অনিক একা একা হাটছে কোন এক - TopicsExpress



          

অনিক একা একা হাটছে কোন এক চিরচেনা রেল স্টেশনে। যেখানে প্রথম দেখা অনন্যার সাথে। হয়তো আবার দেখা হয়ে যাবে। এবার সে বলে দেবে তার ভালবাসার কথা। ২০১১ সাল। ঢাকা ইউনিভার্সিটির ছাত্র অনিক। ঈদের ছুটিতে বাসায় ফিরছে। ভীড় হওয়ার আগে আগেই বাড়ি ফিরছে সে। তার বাসা চট্টগ্রাম।রাত ১২:৩০ টিকেট কেটে সে প্লাটফর্মে দাড়িয়ে আছে। ট্রেনের অপেক্ষা করছে। হঠাৎ একটা মেয়ের দিকে চোখ চলে গেল। চোখ ফিরিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু কোন এক কারণে সে তা পারল না। আবার তাকালো। এবার ট্রেন চলে এলো। অনিক তাড়াতাড়ি করে ট্রেনে উঠে পড়ল। তারপর খোঁজা অনেক খুঁজি করেও পেল না তাকে। আশা ছেড়ে দিল। মনে করল হয়তো আর পাওয়া যাবে না। ট্রেন চট্টগামে পৌঁছে গেছে। অনিক নেমে হাটা শুরু করল। আবার সেই মেয়ের দেখা পেল সে। তারপর নামটা জিজ্ঞেস করলে তেমন কিছু না বলে চলে গেল। ঈদের দিন। অনিক বন্ধুদের সাথে বেড়িয়েছে। সবাই একজায়গাই বসে আড্ডা দিচ্ছে। অনিকের চোখে পড়ল আবার সেই মেয়েটি। অনিকের এক বান্ধবী সায়মার সাথে । অনিক চলে গেল সেখানে। অনিক - কিরে সায়মা..! কই যাস?? সায়মা - আরে অনেক! এইতো একটু বাইর হইসি আর কি। ঈদের দিন মানে তো বুঝসই। অনিক - হুম। তোর পাশের মেয়েটা কে..? (আস্তে আস্তে বলল অনিক) সায়মা - ও.. পরিচয় করাতে তো ভুলেই গেছি। এইটা আমার ফ্রেন্ড অনন্যা। অনন্যা - Hi. অনিক - হেই। আমি অনিক। ওই যে ওইদিন স্টেশনে দেখা হয়ছিল। অনন্যা - কোন স্টেশনে..? অনিক - সেন্ট্রাল স্টেশনে। অনন্যা - হুম...মনে নাই। সায়মা - এই অনিক, আমাদেরকে যেতে হবে, বাই..! অনিক - ওকে বাই। অনিক আবার বন্ধুদের কাছে ফিরে আসে। একই রকম আড্ডা চলছিল। কিন্তু অনিকের আর মন বসে না। কিছুদিন পর অনিক ঢাকায় ফিরে যায়। ও জানত না যে, অনন্যাও ঢাকা ইউনিভার্সিটিতেই পরে কিন্তু অন্য সাব্জেক্টে তবুও কোন একভাবে তারা দুজনে ভাল বন্ধু হয়ে যায়। এদিক ওদিক ঘুরে বেড়ান, কফি শপে একসাথে বসে কফি খাওয়া, পার্কে গিয়ে বসা ইত্যাদি। অনিক ভালবেসে ফেলেছে অনন্যাকে। কিন্তু বলতে পারছে না। ২০১২ সালের শেষ পর্যন্ত তারা শুধু ভালো বন্ধু হয়েই থেকেছে। হঠাৎ একদিন অনন্যা কোন এককাজে চিটাগাং চলে যায়। অনিক ভীষণ একাকিত্ব অনুভব করে। তবুও এভাবেই চলতে থাকে। ফোনেও কথা একেবারে বন্ধ। ২০১৩ সালের আগস্ট মাস। ফাইনাল পরিক্ষা শেষ। তাই এখন অনেক ছুটি। তাই সে চিটাগাং চলে আসে। সায়মার কাছ থেকে জানতে পারে যে অনন্যার বিয়ে। অনিক ভেঙে পড়ে। সায়মা বুঝতে পারে অনিকের অবস্থা। এমন হাসি - খুশি চেহারার ছেলেটা একেবারে মনমরা হয়ে গেছে। অনন্যার বিয়ে সেপ্টেম্বরে। অনন্যার সাথে দেখা করতে যায়। অনন্যা আসে দেখা করতে। অনিক চাঁপা টাইপের ছেলে। সব কথা ঠিক মত বলতে চাই না। অনন্যা - কি খবর তোর..? অনিক - জানি না। তোর?? ( অনেকটা দু:খী হয়ে) অনন্যা - আমিও