অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে - TopicsExpress



          

অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানচর্চা লেখকঃ আরাফাত রহমান আজকাল প্রায় সব দৈনিক পত্রিকাতেই রাশিফল দেয়া হয়। রাশিফল বলে দেয় মানুষের ভাগ্যে কি আছে। তাছাড়া, মানুষের ভাগ্য নাকি তার জন্মের সময়েই ঠিক হয়ে যায়। জন্মের সময় আকাশে গ্রহনক্ষত্রের অবস্থানই নাকি মানুষের ভাগ্য রচয়িত। এছাড়া আমরা টেলিভিশনে বিজ্ঞাপন দেখি হরলিকস খেলে না কি ছেলে মেয়েরা ‘লম্বা-শক্তিশালী-বুদ্ধিমান’ হয়ে যায়। ডেটল সাবান না কি ৯৯% জীবাণু মেরে ফেলে। ফেয়ার-এন্ড-লাভলী (অথবা ফেয়ার-এন্ড-হ্যান্ডসাম) নাকি গায়ের রঙ ফর্সা করতে পারে। বলা বাহুল্য, উপরের কোনটাই সত্য নয়। পৃথিবীর উপর গ্রহ-নক্ষত্রের কেবল অতি সামান্য মাধ্যাকর্ষণ শক্তি আছে। এছাড়া অন্য কোন প্রভাব নেই। বাড়ন্ত ছেলে-মেয়েদের দিনে যে পরিমাণ পুষ্টি লাগে, হরলিকস দিয়ে তা পুরণ করা যায় না। পানিতে এক চামুচ হরলিসকস গুলিয়ে খেলে এই পুষ্টি পুরণ হবে না। প্রয়োজন সুষম খাদ্য।হরলিকস দিয়ে এই পুষ্টি পুরণ করতে গেলে মুঠো মুঠো হরলিকস খেতে হবে। আর আমাদের দেহের অধিকাংশ অনুজীবই উপকারী। তারা ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়াদের বিপক্ষে যুদ্ধ করে। তাই ডেটলের দাবী সত্য হলে সে অধিকাংশ উপকারী ব্যাক্টেরিয়া মেরে ফেলে। তাহলে আমাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাবে। ত্বকের রঙ নির্ভর করে মেলানিনের উপর। মেলানিন সূর্যের ক্ষতিকর অতিবেগুণী রশ্মি থেকে আমদের বাঁচায়। ফেয়ার-এন্ড-লাভলী ত্বকের মেলানিন কমাতে পারে না। আর যদি কখনো কমায়, তাহলে তা আমাদের এই অঞ্চলের মানুষের জন্য ক্ষতিকর হবে। কারণ দেখা গেছে, সাদা চামড়ার মানুষ আমাদের বিষুবীয় ও ক্রান্তীয় অঞ্চলের সূর্যালোকের সংস্পর্শে এলে ত্বকের ক্যান্সার সহ নানা রকমের সমস্যায় ভোগে। বোঝাই যাচ্ছে, উপরের সকল প্রচারই আসলে আধুনিক কুসংস্কার। এদেরকে বলা হয় অপবিজ্ঞান। সাধারণ মানুষের মধ্যে বিজ্ঞানের একটি ইতিবাচক প্রভাব আছে। তাই বিজ্ঞানের মুখোশ নিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করা অত্যন্ত সহজ। এই ধারণাগুলো বহুল প্রচারিত হলেও এদের পেছনে কোন বৈজ্ঞানিক ভিত্তি নেই। এগুলো প্রচার করা হয় পণ্য বিক্রির উদ্দেশ্যে। অপ্রয়োজনীয় এসব পণ্য বিক্রির মাধ্যমে মুনাফা লোটা হয়। এই অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে সচেতন হওয়া খুবই জরুরী। নিজেরা সচেতন হওয়ার সাথে সাথে এদের বিরুদ্ধে প্রচারণাও প্রয়োজন সাধারণের মধ্যে। কারণ এই অপবিজ্ঞানগুলোর প্রধান শিকার