The following article has published in the Daily Manob Zamin which - TopicsExpress



          

The following article has published in the Daily Manob Zamin which was copied from the book written by the daughter of Tazuddin Ahmed. This is a suicidal statement and I feel, the book should be banned. ‘মুজিব কাকু সরে গিয়েছিলেন অনেক দূরে’ তাজউদ্দীন আহমদ প্রসঙ্গে একটি কথা খুবই প্রচলিত। ১৯৭১ সালে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক চলছে ঢাকায়। পাকিস্তান পিপলস পার্টি প্রধান জুলফিকার আলী ভুট্টো ঢাকায় এসেছেন। আছেন ইন্টারকন্টিনেন্টালে কড়া মিলিটারি পাহারায়। কজন বাঙালি সাংবাদিক সাক্ষাতের অনুমতি পেয়েছে। আলাপকালে ভুট্টো এ সময় বলে বসলেন, আলোচনা বৈঠকে মুজিবকে আমি ভয় পাই না। ইমোশনাল এপ্রোচে মুজিবকে কাবু করা যায়, কিন্তু তার পেছনে ফাইল বগলে চুপচাপ যে নটোরিয়াস লোকটি বসে থাকে তাঁকে কাবু করা শক্ত। দিস তাজউদ্দীন, আই টেল ইউ, উইল বি ইউর মেইন প্রবলেম। যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী তাজউদ্দীন কন্যা শারমীন আহমদের ঐতিহ্য প্রকাশনী থেকে সদ্য প্রকাশিত ‘তাজউদ্দীন আহমদ, নেতা ও পিতা’ বইতে মুজিব-তাজউদ্দীন সম্পর্ক নিয়ে লিখেছেন, ষাটের দশকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসের এক স্বর্ণালি লগ্নে মুজিব-তাজউদ্দীন এই নবীন জুটির আবির্ভাব বাংলাদেশের রাজনৈতিক মঞ্চে। তারা আওয়ামী লীগে প্রগতিশীল নতুন ধারার সূচনা করেন। তারা গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো নিতেন একত্রে। বাস্তবায়ন করতেন কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে। তাদের কাজ দেখে মনে হতো তারা এক অভিন্ন সত্তা। তাদের টিমওয়ার্কের সবল ভিত্তির ওপর ১৯৭০ সালে আওয়ামী লীগের নিরঙ্কুশ বিজয় অর্জন ও জনগণের আস্থা অর্জন সম্ভবপর হয়েছিল। তারা ছিলেন একে অন্যের পরিপূরক। মুজিব বাদে তাজউদ্দীনের ইতিহাস যেমন অসম্পূর্ণ তেমনি তাজউদ্দীন বাদে মুজিবের। বাংলাদেশকে তার অভীষ্ট সুশাসন ভিত্তিক রাষ্ট্রীয় কাঠামোয় দাঁড় করানোর জন্য বড় প্রয়োজন ছিল তাদের। সে কারণেই স্বাধীন বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ট্র্যাজেডি ছিল আব্বু ও মুজিব কাকুর বিচ্ছেদ। জাতির দুর্ভাগ্য যে, স্বাধীন বাংলাদেশের মাটিতে ঘটে তাদের আদর্শিক ও নীতিগত বিচ্ছেদ। আব্বু ও মুজিব কাকু সারা জীবন যে নীতি ও আদর্শকে লালন করেছিলেন তারই সার্থক প্রতিফলন ঘটানোর সুযোগ এসেছিল