খণ্ড খণ্ড জীবনের গল্প - TopicsExpress



          

খণ্ড খণ্ড জীবনের গল্প এবং কিছু উপলব্ধি Farhad F H Farhad অনেকেই হয়তো কোন কিছু না পাওয়ার যন্ত্রণায় জ্বলছেন । শুধু মাত্র তাদের জন্যই কষ্ট করে এই পোস্টের আয়োজন । এমন যারা আছেন তাদের সিরিয়ালে আমিও আছি । মানুষকে নয় শুধুমাত্র নিজেকে বুঝ দেওয়ার জন্যই লিখতে বসা । সর্বপ্রথম আমি আমার জন্যই লিখছি যদি আমার কোন উপকারে আসে পাশাপাশি অন্যদের । আমার বন্ধু গফফার । আমার যত বন্ধু আছে সবার অর্থনৈতিক সূচকের শেষ বিন্দুতে যারা অবস্থান করছে তাদের একজন । বাবা সরকারী ছা পোষা কর্মচারী । ছোট থেকে এক সাথেই ওঠা বসা । আমার এক ব্যাচ জুনিয়র । প্রায় প্রায় আমাদের আড্ডায় আসে মন ভালো করার জন্য । হয়তো ভাবছেন কেন ?? গফফার ভাইয়ের কি মন খারাপ থাকে সব সময় ???? গফফারের বাবা দীর্ঘদিন থেকে অসুস্থ । কোন রকমে হাঁটাচলা করেন । অফিস করেন খুব কষ্ট করে । মাসে মাসে একগাদা করে ওষুধ খেতে হয় বেঁচে থাকার জন্য । গফফারের মা আজ বছর দুইয়েক হলো অশুস্থ থেকে আরও বেশি অসুস্থ হয়ে চলেছেন । গাদা গাদা টাকা খরচ হয় ওর মায়ের চিকিৎসা খরচ চালানোর জন্য । দেশের বারি যাও একটু ভিটে মাটি ছিলো সব বিক্রি হয়ে গেছে । আর সেই টাকা দিয়েই চিকিৎসা হচ্ছে । পাশাপাশি গফফারের বাবার লোণ । জীবন যেন গফফারের দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে । টাকা নেই নেই শুধু টাকা নেই । তারপরও গফফারের আশার আলো একদিন মেঘ কেটে যাবে ওর জীবন ওর বাবা মায়ের জীবন আবার হাসি খুশিতে ভরে উঠবে । গফফার সকাল থেকে রাত অবধি টিউশুনি করে বর্তমানে ওর সংসারে ব্যাকাপ দিচ্ছে । গফফারকে দেখলে খুব খারাপই লাগে । আমরা যেখানে সাজুগুজু করে গার্ল ফ্রেণ্ড নামক গৃহপালিত জন্তুর পিছনে লালায়িত ছিলাম তখন গফফারের কাছে এই গুলান ছিলো আজগুবি সব ব্যাপার । একজন গার্ল ফ্রেন্ড থাকবে ভাবতেও শরীরে উত্তাপ সৃষ্টি হয়ে যায় সেখানে গফফার ছিলো আগাগোড়ারই নিরুত্তাপ । আমাদের কত গুলি মোবাইল পরিবর্তন হয়ে গেলো , পরিবর্তন হয়ে গেলো অনেকের গার্ল ফ্রেন্ড । শুধু গফফারের সেই ১১০০ মোবাইল ১১০০ থেকে গেলো আর গফফার গফফারই থেকে গেলো । আগেও যেমন এখনো তেমন । আমাদের সরকারী আবাসিক এলাকার পিছনের দিকে নিরাপত্তা চৌকি ঘর আছে । ঘর থেকে বের হয়ে ঐ ঘরে মাঝে মাঝে আমাকে যেতে হয় বিড়ি খেতে । দুপুরে এক আনসার থাকে পাহারায় । রুমে ঢুকে গুল্লিফে আগুন দিয়ে আমি আমার মত গুল্লিফে টান দেই । আনসার