ইহকাল ও পরকাল কী? - TopicsExpress



          

ইহকাল ও পরকাল কী? ‘বর্তমানজনম’ (৫৭/১) ------------------------------------- ৫৭/১. ‘বর্তমানজনম’ (‘বর্তমানজনম’ ৪র্থ পর্বের ১ম পর্ব বিশেষ)। এটি রূপকসাহিত্যের বৈক্তিকসদস্য সারণির ৫৭ নং ‘বর্তমানজনম’ মূলক বিশেষ। এ পরিবারের অন্যান্য সদস্যগুলো হচ্ছে- ১.ইহকাল, ২.ইহধাম ও ৩.ইহলোক। বলন কাঁইজির নির্মিত ‘আত্মতত্ত্ব ভেদ’ (৫ম খণ্ড) গ্রন্থে এ মূলকের অধীন সদস্যগুলো সবিস্তারে আলোচনা করা হয়েছে। ---------------------------------------------------------------------------------------- ৫৭/১. বর্তমানজনম -------------------------- Present birth (প্রেজেন্ট বার্থ)/ ‘ولادة الحالي’ (ওয়ালাদাতাল হালিউ) এটি রূপকসাহিত্যের বৈক্তিকসদস্য সারণির মূলকপরিবারের একটি অন্যতম ‘মূলকসদস্য’ এবং ‘বর্তমানজনম’ পরিবার প্রধান বিশেষ। এর রূপকপরিভাষা ‘ইহকাল’ উপমানপরিভাষা ‘ইহধাম’ এবং ছদ্মনামপরিভাষা ‘ইহলোক’। এটি একটি ‘রূপকপ্রধানসত্তা’ বিশেষ। বর্তমানজনম বি জীবিতকাল, Present birth (প্রেজেন্ট বার্থ), ‘ولادة الحالي’ (ওয়ালাদাতাল হালিউ) (আবি)বি এপার, ইহকাল, ইহজনম (ব্য্য) পিতা-মাতার সন্তানরূপে বর্তমান জন্মগ্রহণ (আপ)বি হাশর (আ.ﺤﺸﺭ) (ইপ)বি regeneration (রিজেনারেশন) (দেপ্র) এটি রূপকসাহিত্যের বৈক্তিকসদস্য সারণির ‘বর্তমানজনম’ পরিবার প্রধান ও রূপকসাহিত্যের একটি পরিভাষা বিশেষ (সংজ্ঞা) ১.দেহ ও আত্মাসহ বেঁচে থাকাকেই বর্তমানজনম বলা হয় ২.যার যার প্রত্যেক জনমকেই বর্তমানজনম বলা হয় (ছনা)বি ইহলোক (উপ)বি ইহধাম (রূ)বি ইহকাল (দেত)বি বর্তমানজনম {বাং.বর্তমান+ বাং.জনম} বর্তমানজনমের সংজ্ঞা (Definition of Present birth) -------------------------- দেহ ও আত্মাসহ বর্তমান বেঁচে থাকাকেই বর্তমানজনম বলে। বর্তমানজনমের আধ্যাত্মিক সংজ্ঞা (Theosophical definition of Present birth) -------------------------- যার যার প্রত্যেক জনমকেই বর্তমানজনম বলে। বর্তমানজনমের প্রকারভেদ (Classification of Present birth) ----------------------- জনম চার প্রকার। যথা- ১.পশুকুলজনম, ২.মানবকুলজনম, ৩.প্রতীতিকুল জনম ও ৪.গুরুকুলজনম। ১. পশুকুলজনম (Animal lineage) ------------------------- সব প্রাণির জনমকেই পশুকুলজনম বলে। ২. মানবকুলজনম (Man lineage) ------------------ গুরুদীক্ষা গ্রহণ করার পর আত্মশুদ্ধি করাকেই মানবকুলজনম বলে। ৩. প্রতীতিকুলজনম (Angel lineage) ----------------------- মূলকসত্তাদির মধ্য হতে যে কোন একটি সত্তার ছদ্মনাম গ্রহণ করে মহাসাধকগণের প্রতীতিরূপে আত্মপ্রকাশ করাকে প্রতীতিকুলজনম বলে। ৪. গুরুকুলজনম (Preceptor lineage) -------------- পুনর্জন্মহীন-সংযতইন্দ্রিয় সিদ্ধসাধকদের দিব্যজ্ঞানার্জন, প্রতীতিদের গুণাগুণ অর্জন ও প্রতীতিদের নামকে ছদ্মনামরূপে গ্রহণ করাকে গুরুকুলজনম বলে। বর্তমানজনমের উপকার (Benefits of Present birth) ------------------------------- বর্তমান জনমেই মানবজনম সার্থক করার সময়। জনমে মানবের পালনকর্তা সাঁই ও সৃষ্টিকর্তা কাঁইয়ের দর্শনলাভ না হলে