অমানবিক সতীদাহ প্রথা - TopicsExpress



          

অমানবিক সতীদাহ প্রথা নির্মূলীকরণে মুসলিমদের অবদান অন্যান্য ধর্ম, ইতিহাস, ইসলাম, ইসলাম-বৈরীতা, এডিটরস চয়েস, নারী লিখেছেন এস. এম. রায়হান প্রারম্ভিক কথা নিজ স্বার্থে ইতিহাসকে বিকৃত করার প্রবণতা চলে আসছে সেই আদ্যিকাল থেকেই। বানানো ইতিহাস চাপিয়ে দেওয়া এবং সত্য ইতিহাসকে চাপা দেওয়ার প্রবণতা পরবর্তী প্রজন্মের মানুষদেরকে বিভ্রান্তির মধ্যে ফেলে দিয়ে বহু করুণ ঘটনার জন্ম দিয়েছে। সত্যকে ঢেকে ফেলার কারণে অনেক সময় মানুষের কাছে সঠিক ইতিহাস পরিষ্কারভাবে ধরা পড়ে না। অনেক ক্ষেত্রে মিথ্যা বর্ণনার উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে সূত্রের পাহাড়। সূত্রগুলো বিপক্ষে গেলে বলা হয়- এইগুলো বিজয়ী শক্তির লেখা! আর পক্ষে থাকলে নির্দ্বিধায় একই সূত্র ব্যবহার করে বলা হয়- এর সত্যতা তো ইতিহাস থেকেই এসেছে! ঐতিহাসিক ঘটনাকে পক্ষে-বিপক্ষের দৃষ্টিকোণ থেকে বিচার না করে নিরপেক্ষভাবে বিশ্লেষণ করলেই বেরিয়ে আসবে মূল সত্য। আর এভাবেই চাপিয়ে দেওয়া এবং চাপা দেওয়া ইতিহাস দূরীভূত হয়ে সত্য প্রকাশিত হবে, কারণ সত্যের জয় অবধারিত। Wiki picture: A Hindu widow burning herself with the corpse of her husband. সতীদাহ প্রথা নিয়ে নতুন করে কিছু বলার নেই। কিন্তু যখন দেখা যায় এই সতীদাহ প্রথা নিয়েও উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে নির্দিষ্ট কোনো ধর্ম ও সম্প্রদায়ের উপর দায় চাপিয়ে দেবার প্রচেষ্টায় ইতিহাস জালিয়াতি করে রেফারেন্সের পাহাড় গড়ে তোলা হচ্ছে – তখন এই ইতিহাস জালিয়াতির কথা তুলে না ধরলে তা হবে অন্যায়ের প্রতি নীরব সম্মতির নামান্তর। এমনই একটি ইতিহাস জালিয়াতির ঘটনা পাঠকদের সামনে তুলে ধরতে আমার দেশ পত্রিকায় সতীদাহ প্রথা নিয়ে একটি প্রতিবেদন হুবহু তুলে ধরা হলো [সূত্র]- ইমরান রহমান নামের কেউ সতীদাহ প্রথা নিয়ে এতবড় মিথ্যাচার করতে পারে বলে কি কারো বিশ্বাস হয়? এই প্রতিবেদনের মতো অনেক প্রবন্ধ নিবন্ধে গবেষণাপত্রের নামে ইতিহাস জালিয়াতরা পাঠকদেরকে ধোঁকা দিয়ে এটি প্রতিষ্ঠিত করতে চাইছে যে, সতীদাহ প্রথা ভারতে মুসলিমদের আগমণের পর থেকে এবং মুসলিমদের কারণেই সৃষ্টি হয়েছে। এর আগে ভারতে এই অমানবিক প্রথা ছিলনা! এই কথার প্রতিধ্বনি আজকাল অন্তর্জালিক পরিমণ্ডলের যত্রতত্র পাওয়া যায়। যেমন সজল শর্মা নামক এক ব্রাহ্মণ সতীদাহ প্রথা নিয়ে এক প্রতিবেদনে বলেছেন [সূত্র]- সনাতন সমাজে সব চেয়ে খারাপ এবং বর্বর প্রথা হিসেবে গণ্য হয়েছে সতীদাহ প্রথা। স্বামীর মৃত্যুর পর স্ত্রীকে জোর পূর্বক স্বামীর সাথে চিতায় ভস্ম করা ছিল এই প্রথা। ব্রিটিশ শাসনামলে ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর এবং রাজা রাম মোহন রায়ের ঐকান্তিক চেষ্টায় ব্রিটিশ সরকার আইনের মাধ্যমে এ প্রথাকে রদ করে। এখন আসা যাক এই প্রথা প্রচলনের পেছনে কি কি কারণ জড়িত ছিল। এটা নিশ্চিত, ব্রাহ্মণদের হাত ধরেই এ প্রথা এসেছে কারণ ব্রাহ্মণরাই রীতি ও নীতি নির্দেশক। তবে ব্রাহ্মণদের সাথে পারিপার্শ্বিক কিছু বিষয়ও জড়িত আছে বলে অনেক ইতিহাসবিদ মতামত ব্যক্ত করেছেন- তা না হলে হঠাত করে কেন এ প্রথা প্রকটভাবে চলে আসবে। মধ্য প্রাচ্যের বিভিন্ন আগ্রাসী শক্তি তখন ভারত আক্রমন করে। এদের আগ্রাসনের প্রধান লক্ষ্য ছিল ধন-রত্ন লুটপাট করা। পরবর্তীতে রাজনৈতিকভাবেও এই আগ্রাসন চলতে থাকে। যেকোন যুদ্ধেই নারীরা পাশবিকতার শিকার হয়- এটা তো আমরা ৭১ এর যুদ্ধেও দেখেছি। ইতিহাসের পাতায় দেখা যায় পরাজিত হওয়ার পর অন্তপুরের নারীরা শত্রুর হাতে দলিত-মথিত হওয়ার চেয়ে স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণকে বেছে নিত। এ ধরণের আত্মাহুতিকে জহর বলা হত। পৃথবীরাজ চৌহানের প্রেমিকা ও স্ত্রী সংয়ুগিতার পরিণতি থেকেও এমন ধারণা পাওয়া যায়। আগ্রাসী শক্তিগুলো সম্মুখ যুদ্ধের চেয়ে বিশ্বাসজ্ঞাতকতা বা ছলনার যুদ্ধ বেশি করত। আর এমন এক যুদ্ধে পৃথবীরাজ চৌহান পরাজিত হোন এবং পরবর্তিতে মৃত্যুবরণ করেন। শুনা যায় তাঁর স্ত্রী তাঁর মৃত্যুর পর আত্মহত্যা করেছিলেন, আবার কেউ কেউ বলেন তিনি সতী হয়েছিলেন- যাই হোক আত্মাহুতি আর আত্মহত্যা তো এখানে এক হয়ে যাচ্ছে। অনেক ইতিহাসবিদ আগ্রাসী শক্তির আক্রমণ ও যুদ্ধপরবর্তী ফলাফলকেও দায়ী করেছেন। যুদ্ধে জয়ী হয়েই তখন চলত নারীর উপর অত্যাচার-ধর্ষণ। যুদ্ধ জয় করা নারীরা ছিল পন্যের মত। এত নিপীড়ণের চেয়ে মৃত্যুই শ্রেয় ছিল তাদের কাছে। আর সমাজও এমন দৃশ্য দেখার আগে নারীদের মৃত্যুর ব্যবস্থাই করে দিত। — [সজল শর্মা, প্রথম আলো ব্লগ] সতীদাহ প্রথা নিয়ে উপরোল্লেখিত দুটি প্রতিবেদনের মূল বক্তব্যগুলো হচ্ছে: ১) হিন্দু ধর্মের সাথে সতীদাহ প্রথার কোনোই সম্পর্ক নেই, ২) সতীদাহ প্রথার প্রচলন হয়েছে ভারতে মুসলিম আগ্রাসনের মধ্য দিয়ে, ৩) হাজার হাজার সতীদাহের ঘটনা মূলত মুসলিম আগ্রাসনের কারণেই ঘটেছে, এবং ৪) রাজা রামমোহন রায়ের ঐকান্তিক চেষ্টায় ব্রিটিশ সরকার আইনের মাধ্যমে সতীদাহ প্রথাকে রদ করেছে। তাই বাধ্য হয়ে এ বিষয়ে পড়াশুনা করে যা বুঝলাম তাতে দেখলাম সতীদাহ প্রথা বন্ধে ভারতীয় মুসলিমদের অবদান শুধু মুছেই ফেলার চেষ্টা করা হয়নি, রীতিমতো তা অস্বীকার করে উল্টোদিকে সতীদাহের দায় মুসলিমদের ঘাড়েই চাপিয়ে দেওয়ার হীন চেষ্টা করা হয়েছে। এই লেখায় সতীদাহ প্রথার উৎপত্তি, প্রকৃত ইতিহাস, ও এই প্রথা নির্মূলীকরণে মুসলিমদের অবদান পরিষ্কারভাবে তুলে ধরা হবে। ভারতীয় পৌত্তলিকবাদীদের পৈত্রিক সূত্রে প্রাপ্ত ধর্মে যেহেতু চরম অমানবিক দাস প্রথা বিদ্যমান, সেহেতু নাস্তিকতার লেবাস লাগিয়ে কিছু ধূর্ত খুব সুকৌশলে ইসলামের মধ্যেও অমানবিক দাস প্রথা গুঁজে দেবার চেষ্টা চালাচ্ছে; আব্রাহাম লিঙ্কনকে দাস প্রথা উচ্ছেদের জনক বানিয়ে দিয়ে নিজেদেরকে দাস প্রথা-বিরোধী মানবতাবাদী হিসেবে দেখিয়ে মুসলিমদের সামনে মানবতাবাদী আত্মতৃপ্তির ঢেকুর তুলছে। অন্যদিকে আবার এরা সতীদাহ প্রথা নির্মূলের জন্য পুরো কৃতিত্ব দিয়ে যাচ্ছে হিন্দু সমাজ বা হিন্দু সমাজ সংস্কারকদের। বলা হচ্ছে যে, ঐ সংস্কারকদের কল্যাণে হিন্দুসমাজের সতীদাহ প্রথা-সহ আরো কিছু অমানবিক প্রথা নির্মূল হবার ফলে হিন্দুসমাজ বিবর্তিত (!) হয়েছে তথা সভ্য হয়েছে। অন্যদিকে মুসলিমরা এখনো অবিবর্তিত বা অসভ্যই রয়ে গেছে, যেহেতু তারা তাদের ধর্মের কোনো অমানবিক প্রথাকেই নির্মূল করেনি। কিন্তু মুসলিমরা ইসলামের কোন্ অমানবিক প্রথাকে (!) নির্মূল করবে, তা স্পষ্ট করে বলা হয় না। প্রতিহিংসাপরায়ণ বা পরশ্রীকাতর মানসিকতায় সত্যকে মেনে নিতে না পারলে যা ঘটে, সেই ঘটনারই পুনরাবৃত্তি হচ্ছে। আস্তিক-নাস্তিক-নিধর্মী নির্বিশেষে কিছু বর্ণবাদী হিন্দু ও তাদের দোসরদের শয়নে-স্বপনে-জাগরণে একটাই চিন্তা মাথার মধ্যে ঘুরপাক খায়, আর তা হচ্ছে ইসলামের নবী ও ইসলামের দর্শনকে যে কোনো প্রকারে হেয় করা এবং মুসলিমদের অবদানকে যে কোনো ভাবে অস্বীকার করা কিংবা সম্ভব হলে একেবারে মুছে ফেলা। এই ধরণের মানসিকতার প্রপাগাণ্ডিস্টদের সাথে যুক্ত হয়েছে প্রগতিশীলতার দাবিদার ও ভাদা মানসিকতার পৈতৃকসূত্রে প্রাপ্ত মুসলিম নামধারী কিছু নাস্তিক। এবার আমরা আমাদের আলোচনাকে কোনো পৌরাণিক কল্পকাহিনীতে না টেনে জেনে নিই সতীদাহ প্রথার উৎপত্তি, প্রকৃত ইতিহাস, এবং লালন পালন সম্পর্কে। গুপ্ত সম্রাজ্যের (খৃষ্টাব্দ ৪০০) আগে থেকেই ভারতবর্ষে সতীদাহ প্রথার প্রচলন ছিল। প্রচীন সতীদাহ প্রথার উদাহারণ পাওয়া যায় অন্তর্লিখিত স্মারক পাথরগুলিতে। সবচেয়ে প্রাচীন স্মারক পাথর পাওয়া যায় মধ্য প্রদেশে, কিন্তু সবথেকে বড় আকারের সংগ্রহ পাওয়া যায় রাজস্থানে। এই স্মারক পাথরগুলিকে সতী স্মারক পাথর বলা হতো যেগুলো পূজা করার বস্তু ছিল [Shakuntala Rao Shastri, Women in the Sacred Laws – The later law books (1960)]। ডায়োডরাস সিকুলাস (Diodorus Siculus) নামক গ্রীক ঐতিহাসিকের খ্রিষ্টপূর্ব প্রথম শতকের পাঞ্জাব বিষয়ক লেখায়ও সতীদাহ প্রথার বিবরণ পাওয়া