স্বাধীন বাংলাদেশে। আব্বু তার নীতি থেকে দূরে সরে যাননি। কিন্তু মুজিব কাকু ষড়যন্ত্রকারীদের প্ররোচনায় সরে গিয়েছিলেন বহু দূরে। সে কারণেই ওই বিচ্ছেদ ঘটে। আব্বুর পদত্যাগের মধ্য দিয়ে ১৯৭১-এর স্বাধীনতাবিরোধী ও মুজিবনগর সরকারবিরোধী এই দুই দলের বিজয় সূচিত হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতার প্রশ্নে আপসহীন আব্বু স্বাধীনতাবিরোধী যে দলটির ষড়যন্ত্রকে নস্যাৎ করে তাদের নিষ্ক্রিয় করে দেন, তারাই মুজিব কাকুর প্রত্যাবর্তনের পর তার কাছে চলে আসে- যেহেতু মুজিব কাকু কখনওই আব্বুর কাছে জানতে চাননি নয় মাসের মুক্তিযুদ্ধের কথা, কে ছিল শত্রু কে মিত্র এবং কার কি ভূমিকা। সেহেতু তাজউদ্দীন বিরোধী ওই দুই দলের পক্ষে সম্ভব হয় মুজিব কাকুকে বিপথে পরিচালিত করা। শেখ মনির দাবি অনুযায়ী মুজিব কাকু গোপনে ও দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে শেখ মনিকে যদি তার প্রতিনিধি করে ভারতে পাঠিয়েও থাকেন ও তার অনুগত সশস্ত্র বাহিনী গড়ে তোলার নির্দেশ দিয়েও থাকেন, তিনি কি জানতেন না যে, যারাই স্বাধীনতায় বিশ্বাসী তারাই তার অনুগত? অপরদিকে মুজিব বাহিনী গঠিত হয়েছিল জাতীয় ঐক্যের বাইরে কিছু ব্যক্তির কর্তৃত্ব ও ক্ষুদ্র গোষ্ঠীস্বার্থ প্রতিষ্ঠার জন্য। মুজিব কাকু কি জানতেন না যে জাতীয়ভাবে ঐক্যবদ্ধ সংগ্রাম ও সুদক্ষ নেতৃত্ব ব্যতীত পাকিস্তানকে ঠেকিয়ে বাংলাদেশের পক্ষে স্বাধীনতা অর্জন অসম্ভব? শেখ মনি ও তার দলটির কি সেই যোগ্যতা ছিল? এই প্রশ্নগুলো স্বাভাবিকভাবেই চলে আসে। তাজউদ্দীনের নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে এই সত্যটিকে যেন তিনি কখনওই মেনে নিতে পারেননি। অথচ আব্বু নিজেকে আড়াল করে রেখে সব কৃতিত্বই দিয়েছেন তার প্রিয় ‘মুজিব ভাইকে’। মুজিব কাকুর নামেই স্বাধীনতা যুদ্ধকে তিনি পরিচালনা করেছেন। মুজিব কাকুর ভাবমূর্তিকে স্বাধীনতা প্রেরণারূপে মুক্তি পাগল মানুষের কাছে আব্বু উপস্থাপন করেছেন কি নিঃস্বার্থভাবে! দুর্ভাগ্য যে, মুজিব কাকু তা যেন বুঝেও বুঝতে চাননি। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উপস্থিত থাকলেও তিনি শারীরিকভাবে অনুপস্থিত ছিলেন এই ব্যাপারটাও তাকে খুব সম্ভব মনস্তাত্ত্বিকভাবে প্রভাবিত করেছিল। স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশ-ভারত যৌথ বাহিনীর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরা এ সম্পর্কে এক ভিডিও সাক্ষাৎকারে বলেন, ‘আমি মুজিবুর রহমানকে ছোট করার জন্য বলছি না, তাকে অশ্রদ্ধা করছি না। কিন্তু শেখ মুজিব যখন পশ্চিম পাকিস্তানের জেলে ছিলেন তখন অস্থায়ী সরকার ভারতের সহায়তায় বাংলাদেশকে স্বাধীন করে ফেলেছে; এবং যখন তিনি ফিরে আসেন তখন তিনি আবিষ্কার করেন যে স্বাধীনতার বড় অংশটি তাকে বাদ দিয়ে অর্জন করা হয়ে গেছে।’ ওই সাক্ষাৎকারে লে. জে অরোরা মুক্তকণ্ঠে আব্বুর ‘সুনির্মল হৃদয়’ ও ‘দক্ষ প্রশাসক’ গুণাবলীর প্রশংসা করেন।’ তিনি অকপটে বলেন, মুজিব বাহিনীর, মুক্তিবাহিনীর সঙ্গে অসহযোগিতা করার কথা এবং বাংলাদেশ সরকারের অগোচরে সৃষ্ট মুজিব বাহিনী সম্পর্কে তিনি যখন জানতে পারেন ‘এটা করা ঠিক হচ্ছে না’ বলে চিফ অব স্টাফকে জানানোর বিষয়টি। মুক্ত বাংলাদেশে মুজিব বাহিনীর অস্তিত্ব যে শুভ হয়নি, সে সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘যুদ্ধের পর আমরা মুজিব বাহিনী ভেঙে দিতে চেয়েছিলাম যেন এ বাহিনীর সবাই আবার তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনে ফিরে যেতে পারে। এর জন্য পরিকল্পনাও নেয়া হয়েছিল। কিন্তু যখন শেখ মুজিবুর রহমান ফিরে এলেন তখন তিনি মুজিব বাহিনী না ভেঙে একে গড়ে তুলতে চাইলেন। এর জন্য আমার কাছে যন্ত্রপাতি, গাড়ি ইত্যাদি ভারতীয় সহায়তা চাইলেন। ব্যক্তিগতভাবে এতে আমি অসন্তুষ্টই হই। এর ফল হলো যে মুজিব বাহিনী দিয়ে তেমন কোনও কাজই হয়নি; বরং মুজিব বাহিনীর কারণে বাংলাদেশ আর্মিই খোদ শেখ মুজিবের ওপর ক্ষেপেছিল। মুজিব কাকুর সঙ্গে প্রশাসনিক বিষয়ে কাজ করার অভিজ্ঞতা সম্বন্ধে অরোরা বলেন, পরবর্তীতে আমি যখন তার সঙ্গে আরও ঘনিষ্ঠভাবে মেলামেশার সুযোগ পেলাম, তখন আমি উপলব্ধি করলাম যে, তিনি প্রশাসনিক বিষয়ে যত না দক্ষ, জনগণকে উদ্বুদ্ধ করতে, তাদের ক্ষেপিয়ে তুলতে তার চেয়ে অনেক বেশি দক্ষ ছিলেন। তিনি কথা বলে লোকজনকে নাচাতে পারতেন। কিন্তু প্রশাসন চালানোর ব্যাপারে তিনি তেমন দক্ষ ছিলেন না। প্রশাসনিক বিষয়ে মুজিব কাকুর অদক্ষতা এবং নতুন দেশ গড়ার জন্য যে দূরদর্শিতা, মানসিকতা ও নেতৃত্বের প্রয়োজন ছিল তার ব্যাপক অভাবের ফলে সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে বিতর্কিত যে রক্ষী বাহিনী গড়ে ওঠে তা ছিল মুজিব বাহিনীরই নব সংস্করণ। এর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সমন্বয়ে গঠিত জাতীয় মিলিশিয়া গঠনের পরিকল্পনা, যা মুজিব কাকু বাতিল করে দেন, তার সঙ্গে ছিল আকাশ-পাতাল তফাৎ। সংক্ষেপে দেশ পুনর্গঠন, নিরাপত্তা রক্ষা ও সবল অর্থনৈতিক কাঠামো গড়ে তোলার জন্য মুক্তিযোদ্ধাদের উপযুক্ত ট্রেনিং ও শিক্ষা দেয়ার যে পরিকল্পনা