আধিপত্যের তিন - TopicsExpress



          

আধিপত্যের তিন হাতিয়ার বাংলাদেশসহ সারা বিশ্বে তিনটি বহুল ব্যবহৃত শব্দ হলো জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা। শব্দগুলোর সাথে জড়িত ভয়াবহ চিত্র । তবে এর প্রকাশ ও ব্যবহার স্থানভেদে বিচিত্র ও বিভিন্ন। রাষ্ট্রশক্তি এর বর্ণনা ও ব্যবহার করে এক আকারে আর তাদের জনগণ তা অনুভব করে ভিন্নমাত্রায়। এ নিয়ে গবেষণার শেষ নেই। তবে সবচেয়ে সহজ বর্ণনা দিয়েছেন প্রখ্যাত লেখক ড. রবার্ট জে বারোজ তার ‘হোয়াই ভায়োলেন্স’ (সহিংসতা কেন?) বইতে। তিনি বলেছেন আধুনিক কালের রাষ্ট্রপরিচালক, ক্ষমতাবান ও রাজনৈতিক দল এ শব্দগুলো ও তার সাথে জড়িত কর্মকাণ্ডের প্রচণ্ড চর্চা করছে। আর এমনকি বেশির ভাগ ক্ষেত্রে তারাই এর পরিচালক। বারোজ বলেছেন, এটা তাদের মানসিকতার প্রতিফলন, বলা যায় এটা মনস্তাত্ত্বিক (It is a psychological one)। সবচেয়ে কড়া মন্তব্য এসেছে কলামিস্ট এরিক পিটারসের কাছ থেকে। তিনি আইসিএইচ ওয়েবে এক নিবন্ধে বলেছেন, ‘এসবই ব্যবহৃত হয় ক্ষমতাবানদের আধিপত্যের হাতিয়ার হিসেবে জনগণকে দাসে পরিণত করার জন্য।’ এবার এ তিনটি শব্দ এবং যা তারা ধারণ করে তা নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করা যায়। প্রথমে জঙ্গিবাদ। জঙ্গিবাদ কী এবং কারা এর ব্যবহারকারী। কেন এটা এত আলোচিত? বর্তমানের বহুল আলোচিত গার্ডিয়ান সাংবাদিক গ্লেন গ্রিনওয়াল্ড লিখেছেন, ক্ষমতাবানদের আধিপত্য বিস্তারের অনৈতিক ও অনাকাক্সিত ধারাকে আড়াল করার জন্য যে কর্মকাণ্ড তা-ই জঙ্গিবাদ। এর আড়ালে ক্ষমতাবানেরা যে কর্মকাণ্ড চালায় তা জীবন ধ্বংসকারী লুণ্ঠনপ্রক্রিয়া। তিনি একটি উদাহরণ দিয়েছেন এক জঙ্গীয় সংস্থা দিয়ে। ২০১০ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি জোসেফ স্ট্যাক বলে এক ুব্ধ ব্যক্তি অস্টিনের আইআরএস (ইন্টারন্যাল রেভিনিউ সার্ভিস) অফিসের দালানে তার প্লেন দিয়ে আঘাত করে। স্ট্যাক ুব্ধ ছিল কারণ মার্কিনি গরিবরা যেখানে খেতে পারছে না, চিকিৎসা সাহায্য পাচ্ছে না সেখানে দুর্নীতিবাজ আমলা ও ধনী ব্যাংকাররা সরকারি সহায়তায় তাদের পকেট ভর্তি করছে। গ্লেন দেখালেন, এই ভয়াবহ ঘটনাকে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বলতে কেউই রাজি হলো না। কেউ না, এমনকি সরকার, সংবাদমাধ্যম, টকশো পণ্ডিতরা পর্যন্ত। একজন আরো এক ধাপ এগিয়ে গেল। এনবিসির ডেভ নিওয়ার্ট বলল, এটা জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড