‘চুদুর বুদুর’ থেকে - TopicsExpress



          

‘চুদুর বুদুর’ থেকে ‘সেক্সিজম’ এবং জেন্ডার বিষয়ক কিছু বর্ধিত আলোচনা 01 Jul, 2013 অষ্ট্রেলিয়ার রাজনীতিতে সেক্সিজম এখন ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে। জুলিয়া গিলার্ড ক্ষমতায় আরোহনের পর থেকে এর সূচনা। প্রধান প্রতিপক্ষ লিবারেল পার্টির নেতা টনি এ্যাবোটের বিরুদ্ধে তিনি বেশ কয়েকবার সেক্সিজমের অভিযোগ আনেন। গত কয়েকদিন আগে আবারও সেক্সিজম ইস্যু স্থানীয় রাজনীতিতে প্রধান আলোচ্য বিষয়ে পরিণত হয়। অস্ট্রেলিয়ান ফিনান্সিয়াল রিভিউর জনৈক কলামিষ্ট, এবিসি রেডিওর এক প্যানেল ডিসকাসনে মন্তব্য করেন, It was wrong to show much flesh during parliamentary sittings as it was an issue of workplace conduct. তবে নারীবাদীরা জুলিয়া গিলার্ডের পোশাক নিয়ে সমালোচনাকরীদের সেক্সিস্ট হিসেবে নিন্দা করেছেন। উল্লেখ্য জুলিয়া গিলার্ড, প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ফেডারেল পার্লামেন্টে একবার পষবধাধমব দেখা যায় এমন পোশাক পড়ে এসেছিলেন। উপরের সেক্সিজমের প্রসঙ্গে পরে আসি। বাংলাদেশে জাতীয় সংসদে সম্প্রতি কিছু মহিলা সাংসদদের আঞ্চলিক শব্দ উচ্চারণ নিয়ে নানামুখী আলোচনা হচ্ছে। কেউ কেউ কতিপয় নারী সাংসদদের এরকম কথাবার্তার সাথে ‘নারীর ক্ষমতায়নকে’ যুক্ত করে ব্যঙ্গ কৌতুক করছেন। গত কয়েক সপ্তাহে হাতে গোণা কয়েকজন মহিলা সাংসদদের মুখের ভাষা নিয়ে আমরা হৈচৈ ফেলে দিয়েছি। কিন্তু সংসদে কি মাত্র গত কয়েক সপ্তাহেই অশালীন ভাষার চর্চা চলছে? নাকি বহু আগে থেকেই এর প্রচলন? অশালীন শব্দ উচ্চারণকারী সবাই কিন্তু নারী সাংসদ নন। বরং অনেক পুরুষ সাংসদ এমনকি আরো দায়িত্বশীল পদে থাকা মন্ত্রীরা হরহামেশা সংসদের ভিতরে বাইরে নানা পর্ণো সংস্কৃতি এবং সন্ত্রাসীর ভাষায় কথা বলেছেন। কিছুদিন আগে টকশোতে সরকারের একজন দায়িত্বশীল ‘পুরুষ’ মন্ত্রী তার প্রতিপক্ষের একজন সিনিয়র নেতাকে ‘চোখ তুলে’ নেবার হুমকী পর্যšত্ম দিয়েছেন। মিডিয়ার বদৌলতে সবাই সেটা দেখেছে। তখন কেউ চিৎকার করে তার জেন্ডার পরিচয়কে সামনে আনে নি। বরং যৌক্তিকভাবে ব্যক্তির আচরণের জন্য নির্দিষ্ট ব্যক্তির সমালোচনা করেছিল। কেউ বলে নি, ‘পুরুষের মুখে এমন কথা মানায় না’। তাহলে নারী সাংসদদের বেলায় ব্যক্তিকে প্রাধান্য না দিয়ে জেন্ডারকে ফোকাস করা কেন? নারীকে তার ব্যক্তি সত্তা থেকে সরিয়ে নিয়ে নারী হিসেবে দেখে প্রকারাšত্মরে তারা নারীর প্রতি জেন্ডার বিদ্বেষ বা সেক্সিষ্ট মনোভাব পোষণ করছে। এ ধরনের সমালোচকরা দেশের বিদ্যমান