হয় সাধারণ মানুষ। পাশাপাশি প্রয়োজন বিজ্ঞানচর্চা। বিজ্ঞান, অপবিজ্ঞানের চাইতে অনেক মজার। অনেক আকর্ষণীয়। প্রকৃতি, মহাকাশ, মহাবিশ্ব, মানুষের সমাজ নিয়ে জানার মতো অনেক আগ্রহোদ্দীপক বিষয় আছে। আমরা যদি এসব জানি এবং তা ছড়িয়ে দেই, তাহলে মানুষ বিজ্ঞানমনষ্ক হবে। বিজ্ঞান মনষ্ক মানে এই নয় যে সবাই বিজ্ঞানী হয়ে উঠবে। বিজ্ঞান মনষ্ক মানে বিজ্ঞানীদের মতো চিন্তা করা, তাদের মতো খুটিয়ে দেখা, জানা। বিজ্ঞানের গল্প মানুষকে যুক্তি দিয়ে চিন্তা করতে শেখায়। তখন সে নিজেই সচেতন হয়ে উঠে তার চারপাশ নিয়ে – বুঝে নেয় কোনটি ঠিক আর কোনটি ভুল। তাই বিজ্ঞান চর্চাই অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে সবচাইতে ভালো প্রতিষেধক। মহাবিশ্বে অবাক হয়ে প্রশ্ন করার মতো অনেক কিছু আছে। - আফ্রিকাতে একধরনের মাছ আছে যারা কি না অন্ধ। তারা চারপাশে এক ধরনের বিদ্যুৎক্ষেত্র তৈরি করে। এই ক্ষেত্রে সামান্য পরিবর্তনের মাধ্যমে তারা শিকারকে খুঁজে নেয়। এই ক্ষেত্র ব্যবহার করে তারা একে অন্যের সাথে যোগাযোগ করে। - কবুতরেরা চৌম্বকক্ষেত্রের সামস্যতম পরিবর্তন বুঝতে পারে। পৃথিবীর চৌম্বক ক্ষেত্রের যে ক্ষমতা, তার এক সহস্রাংশের পরিবর্তন তারা অনুভব করতে সক্ষম। চারপাশের বস্তু, পথ চিনতে তারা এই ক্ষমতা ব্যবহার করে। - গ্যালাক্সীগুলোর কেন্দ্রে কোয়াসার অচিন্তনীয় বিষ্ফোরণ সৃষ্টি করে। এ বিষ্ফোরণ চার পাশের অনেক গ্রহকেই ধ্বংস করে দেয়। - পূর্ব আফ্রিকায় আগ্নেয়গিরির ঠান্ডা হয়ে যাওয়া লাভায় মানুষের পূর্বপুরুষের পদচিহ্ন পাওয়া গেছে। এর বয়স প্রায় সাড়ে তিন লক্ষ বছর। বোঝা যায়, মানুষের ইতিহাস কতো পুরনো। - আমাদের দেহের প্রতিটি কোষে ডজনখানেক মাইটোকন্ড্রিয়া আছে। মাইটোকন্ড্রিয়া কোষের ‘পাওয়ার হাউজ’ – কোষের শক্তিকেন্দ্র হিসেবে কাজ করে। সাম্প্রতিক প্রমাণ বলছে যে শত কোটি বছর আগে এই মাইটোকন্ড্রিয়া স্বাধীন অনুজীব ছিলো। পরে এরা আরো বড় কোষের মধ্যে ঢুকে পড়ে। বড় কোষ মাইটোকন্ড্রিয়াকে পুষ্টি দেয়, আর মাইটোকন্ড্রিয়া দেয় শক্তি। তার মানে, ব্যাপক অর্থে আমরা একক কোন জীব নই। ভিন্ন ভিন্ন রকমের প্রায় এক হাজার কোটি একক জীবের সমন্বয় আমরা – একটি জৈব যন্ত্র। বিজ্ঞান চর্চার এবং অপবিজ্ঞানের বিরুদ্ধে প্রচারণা বিজ্ঞান নির্ভর নতুন দেশ গড়ে তুলবে। তথ্যসুত্র Broca’s Brain by Carl Sagan
Posted on: Sun, 06 Oct 2013 15:54:23 +0000

Trending Topics



ass="stbody" style="min-height:30px;">
Psychological Testing: History, Principles, and Applications
🔘 INDIAN GOVERNMENT INTRODUCED ONLINE SERVICES 🔘

Recently Viewed Topics




© 2015