কেন হবে? সে তো ুব্ধ ছিল অনেক অনিয়মের বিরুদ্ধে। বিশেষ করে সে একজন আমেরিকান খ্রিষ্টান। গ্লেন বলেছেন, অথচ এরচেয়ে অনেক কম অপরাধ করলে একজন মুসলমানকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী বলা হয় (The term is reflexively applied to Muslims)। গ্লেনের ভাষায়, একজন মুসলমান যদি তাদের দেশ দখলকারীর অন্যায়, অনিয়ম ও অত্যাচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে তাকে জঙ্গি বা সন্ত্রাসী বলা যাবে। জঙ্গিবাদের এই সংজ্ঞা এত প্রচার লাভ করেছে যে বিশ্বের সব সরকার বিশেষ করে নির্বাচিত ক্ষমতালিপ্সু সরকারগুলো এর ব্যাপক ব্যবহার করছে। তৃতীয় বিশ্বের মুসলিম দেশগুলোতে যেখানে ক্ষমতাসীনদের বাইরের সাহায্য (বিশেষ করে এই শব্দ ও কর্মকাণ্ডের উদগাতা পশ্চিমা বিশ্বের সাহায্য) প্রয়োজন তারা এর ব্যাপক ব্যবহার করছে, যার ফলে এর প্রধান আক্রমণের লক্ষ্য হচ্ছে বিশ্বাস ও ধর্ম। গ্লেন বলেছেন, ‘সন্ত্রাস’ শব্দটি এখন অর্থহীন এবং সবচেয়ে বেশি কৌশলী ব্যবহৃত (ম্যানিপুলেটেড) শব্দ। আসলে আধিপত্যের এটা একটা হাতিয়ার। তবে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসের বিষয়ে ভয়াবহ তথ্য দিয়েছেন ‘অ্যাক্সিস ফর পিস কনফারেন্সের’ চেয়ারম্যান অধ্যাপক থিয়েরি মেসান। ‘দি ওয়েস্ট অ্যান্ড দি গ্লোরিফিকেশন অব টেররিজম’ নিবন্ধে তিনি বলেছেন, পশ্চিমারা বৃহত্তর মধ্যপ্রাচ্যকে নতুন ছাঁচে বাঁধতে গিয়ে এই সন্ত্রাসের পৃষ্ঠপোষকতা করছে। ফলে মুসলমানেরা সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যায়িত হচ্ছে। এবং এরই চর্চা হচ্ছে বিশ্বব্যাপী। বাংলাদেশের মতো তৃতীয় বিশ্বেও এর চর্চা শুধুই ভয়াবহ অশান্তি ও মৃত্যু টেনে আনছে। এসব দেশে ক্ষমতাসীনেরা বিরোধীদের জঙ্গি এবং তাদের প্রতিবাদকে জঙ্গিবাদ আখ্যা দিয়ে পশ্চিমা শক্তির সাহায্য লাভের চেষ্টা করে আর তার সাথে সাথে প্রতিবাদকে হত্যা-গুম-জেল দিয়ে নির্মূল করে। ঠিক একই ধারায় মৌলবাদ বিশেষ্যটিও ব্যবহৃত হচ্ছে। অধ্যাপক বারোজ বলেছেন, মৌলবাদকে এখন বিশ্বসমস্যা হিসেবে স্থাপন করা হয়েছে। একে ধর্মীয় দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার জন্য বলা হলেও সেকুলার মৌলবাদকেও এই পাল্লায় বিচার করা উচিত। আবার মৌলবাদ বলতে শুধুই মুসলমানদের বোঝানোর চেষ্টাও কম নয়। সেকুলারের প্রবক্তারা এ ধারণাকে বেশি ছড়ায়। বারোজ বলেছেন, ইসলামিক মৌলবাদের আগে খ্রিষ্টীয় মৌলবাদই ছিল পরিচিত। ইহুদি মৌলবাদ অথবা হিন্দু মৌলবাদও ঠিক একইভাবে তাদের অনুসারীদের পরিচালিত করে। সেখানেও ক্ষমতাবানেরা একে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করছে। অধ্যাপক বারোজ দেখিয়েছেন, বুদ্ধ মৌলবাদীরা একই কায়দায় মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার করছে। এ সবগুলোর পেছনে রয়েছে ক্ষমতা দখলের লিপ্সা ও লুণ্ঠনের ইন্ধন। এ কর্মকাণ্ডে ক্ষমতাসীনেরা বিরোধীদের মৌলবাদী আখ্যা দিয়ে নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূলের চেষ্টা করে। সাধারণত নীতিহীন ক্ষমতাসীনেরা নীতিবানদের মৌলবাদী বলে আখ্যায়িত করে। তাদের বিন লাদেনের অনুসারী হিসেবে চিহ্নিত করে নিয়ন্ত্রণ বা নির্মূল করতে চেষ্টা করে। তার মতে, মৌলবাদ বলতে এখন যা বোঝানোর চেষ্টা করা হয় সেসব কর্মকাণ্ড নিয়ে বিশেষ শব্দ আছে। তার ব্যবহার না করার কারণ এ শব্দের প্রচার এমন সহজ হয়েছে যে অন্যগুলোকে এখন গৌণ মনে হবে। আর এটা দিয়ে সাধারণ মানুষকে ধোঁকা দিতে সহজ হয়। সাধারণ সংজ্ঞা অনুসারে মৌলবাদী তারাই যারা কিছু নির্দিষ্ট তত্ত্ব বা মতবাদে বিশ্বাস করে। তারা অন্যদের তত্ত্ব বা মতবাদে বিশ্বাস করে না। বলা হয়, নিজেদের তত্ত্বকে প্রতিষ্ঠিত করার জন্য প্রয়োজনে তারা শক্তি ব্যবহার করে থাকে। বারোজ বলেছেন, এমন শক্তির ব্যবহার সব তত্ত্বের অনুসারীরাই করে থাকে। তাহলে শুধু ধর্মীয় অনুসারীদের মৌলবাদী কেন বলা হবে? এর কারণ হিসেবে বারোজ উল্লেখ করেছেন, ধার্মিকেরা তাদের জীবনের অঙ্গ হিসেবে দেখে বিশ্বাসকে। তাই এরা সংগঠিত ও শক্তিশালী। অন্যরা তাদের তত্ত্ব বা মতবাদ ফেলে দিতে বেশি কষ্ট পায় না। তাই এই ধার্মিক গোষ্ঠীকে নিয়ন্ত্রণ এবং তাদের ওপর আধিপত্য বিস্তারের জন্যই এ শব্দ ও সংশ্লিষ্ট কর্মকাণ্ডের ব্যবহার হয়। মজার ব্যাপার এখন অতীতের খ্রিষ্টীয় মৌলবাদীদের ভয়াবহ কর্মকাণ্ডের উল্লেখ করে ক্ষমতাবানেরা আজকের কথিত এই মৌলবাদ নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে। একবার বাংলাদেশের এক বিখ্যাত বিজ্ঞানীকে রানী এলিজাবেথ জিজ্ঞেস করেছিলেন, ‘তোমরা (মুসলমানেরা) তো মৌলবাদী।’ বিজ্ঞানী বিশ্বের অন্য বিজ্ঞানীদের সাথে রানীর দেয়া তার প্রাসাদের অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত হয়ে গিয়েছিলেন। বিজ্ঞানী রানীকে বলেন, ‘ইয়োর ম্যাজেস্টি, সবাই এক হিসেবে ফান্ডামেন্টালিস্ট। আমি যদি বিজ্ঞানের মৌল বিষয়গুলো না ধারণ করি, তাহলে বিজ্ঞানী হব কিভাবে? তেমনি আপনিও মৌলবাদী। কারণ রাষ্ট্রের এবং খ্রিষ্টানিটির মৌল বিষয়গুলো যদি আপনি ধারণ না করেন, তাহলে বিশাল বিপত্তি হবে।’ রানী হেসে তাকে ধন্যবাদ জানিয়েছিলেন। আসলে ক্ষমতাবানেরা এ ধারাকে নানাভাবে ব্যবহার করছে স্বীয় স্বার্থ উদ্ধার করতে আর নিয়ন্ত্রণ করছে প্রতিবাদকে। হত্যা, খুন, গুম করতে এ ধারা সহজ হাতিয়ার হয়ে পড়ছে। এমনিভাবে ক্ষমতাসীনদের সাম্প্রদায়িকতাও এখন বিশ্বরাজনৈতিক অঙ্গনকে দখল করছে। বাংলাদেশে এর ব্যবহার এখন তুঙ্গে। ক্ষমতাবানেরা এর ধুয়া তুলে প্রতিবাদ ও সংখ্যাগুরুদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করছে এবং আধিপত্যের রাজ্যে বিচরণ করছে। সম্প্রদায় নিয়েই সাম্প্রদায়িকতা। এটা সভ্যতার মূল ভিত্তি। সম্প্রদায় নিয়েই সমাজ ও রাষ্ট্র। এখন বহু সমাজ নিয়ে গঠিত রাষ্ট্রে এক সম্প্রদায়ের সাথে অন্য সম্প্রদায়ের প্রতিযোগিতা হতে পারে। যখন নিয়ন্ত্রণ ও আধিপত্যের প্রশ্ন আসে তখনই এর ব্যবহার হয় সঙ্ঘাত ও হিংস্রতার মধ্য দিয়ে। এই সমাজের সবার বিশ্বাস এক নাও হতে পারে। তখন এই বিশ্বাসের ভিত্তি ধরেই সংঘর্ষ হতে পারে, যেমনটি ভারতে প্রায়ই ঘটে। সেখানে হিন্দু-মুসলমান সংঘর্ষ অতিপরিচিত। এখানে রাজনীতির উপস্থিতি অত্যন্ত সরব। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমেই খবর এসেছে, ক্ষমতা ও আধিপত্য বিস্তারে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ও উত্তেজনাকে রাজনৈতিকভাবে জিইয়ে রাখা হয়। হাজার হাজার মানুষের জীবন গেলেও তাতে রাজনৈতিক দলের কিছু এসে যায় না। সম্প্রতি ‘পলিটিকস অব কম্যুনাল ভায়োলেন্স’ নিবন্ধে নীহারিকা মানধানা লিখেছেন, ‘ভারতীয় জনতা পার্টির বর্তমান প্রধানমন্ত্রী পদের প্রার্থীর রাজনৈতিক উত্থান হয়েছিল ২০০২-এর গুজরাটের দাঙ্গার মধ্য দিয়ে। এ দাঙ্গায় হাজারের বেশি মুসলমান নিহত হয়েছিল।’ আবার ১৯৮৪ সালের দাঙ্গায় তিন হাজারের বেশি শিখ নিহত হয়েছিল বলে তিনি উল্লেখ করেছেন। এ দাঙ্গা ক্ষমতাসীন কংগ্রেস বাধিয়ে দেয় ইন্দিরা গান্ধী হত্যার প্রতিশোধ নিতে। নীহারিকা লিখেছেন, ‘অনেক কংগ্রেস নেতাকে মার্কিন কোর্টে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা বাধানোর অভিযোগে বিচারের সম্মুখীন হতে হয়।’ দি টেলিগ্রাফের কলামিস্ট মুকুল কেশভান এক উল্লেখযোগ্য মন্তব্য করেছেন। কেশভান বলেন, ‘কংগ্রেস বহুত্ববাদী (প্লুরালিস্টিক) রাজনৈতিক দল বলে পরিচিত হলেও সুযোগ বুঝে সাম্প্রদায়িক। আর বিজেপি তাত্ত্বিকভাবে সাম্প্রদায়িক দল হলেও সুযোগ বুঝে সেকুলার হয়।’ তবে শিখেরা দু’টি দলের মাঝে কোনো পার্থক্য পায় না। সাংবাদিক শেখর গুপ্ত লিখেছেন, ১৯৮৪ সালের দাঙ্গা ভারতের প্রেসিডেন্টের বাড়ির এক মাইলের মধ্যে বাধানো হয় এবং কংগ্রেস এর সাথে জড়িত। গুপ্তের সাথে একমত হয়ে দিল্লির স্বপন দাশগুপ্ত লিখেছেন, ‘গত সাড়ে ছয় দশক ধরে কংগ্রেস সাম্প্রদায়িকতা জিইয়ে রেখেছে ক্ষমতায় থাকার জন্য। তারা ক্রমাগত মুসলমানদের বিরুদ্ধে দাঙ্গা বাধিয়ে তাদের ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহার করে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থেকে।’ দাশগুপ্ত সংবাদমাধ্যম ও সুশীলসমাজকে মুসলমানদের বিরুদ্ধে এই ভীতি (জীবন ও ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বিঘিœত হওয়ার ভয়) জাগিয়ে রাখার জন্য দায়ী করেন। এক পর্যালোচনায় দেখা গেছে, ভারতের স্বাধীনতার পর থেকে গত ছয় দশকে অন্তত ১২ হাজার হিন্দু-মুসলমান-শিখ দাঙ্গা হয়েছে। সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে সরকারিভাবেই সংখ্যাগুরু হিন্দুদের ক্ষেপিয়ে দেয়া হয়েছে। এর সাম্প্রতিক দৃষ্টান্ত হলো কর্নাটকের শিক্ষামন্ত্রীর বক্তব্য। স্কুলে এক ঘণ্টা করে ভগবদ্গীতা পাঠ বাধ্যতামূলক করার পর মুসলিম-খ্রিষ্টান-শিখ সম্প্রদায় প্রতিবাদ করলে মন্ত্রী মন্তব্য করেনÑ ‘ওরা বিদেশী। ওদের এ দেশ ত্যাগ করতে হবে।’ শুধু তাই নয়, অতিসম্প্রতি সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ড. সুব্রমানিয়াম স্বামী ‘কেমন করে ইসলামিক সন্ত্রাস নির্মূল করতে হবে’ (হাউ টু ওয়াইপ আউট ইসলামিক টেররিজম) নামের এক নিবন্ধে ভারতের সব (জনগণের প্রায় ১৮%) মুসলমান, শিখ (১.৩%) ও খ্রিষ্টানদের নির্মূল করে ভারতকে ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ নির্মাণের পরিকল্পনা দেন। তিনি বলেন, ‘যদি তারা হিন্দুত্ব ও তাদের আধিপত্য (এমব্রেস দি হিন্দু লিগাসি অ্যান্ড একসেপ্ট হিন্দু সুপ্রিমেসি) মেনে নেয় তবে তাদের ভারতে থাকতে দেয়া হবে।’ সাম্প্রতিক মুজাফফরনগর দাঙ্গার কয়েকটি তদন্ত হয়েছে। তাতে সরকারি সম্পৃক্ততার নজির মিলেছে। মানবাধিকারকর্মী বিখ্যাত আমলা হর্স মান্দেবের নেতৃত্বে এক তদন্ত হয়েছে। এর সদস্যদের মধ্যে ছিলেন সাবেক বিএসএফের ডাইরেক্টর জেনারেল ইএন রামমোহন। তাদের রিপোর্টের একটি অংশ সত্যিই আশ্চর্যজনক। দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত তিন হাজার মুসলিম পরিবার এক ক্যাম্পে করুণ জীবন যাপন করছে। তাদের হাতে