রাজনীতির কাঠামোগত অসুস্থতাকে গুরুত্ব না দিয়ে ‘নারীর মুখে অশোভন উক্তি’ এমন মনোভাব দেখিয়ে তারা নারীকে গোটা সমাজ তথা মানবকুল থেকে আলাদা করে ফেলছে। এবং সেই সাথে গালাগালিটাকেও জেন্ডারভিত্তিক কর্ম বিভাজনের মতো পুরুষের একচ্ছত্র অধিকার হিসেবে ভাগ করে দিয়েছে। রাজনৈতিক কাঠামোর ত্রুটিকে লুকিয়ে রেখে অশ্লীল বা অশোভন আচরণের দায়ভার কৌশলে নারীর উপর চাপিয়ে দিয়ে দায়মুক্ত হতে চাইছে। তাই সেক্সিষ্ট আলোচনা বন্ধ করে পুরো বিষয়টা সামগ্রিকভাবে দেশের রাজনৈতিক কাঠামোর আলোকে ব্যাখ্যা করে রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে পরিবর্তন এনে শুধরাতে হবে। নারী কিংবা পুরুষ বলে কথা নেই। যার দ্বারাই সুস্থ পরিবেশের ব্যঘাত ঘটবে সেটাকে ঐ ব্যক্তির আচরণ হিসেবে দেখা উচিৎ, জেন্ডারভিত্তিক দোষারোপের মাধ্যমে নয়। আরেকটা বিষয় উল্লেখ না করলেই নয়। যারা ইদানিংকার মহিলা সাংসদদের আলোচনা নিয়ে সরব হচ্ছেন অশ্লীলতার দোহাই দিয়ে, তারা কি আসলেই অশ্লীলতার বিপক্ষে নৈতিক অবস্থান থেকে বলছেন নাকি এটাকে যুতসই ইস্যু হিসেবে লুফে নিয়ে বিরোধীদলের প্রতি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে প্রয়োগ করছেন? প্রশ্নটা করার যথেষ্ট কারণ আছে। একজন বিরোধী সাংসদের ‘চুদুর বুদুর’ মার্কা আঞ্চলিক শব্দ ব্যবহার বা অন্যজনের হেলাল হাফিজের কবিতার সূত্রে ‘চুতমারানী’ শব্দের উদ্ধৃতি আসলেই কি অশ্লীলতার মধ্যে পড়বে নাকি ‘অনুচিত’ বা ‘অশোভন’ শব্দ হিসেবে বিবেচিত হবে?‘অশোভন’ এবং ‘অশ্লীলতার’ মধ্যে একটা পার্থক্য অবশ্যই আছে। অনেক আঞ্চলিক শব্দ সংসদে বলা অশোভন হতে পারে, কিন্তু সেটাকে অশ্লীল আখ্যা দিয়ে ঐ অঞ্চলের মানুষের অনুভূতিতে আঘাত করা অনুচিত। যারা এই শব্দকে অশ্লীল প্রমাণে আদা জল খেয়ে লেগেছিলেন, তাদের আসল উদ্বেগ যে শালীনতা বা অশালীনতা নয়, বরং রাজনৈতিক সেটা এখন প্রমাণিত। সংসদের স্পীকার বলেই দিয়েছেন, “চুদুর বুদুর চলবে”। অন্যদিকে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রীর মুখে অহরহ খাঁটি অশ্ল­ীল শব্দ প্রয়োগ এবং সেদিন অপু উকিলের বক্তব্য অশ্লীলতার মাত্রাকে অনেক উঁচুতে নিয়ে গেলেও এগুলো নিয়ে তেমন উচ্চবাচ্চ নেই। যতো দোষ সব ঐ ‘চ’ যুক্ত আঞ্চলিক শব্দটার এবং হেলাল হাফিজের কবিতার একটা লাইনের একটা শব্দকে কেন্দ্র করে। অনেকেই একটা প্রাসঙ্গিক প্রশ্ন করেছেন। হেলাল হাফিজের সেই বিখ্যাত কবিতাও কি সংসদ এবং মিডিয়া কর্তৃক অশ্লীল কবিতা হিসেবে স্বীকৃতি পেল? আলোচ্য কবিতাটি যদি অশ্লীল না হয়ে থাকে তবে তার আবৃত্তি কেন অশ্লীল হবে? পাশ্চাত্যে