জীবনে আমি বিষন্ন খুব কম - TopicsExpress



          

জীবনে আমি বিষন্ন খুব কম হয়েছি বা থেকেছি। তার অন্যতম কারন হয়তো আমি নিজেকে সবসময় খুবই ব্যস্ত রেখেছি। আমার কাছে জীবন যখন যেখানে যেমন। আমি আমার বর্তমানের ষোল আনাকে উপভোগ করেছি এবং তার মাঝে নিজেকে প্রচণ্ড ব্যস্ত রেখেছি। আমাদের মত সুবিধাপ্রাপ্ত পরিবারে জন্ম নেওয়া বাচ্চাদের স্কুল লাইফে খুব একটা বিষণ্ণতা আসেনা কারন আমার মত বা আমি বিশেষত আমার পরিবারের Attention সর্ব অবস্থায় ষোল আনা পেয়েছি। চাকরি সূত্রে আমার মা বা বাবা কেউ আমাদেরকে ছেড়ে দূরে থাকেননি। আর আমার বাবা ছিলেন প্রচণ্ড ঘর কেন্দ্রিক। বন্ধু বান্ধবদের সাথে আড্ডা দেওয়া বা বাইরে বাইরে থাকা সেটা কখনো করতে দেখিনি। উনার পৃথিবী ছিল উনার পরিবার (যা আমার মা আর উনার চার ছেলেমেয়ে) এবং কর্মক্ষেত্র। আর আমার মার তো পুরোটাই জুড়ে আমরা। কলেজ জীবনে নটরডেম কলেজের কল্যানে থেকেছি প্রচণ্ড ব্যস্ত। বিশ্ববিদ্যালয়ে আমি এবং আমার বন্ধুরা দিনের প্রায় ১৮ঘন্টা ব্যস্ত থাকতাম। ক্লাস, গান, আড্ডা, অনুদার বাসায় গীটার শিখতে যাওয়া। আমার চারপাশ জুড়ে ছিল কিছু অসাধারন বন্ধু, যারা পড়ালেখার পাশাপাশি মানসিক এবং সাংস্কৃতিক ভাবেও ছিল খুবই উন্নত। আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্ডারগ্রেডের সময়। প্রতিটা মূহুর্তকে উপভোগ করেছি। অনেকে হয়তো দ্বিমত করবে কিন্তু আমি মনে করি সেটা করতে পারার একটা অন্যতম উপযোগ ছিল প্রেম নামক জিনিসের সাথে না জড়ানো হয়তো ... কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করেও সবসময় কাটিয়েছি ব্যস্ততার মাঝে। ২০০৭-২০০৯ দিনরাত ডিপার্টমেন্টেই পড়ে থাকতাম। মনে আছে রমযান মাসে ইফতারের অনেক পড়ে যেতাম তবে তারাবি পড়ে আমি আর মাসুদ ভাই আবার ডিপার্টমেন্টে চলে আসতাম আর যেতাম সেহরির ঠিক আগে আগে। সেই সময় যে একটু সময় পেতাম ডিপার্টমেন্টের কাজের বাইরে সেই সময়টুকু আবার কাটিয়েছি নির্ভেজাল আনন্দে। আমার চারপাশ জুড়ে ছিলেন তখন চমৎকার কিছু মানুষ - ছোটখালা, আমার দুই মামাতো বোন বৃষ্টি, বাঁধন ও এক ভাই দিনার এবং আমার ভাইয়ের মত কাজিন শোলক। ২০০৯ সালে ইউরোপে NEBCC-এর প্রোগ্রামে দুই বছর থাকাকালীনও পেয়েছিলাম কিছু অসাধারন বন্ধু। আমাদের প্রায় ১৯ জনকে ১৩টি দেশ থেকে এই প্রোগ্রামে স্কলারশিপ দিয়ে নিয়ে গিয়েছিল- বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, নাইজেরিয়া, ঘানা, চীন, রাশিয়া, সার্বিয়া, ইউক্রেন, কাজাকিস্তান, ব্রাজিল। আশ্চর্য বিষয় হচ্ছে আমরা ভিন্ন ভিন্ন দেশের, ভিন্ন ভিন্ন ধর্মের এবং ভিন্ন ভিন্ন রং্যের মানুষ এক আশ্চর্য ভাবে মিশে গিয়েছিলাম। ধর্ম, বর্ন বা দেশ আমাদেরকে এক সেমিস্টারের পর আর আলাদা করতে পারে নাই। আমি আমার মাস্টার্সের এই প্রোগ্রাম নিয়ে শুরুতে খুব একটা খুশি ছিলাম না কিন্তু প্রোগ্রামের মাঝামাঝি বুঝতে পারলাম যে কি অপূর্ব অভিক্ষতা আর এক্সপোজার আমরা পেয়েছি তা কাউকেই বলে বুঝানো সম্ভব না। দুই বছরে আমি প্রায় এক যুগের অভিজ্ঞতা পেয়েছিলাম। ঘুরে বেরিয়েছি ইউরোপের বিভিন্ন দেশ, খেয়েছি বিভিন্ন দেশের বিভিন্ন খাবার, দেখেছি বিখ্যাত শহরগুলো। আমাদের প্রোগ্রামের