যায় [Doniger, Wendy (2009). The Hindus: An Alternative History. Penguin Books. p. 611]। তাছাড়া, আলেক্সান্ডারের সাথে ভারতে বেড়াতে আসা ক্যাসান্ড্রিয়ার ইতিহাসবিদ এরিস্টোবুলুসও সতীদাহ প্রথার বর্ণনা লিপিবদ্ধ করেন। খৃষ্ট পূর্বাব্দ ৩১৬ সালের দিকে একজন ভারতীয় সেনার মৃত্যুতে তার দুই স্ত্রীই স্বপ্রণোদিত হয়ে সহমরণে যায় [Strabo 15.1.30, 62; Diodorus Siculus 19.33; Sati Was Started For Preserving Caste Dr. K. Jamanadas]। [সূত্র: উইকিপিডিয়া] এ ছাড়াও আরো অনেক লেখকের অনেক ধরণের বক্তব্য আছে। কাজেই সতীদাহ প্রথাকে ভারতবর্ষে ইসলামের আগমনের সাথে মিলিয়ে ফেলা অসৎ উদ্দেশ্য ও ডাহা মিথ্যাচার ছাড়া আর কিছুই নয়। সঙ্গত কারণে সতীদাহ প্রথা হিন্দু শাস্ত্রে আছে কি নেই, তা আলোচনার বাইরে রাখা হলো। সতীদাহ প্রথা নির্মূলীকরণে মুসলিমদের আইনানুগ অবদান ১. সতীদাহ প্রথা বন্ধের প্রথম সরকারি প্রচেষ্টা মুসলিমরা করেছিলেন। মুহাম্মদ বিন তুঘলক সর্বপ্রথম এই প্রথা বন্ধের চেষ্টা চালিয়ে ছিলেন। [L. C. Nand, Women in Delhi Sultanate, Vohra Publishers and Distributors Allahabad 1989] ২. মুঘল সম্রাটদের মধ্যে যারা সতীদাহ প্রথা বন্ধ করতে চেয়েছিলেন, তাদের মধ্যে হুমায়ূন স্থানীয় হিন্দুদের প্রতিবাদের মুখে পড়েছিলেন। [Central Sati Act – An analysis by Maja Daruwala is an advocate practising in the Delhi High Court. Courtsy: The Lawyers January 1988. The web site is called Peoples Union for Civil Liberties] ৩. অনেক সময় মুঘল প্রসাশন থেকে বিধবা মহিলাদের পেনশন বা উপহার দেওয়া হতো সতীদাহ না করার জন্য। [উপরের সূত্র দ্রষ্টব্য] ৪. শিশুদের এই প্রথা থেকে রক্ষা করা হয়েছিল। সম্রাট শাহজাহানের সময় নিয়ম ছিল কোনো অবস্থাতেই যেসব মহিলাদের সন্তান আছে তাদের দাহ হতে দেওয়া হবে না। [XVII. Economic and Social Developments under the Mughals from Muslim Civilization in India by S. M. Ikram edited by Ainslie T. Embree New York: Columbia University Press, 1964. This page maintained by Prof. Frances Pritchett, Columbia University] ৫. সব থেকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হয় সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়। ১৬৬৩ সালের ডিসেম্বর মাসে তিনি রুল জারি করেন, যেকোনো পরিস্থিতিতে মুঘল কর্তৃক নিয়ন্ত্রিত দেশের কোথাও সতীদাহ ঘটতে সরকারি অনুমতি দেওয়া হবে না। ইউরোপীয় পর্যটকদের বর্ণনা অনুযায়ী সম্রাট আওরঙ্গজেবের শাসনামলের শেষের দিকে সতীদাহ প্রথা প্রায় বন্ধ হয়ে গিয়েছিল, শুধু রাজাদের স্ত্রীরা ব্যতীত। [XVII. Economic and Social Developments under the Mughals from Muslim Civilization in India by S. M. Ikram edited by Ainslie T. Embree New York: Columbia University Press, 1964. This page maintained by Prof. Frances Pritchett, Columbia University] সতীদাহ প্রথা বন্ধে ইসলামের পরোক্ষ অবদান ইসলামের বিভিন্ন শিক্ষা নিয়ে হিন্দু ধর্মের সংষ্কারে সৃষ্টি হয় শিখ ধর্ম যাতে সতীদাহ প্রথা একেবারে নিষিদ্ধ। তার মানে ভারতে সতীদাহ প্রথা উচ্ছেদের প্রথম অমুসলিম ভারতীয় পদক্ষেপটিও আসে ইসলামেরই প্রভাবে। খারাপকে খারাপ জানতে পারা অনেক বড় বিষয়, আর এই কাজটিই ভারতে ইসলাম করেছে। ইসলাম সবাইকে মুসলিম বানাতে না পারলেও ভারতের সার্বিক মূল্যবোধ তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে। সতীদাহ যে একটি অমানবিক প্রথা, নিদেনপক্ষে এটা ভারতীয়দের বুঝাতে পেরেছে – শিখ ধর্মে সতীদাহ নিষিদ্ধ হওয়া তারই একটি বাস্তব প্রতিফলন। রাজা রামমোহন রায়ও ইসলাম সম্পর্কে গভীরভাবে পড়াশুনা করেন, কুরআন-হাদিস অধ্যয়ন করেন, এবং মুতাজিলা ও সুফীবাদ দ্বারা প্রভাবিত হন। ফলে তিনি মূর্তি পূজা ছেড়ে দেন এবং একেশ্বরবাদী হয়ে যান। যার ফলশ্রুতিতে পিতার সাথে মতবিরোধের ফলে তাকে গৃহত্যাগ করতে হয় [সূত্র]। তাই একেশ্বরবাদী