বিষয়ব¯ত্মুর প্রকৃতি অনুযায়ী কোনটা শিশুদের জন্য, কোনটা প্রাপ্ত বয়স্কদের জন্য সেটা বুঝিয়ে দেয়া হয়। হেলাল হাফিজের উক্ত বইয়ের মলাটে কি বড় বড় করে এমন কোন কথা লেখা ছিল, যার মাধ্যমে আমরা বুঝব এই বইয়ে ‘অশ্লীল’ একটা শব্দ আছে? তারপরেও সব কথা সব জায়গায় খাটে না। সেই মতে উক্ত সাংসদ ঐ বিশেষ শব্দটা উহ্য রাখলে ভাল করতেন। কাজেই অশ্লীলতার মূল্যায়নও করছি আমরা রাজনৈতিক দল বিবেচনায়। কারো কারো মুখের কান পঁচানো অশ্ল­ীল কথাবার্তাও আমাদেরকে তেমন ভাবায় না। কিন্তু প্রতিপক্ষের কোন সদস্যের করা অশোভন উক্তিও অনেককে আলোড়িত করে তুলে। সেদিনও প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, বিরোধীদলের নেত্রী সারারাত বোতল খেয়ে দুপুর বারটায় ঘুম থেকে উঠেন। তিনি অত্যšত্ম অপ্রসাঙ্গিকভাবে নিজের ছেলের বিয়ের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে ড. কামাল হোসেনকে টেনে আনেন। তারপরেও এগুলো প্রচারে গুরুত্বহীন হয়ে পড়ে। ফিরে আসছি জেন্ডারভিত্তিক আলোচনায়। এখানে উদ্বেগের বিষয় হলো, অনেক নারীবাদীরাও সংসদে ঘটে যাওয়া পুরো বিষয়টাকে নারীদের জন্য অমর্যাদাকর হিসেবে দেখছেন। এরাও ব্যক্তি নয়, বরং জেন্ডার পরিচয়কে সামনে নিয়ে এসেছেন। মূলত আমাদের নারীবাদীদের একটা অংশ যতোটা না নারীর “ক্ষমতায়নের রাজনীতি” করেন, তার চেয়ে বেশি জাতীয় রাজনীতিতে কোন বৃহৎ দলের লেজুড়বৃত্তি করে ব্যক্তিগত ফায়দা লোটার ধান্দায় থাকেন। এই কারণেই যেখানে তাদের সরব থাকার কথা, সেখানে নিরব থাকেন। আবার যে বিষয়টা যেভাবে বিশ্লেষণ করার কথা, সেইদিকে না গিয়ে তার মধ্যে জাতীয় রাজনীতি টেনে আনেন। উদাহরণস্বরূপ গ্রামীণ ব্যাংকের সাম্প্রতিক দুরাবস্থার কথা বলা যায়। বাংলাদেশে নারীর ক্ষমতায়ন প্রশ্নে টকশো বা সভা সেমিনারে যে যতো তাত্ত্বিক কথাই বলুক সত্যটা হচ্ছে, দরিদ্র বা হতদরিদ্র নারীদের অবস্থানের পরিবর্তন ঘটেছে তাদের আয়মূলক পেশার সাথে সংশ্লিষ্ট হবার মাধ্যমে। এর পিছনে পোশাক শিল্প এবং ক্ষুদ্র ঋণের অবদানই প্রধান। সেই ক্ষুদ্র ঋণের পুরোধা গ্রামীণ ব্যাংক আজ সরকারের রোষানলে পড়ে ১৯ টুকরা হবার হুমকীর মুখে। এভাবে ড. ইউনুসের তেমন ক্ষতি করা যাবে না। তার ক্ষুদ্রঋণের মডেল ইতিমধ্যে সারা বিশ্বে সমাদৃত। তিনি নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন। আমেরিকার সর্বোচ্চ সম্মানে ভূষিত হয়েছেন। বিশ্বের নানা জায়গায় লেকচার দিয়ে কাড়ি কাড়ি টাকা আয় করছেন। গ্রামীণ ব্যাংক ধ্বংস হলে মোটের উপর ক্ষতিগ্র¯ত্ম হবে সেই সব হতদরিদ্র নারীরা। যারা একাধারে