কাকু আমার খাওয়া দেখে । প্যাকেট থেকে একটা কাকুর দিকে এগিয়ে দেই । কাকু খায় আর আমার সাথে তার গল্প করে । তার পাওয়া বেতন আর পারিবারিক সদস্যদের অর্থনৈতিক কষ্টের কথা বলে । আনসার কাকু এই আবাসিক এলাকার নিরপত্তা ব্যারাকে থাকে । একা একা রান্না করে খায় । মাসে খরচ হয় ১১০০ টাকা । আমি হিশাব বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে মাঝে মাঝে হিসাব মেলাতে পারি না । ৮০০ টাকায় একটা মানুষ রেশনের ২০ কেজি চালের দশ কেজি চাল আর দুই লিটার তেলের হাফ লিটার খরচ করে বাকি বেতনের টাকা এবং বাকি রেশন বাড়িতে পাঠায় । কিন্তু কি ভাবে সেটা সম্ভব ???? বিড়ি খাওয়া শেষ হলেই আমি গুল্লিফের প্যাকেট থেকে আরো দুখানা গুল্লিফ কাকুর হাতে ধরিয়ে প্যাকেট লুংগির পিছনে গুজে রাখি । তার পর htc সেট টা বাহির করে খানিক্ষন ফেসবুক গুতাই । কাকু হুমড়ি খেয়ে দেখে কি হচ্ছে মোবাইলের ভিতর । কাকু জিজ্ঞাসা করে ভিডু দেখা যায় এই মোবাইলে ????? কাকু পকেট থেকে আকিজ বিড়ির প্যাকেট বের করে , আমি কাকুর কাছে একটা চেয়ে নেই । তার পর মনের সুখে আকিজ বিড়ি খেয়ে টেস্ট নেওয়ার চেষ্টা করি । ভালই তো খারাপ কি ????? খেয়ে বাসায় চলে আসি । বাথরুমে গিয়ে আঙ্গুলের মাথায় পেস্ট নিয়ে হুদাই ব্রাস করে কুলি করি । আকিজ বিড়ির গন্ধ মুখ থেকে যেতেই চায় না । এই তো বছর খানেক আগের কথা । ভাইয়ার অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো হওয়ার সাথেই ভাইয়ার কাছে আবদার করে বসলাম সনি এরিক্সনের Xperia x10 mini pro কিনে দিতে । ভাইয়ার কাছে চলে গিয়ে ঝুলে থাকলাম । ভাইয়া আমারে নিয়ে মোবাইলের দোকানে নিয়ে গিয়া কিনে দিলো Xperia x10 mini । আমার পছন্দেরটা কিনতে পারি নাই মাত্র ৩০০০ টাকা কম থাকার কারনে । তাই প্র টা বাদ গেছে । ভাইয়ার ফ্লাটে ফিরে বসে আছি মন খারাপ করে । ভাইয়ার উপর ভিশন রাগ হচ্ছিলো আমাকে ঢাকা পর্যন্ত এনে কি বেইজ্জতিটা করলো । বন্ধুদের কাছে কইয়া আইছি অমুকটা কিনমু । এইবার যদি এইটা দেখে আর জদি শোনে ৩০০০ টাকা কমের কারনে এইটা কিনেছি তাইলে ইজ্জত কই যাবে ????? রাতে মাথা নিচু করে ভাত খাচ্ছি । প্রচণ্ড অভিমানে ভাত গলার কাছে আটকে জাচ্ছে । ভাইয়া আমার পিছনে ল্যাপটপে অফিসের কাজ করছে । আমার খাওয়ার স্টাইল দেখে মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলছে নে ভাই নে । দুই চারমাস ব্যবাহার করে আম্মাকে দিয়ে দিস । আমার বেতন ইনকাম বাড়ুক তকে আমি আরো দামি ফোন