রাজা রামমোহনের মনন সৃষ্টিতে ইসলামের অবদান অস্বীকার করা যায় না। এজন্য তাঁর দ্বারা সনাতন ধর্মের যদি কোনো উপকার হয়ে থাকে, তাহলে সেই উপকারের পিছনে ইসলামের নাম রাখতেই হবে। উপসংহার বলা হচ্ছে হিন্দু সমাজ থেকে সতীদাহ প্রথা নির্মূল হয়েছে। এটি একেবারেই অসত্য একটি দাবি। কারণ, আধুনিক কালেও এর উদাহরণ পাওয়া যায়। তাই সঠিকভাবে বললে বলতে হবে, সময় ও পরিস্থিতির চাপে পড়ে সতীদাহ প্রথা প্রায় বন্ধ হয়েছে। কেননা আগে থেকেই ব্রাহ্মণ স্কলার ও প্রভাবশালী হিন্দুরা এই প্রথা বন্ধের বিরুদ্ধে ছিলেন। শুধু তা-ই নয়, ধর্ম দিয়ে সতীদাহ প্রথাকে সমর্থন করারও চেষ্টা করা হয়েছে। এও বলা হয়েছে যে, বিধবা নারীদের নির্বাণ লাভের জন্য সতীদাহ একটি পূণ্যের কাজ। [সূত্র: উইকিপিডিয়া] বাস্তবতা হচ্ছে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে প্রথম বারের মতো পদক্ষেপ নেন সুলতান মুহাম্মদ তুঘলক। এর পর একে একে সম্রাট হুমায়ূন, আকবর, শাহজাহান, ও আওরঙ্গজেব সতীদাহ প্রথা বন্ধের জন্য কঠোর পদক্ষেপ নেন। [সূত্র: উইকিপিডিয়া] কিন্তু সতীদাহ প্রথাকে যেহেতু ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে পূণ্যের কাজ মনে করা হয় সেহেতু এরকম একটি প্রথাকে অল্প সময়ে বা চাওয়া মাত্রই নির্মূল করা বাস্তবে সম্ভব নয়। তবে মুঘল সম্রাটরা ধাপে ধাপে এই প্রথা নির্মূলের কাজ অনেকটাই প্রশস্ত করেছিলেন। এই প্রথার বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষকে সচেতন করা হয়েছিল। ইউরোপীয় পর্যটকদের বক্তব্য অনুযায়ী আওরঙ্গজেবের শাসনামলের শেষের দিকে সতীদাহ প্রথা বিলুপ্ত না হলেও একেবারে কমে যায়। রাজা রামমোহন রায়ের আগ পর্যন্ত সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে হিন্দু সমাজ সংস্কারকদের কোনো রকম ভূমিকা খুঁজে পাওয়া যায় না, যেখানে মুসলিম শাসক এবং ইসলামের দর্শনের সংস্পর্শে থেকে সতীদাহ প্রথা প্রায় নির্মূলের পথে এসেছিল। অথচ কয়েক বছরের আন্দোলন প্রচেষ্টার জন্য রাজা রামমোহন রায় ও বৃটিশ গভর্ণর লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক-কে সতীদাহ প্রথা বন্ধের পুরো কৃতিত্ব দেওয়া হয়েছে। হাজার হাজার বছর ধরে যে প্রথা সমাজের মানুষের মন মগজে পূণ্যকর্ম চর্চা বলে পালিত হয়ে আসছিল সেই প্রথা মাত্র কয়েক বছরে ব্যক্তি বিশেষের প্রচেষ্টায় নির্মূল হয়ে যাবে, সে কথা জ্ঞানপাপীরা দাবি করলেও বাস্তববাদীদের কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। প্রকৃতপক্ষে, রাজা রামমোহন রায় তাঁর এক বৌদিকে জোরপূর্বক সতী বানানোর ঘটনা দেখে ১৮১২ সালের দিকে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে সামাজিক আন্দোলন শুরু করেন। তার আগ পর্যন্ত হিন্দু সমাজ সংস্কারকদের মধ্য থেকে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে কোনো রকম আন্দোলনের কথা শোনা যায় না। ফলে রাজা রামমোহন রায়ের সাথে সাথে আপামর হিন্দু সমাজ কোনো ভাবেই এই প্রথা নির্মূলের কৃতিত্ব দাবি করতে পারে না – এককভাবে তো নয়-ই। এখনো সুযোগ দেওয়া হলে বর্ণ হিন্দুদের মধ্যে সতীদাহ প্রথা আবার শুরু হবে – বিশেষ করে ভারতে – কারণ, এই প্রথার পুনঃপ্রচলনে ও একে টিকিয়ে রাখতে ভারতীয় বর্ণ হিন্দুরাই ছিল সবচেয়ে অগ্রগামী। তার প্রমাণ হচ্ছে ১৮২৯ সালের দিকে বৃটিশ শাসনামলে এই প্রথার বিরুদ্ধে পুনারায় আইন করা হলেও পরবর্তীতে সতীদাহের ঘটনার খবর পাওয়া যায়। অতএব, হিন্দু সমাজের এই চরম বর্বর ও অমানবিক প্রথা উচ্ছেদে মুসলিমদের অবদানকে যারা পরিকল্পিত ভাবে মুছে ফেলে উল্টোদিকে মুসলিমদের উপরই এর দায় চাপাতে চায় তাদের উচিত সঠিক ইতিহাসের দিকে পুনরায় ফিরে তাকানো। তাহলেই তারা অনুধাবন করতে সক্ষম হবে যে, সতীদাহ প্রথা প্রচলনের সাথে মুসলিমদের কোনো রকম সম্পর্ক তো নেই-ই বরং এই প্রথা নির্মূলীকরণে মুসলিমদের অবদান অনস্বীকার্য। নোট-১: অতি সম্প্রতি সতীদাহ প্রথার উৎপত্তি নিয়ে এক হিন্দুত্ববাদীর দিনে-দুপুরে মিথ্যাচার দেখুন- SwarupKNath