়ামতের দিন (পুনরুথ্বান দিবস) বলা হয়েছে। সকল জীবিত সৃষ্টি মাহশর স্থানে সমবেত হবে। আমলনামাগুলো তাদের নিজ নিজ সংঘটনকারীদের কাছে উড়ে যাবে। সর্বশক্তিমান আল্লাহতা’লা যিনি আসমান-জমীন, সূর্য-নক্ষত্র ও সকল অণু-কণার স্রষ্টা, তিনি-ই এগুলো সংঘটিত করবেন। আল্লাহতা’লার রাসূল (দ:) বর্ণনা করেছেন যে এগুলো ঘটবে। তিনি যা বলেছেন তা অবশ্যই সত্য। নিশ্চয়ই এগুলোর সব-ই ঘটবে। সালেহ্ (পুণ্যবান) মানুষদের আমলনামা তাঁদের ডান দিক থেকে প্রদান করা হবে। আর ফাসিক (গুণাহ্গার) লোকদের আলমনামা তাদের বাম দিক থেকে প্রদান করা হবে; পেছন দিক থেকেও দেয়া হবে। ভালো হোক বা মন্দ, বড় বা ছোট, প্রকাশ্য বা অপ্রকাশ্য, সব-ই ওই আমলনামায় লিপিবদ্ধ থাকবে। কেরামান কাতেবীন ফেরেশতাগণের অজ্ঞাত আমলগুলোও সেই দিন প্রকাশ হয়ে পড়বে আল্লাহতা’লা কর্তৃক এবং দেহের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ দ্বারা। সেই দিন এ সব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে এবং সবার কাছ থেকেই হিসেব নেয়া হবে। যদি আল্লাহতা’লার ইচ্ছা হয়, তবে প্রতিটি গোপন কর্মই শেষ বিচার দিবসে প্রকাশিত হবে। আসমান ও জমিনে ফেরেশতাগণ কী কাজ করেছেন তার হিসেবও নেয়া হবে। নবী (আ:)-গণ মানুষদের কাছে কীভাবে আল্লাহর আদেশ-নিষেধ ও ধর্ম প্রচার করেছেন, তারও হিসেব নেয়া হবে। আর মানুষেরা কীভাবে এসব আদেশ-নিষেধ কবুল করে তদানুযায়ী আমল করেছে, তারও হিসেব নেয়া হবে। শেষ বিচার দিবসে ঈমানদার যাঁদের কর্ম ও নৈতিকতা সুন্দর হবে, তাঁদেরকে উত্তম পুরস্কার দেয়া হবে। পক্ষান্তরে, যাদের মেজাজ উগ্র ও কর্ম মন্দ হবে, তাদেরকে মর্মন্তুদ শাস্তি প্রদান করা হবে। আল্লাহতা’লা তাঁর ন্যায়বিচারের খাতিরে কিছু মুসলমানকে তাদের ছোট-খাটো গুণাহর জন্যে শাস্তি দেবেন; পক্ষান্তরে, তাঁর দয়ার খাতিরে তিনি যাদের ইচ্ছা করেন, সেই সব কবীরা ও সগীরা গুণাহ্কারী মুসলমানকে ক্ষমা করে দেবেন। কুফর ও শেরক বাদ দিয়ে বাকি সব গুণাহ্ তিনি মাফ করে দিতে পারেন। তাঁর ইচ্ছা হলে ছোট খাটো গুণাহর জন্যেও তিনি শাস্তি দেবেন। তিনি ঘোষণা করেছেন যে তিনি কখনোই কুফর (অবিশ্বাস) ও শেরক (মূর্তি পূজা)-কে ক্ষমা করবেন না। কেতাব (ঐশীগ্রন্থ)-সম্পন্ন কিংবা কেতাববিহীন কাফেররা, অর্থাৎ, যারা সমগ্র সৃষ্টিজগতের জন্যে রাসূলুল্লাহ্ (দ:)-এর পয়গম্বর হওয়াকে অথবা তাঁর আনীত কোনো একটি বিধানকে বিশ্বাস করে না, তারা জাহান্নামে চিরকাল শাস্তি পাবে। (চলবে) [Bengali translation of Mawlana Ziyaa-ud-Deen Khalid al-Baghdadis Online book Iman and Islam (Hakikat Kitabevi, Turkey); translated by Kazi Saifuddin Hossain; part 15] মূল: মওলানা খালেদ আল-বাগদাদী (রহ:) অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
Posted on: Sun, 14 Sep 2014 00:24:16 +0000

Trending Topics




© 2015