কিনে দিবো । দেখ বিশ্বাস কর আমার কাছে টাকা থাকলে তোরে আমি ওইটাই কিনে দিতাম । ভাইয়ার আদর পাইয়া আমার কান্না ঘূর্ণিঝড়ের মত চলে আসলো যেত । আমি হেচকি তুলে তুলে কাঁদতে লাগলাম । কোন শব্দ ছাড়া । [ভাইয়েরা বোনেরা আমি কিন্তু জমিদার শিশির রায়ের নাতি না । আমার বাবা ছোট খাট একজন সরকারী ছা পোষা কর্মকর্তা । আমার ভাইয়ার এবং আমার অনেক ইচ্ছাই অপূর্ণ থেকে গেছে । ভাইয়া চাকুরি পাওয়ার পর থেকে তার মনের খায়েস গুলি আমাকে দিয়ে পূরণ করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলে । আমাকে দামি সার্ট প্যান্ট কিনে দিয়ে নিজে চলে খয়রাতির মত । আমি বা মা কিছু কইলেই কয় , মা এক কালে আমার বন্ধুদের দেখে আমার খুব মন চাইতো , কিন্তু এই টাকার অভাবে পারতাম না । ফরহাদরে খুশি হইতে দেখলে আমার পুরাতন সেই দিনের চাহিদা পূরণ হয়ে যায় ] মাস ছয়েক আগে আমাকে কয় ঐ আমার এক দোস্ত ফোন কিনবো কোন সেটটা ভাল হয় দেখিস তো । এন্দ্রুয়েড নাকি উইন্ডোজ ???? আমি খুজে খুজে htc এর ঐ মডেলের খোঁজ দিলাম । এক সপ্তাহ পর ভাইয়া ঐ সেটটা কিনেছে আমার জন্য আমি জানতাম না , মায়ের জন্য কিছু , বাবার জন্য কিছু কিনে বাড়িতে চলে এসেছে । আমি তো সেটটা হাতে নিয়ে নাড়াচাড়া করি । আমি ভাবছিলাম এইটাই বুঝি বন্ধুর সেট বন্ধুর জন্য আনছে । মনে মনে ভাবতাছি এই রকম একটা সেট কবে কিনবো ???? ভাইয়া কয় ঐ সেটটা তো তোর । আমি যেন আমার দুকানকে বিশ্বাস করতে পারছি না । কয় কি ???? ভাইয়া যেদিন ঢাকা ফিরবে আমি বাসে তুলে দিতে গেলাম । ভাইয়া বাসে উঠতে যাবে দেখি ভাইয়ার জামার হাতার নিচে সেলাই খোলা । ভাইয়ারে ফোনে ধমক দিলাম । ভাইয়া কয় একটু খুলে গেছে সেলাই করে নেবো নে । সব থেকে বড় সমস্যা হয়ে গেছে আমার বড় ভাই কাকলির ব্যাপার নিয়ে আমারে একদিন জুতা দিয়ে কায়দা মত দিছে । এবং আমাকে বলেছে নেক্সট টাইম এই বিষয়ে কথা শুনলে চামড়া হাড্ডি আলাদা করে মাটিতে পুতে ফেলবে । কাকলির সাথে যখন আমার গণ্ডগোল চলছে ভাইয়া তখন শাহ আলি কমপ্লেক্সের পিছনে আড্ডায় ব্যস্ত । কাকলি সেই খানে গিয়া কান্না কাটি করে কি যে কইয়া এসেছে যার কারনে ডাইরেক্ট আমারে জুতা দিয়া ক্রস ফায়ার । আর না এখন ভাত খামু মা ভাত খাইতে যাই যাওনের আগে একটা কথাঃ তুমি হয়তো কারো জীবনের জন্য কিছু না , কিন্তু এমন মানুষ এখনো আছে যাদের পৃথিবী শুধুই তুমি
Posted on: Sat, 29 Jun 2013 08:33:10 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015