Email Print ট্যাগ(গুলি): সতীদাহ প্রথা কমপক্ষে ১,৩৫২ বার পঠিত ৪৪ মন্তব্যএক লাফে মন্তব্যের ঘরে ↓ ১ এস. এম. রায়হান জানুয়ারী ২৬, ২০১৩ at ১১:৪৫ পূর্বাহ্ন (UTC 6) Reply সতীদাহ প্রথা কী? বাংলা ও ইংরেজী উইকি থেকে জেনে নিন- সতীদাহ প্রথা হচ্ছে হিন্দু ধর্মাবলম্বী বিধবা নারীদের স্বামীর চিতায় সহমরণে বা আত্মাহুতি দেবার ঐতিহাসিক প্রথা। Satī (Devanagari: सती, the feminine of sat true; also called suttee) was a social funeral practice among some Indian communities in which a recently widowed woman would immolate herself on her husband’s funeral pyre. সতীদাহ প্রথার উৎস কী? উইকি থেকে দেখুন- The term is derived from the original name of the goddess Sati, also known as Dakshayani, who self-immolated because she was unable to bear her father Dakshas humiliation of her (living) husband Shiva. সতীদাহ প্রথার সংক্ষিপ্ত ইতিহাস- Few reliable records exist of the practice before the time of the Gupta empire, approximately 400 CE. After about this time, instances of sati began to be marked by inscribed memorial stones. The earliest of these are found in Sagar, Madhya Pradesh, though the largest collections date from several centuries later, and are found in Rajasthan. These stones, called devli, or sati-stones, became shrines to the dead woman, who was treated as an object of reverence and worship. They are most common in western India. A description of suttee appears in a Greek account of the Punjab written in the first century BCE by historian Diodorus Siculus. ২ এস. এম. রায়হান জানুয়ারী ২৬, ২০১৩ at ১১:৪৮ পূর্বাহ্ন (UTC 6) Reply বাংলা উইকি, পোস্টে উল্লেখিত দুটি প্রতিবেদন, ও আরো অনেক লেখায় দাবি করা হয়েছে যে, রাজা রামমোহন রায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সতীদাহ প্রথা বন্ধ হয়েছে। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে সুলতান মুহাম্মদ তুঘলক থেকে শুরু করে সম্রাট হুমায়ূন, আকবর, শাহজাহান, ও আওরঙ্গজেব একে একে কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছেন। দেখুন- The earliest known attempt by a government to stop the practice took place here, that of Muhammad Tughlaq, in the Sultanate of Delhi in the 14th century. Although the Muslim Mughals interfered little with local customs, they seemed intent on stopping sati. Mughal emperor Humayun (1508-1556) was the first to try a royal fiat against sati. He was met with resistance from the local Hindu population. Akbar (1542–1605) was next to issue official general orders prohibiting sati and insisted that no woman could commit sati without the specific permission of his Chief police officers. The Chief police officers were instructed by him to delay the womans decision for as long as possible. Pensions, gifts and rehabilitative help was offered to the potential sati to persuade her from committing the act. The Muslim Mughals strictly forbade and many times, rescued children from the practice. Tavernier, writing in the reign of Shah Jahan, observed that widows with children were not allowed in any circumstances to burn and that in other cases, governors did not readily give permission, but could be bribed to do so. The emperor Aurangzeb was the strongest opponent of sati among the Mughals. In December 1663, he issued an order that in all lands under Mughal control, never again should the officials allow a woman to be burnt. Although the possibility