দরিদ্র পরিবারে জš§ গ্রহণের জন্য পিছিয়ে আছে এবং দ্বিতীয়ত নারী হিসেবে জš§ নিয়ে বৈষম্যের শিকার। কতো ব্যপার নিয়ে শহুরে নারীবাদীরা সক্রিয়। অথচ গ্রামের দরিদ্র নারীদের সর্বনাশ করার সরকারী চক্রাšেত্মর বিরুদ্ধে তাদের পাশে এরা অনুপস্থিত। বাংলাদেশে এই সব কতিপয় শহুরে নারীবাদীদের কাছে জেন্ডার একটা ব্যবসা, রুটি রুজির উপায়। জেন্ডার রাজনীতির মাধ্যমে তারা নিজেদেরকে অর্থ এবং খ্যাতির শীর্ষে নিয়ে যাবার জন্য মরিয়া। এক সময়ে নারীবাদে সাদা চামড়ার পক্ষপাতিত্বের জন্য আফ্রিকান নারীরা নারীদের মধ্যেও বৈষম্যের শিকার ছিল। ফলশ্রুতিতে, তারা এলিস ওয়াকারের নেতৃত্বে ওইম্যানিজম চালু করেন। যেখানে তারা পুরুষতন্ত্রের বিরুদ্ধে এবং নারীবাদের ভিতরে ঘাঁপটি মেরে থাকা বর্ণবাদের বিরুদ্ধে একই সঙ্গে লড়ছেন। ঠিক তেমনিভাবে শহুরে নারীবাদীদের পক্ষপাতিত্ব এবং ক্ষেত্র বিশেষে জেন্ডার পলিটিক্সের শিকার গ্রামীণ এবং দরিদ্র নারীদের সমন্বয়ে ভিন্ন রকম একটা নারীবাদী আন্দোলন শুরু হওয়া দরকার। অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং আরো নানা দিক দিয়ে পিছিয়ে থাকা নারীগোষ্ঠীর জন্য ‘শহুরে নারীবাদীদের’ উদ্বেগের সীমাবদ্ধতা বা পরিস্কার করে বললে অবহেলার চিত্র বেশ স্পষ্ট। শুধু দু’চারটা যৌতুকের বিরুদ্ধে লড়ে, বাল্য বিবাহ ঠেকিয়ে বা স্বামীর নির্যাতনে আহত-নিহত নারীদের পক্ষে দাঁড়িয়ে, সভা সেমিনারে দু’চার কথা বলে নিজেদেরকে জাতে উঁঠা যায়, তাতে শহরের বস্তিতে থাকা কিংবা গ্রামের কোটি কোটি বঞ্চিত, হতদরিদ্র নারীদের খুব একটা লাভ নেই। এই ধরনের প্রতিষেধকমূলক ব্যবস্থায় আপাত ফল পাওয়া গেলেও দীর্ঘমেয়াদী প্রভাব খুবই কম। বরঞ্চ যে কারণে নারীরা পিছিয়ে আছে, নির্যাতিত হচ্ছে, নারীদেরকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের মাধ্যমে ক্ষমতায়ন করতে পারলেই নিজেরা নিজেদের পক্ষে দাঁড়িয়ে লড়তে পারবে। সেই কাজটিই গত কয়েক যুগ ধরে করে আসছে গ্রামীণ ব্যাংকের মতো ক্ষুদ্র ঋণ চালান এনজিওগুলো। হ্যাঁ তাদের কাজের ত্রুটির সমালোচনা বা তারা আইন ভঙ্গ করলে তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে। তাই বলে শুধুমাত্র একজন ব্যক্তির অপছন্দের তালিকায় থাকাটাকে মাপকাঠি ধরে এতো বড় একটা সংগঠনকে বিলুপ্তির দিকে ঠেলে দেয়াটা শুধু অন্যায় নয়, অপরাধ। অথচ আমাদের নারীবাদীরা এক্ষেত্রে নির্বিকার!! উৎসঃ আমাদের সময় Share on facebook Share on email Share on print
Posted on: Mon, 01 Jul 2013 12:13:31 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015