[অনেক চেষ্টা করেও লেখাটাকে ছোট রাখতে পারলাম না।আশা করি পড়বেন।এতে নতুন কিছু বিষয় জানার সুযোগ হবে-ইনশা-আল্লাহ।] গীবতঃ এমন এক জঘন্য গুনাহ যা মুখরোচক কিন্তু পরিণতি ভয়াবহ। গীবত নিয়ে অনেকদিন ধরে লিখব ভাবছি।কিন্তু বিষয়টা নিয়ে চিন্তা করলেই ভিতরেরটা কেমন যেন মুচড়ে উঠে।সমাজে এমন লোক খুব কমই পাওয়া যাবে যারা এই গুনাহের কাজ থেকে নিজেদেরকে নিরাপদ রাখতে পেরেছেন। সমাজের বেদ্বীন থেকে দ্বীনদার, আম মানুষ থেকে বুজুর্গ লোকজন পর্যন্ত প্রায় সকলেই এই জঘন্য ব্যধিতে আক্রান্ত।কোন মানুষের পক্ষে সম্ভব হবে না মসজিদে বসে মদ খাওয়া বা যিনা করা অথচ গীবত এমন এক জঘন্য ব্যধি যা মসজিদে বসেই অনেক মুসল্লি ভাই করে থাকেন। গীবতের সংজ্ঞা ও একটি ভুল নিরসনঃ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, তোমরা কি জান গীবত কি? সাহাবারা বললেন, আল্লাহ এবং তার রাসূলই ভাল জানেন।হুযুর (সাঃ) বললেন, আপন (মুসলমান)ভাইয়ের (অনুপস্থিতিতে তাহার)সম্পর্কে এমন কথা বলা যা তার অপছন্দ হয়(ইহাই গীবত)।কেউ আরজ করল, আমার ভাই সম্পর্কে যা বলি তা (সেই দোষ) যদি তার মধ্যে থাকে? রাসূল (সাঃ) বললেন,যদি ঐ দোষ তুমি যা তুমি বর্ণনা করছ, তার মধ্যে থাকে তবে তুমি গীবত করলে, আর যদি ঐ দোষ তার মধ্যে না থাকে তবে তুমি তার উপর অপবাদ আরোপ করলে।[মুসলিম] অর্থ্যাৎ, মুসলমান ভাইয়ের আড়ালে প্রকৃত দোষ বয়ান করা গীবত, আর সেই দোষ তার মধ্যে না থাকলে হবে অপবাদ। আরো একটি ভুল নিরসনঃ অনেকেই বলে থাকেন, “আমি পশ্চাতে যার দোষ বর্ণনা করছি, তার সামনেও তা বলতে ভয় পাই না; সুতরাং এটি গীবত নয়”। এটা সম্পূর্ণ ভুল ধারণা।গীবতের সংজ্ঞা অনুযায়ী পশ্চাতে দোষ বলাটাই গীবত। গীবতকারীর প্রকারভেদঃ [১]কিছু গীবতকারী আছে যাদেরকে সতর্ক করা হলে তারা বলে, “আমি গীবত করছি না, যথার্থ দোষ বর্ণনা করছি।”-এই ধরণের গীবতকারী কাফের হয়ে যায়।কারণ সে হারামকে হালাল দাবি করে। [২]ইশারা বা ইঙ্গিতপূর্ণ কথার মাধ্যমে গীবতকারী, যার কথার দ্বারা শ্রোতারা চিনতে পারে কার গীবত করা হচ্ছে।এরা মুনাফিক স্বভাবের। [৩]কারো নাম বলে গীবত করা এবং গীবতের ক্ষতি সম্বন্ধেও অবহিত, এই গীবতকারী গোনাহগার ও তার তওবা করা ওয়াজিব। বৈধ গীবতঃ [১]অপরিচিত অনির্দিষ্ট ব্যক্তির গীবত বৈধ। [২]ফতোয়া, মাসয়ালা জানার জানা,নায্য বিচার আদায়ের লক্ষ্যে, কারো ক্ষতি যেমন-চোর থেকে সমাজকে সাবধান করতে গীবত বৈধ। [৩]ফাসেক,জালেম-পাপাচারিদের হেয় প্রতিপন্ন ও অপমান অপদস্থ করার জন্য গীবত বৈধ।তাই আল্লাহভীরু আলেম সমাজ জালেম শাসকদের গীবত করতেন। [৪]কোন ব্যক্তি গুনাহে জড়িত হয়ে পড়লে তাকে সংশোধনের উদ্দেশ্যে এমন লোকের কাছে ঐ গোনাহগার ব্যক্তির গীবত করা বৈধ যার কাছে বললে গোনাহগার ব্যক্তির পরিবর্তন আশা করা যায়। কিছু জ্ঞাতব্য বিষয়ঃ [১]গীবত শোনা, গীবত করার মতই হারাম। [২]মুখে না বলে ইশারা-ইঙ্গিতের মাধ্যমেও গীবত হয়। [৩]গীবতের গুনাহ যেনার চেয়েও মারাত্মক।কারণ গীবতের গুনাহ আল্লাহ ততক্ষণ পর্যন্ত মাফ করবেন না যতক্ষণ পর্যন্ত যার গীবত করা হয়েছে তার কাছে মাফ চাওয়া না হয় এবং যতক্ষণ পর্যন্ত সে মাফ না করে।[বায়হাকী] আল্লাহ তায়লার কাছে ফরিয়াদ তিনি যেন সবার আগে আমাকে এই ব্যধি থেকে হেফাজত করেন।
Posted on: Sat, 21 Sep 2013 18:32:25 +0000