হয়তো জানি না। হ্যা , কি বলবি বল অনিক - কই কিছু না তো..! অনন্যা - তবে ডাকছিলি ক্যান..? অনিক - কিছু না। অনন্যা - তুই Sure? অনিক - হুম। জানি না। অনিক এবার বলেই ফেলল -- ভালবাসি তোকে। অনেক বেশি ভালবাসি। তুই কিছু বুঝস না। শুধু আমারে ফ্রেন্ড হিসেবে দেখছিস। মনের কথাটা বুঝলি না তুই..? চিনলি না আমাকে। শুধু এইটুকুই বলতে চায় যে... আমি তোকে ভালবাসি। I love you Ononya. I Love You Soo Much. অনন্যা কেঁদে ফেলে, - এই কথা বলতে তোর এতদিন লাগল। তুই কি কোন ছেলে..? আমার মনের কথাও তো তুই বুঝিস নাই। অনিক - তাই..? অনন্যা - হুম। অনিক - তুই আগে বলিস নাই কেন?? অনন্যা - তুই কি পাগল নাকি..? মেয়েরা কি আগে প্রোপজ করে নাকি... অনিক - হুম। অনন্যা -... চল.. তারপর অনিক আর অনন্যা রেল লাইনের পাশ দিয়ে হেটে যায় অনেক দূর। আর সাথে অনেকক্ষন রিক্সায় করে ঘুরা অনিকের কাঁধে মাথা রেখে।... অনিক - তোর বিয়ের কি হবে..? অনন্যা - বাদ দে তো ওসব। কতদিন পর পাইলাম তোকে... অনিক আবার চিৎকার করে বলে উঠলো., I luv you..Ononya... আজ থেকে তুই শুধু আমার। অনন্যা - i luv you too.. হ্যা আমি তোর..। ২০১৪ সালের ১৪ই ফেব্রুয়ারি। অনন্যার বিয়ে টা ক্যান্সেল হয়ে গেছে। অনিকের সাথে আজ রিক্সায় করে ঘুরার প্ল্যান আছে। অনিক অনেক গুলো সাদা গোলাপের মাঝে অনন্যার প্রিয় লাল গোলাপ কিনল। অনন্যা এসেছে একটা শাড়ি পড়ে। পরীর মত লাগছিল তাকে। ভেজা চুলে ওকে অসম্ভব সুন্দর লাগছিল। বাতাসে উড়ছিল তার চুল গুলো। অনিক দেখে তো শুধু হা করে দাঁড়িয়ে ছিল। তারপর সারাটা বিকাল একসাথে ঘুরাঘুরি করে অনিক তাকে বাসায় রেখে যায়... পরেরদিন সকালে আবার আসে অনন্যার বাসায়। অনন্যা নেমে আসে। কিন্তু তাকে দেখে মনে হচ্ছিল সে কোন কারণে চিন্তিত আর মন টা খারাপ লাগছিল অনন্যার। একজন ভালবাসার মানুষই বুঝতে পারে অন্যজনের সকল কথা। অনিক - কিরে অনন্যা, তোকে এমন লাগছে ক্যান? অনন্যা - আরে তেমন কিছু না অনিক - তুই আমার কাছে কথা লুকাইতে পারবি..? অনন্যা - আসলেও না। কথা তো বের করেই ছাড়বি। শোন, আমার বাসা থেকে সবাই খুবই চাপ দিচ্ছে। জানি না কি হবে। অনিক - আরে এসব বিষয়ে কিছু ভাবিস না তো... কিছুই হবে না। অনন্যা - তোর কাছে তো কোনো কিছুই Serious না। অনিক - চল অনন্যা - কোথায়..? অনিক - বিয়ে করতে.. অনন্যা - হাহা পাগল হইলি নাকি..? অনিক - আরে তোরে বিয়ে করব, এতে পাগল হওয়ার কি আছে? তুই যদি বলিস আমি পাগলও হইতে পারি। অনন্যা - তুই না একটা.... (অনন্যার কথা গুলো শুনতে হয়তো ভালোই লাগে অনিকের।) কিছুদিন পরের ঘটনা-- সবই স্বাভাবিক ভাবে চলছে। হঠাৎ অনন্যার ফোন এলো অনিকের কাছে.। অনিক - এইতো জানপাখিটা কি অবস্থা তোমার? অনন্যা - অনিক, আমাদের মনে হয় আর বিয়ে হবে না। অনিক - ক্যান, কি হইসে..? অনন্যা - বাসা থেকে অনেক চাপ দিচ্ছে। আবার নাকি অন্য একটা ছেলে দেখতে যাবে..। চল আমরা বিয়ে করে ফেলি। অনিক -....। কি বলসটা