of an evasion of government orders through payment of bribes existed, later European travelers record that by the end of Aurangzeb’s reign, sati was much abated and very rare, except by some Rajah’s wives. According to at least one source, it was very rare for anyone in the later Mughal empire except royal wives to be burnt. [Reference: Wikipedia] ইউরোপীয় পর্যটকদের বক্তব্য অনুযায়ী আওরঙ্গজেবের শাসনামলের শেষের দিকে সতীদাহ প্রথা ছিল না বললেই চলে। অথচ সতীদাহ প্রথা বন্ধে এত লম্বা একটি ইতিহাসকে গায়েব করে দিয়ে রাজা রামমোহন রায়কে পুরো কৃতিত্ব দেয়া হয়েছে। তাহলে ঘটনা কী? ঘটনা হচ্ছে আওরঙ্গজেবের শাসনামলের শেষের দিকে সতীদাহ প্রথা প্রায় বন্ধ হয়েছিল ঠিকই, কিন্তু পরবর্তীতে আবার শুরু হয় – বিশেষ করে পশ্চিম বঙ্গে অনেক সতীদাহের ঘটনা ঘটে। দেখুন- Raja Ram Mohan Roy estimated that there were ten times as many cases of Sati in Bengal compared to the rest of the country. Bentinck, in his 1829 report, states that 420 occurrences took place in one (unspecified) year in the Lower Provinces of Bengal, Bihar and Orissa, and 44 in the Upper Provinces (the upper Gangetic plain). অধিকন্তু, রাজা রামমোহন রায়ের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সতীদাহ প্রথা বন্ধ হয় – এই দাবি আংশিক সত্য। কারণ রাজা রামমোহন রায়ের প্রচেষ্টায় ও লর্ড উইলিয়াম বেন্টিংক এর সহযোগীতায় ১৮২৯ সালে শুধুমাত্র বাংলায় এই প্রথার বিরুদ্ধে আইন করা হয়। অথচ তার অনেক পর পর্যন্তও ভারতের অন্যান্য প্রদেশ, নেপাল, ও ইন্দোনেশিয়াতে এই প্রথা প্রচলিত বা লিগ্যাল ছিল। দেখুন- On 4 December 1829, the practice was formally banned in the Bengal Presidency lands, by the then-governor, Lord William Bentick. The ban was challenged in the courts, and the matter went to the Privy Council in London, but was upheld in 1832. Other company territories also banned it shortly after. Although the original ban in Bengal was fairly uncompromising, later in the century British laws include provisions that provided mitigation for murder when the person whose death is caused, being above the age of 18 years, suffers death or takes the risk of death with his own consent. Sati remained legal in some princely states for a time after it had been abolished in lands under British control. Jaipur banned the practice in 1846. Nepal continued to practice Sati well into the 20th century. On the Indonesian island of Bali, sati (known as masatya) was practised by the aristocracy as late as 1905, until Dutch colonial rule pushed for its termination. তাহলে রাজা রামমোহন রায় সতীদাহ প্রথা বন্ধের জনক হলেন কীভাবে? বর্ণহিন্দু নাস্তিকদের কেউ কেউ আবার সতীদাহ প্রথা নির্মূলের জন্য হিন্দু সমাজকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন – যেনো পুরো হিন্দু সমাজ সতীদাহ প্রথা বন্ধের জন্য আন্দোলন করেছে! এটি একটি ডাহা মিথ্যা প্রপাগাণ্ডা ছাড়া কিছু নয়। হিন্দুত্ববাদী মনন: যাহা কিছু খারাপ বা আপাতদৃষ্টিতে খারাপ দেখায় বা তাদের কাছে খারাপ বলে মনে হয় সেগুলোর দায় ইসলাম বা মুসলিমদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া। কোনো কিছুকে পুরোপুরি ইসলাম বা মুসলিমদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া সম্ভব না হলে সেটিকে কোনো ভাবে ইসলাম বা মুসলিমদের সাথে সম্পৃক্ত করা। অন্যদিকে যাহা কিছু ভালো বা আপাতদৃষ্টিতে ভালো দেখায় বা তাদের কাছে ভালো বলে মনে হয় সেগুলোর কৃতিত্ব নিজেদের বলে দাবি করা। এর পক্ষে অনেক প্রমাণ আছে। নিচে এই পোস্টের প্রাসঙ্গিক একটি প্রমাণ দেখুন। সতীদাহ প্রথাকে শত