পরবর্তিজনম বা জন্মান্তরে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। বর্তমানজনমের পরিচয় (Identity of Present birth) ----------------------- এটি রূপকসাহিত্যের বৈক্তিকসদস্য সারণির ‘বর্তমানজনম’ পরিবারের ‘মূলকসদস্য’ বিশেষ। প্রতিটি জীবের নশ্বর আয়ুষ্কালকে বর্তমানজনম বলা হয়। রূপকসাহিত্যে অনেক ক্ষেত্রে পশুকুলজনমকে অসুরকুলজনম এবং প্রতীতিকুল জনমকে দেবকুলজনমও বলা হয়ে থাকে। মানবের পূর্বের পিতারূপ জনম এবং পরের সন্তানরূপ জনমের মধ্যবর্তী বর্তমান আমিরূপ জনমই বর্তমান জনমরূপে রূপকসাহিত্যে খ্যাত। আমার এ জনমই বর্তমান জনম। রূপকসাহিত্যে বিগতজনম ও ভবিষ্যৎ জনমের চেয়ে বর্তমান জনমের অধিক মূল্য দেওয়া হয়। বিগতজনম আর ফিরে পাওয়া যাবে না। আবার ভবিষ্যৎ জনমাদি তো আমার আয়ত্ত্বের মধ্যে থাকবে না। এ জন্য ভবিষ্যৎ জনমের ওপর আশাও করা যায় না। এরূপ চুলচিরা বিচার বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়- বর্তমান জনম ভিন্ন সাধকের সিদ্ধিলাভের কোন উপায় নেই। এ জন্য সাঁইসাধন ও কাঁইসাধন করে সিদ্ধিলাভ করার জন্য বর্তমানজনমই একমাত্র উপযুক্ত জনম। তাই রূপকসাহিত্যের রূপকার মনীষীগণ বর্তমানজনমকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ জনম বলে উল্লেখ করে থাকেন। প্রতিটি বর্তমান জনমে প্রত্যেক মানুষ মোট চারটি কুল পরিভ্রমণ করে থাকে। যেমন- ১.পশুকুল ২.মানবকুল, ৩.প্রতীতিকুল ও ৪.গুরুকুল। প্রত্যেক সাধারণভাবে পশুকুলে জন্মগ্রহণ করে থাকে। অতঃপর জীবনে যদি কখনো আত্মতাত্ত্বিক পাকা সাধক গুরুর শরণাপন্ন হয়ে তার নিকট দীক্ষা গ্রহণ করে মনের পশুত্ব বিতাড়িত করে মনুষত্ব অর্জন করতে পারে তবে সে মানবকুল পায়। অন্যথায় যেমন পশুকুলেই তার জন্ম তেমন পশুকুলেই তার প্রয়াণ হলো। মানবকুল জীব জনমের দ্বিতীয় স্তর। মানবকুল পাওয়ার পর যদি কোন মানব প্রতীতিদের কর্মাকর্ম সম্পাদন করতে সক্ষম হয় তবে সে প্রতীতিকুল লাভ করে। প্রতীতিদের কর্মাকর্ম হচ্ছে- অখ-, অটল, অনাহার ও অগ্নি-জল-বাতাসাদি নিয়ন্ত্রণ ইত্যাদি। প্রতীতিকুললাভ করার পর মানুষরূপী জীব আর জীব থাকে না। বরং উক্ত সাধক প্রতীতিতে রূপান্তর হয়ে যায়। আবার প্রতীতিরূপ সাধক যদি ঈশ্বরের কর্মাকর্ম সম্পাদন করতে সক্ষম হয় তবে তিনি ঈশ্বরকুললাভ করে থাকেন। ঈশ্বরের কর্মাকর্ম হচ্ছে- সৃষ্টিকুলের ক্ষতি না করা, কারো মনে কষ্ট না দেওয়া, জীব হত্যা না করা, সর্বদা সাঁই ও কাঁই দর্শনলাভের সাধনায় ব্রত থাকা, সর্বদা জাতকুলের ঊর্ধ্বে অবস্থান করা, সাধ্যমত সর্ব শ্রেণির জীব ও সর্ব শ্রেণির মানুষকে সঙ্গদান করা এবং সর্বদা জীবকুলের কল্যাণ-মঙ্গলের চিন্তায় নিমগ্ন থাকা। ঈশ্বরের এসব গুণাবলী অর্জন করে প্রতীতিকুল প্রাপ্ত সাধক ঈশ্বরকুললাভ করে থাকে। রূপকসাহিত্যে ঈশ্বরকুলকে গুরুকুলও বলা হয়। অর্থাৎ গুরুকুল ও ঈশ্বরকুল একই। এদের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। এটিই সাধকের সর্বশেষ স্তর। এ স্তর হতেই বিশ্ববিখ্যাত মহামানবের আবির্ভাব হয়ে থাকে। যেমন- বেদব্যস, জারির তাবরী, লোননাথ, মনমোহন, রাধারমণ, লালন ও বলন। পরিশেষে বলতে চাই