আজ ফাহিম নেই। তরনিকে ফাকি দিয়ে চলে গেছে না ফেরার দেশে। তরনি এখন বুঝতে পারে ফাহিমের শুন্যতা। কতটা যায়গা নিয়ে ছিলো ছেলেটা তার হৃদয়ে। একদিন তরনি চাইতো কত মানুষ মরে কিন্তু এই ছেলেটা মরে না কেন? আজ তার মনের আশা পূর্ন হয়েছে। কিন্তু চোখের জল বলে দিচ্ছে সেদিনের সেই কথাটা বলা তার কতটা ভুল ছিলো। . প্রায় ৪ বছর আগের কথা। তরনি তখন দশম শ্রেণীর ছাত্রী, আর ফাহিম একাদশ শ্রেণীতে পড়ে। হঠাৎ একদিন, -- তরনি, একটু দাড়াও। -- সরি, আমার সময় নাই। -- প্লিজ একটু দাড়াও। আমি বেশি সময় নিব না। -- হুম বলেন। -- আসলে..... -- আসলে কি? -- না মানে, আসলে.... -- কি ছাগলের মত ম্যা ম্যা করছেন? সরে দাঁড়ান, আমাকে যেতে দিন। -- নিশ্চই যাবে, তবে... -- তবে কি? -- তোমাকে আমি ভালবাসি। -- আপনার সাহস দেখে আমি অবাক হই। ভাবলেন কি করে যে, আপনার মত একটা ছেলেকে আমি ভালবাসবো? -- আমি কি বলেছি তোমাকে ভালবাসতে? আমি তোমাকে ভালবাসি সেটাই শুধু জানিয়ে দিলাম। -- আচ্ছা, এখন আমাকে যেতে দিন। (তরনি চলে যাচ্ছিলো। ফাহিম তার হাত ধরে ফেলে। আর সাথে সাথেই সজোরে একটা শব্দ হয় ফাহিমের গালে তরনির হাতের সাথে। ফর্সা টকটকে গাল মূহুর্তে লজ্জায় লাল হয়ে যায় ফাহিমের।) -- তুমি আমাকে মারলে..!!! -- না, আদর করেছি। . কথা গুলো বলেই গট গট করে তরনি চলে যায় সেখান থেকে। এর পর থেকে মাঝে মাঝেই পথে দাড়িয়ে থাকতো ফাহিম। তরনির খুব অসস্তি লাগতো। মনে ভাবতো, এতো লোক মরে এই ছেলেটা কি মরতে পারে না? আসঝ্য। . সব কাজ রুটিন মাফিক চলতে থাকতে। ফাহিম রোজ তরনির পিছে পিছে ঘোরে। দেখতে দেখতে দিন পার হতে থাকে। ফাহিম রাবিতে (রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়) ভর্তি হয়। আর তরনি স্কুল জীবন শেষ করে কলেজে পা দিয়েছে। তবুও ফাহিম আগের মতই পাগলামি করে। আচ্ছা ছেলেটা চায় কি? নিজের মনেই বলে ফেলে তরনি। এখন তরনির মনে ফাহিম নামের পোকাটা বাসা বাঁধতে শুরু করেছে। একন আর তাকে অসহ্য মনে হয় না। বরং ইচ্ছা করে সে যে রোজ তার জন্য অপেক্ষা করে। . কথায় আছে মেয়েদের বুক ফাটে তো মুখ ফোটে না। তরনির বেলাতেও হলো তাই। ফাহিমের জন্য গরে ওঠা ভালবাসা নিজের মনেই বড় করতে লাগলো। কাওকে বুঝতে দিল না সে কথা। তরনি এখন উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করে ভাল কোথাও ভর্তি হওয়া নিয়ে ব্যাস্ত। হঠাৎ করেই খবর পায়, ফাহিমের ব্রেইন ক্যান্সার হয়েছে। বুকের ভেতরটা মুচড়ে ওঠে তার। কাওকে বোঝাতে পারে না তার কষ্ট টা। ক্যান্সার ধরা পরার পাঁচ দিনের মাথায় ফাহিম মারা যায়। . সেদিন তরনি খুব কেঁদেছিল। সবাই অবাক হয়ে দেখেছিলো তিল তিল করে গরে ওঠা একটা ফুলের কলি কিভাবে ফোটার আগেই ঝরে যেতে পারে। তরনি আজও ফাহিমের মৃত্যুর জন্য নিজেকে দায়ি করে। ভাবে তার সেদিনের কথার জন্যই হয়তো.. যাই হোক এতো টা করা ঠিক হয়নি সেদিন। ভুল করে রাগের মাথায় যে চড়টা মেরেছিলো তার জন্য সরি বলাও হলো না। তার বুকের ভেতর বাসা বাধা ফাহিম নামের পোকাটা বড় হওয়ার আগেই মারা গেল।। . *মন্তব্য: ১, কাওকে ভালবাসলে তা বলার জন্য বেশি সময় নিবেন না। হতে পারে আপনার কথাটা না বলাই রয়ে গেল। সারা জীবন আফসোস করার চেয়ে একদিন একটু সাহস করে ভালবাসার মানুষটির সামনে দাড়িয়ে ভালবাসি বলাটাই উত্তম। . ২, হুট হাট কাওকে অভিসাপ দেয়া ঠিক নয়। আমরা বাঙালীরা এই কাজটা সচারাচর একটু বেশিই করে থাকি। মনে রাখবেন, একদিনের একটু ভুল সারা জীবন যেন আপনার কান্নার কারন না হয়। . *উৎসর্গ: স্বর্গীয় শুর্ভ এবং কলি। লেখা: ডিজিটাল হিমু (Muhammad Imran Hassan Joy)
Posted on: Fri, 12 Dec 2014 16:35:28 +0000