চেষ্টা করেও যে ইসলাম বা মুসলিমদের ঘাড়ে চাপিয়ে দেয়া সম্ভব নয়, তা এই দুনিয়ার সবাই জানে। এজন্য চরম ধূর্তামীর আশ্রয় নিয়ে সতীদাহ প্রথার সাথে মুসলিমদেরকে সম্পৃক্ত করা হয়েছে। আর ৭১-কে জড়িয়ে এমনভাবে সম্পৃক্ত করা হয়েছে যাতে করে মুসলিমরা যেনো ভয়ে কিছু বলতে না পারে! ৩ সাদাত জানুয়ারী ২৬, ২০১৩ at ১২:০১ অপরাহ্ন (UTC 6) Reply লেখা চমৎকার হয়েছে। দুইটি মিথ্যাচারকে খুবই যৌক্তিকভাবে খণ্ডন করে প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরেছেন। একটা জাতীয় দৈনিকে এরকম গাঁজাখুরি লেখা কিভাবে প্রকাশ পায়? ৩.১ এস. এম. রায়হান জানুয়ারী ২৯, ২০১৩ at ২:৫৭ অপরাহ্ন (UTC 6) Reply ধন্যবাদ। সতীদাহ প্রথা নিয়ে অনুসন্ধান করতে যেয়ে জাতীয় দৈনিকে এমন একটি লেখা দেখে তো মাথা খারাপ অবস্থা। এই লেখা যে কীভাবে সেখানে ছাড় পেল, কে জানে। ৩.১.১ নজরুল ইসলাম ফেব্রুয়ারী ৪, ২০১৩ at ২:৪৬ অপরাহ্ন (UTC 6) Reply আপনার লেখাগুলো মনে দাগ কেটে যায়। সত্য প্রকাশ হবেই। আল্লাহ আপনার মঙ্গল করুন। ৪ শাহবাজ নজরুল জানুয়ারী ২৬, ২০১৩ at ১২:১৬ অপরাহ্ন (UTC 6) Reply রায়হান ভাই, আপনার সব লেখাই কমবেশি এঞ্জয় করি তবে কোনো সন্দেহ নাই যে এই লেখাটি একখানা মাস্টারপিস হয়েছে। সতীদাহ তো যতটুকু জানি হিন্দুদের মধ্যে থেকেই উদ্ভুত – ওদের ধর্ম গ্রন্থে তো মনে হয় শ্লোকও আছে এনিয়ে। ব্রাহ্মণ সজল শর্মার কথা না হয় বাদ দিলাম – তবে আমার দেশের ‘ইমরান রহমান’ নামের এই ছাগলডা কে? পত্রিকাগুলো এমন লেখা ছাপে কিভাবে? কোনো মডারেটরও নাই? সতীদাহও মুসলিমদের উপর চাপিয়ে দিল!!! হায়রে হায় কৈ যাই??!! এরপরে দেখবেন বর্ণ প্রথাও মুসলিমদের কাছ থেকে এসেছে তা দাবি করা হবে। এটি একটি অসাধারণ লেখা। ৪.১ শামস জানুয়ারী ২৬, ২০১৩ at ১২:৩০ অপরাহ্ন (UTC 6) Reply এর জন্য ইমরান রহমানকে দোষ দিয়ে লাভ নেই। বর্ণমনা টাইপের লোকেরা এ বিষয়টি নিয়ে এভাবেই প্রচার চালাচ্ছে। কিন্তু একে রিফিউট করে লেখা দেখতে পাওয়া যায় না। ফলে অনেক বর্ণহিন্দুদের মত আপামর মানুষও সেইভাবেই একে দেখছে ও গিলছে! ৪.২ এস. এম. রায়হান জানুয়ারী ২৬, ২০১৩ at ১২:৫১ অপরাহ্ন (UTC 6) Reply আমার দেশের ‘ইমরান রহমান’ নামের এই ছাগলডা কে? এই ইমরান রহমান নামের ছাগলডা যে কে, তা বলা সম্ভব না হলেও এটি যে একটি ছদ্মনাম তাতে মনে হয় কোনোই সন্দেহ নাই। ইতোমধ্যে অনেক মুসলিম সাউণ্ডিং নাম নিয়ে কিছু ধূর্তের কাজ-কারবার তো দেখেছেনই। অতি সাম্প্রতিক উদাহরণ হচ্ছে সদালাপে আব্দুল হকরূপী ঘুরে ঘুরে ভবেরঘরে। এরপরে দেখবেন বর্ণ প্রথাও মুসলিমদের কাছ থেকে এসেছে তা দাবি করা হবে। শুরু হয়ে গেছে মনে হয়। ইতোমধ্যে নারীদের পর্দাকে খারাপ কিছু ধরে নিয়ে হিন্দু নারীদের পর্দার দায় ভারতে মুসলিম আগ্রাসন এর উপর চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। বলার চেষ্টা করা হয়েছে যে, ভারতে মুসলিম আগ্রাসনের কারণে হিন্দু নারীরা পর্দা করা শুরু করে! এ নিয়ে বর্ণমনা ব্লগে একাধিক মন্তব্য আছে। ৫ শামস জানুয়ারী ২৬, ২০১৩ at ১:৪২ অপরাহ্ন (UTC 6) Reply লেখাটিকে স্টিকি করা হোক। খুব ইন্টারেস্টিং টপিক! রাজা রামমোহন রায়সহ যারা এই সতীদাহ নির্মূল করেছে বলে দাবী করছে তারা মুক্তমনা টাইপের ইসলাম বিদ্বেষী বর্ণহিন্দু ও তাদের কাছে মস্তক বিক্রি করে দেয়া দাসমনোবৃত্তির কিছু মুসলিম নামধারী প্রগতিশীল (!)। বিজেপি ও তাদের সাঙ্গপাঙ্গ শিবসেনাদের ক্ষমতায় আসার পর তারা আরো শক্তিশালী হয়েছে, সেই ধারাবাহিকতা এখনো চলছে। এদের বিপরীতে আপনার জবাবটা দারুণ হয়েছে, খুব তথ্যনির্ভর। রাজা রামমোহন রায়সহ যারা এই সতীদাহ প্রথার বিরুদ্ধে আন্দোলন করেছিলেন তাদের মধ্যে একটা মিল খুঁজে পাওয়া যায়, তারা অভিজাত হিন্দু ও ব্রাহ্মণ, তবে সবাই কুলীন ব্রাহ্মণ না। তারা ব্রাহ্মধর্মও প্রতিষ্ঠা করেন! এই ব্রাহ্মণদের দ্বারা যে সমাজ সংস্কার হয় সেটা ছিল আত্নরক্ষামূলক। প্রথমে ইসলাম ও পরে খৃষ্টান (ধর্মীয় পরিচয়) প্রভাবেই তাদের মধ্যে এই চাপ আসে। মুসলিমরা ব্রাহ্মণদেরকে শুধু সামরিক শক্তিতেই হারায়নি, তাদের আভিজাত্যকে মাটিতে মিশিয়ে দিয়েছিল। অপরদিকে ধর্মীয়ভাবেও সুপেরিয়রিটি প্রতিষ্ঠা করে ইসলাম। এর বৈশ্বিক আবেদন, সাম্য, ন্যায়বিচার-ভিত্তিক সমাজের সাথে সনাতন ধর্ম অসহায় ছিল। অপরদিকে আরেকটি আব্রাহামিক ও একেশ্বরবাদী ধর্ম খৃষ্টানদের প্রভাবে এসে তাদের ধর্মীয় অবস্থান আরো শোচনীয় হয়ে পড়ে। মজার ব্যাপার হল বর্ণহিন্দুদের মতো কুশীল মুসলিম নামধারী নাস্তিকরা ইসলামকেতো হেয় করেই উপরন্তু পুরো কৃতিত্ব দেয় হিন্দুসমাজকেই, আল্টিমেটলি সেটার কৃতিত্ব ব্রাহ্মণদেরই!!! মুসলিম নামধারীগুলো এমনই দাস হয়েছে যে ঐতিহাসিক সূত্রগুলোকে একটু পরীক্ষা করে দেখারও প্রয়োজন বোধ করে না। রাজা রামমোহন রায় ইসলাম ও ক্রিষ্টিয়ানিটির বিশ্বজনীন আবেদন দ্বারা প্রভাবিত হয়েই ব্রাহ্মসমাজ প্রতিষ্ঠা করেন [১]। তিনি সংস্কৃত ও বাংলার পাশাপাশি আরবী, ফারসী ভাষায়ও খুব পারদর্শী ছিলেন। বাবার মৃত্যুর পর মুর্শিদাবাদ এসে তিনি পার্সিতে প্রথম বই লেখেন তার প্রিফেস ছিল আরবীতে “Tuhfat-ul-Muwahhidin” যার বাংলা করলে দাঁড়ায় “A Gift to Monotheism”। শুধু তাই নয় আর্য সমাজ, রামকৃষ্ণ মিশন ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা পায় মুসলিমদের দ্বারা প্রভাবিত হয়েই। আর্য সমাজ প্রতিষ্ঠার প্রধান লক্ষ্য ছিল যেসব হিন্দু মুসলিম ও ক্রিষ্টান হয়ে গেছে তাদের আবার হিন্দু সমাজে ফিরিয়ে আনা। রামকৃষ্ণ মিশনের রামকৃষ্ণ ইসলাম ও ক্রিষ্টিয়ানিটি দ্বারা প্রভাবিত হয়েই হিন্দু ধর্মের বৈশ্বিক করার প্রয়াস পান। স্বামী বিবেকানন্দও সেই রামকৃষ্ণ মিশনের লোক। একেশ্বরবাদী আব্রাহামিক ধর্মের প্রভাবকে ঠেকাতেই তাদের এই সংস্কার। আর এসব সংস্কারকরাও দেখা যায় ব্রাহ্মণ। আব্রাহামিক ধর্মের প্রভাবে তারাই সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছিল। ব্রাহ্মসমাজের প্রতিষ্ঠাতা রাজা রামমোহন রায়, দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর এরা উঁচু বর্ণের ব্রাহ্মণ, আর্য সমাজের স্বামী দয়ানন্দ সারাভাস্তি উঁচু বর্ণের ব্রাহ্মণ ও রামকৃষ্ণ মিশনের রামকৃষ্ণ গোঁড়া বাঙ্গালী ব্রাহ্মণ পরিবারের লোক। জাতপাত হিন্দু স্ক্রিপচার মনুসংহিতার অংশ হলেও পরিস্থিতির চাপে পড়ে জাত প্রথাকেও অস্বীকার করেছেন [৩]। তবে খৃষ্টানদের চেয়ে মুসলিমদের প্রভাবই ছিল সবচেয়ে বেশী। আর সেটার শুরুও হাজার বছর আগে। যেমন, হিন্দুদের তিনটি প্রধান দলের মধ্যে বিষ্ণুপন্থীদের মধ্যে তিনজন প্রধান সংস্কারকের আগমণ ঘটে। তারা হলেন ১১’শ শতকের রামানুজ, ১৪’শ শতকের রামানন্দ এবং শ্রীচৈতন্য (১৪৮৫ – ১৫২৭ খৃস্টাব্দ)। রামানন্দ তার সংস্কার আন্দোলনে নীচুজাতকে সমাজে গ্রহণ করার কথা বলেন। তার বিশিষ্ট সহচর কবির (১৩৮০-১৪২০ খৃস্টাব্দ) আরো অনেকদূর অগ্রসর হয়ে হিন্দু ধর্মের সাথে ইসলামের যোগসূত্র স্থাপন করেন। কবির সব মানুষের জন্য সাম্যের কথা বলেছেন। কবির এর হিন্দু শাখা থেকেই শিখ ধর্মের উৎপত্তি। গুরু নানাক (১৪৬৯-১৫৩৮ খৃস্টাব্দ) দ্বারা পাঞ্জাবে এর প্রতিষ্ঠা করেন। এর অনেক কোর কনসেপ্ট ইসলাম থেকেই ধার করা। যেমন, স্রষ্টার একত্ব ও মানুষের ভ্রাতৃত্ব ইত্যাদি [৪]। অতএব, এখানে হঠাত করে কোন অর্জন আসেনি। মূলত একেশ্বরবাদী ইসলাম ও পরবর্তীতে খৃষ্টান ধর্ম এখানকার স্থানীয় ধর্ম ও সমাজকে রিশেপ করছিল, যার ফলশ্রুতিতে সতীদাহ প্রথার উচ্ছেদ, আর তাছাড়া আরো আছে; যেমন, জাতপাতের মূলে কূঠারাঘাত ইত্যাদি। ১. philtar.ac.uk/encyclopedia/hindu/ascetic/brahmo.html ২. thebrahmosamaj.net/impact/impact.html ৩. hinduism.iskcon.org/tradition/1207.htm ৪. The Peoples of India, J. D. Anderson, Cambridge at the University Press, 1913, (এন্ডারসন ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলার শিক্ষক ও একসময়ের ভারতে বসবাসকারী সিভিল সারভেন্ট)
Posted on: Sat, 11 Oct 2014 00:23:23 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015