কাল শনিবার মনসা - TopicsExpress



          

কাল শনিবার মনসা পূজা। পূজাকে সামনে রেখে উত্সবের হাওয়া বইছে চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার শাহমীরপুর গ্রামের সনাতনপাড়ায়। বাড়িতে বাড়িতে খোল-করতাল বাজছে। ভজন, কীর্তনের সুরে মা মনসাকে বরণ করে নেয়ার প্রস্তুতি চলছে জোরেশোরে। সারা পাড়ায় উত্সবের আমেজ। ব্যতিক্রম শুধু একটি বাড়ি। মনসা পূজায় এ বাড়িতে কোনো আনন্দ হবে না। কারণ এ বাড়ির সবচেয়ে ছোট মেয়েটি গত শনিবার মারা গেছে। মেয়েটির নাম প্রীতি দাশ (২৪). স্বামীর সাথে রাতের ট্রেনে ঢাকায় যাচ্ছিল সে। ট্রেনটি চট্টগ্রাম স্টেশন ছেড়ে ভাটিয়ারি অতিক্রম করার সময় বাইরে থেকে দুর্বৃত্তরা পাথর ছুঁড়ে মারে। ট্রেনের জানালা ভেঙে পাথর লাগে প্রীতির মাথায়। গুরুতর আহত হয়ে ঘটনাস্থলেই মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে অসাধারণ প্রতিভাধর এ মেয়েটি। মনসা পূজার জন্য গতকাল বৃহস্পতিবার স্বামীকে নিয়ে আবার চট্টগ্রামে আসার কথা ছিল তার। কিন্তু প্রীতি আর আসবে না। কিছু অবিবেচক মানুষের খামখেয়ালিপনায় সে চলে গেছে না ফেরার দেশে।চার ছেলের পর সৃষ্টিকর্তার কাছে একটি মেয়ে সন্তানের জন্য অনেক প্রার্থনা করেছিলেন দিলীপ কুমার দাশ ও সবিতা দাশ দম্পতি। সৃষ্টিকর্তা সদয় হয়েছিলেন। ১৯৮৮ সালের ২২ সেপ্টেম্বর তাদের ঘর আলো করে জন্ম নেয় প্রীতি। ২০০৫ সালে পটিয়ার মরিয়ম আশ্রম উচ্চ বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর নগরীর হালিশহর এলাকায় সরকারি মহিলা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন ৪ বছর মেয়াদি ডিপে¬ামা কোর্সে। বিষয় ছিল আর্কিটেকচার অ্যান্ড ইন্টেরিয়র ডিজাইনিং। সেখান থেকে পাস করার পর জুনিয়র আর্কিটেকচার পদে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে প্রীতির চাকরি হয়। চাকরি করতে করতেই আসে বিয়ের প্রস্তাব। পাত্র মিন্টু কুমার দাশ ডাচ বাংলা ব্যাংক ফাউন্ডেশনের কর্মকর্তা। ২০১২ সালের ৮ মার্চ বিয়ের পিঁড়িতে বসে প্রীতি। পড়াশোনার ব্যাপারে তার ছিল প্রবল আগ্রহ। উত্সাহে বাদ সাধেননি স্বামী। বিয়ের পর চাকরি ছেড়ে দিয়ে আবার পড়াশোনায় ফিরে যায় সে। ভর্তি হয় নগরীর মেহেদিবাগে সাদার্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসি সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে। মেয়েকে হারিয়ে শোকে বাকরুদ্ধ হয়ে পড়েছেন প্রীতির বাবা-মাসহ পুরো পরিবার। বাবা দিলীপ দাশ চট্টগ্রামে ব্রেভ রয়াল শিপিং লিমিটেড নামে একটি শিপিং কোম্পানিতে চাকরি করেন। মাত্র এক মাস আগে থাইল্যান্ড থেকে ফিরেছেন জাহাজ নিয়ে। আসার সময় প্রীতির জন্য এনেছেন অনেক উপহার। উপহারগুলো ঘরে সাজানো রয়েছে। কিন্তু মেয়ে চলে গেছে অনেক দূরে। গত বুধবার পটিয়ায় নিজের বাড়ি দেখিয়ে দিলীপ দাশ কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললেন, এই বাড়ির ডিজাইন আমার মেয়ে করেছে। বাড়ির আঙিনা, ড্রয়িং রুম, শোয়ার ঘর, বাথরুমসহ প্রতিটি আনাচে-কানাচে ওর স্মৃতি জড়িয়ে রয়েছে। শুধু তাই নয়, গ্রামের মুসলিমপাড়ায় আরো দু’টি বাড়ির ডিজাইনও প্রীতির করা বলে দিলীপ দাশ জানান। প্রীতির সাথে বাবার শেষ কথা হয় শনিবার রাত ১১টায়। তূর্ণা নিশীথা ট্রেন ছাড়ার সময় মোবাইল ফোনে সে বাবাকে জানায়, আমাদের ট্রেন ছেড়েছে। চলে যাচ্ছি বাবা। এ কথা বলে চিরতরে বাবা-মার কাছ থেকে চলে গেলো আদরের সন্তান প্রীতি। ভালবাসার আল্পনা ।
Posted on: Sat, 17 Aug 2013 06:22:47 +0000

Trending Topics



">
Race To Mars is a turn-based, space company simulation game where

Recently Viewed Topics




© 2015