তিন সেমিস্টার আমরা তিন দেশে করেছিলাম। প্রথম সেমিস্টার University of Reading, UK-তে, দ্বিতীয় সেমিস্টার Aristotole University of Thessaloniki, Greece তে এবং তৃতীয় সেমিস্টার University Charles III De Madrid, Spain-এ। আর আমাদের থিসিস এই তিন বিশ্ববিদ্যালয়ের যে কোন একটিতে। আমার মাস্টার্সের থিসিসের অংশটুকু আমি আবার করেছিলাম ইউকে। থিসিসের সময়ের বড় অংশ আমি লন্ডনে থেকেছি। আমি সাধারণত রিমোট লগইন করে কাজ করতাম। লন্ডনে থাকতাম ছোট ফুফুর বাসায় সেন্ট্রাল লন্ডনে। চেন্সারীলেন স্টেশনের পাশে Gray’s inn Road –এ। প্রায়ই একটু একা একা লাগলে আমি অক্সফোর্ড স্ট্রিট ধরে হাটতাম। প্রচণ্ড ব্যস্ত এই রাস্তায় মানুষকে দেখা আর এক শপ থেকে আরেক শপে ঘুরে বেড়ানো ছিল আমার খুবই শখের কাজ। আমি যে খেলাটা খেলতাম তা হল মানুষকে নিবিড় পর্যবেক্ষন। কারো চেহারা দেখে বুঝার চেষ্টা করতাম তার মনের অবস্থা। সে এক আজব খেলা আর এই খেলায় প্রায়ই যোগ দিত আমার ফুফুতো ভাই নাজিয়ার। জীবনে আমার দেখা খুব কম মানুষ আছে যাদের সাথে আমি অনেক ডিপ কথা বলেছি। তার সাথে কথা গুলোর মাঝে থাকত গভীরতা। যাই হোক মাস্টার্সের শেষের দিকে আমি ফুল স্কলারশিপ সহ অস্ট্রেলিয়াতে দুটি বিশ্ববিদ্যালয়ে একসাথে পিএইচডি তে অফার পাই। সিদ্ধান্ত নেই এক সেমিস্টার ডেফার করে মাস্টার্স শেষ করে জয়েন করব। তাই করি। তবে ইউরোপ বা লন্ডন থেকে আমি মেলবোর্নে এসে কিছুটা হতাশ হয়েছিলাম। আমার কাছে মনে হয়েছিল মেলবোর্নে প্রান নেই। আসলে লন্ডন, মাদ্রিদ, এথেন্স বা থেসালনিকি র মত শহরের সাথে তুলনা করলে এই রকমই মনে হওয়ার কথা। অথচ আশ্চর্যজনক হলেও সত্য আজকে এই মেলবোর্নকেই ভালবেসে ফেলেছি। তবে এখনো আমি এখানকার সাবার্ব গুলোর নীরবতা পছন্দ করিনা। সৌভাগ্যবশত শুরু থেকে আমি সিটিতেই কাজ করেছি। মেলবোর্ন সেন্ট্রাল স্টেশন থেকে বের হয়েই আমার ল্যাব বা অফিস। শুরু থেকে আমি সাধারণত চলে আসতাম ফজরের নামাজ পরেই আর যেতাম অনেক রাত করে। RMIT, Building-12, Level-7 আমার খুব প্রিয় একটি জায়গা। এখানেও আমি ব্যস্ত থেকেছি ক্লাস নিয়ে, পিএইচডির কাজ করে এবং কলিগদের সাথে টুকটাক টেবিল টেনিস খেলে। আশ্চর্য বিষয় হল কখনও আমার একাকী লাগে নাই। আমি সাধারণত পারিবারিক Get Together যথাসাধ্য চেষ্টা করেছি এড়িয়ে চলার। আমি একটি উভয় সংকটে পড়ে গিয়েছিলাম। না যেতে পারতাম কোন পারিবারিক Get Together-এ না ছিল কোন সমবয়সী বন্ধু। তবে আমি এই উভয় সংকট কাটিয়ে উঠার জন্য গড়ে তুলি RMIT Bangladeshi Association (RBA). এই RBA কে ঘিরে পেয়ে যাই কিছু সুন্দর মনের তরুন তরুণী। এই জুনিয়রদেরকে নিয়ে কয়েক মাস সেই রকম মজা মাস্তিতে কাটে আমার এবং আমাদের জীবন। আমার এই দলে ছিল মুন্না ( তানিম মাহমুদ ), Gangotri Roy, Md.Salman Ul Hoque Salman Hasan Tahsinur Rahman Leila Noorani Tanzila Rashid Nishi Sumaya Habib Khorshed Alam Ivan Hasan - যাদেরকে নিয়ে আমার এক সময় কেটেছে এক অসাধারন সময় ... কর্মই জীবন, কর্মেই শান্তি, কর্মেই আমার শুরু, কর্মেই আমার শেষ ......... :)
Posted on: Fri, 19 Sep 2014 11:40:51 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015