কি..? এখন, বিয়ে...!!! তুই এক কাজ কর। তোর বাড়ির পাশের পার্কে এসে দেখা কর। (ফোন টা কেটে দিল অনন্যা) পার্কে এলো দুজনে-- অনন্যা - আমাদের বিয়ে নিয়ে আমার ফ্যামিলির কোন আগ্রহ নাই। অনিক - হুম। অনন্যা - চল। আমারা বিয়ে করে ফেলি। অনিক - বুঝলাম। কিন্তু এতে তো কিছুদিন সময় লেগে যাবে। আর কিছুদিন পর.. অনিক - চল অনন্যা - কোথায়? অনিক - বিয়ে করতে.. অনন্যা - সায়মাকে বলছিস..? অনিক - না। তুই বলে দে। অনন্যা সব বুঝিয়ে বলে সায়মাকে। সায়মা আসে তাদের কাছে। সায়মা - তো প্ল্যানটা বল অনিক - প্রথমে কাজী অফিস থেকে বিয়েটা কইরা ফেলব। তারপর ট্রেনে করে সোজা কক্সবাজার। সায়মা - বিয়ের সাথে সাথেই হানিমুন অনন্যা - (কাঁদতে কাঁদতে) তুই মজা করছিস..? সায়মা - ওকে বাবা, সরি অনিক - এখন চল যায়... কাজী অফিস থেকে বিয়েটা সেরে ফেলে তারা। তারপর তাদের প্রিয় বান্ধবীকে বিদায় জানাই। ট্রেন ছাড়ে। এবার ট্রেনে করে কক্সবাজার। অনিক সব কিছুই আগে থেকে Ready করে রেখেছে। যত যায় হোক, অনিক পাগলের মত ভালবাসে অনন্যাকে। ট্রেন পৌছাই ... নবদম্পতি এখন নিজেরা নিজেরদের। কোনো বাঁধা নেই। পরেরদিন সাগরের পাড়ে হাত ধরে দাঁড়িয়ে আছে দুজনে। একটু পরেই সূর্য অস্তমিত হবে। কোন কথা মনে ছিল না তাদের। অনিক মনে করলো একসময় তাহসানের ঈর্ষা গানটার কথা মনে করল আর হাসল। সাগরের পাড়ে হাত ধরে দেখছো সূর্য ডোবা, আমি নেই ----- কিছুদিন পর এক সড়ক দুর্ঘটনা। অনিক মারা গেল। অনন্যা কোনো ভাবে বেঁচে গেল। তারা দুজনেই চেয়েছিল একসাথে বাঁচতে। কিন্তু, ভাগ্যের পরিহাসে তা আর হলো না। অনেকটা সুস্থ অনন্যা। কিন্তু সে আর আগের মত কথা বলতে পারে না। মস্তিষ্কে আঘাতের ফলে সে আর কথা বলতে পারে না। হাতটা ছেড়ে যায়নি তাদের একান্ত প্রিয় বান্ধবি সায়মা। সেও কাঁদে। মৃত্যুর পরও যেন অনন্যার কাছে বেঁচে আছে অনিক। অনন্যা সব সময়ই দেখতে পেত অনিককে। প্রতিটা ক্ষনে যেন ছায়ার মত হয়ে থাকত অনিকের আত্মা। কিছুদিন পর অনন্যাও মারা যায়। একটা চিরকুট লিখে রেখে যায় সে। হয়তো বুঝতে পারে অনিক তাকে নিতে এসেছে। তাতে লেখা ছিলো, তোমার ভালবাসা ছাড়া আমি বাঁচব, তুমি ভাবলে কি করে। একসাথে থাকতে চেয়ে ছিলাম। তা আর হলো না। এবার আমিই আসছি তোমার কাছে ওদের মৃত্যুর ১ বছর কেটে গেছে। তাদের প্রিয় বান্ধবি সায়মা মাঝে মাঝে তাদের কবরের পাশে আসে। কবর দেওয়া হয়েছিলো পাশাপাশি। সায়মা কয়েকটা ফুল রেখে যায় সেখানে। আর বলে, তোরা বেঁচে থাকলে হয়তো ভালো হতো। কি আর করার, এই জগৎ থেকে তো আর তোদেরকে ফিরিয়ে আনতে পারবো না। মৃত্যুর পরেও অমর থাক তোদের ভালবাসা... বলতে বলতে চোখের কোণা গুলোই কয়েক ফোঁটা পানি জমে গেছে সায়মার। যত যায় হোক, ভালবাসা অমর থেকে সারাজীবন। এমনকি মৃত্যুর পরেও। সত্যিকারের ভালবাসা জয় করতে পারে সকল কিছুই collected:::
Posted on: Wed, 10 Sep 2014 08:30:47 +0000

Recently Viewed Topics




© 2015