বর্তমানজনম পাওয়া মাত্র প্রতিটি মানুষকে মানবকুল পাওয়ার জন্য সচেষ্ট হওয়া একান্ত প্রয়োজন। মানবকুলে পদার্পণ করা সব মানুষের নিজ নিজ আবশ্যকীয় দায়িত্ব। পবিত্র কুরানে এরূপ বাণি অনেকস্থানেই উচ্চারিত হয়েছে। যেমন- ১. “وَوَصَّى بِهَا إِبْرَاهِيمُ بَنِيهِ وَيَعْقُوبُ يَابَنِيَّ إِنَّ اللَّهَ اصْطَفَى لَكُمْ الدِّينَ فَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ” অর্থঃ- “এরই অন্তিমইচ্ছা করেছেন পৌরুষ (ইব্রাহিম) তার সন্তানদের এবং ইয়াকুবও যে, হে আমার সন্তানগণ, নিশ্চয় কাঁই তোমাদের জন্য এ পথকে মনোনীত করেছেন। কাজেই তোমরা মানবকুললাভ না করে কখনও মৃত্যুবরণ করো না।” (কুরান, সুরা- বাক্বারা- ১৩২)। And this was enjoined by Victorious upon his sons and by Younger, O my sons! Lord has chosen for you the (true) religion, then die not except in the Faith of Man lineage. (Quran, Baqara- 132)|২. “يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ حَقَّ تُقَاتِهِ وَلَا تَمُوتُنَّ إِلَّا وَأَنْتُمْ مُسْلِمُونَ” অর্থঃ- “হে বিশ্বাসীরা! কাঁইকে যেমন ভয় করা উচিৎ ঠিক তেমনিভাবে ভয় করতে থাক। এবং অবশ্যই মানবকুললাভ না করে মৃত্যুবরণ করো না।” (কুরান, সুরা- ইমরান- ১০২)। O you who believe! Fear Lord as He should be feared. And die not except in a state of Man lineage. (Quran, Imran- 102)| কুরানের ওপরোক্ত বাণিদ্বয় হতে পরিষ্কারভাবেই বুঝা যায় যে, প্রত্যেক জীবকে আত্মশুদ্ধি করেই মানব হতে হয়। আর জীবরূপে জন্মগ্রহণ করে যদি মানবকুল না পায় তবে তার মতো হতভাগা আর কেবা থাকতে পারে জগতে? অন্যদিকে শাস্ত্রীয় পণ্ডিত, বক্তা, বৈখ্যিক, টৈকিক, অভিধানবেত্তা ও অনুবাদকরা মনে করে কেবল শাস্ত্রীয় কর্মাকর্ম করলেই মানুষ হওয়া যায়। একজন পাকা সাধকগুরুর নিকট দীক্ষা নেওয়ার পূর্বে কোন প্রকারে মানুষ আত্মশুদ্ধি করতে পারে না। গ্রন্থ-গ্রন্থিকা পাঠ করে একা একা আত্মশুদ্ধি করা যায় না। যারা গুরুদীক্ষার বিরোধীতা করে থাকেন তারা শুক্রনিয়ন্ত্রণ করবেন কোন শাস্ত্র দ্বারা? পালনকর্তা ও সৃষ্টিকর্তার দর্শনলাভ করবেন শাস্ত্রীয় কোন কর্ম দ্বারা? আত্মতাত্ত্বিক মনীষীগণ আপনার চেয়ে কোটি কোটি গুণ অধিক জ্ঞান রাখেন। সে জন্য বিতর্ক করতে চেষ্টা করবেন না। আত্মতাত্ত্বিক, মরমী ও পারম্পরিকদের বিরোধীতা করবেন না।——————————————————————————————— (সংক্ষিপ্ত সংকলন) তথ্যসূত্রঃ আত্মতত্ত্ব ভেদ (৫ম খণ্ড) লেখকঃ বলন কাঁইজি —————————————————————————————— আধ্যাত্মিকবিদ্যা, আত্মতত্ত্ব, আত্মদর্শন, দেহতত্ত্ব, পরম্পরাতত্ত্ব, দিব্যজ্ঞান, স্বরূপদর্শন, নরত্বারোপ ও বলনদর্শন টীকা (Spiritualism, Theology, Apperception/ Introspection, Canonism, Theosophy, Personification/ Anthropomorphism, Self-philosophy, Bolon philosophy and Magnanimous — with Krishok Mahbub Rakib, Birendra Nath Barai, Raghunath Maji and 40 others.
Posted on: Tue, 20 Jan 2015 10:40:50 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015