আর্জেন্টিনাকে নিয়ে আমার - TopicsExpress



          

আর্জেন্টিনাকে নিয়ে আমার দুঃখ এই শিরোনামটা দেখে ভাববেন না যে, দুঃখটা আর্জেন্টিনার। দুঃখটা আসলে আমার। আমি ছিলাম ব্রাজিলের অন্ধ সমর্থক। ব্রাজিল সমর্থন করা মানেই আর্জেন্টিনার বিরোধিতা করা। ফলে ৮৬ বা ৯০ সালে ম্যারাডোনার সেই তুঙ্গ মুহূর্তগুলো আমি কাটিয়েছি আর্জেন্টিনার পরাজয় কামনা করে। আমি ছিলাম অন্ধ। ম্যারাডোনার সেই অপূর্ব খেলার সৌন্দর্য দেখতে পাইনি। বরং কীভাবে ম্যারাডোনার নিন্দা করে আমার বন্ধুদের গাত্রদাহ করা যায়, সেদিকে ছিল আমার ল্য। পরে একটা প্রামাণ্যছবি দেখলাম ম্যারাডোনার ওপরে। ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে বসে দেখেছি, তখন প্রত্যেক সিটের পেছনে একটা করে টিভি থাকত না, বড় পর্দায় ওরা যা দেখাত, তা দেখা ছিল বাধ্যতামূলক, আর আমার ঘুম আসছিল না, কাজেই অনিচ্ছাসত্ত্বেও আমি পুরো ছবিটা দেখলাম। দেখে বুঝলাম, এতদিন কী ভুলটাই না করে এসেছি। এত সুন্দর খেলেন একটা মানুষ, বস্তি থেকে উঠে এসে যিনি হয়ে উঠলেন পৃথিবীর এক নম্বর ফুটবলার, শুধু নিজে ভালো খেলেন, তা নয়, তার দলকে তিনি একাই জেতান, এই রকম আশ্চর্য খেলোয়াড় পৃথিবীতে আর আসবেন কিনা সন্দেহ। তার খেলার সৌন্দর্য অনুধাবন না করে উপভোগ না করে আমি নিজেকেই এতদিন বঞ্চিত করেছি। মেসির েেত্র সেই ভুলটা আর করি না। দেবশিশুর মতো এই খেলোয়াড়টিকে সত্যি মনে হয়, তিনি এই গ্রহের নন, ভিন্ন কোনো জগত থেকে আসা। ঢাকায় মেসির খেলা ও অনুশীলন, দুটোই দেখতে গেছি। মেসি যে একটা টান দিয়েছিলেন, উফ, কী বলব। তেমনি করে এখন জিদানের অসাধারণত্বও আমি তারিফ করতে পারি, ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর শক্তিমত্তাতেও আমি মুগ্ধ হই, আমি এখন ভালো খেলোয়াড়ের ভালো খেলা দলপ্রীতির ঊর্ধ্বে উঠে তারিফ করতে পারি। অন্তত চেষ্টা করি। যেমন চোখে লেগে আছে রুদ গুলিতের খেলা। তবু, আমার মোটকু রোনালদোকে আমি ভুলি না। লোকটা ছিল অলস, বেশি দৌড়াত না, ম্যারাডোনা, কিংবা জিদান কিংবা রোনালদিনহোর মতো যেখানেই বল, সেখানেই তাকে দেখা যেত না। কিন্তু গোল এরিয়ায় তার পায়ে বল পড়া মানেই কি এক দুর্দান্ত দৃশ্য, সুন্দরবনের দুর্ধর্ষ রয়েল বেঙ্গল টাইগার যেন ছুটে চলেছে শিকার ধরবে বলে। ওই কিম্ভুতদর্শন লোকটা আমার এখনও সবচেয়ে প্রিয় ফুটবলার। আর নেইমার। আমি তো এখনও এমন কিছু দেখলাম না, যা নিয়ে হৈচৈ করা যায়। জাপানের বিরুদ্ধে প্রথম গোলটা দেখলাম, বটে, গোল করা খুব গৌরবের বিষয়। এবং গোল এরিয়ায় বল পেয়ে ওয়ানটাচে গোলে কিক করাটাও কম কথা নয়। তবু একটু খেটে, একটু ওয়ান টাচ টু টাচ করে এগিয়ে গিয়ে গোল দেওয়ার মধ্যে যে গৌরব, কিংবা মধ্যমাঠে বল পেয়ে একা ছুটে যাওয়া-- কই, নেইমারের পায়ে তেমন কিছু ঘটতে তো দেখিনি। তবে বড় খেলোয়াড়দের একটা বৈশিষ্ট্য তিনি পেয়েছেন, পায়ে আঘাত লাগা মাত্র গড়াগড়ি। সব ফুটবলাররাই কিন্তু অস্কারে সেরা অভিনেতার পুরস্কারের জন্য মনোনয়ন পেতে পারেন।
Posted on: Sun, 30 Jun 2013 05:19:28 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015