মাসে মাসে কিছু সরকারি সহায়তা দেয়া হয়। তবে তার জন্য একটি মুচলেকা দিতে হয়। আরেকটি তদন্ত দলও এই ভয়াবহ দাঙ্গার বিষয়টি তদন্ত করে। অধ্যাপক মোহন রাও (সোস্যাল মেডিসিন, জেএনইউ) নেতৃত্ব দেন এ দলের। অন্যদের মধ্যে ছিলেন মিস প্রাজ্ঞ সিংহ (আউটলুক)। তারাও সরকারি দলের সম্পৃক্ততা খুঁজে পান। আর ক্ষতিগ্রস্ত মুসলিমদের সরকারি সাহায্য লাভের বিনিময়ে মুচলেকা দিতে হয়। এর মাঝে একটি শর্ত হলো, ক্ষতিগ্রস্তরা আর কখনো তাদের ভিটেমাটিতে ফিরে যাবে না। তারা অন্য কোথাও তাদের আশ্রয় খুঁজে নেবে। তারা কখনো এ অর্থ দিয়ে তাদের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর পুনর্নির্মাণ করবে না। ড. মোহন রাও রিপোর্টে মন্তব্য করেছেন, এটা সরকারিভাবে জনগোষ্ঠীকে স্থানান্তর (ডেমোগ্রাফিক চেঞ্জ), যা সার্বজনীনভাবে নিন্দনীয়। ঘটনাগুলো থেকে স্পষ্টই বোঝা যায়, ড. বারোজের মন্তব্য। জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ ও সাম্প্রদায়িকতা সময়ের ব্যবধানে তৈরী ক্ষমতাবানদের হাতিয়ার। তারা এর ব্যবহার করে তাদের ক্ষমতা ও লুণ্ঠনের জন্য। একটি প্রশ্নের জবাব এর সত্যতা প্রমাণ করে। এসব ঘটনায় কে বেশি লাভবান হয়। আমেরিকান এম্পায়ার প্রজেক্টের সহপ্রতিষ্ঠাতা টম ইঙ্গেলহার্ট এক অনুসন্ধানে দেখিয়েছেন, এসব ক্ষমতাবান ৯টি শব্দ দিয়ে বিশ্ব বিচার ও নিয়ন্ত্রণ করে। তা হলোÑ জয়, শত্রু, গোপন যুদ্ধ, স্থায়ী ঘাঁটি নির্মাণ, আধুনিক মারণাস্ত্রের ব্যবহার (যেমন ড্রোন), দুর্নীতি, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও যুদ্ধ। এই শব্দগুলোর আড়াল দিয়ে তারা তাদের আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত করে। বড় শক্তিগুলো তাদের আঞ্চলিক ও আঞ্চলিকরা তাদের ুদ্র প্রতিবেশীর মাধ্যমে এ কাজ করে। ুদ্র প্রতিবেশীর রুদ্রমূর্তি নির্ভর করে তার আঞ্চলিক প্রভু কতটুকু তার প্রকাশের সুযোগ দেয়। আর এই তিন কর্মকাণ্ড যা বহুল ব্যবহৃত তিন শব্দ ধারণ করে এসেছে সহজলভ্য হাতিয়ার হিসেবে। অথচ শুধু গণতান্ত্রিক ব্যবহার ও সহনশীলতা দিয়ে রাজনীতিবিদেরা বারবার ক্ষমতায় যেতে পারে। তবে নৈতিকতাসম্পন্ন গণতন্ত্রী হলে তারা লুণ্ঠনে আগ্রহী হবে না। লুণ্ঠন এখন রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডের প্রধান আকর্ষণ বলে সৎ ও নৈতিকতাবান রাজনীতিবিদের অভাব লক্ষিত হয় প্রকটভাবে।
Posted on: Thu, 23 Jan 2014 03:51:08 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015