আব্বু নিয়েছিলেন তার বিপরীতে ক্ষুদ্র ব্যক্তি ও গোষ্ঠীর স্বার্থ রক্ষাকারী মুজিব বাহিনীর নতুন রূপ রক্ষীবাহিনী জাতীয় ঐক্যে ফাটল ধরায়। ওদিকে স্বাধীন দেশের মাটিতে, মুজিব বাহিনীর ছাত্রনেতাদের মধ্যেও শুরু হয় কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার রক্তক্ষয়ী লড়াই। সংঘর্ষের জের ধরে ’৭২ সালের অক্টোবর মাসে গঠিত হয় জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল। ’৭৪-এ নিজ নিজ কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিপক্ষের হাতে সাতজন ছাত্র প্রাণ হারায়। এদিকে স্বাধীনতাবিরোধী পাকিস্তান ও সিআইএ’র প্রতিনিধি মোশ্‌তাক ও তার অনুচরদের লক্ষ্য ছিল ত্রিমাত্রিক। এক, আব্বু ও মুজিব কাকুর মধ্যে দূরত্ব সৃষ্টি করা; দুই, মুজিব কাকুর ভুল প্ল্যান পলিসিকে সমর্থন করা; তিন, মুজিব কাকুসহ স্বাধীনতা যুদ্ধের মূল নেতৃবৃন্দকে হত্যা করা। আব্বুর সঙ্গে মুজিব কাকুর ভাঙন ধরানোটি ছিল খুব সম্ভবত মোশ্‌তাকের প্রথম লক্ষ্য। কারণ, মোশ্‌তাক জানতেন যে, আব্বু ছিলেন মুজিব কাকুর বর্মস্বরূপ। তারা এক থাকলে বাকি দুই লক্ষ্য বাস্তবায়ন সম্ভবপর নয়। মুজিব কাকুকে আব্বুর থেকে দূরে সরিয়ে নেয়ার কাজে তিনি ব্যবহার করেছিলেন শেখ মনিসহ মুজিব কাকুর কিছু নিকট আত্মীয়কে। এই আত্মীয়দের ধারণাও ছিল না যে মুজিব-তাজউদ্দীন জুটির ভাঙন শুধু মাত্র দু’টি ব্যক্তির সম্পর্কের ভাঙন নয়; ওই ভাঙনের ফলে একদিকে দেশের যেমন ব্যাপক ক্ষতি হবে তেমন তারা নিজেরাও হয়তো বেঁচে থাকবেন না। আব্বুর স্পষ্টবাদিতা ও অপ্রিয় সত্যকে তুলে ধরার সৎ সাহসকে তারা অন্তরায় গণ্য করেছিলেন। যদিও ওই গুণাবলী ছিল দেশরক্ষার বর্মস্বরূপ। এ প্রসঙ্গে মনে পড়ছে গোলক মজুমদারের কথা। ১৯৭১ সালে বিএসএফ-এর পূর্বাঞ্চলীয় ইন্সপেক্টর জেনারেল (অবসরপ্রাপ্ত) এই পরম শ্রদ্ধাভাজন মানুষটি তার কর্মক্ষেত্রে দায়িত্ব পালনের বাইরেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধকে সমর্থন করেছিলেন নিঃস্বার্থভাবে। সুশাসনভিত্তিক, গণতান্ত্রিক ও সবল কাঠামোর ওপর স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশ গড়ে উঠুক এই ছিল তার একান্ত কামনা। কথা প্রসঙ্গে ’৮৭-এর এক সাক্ষাতে তিনি আমাকে বলেছিলেন, তাজউদ্দীন সাহেব ছিলেন শেখ সাহেবের মহৎ ও বিশ্বস্ত বন্ধু, কিন্তু কঠোর সমালোচক। তিনি শেখ সাহেবকে সঙ্গে নিয়েই বাংলাদেশের জন্য পরিবর্তন আনতে চেয়েছিলেন।
Posted on: Sun, 27 Apr 2014 06:49:24 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015