দুইটি আয়াতের ভুল - TopicsExpress



          

দুইটি আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করে ইসলামকে সন্ত্রাসী ধর্ম ঘোষনা বা বিধর্মীদের হত্যা করার ভুল ফতোয়া দেয়া যায় না স্নায়ুযুদ্ধের শেষে যুক্তরাষ্ট্রের সৈন্য ও মারনাস্ত্রের অনুশীলন বজায় রাখতে এবং অস্ত্র বিক্রী অব্যাহত রাখতে নতুন শত্রু প্রয়োজন ছিলো, প্রয়োজন ছিলো মুসলিম দেশগুলোর তেলের খনির দখল। তৈরী হলো ইসলামী জঙ্গীবাদ তত্ত্ব। বসনিয়ায় হাজারো মানুষ খুন করা খুনীদের দায় কেউ খ্রীষ্টান ধর্মের ওপর চাপায় না, কম্বোডিয়া-বার্মায় লক্ষাধিক মানুষ খুন করা খুনীদের দায় কেউ বৌদ্ধ ধর্মের ওপর চাপায় না কেবল একজন মুসলমানের ব্যক্তিগত অপরাধের দায় চেপে যায় তার ধর্মের ওপর; নিরপরাধ ধর্ম পালনকারীর ওপর। ধর্ম হিসেবে ইসলামকে সন্ত্রাসী প্রমান করার জন্য বহুলভাবে আল-কোরআনের দুইটি আয়াতকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করে থাকে। এই দুইটি আয়াত হচ্ছে সূরা আল-আনফাল এর ১২ নং আয়াত এবং সূরা আত তাওবাহ এর ৫ নং আয়াত। বদরের যুদ্ধে মাত্র মাত্র ৩১৩জন যোদ্ধা ২জন অশ্বারোহী এবং ৭০উটবাহী সৈন্য নিয়ে মুসলিম বাহিনী ৯০০ জন যোদ্ধা ১০০জন অশ্বারোহী এবং ১৭০জন উটবাহী সৈন্যের বিশাল বাহিনীকে পরাস্ত করার পর একাধারে এই বিজয়ের বিষ্ময় এবং যুদ্ধে বিজয়ী মালামাল বণ্টনের আগে সূরা আল-আনফাল অবতীর্ন হয়েছিলো। এই সূরা অবর্তীর্ন হবার পর জানা যায় যে যুদ্ধে আল্লাহ প্রেরিত ফেরেশতারাও অংশগ্রহণ করেছিলো। মূলত ১২ নং আয়াতটি ঐ ফেরেশতাদের উদ্দেশ্যেই বদরের যুদ্ধকালীন কর্তব্যের জন্য আল্লাহর দেয়া নির্দেশ। একজন যুদ্ধকালীন জেনারেল যেভাবে তার সৈন্যদের নির্দেশ দেন ঠিক তেমনি। এবার দেখি আয়াতটিতে কী লেখা আছে- (তিনটি তর্জমা দিলাম) ১/ যখন নির্দেশ দান করেন ফেরেশতাদিগকে তোমাদের পরওয়ারদেগার যে, আমি সাথে রয়েছি তোমাদের, সুতরাং তোমরা মুসলমানদের চিত্তসমূহকে ধীরস্থির করে রাখ। আমি কাফেরদের মনে ভীতির সঞ্চার করে দেব। কাজেই গর্দানের উপর আঘাত হান এবং তাদেরকে কাট জোড়ায় জোড়ায়। ২/ স্মরণ কর, যখন তোমাদের প্রতিপালক ফেরেশতাগণের প্রতি প্রত্যাদেশ করেন, নিশ্চই আমি তোমাদের সাথে আছি। সুতরাং তোমরা বিশ্বাসীগণকে অবিচলিত রাখ। যারা অবিশ্বাস করে, আমি অচিরেই তাদের হৃদয়ে আতঙ্ক প্রক্ষেপ করব। সুতরাং তাদের ঘাড়ের ওপর আঘাত কর এবং আঘাত কর তাদের সর্বাঙ্গে। ৩/ [Remember] when your Lord inspired to the angels, I am with you, so strengthen those who have believed. I will cast terror into the hearts of those who disbelieved, so strike [them] upon the necks and strike from them every fingertip. [আরো তর্জমার জন্য দেখুন: quran/8/12 ] দেখা যাচ্ছে এখানে অনুবাদের সময় কোথায় কীভাবে আঘাত করতে হবে সেটা নিয়ে কিছুটা তারতম্য থাকলেও একটা বিষয়ে কোন দ্বিমত নেই যে এটা ফেরেশতাদের জন্য জারী করা আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের নির্দেশ এবং এই নির্দেশ দেয়া হয়েছিলো যখন তারা বদরের যুদ্ধে মুসলমামদের পক্ষ হয়ে লড়াই করতে গিয়েছিলো তখন। আমি ইবনে কাসিরের তাফসিরের বাংলা ও ইংরেজী তর্জমা এবং হাসানুল বায়ান এর বাংলা তর্জমাতেও এই আয়াতের শানে নুজুল ও ব্যাখ্যা হিসেবে এটাই পেয়েছি। সুতরাং এই আয়তটি যেমন সকল মুসলমানদের প্রতি দেয়া নির্দেশ মনে করার কোন কারণ নেই, তেমনিভাবে অন্য কোন স্থানে অন্য কোন পরিস্থিতিতে বিধর্মীদের হত্যা করার জন্য প্রযোজ্য মনে করারও কোন কারণ নেই। ইসলামকে সন্ত্রাসী ধর্ম হিসেবে প্রমানের জন্য ইসলাম বিদ্বেষীরা এবং ফ্যানাটিক ইসলামিস্ট পলিটিশিয়ানরা বিধর্মীদের হত্যার জন্য উষ্কানী দিয়ে যে আয়াতটি সবচেয়ে বেশি ব্যবহার করেছেন সেটি হচ্ছে সূরা আত তাওবাহ এর ৫ নং আয়াত। এই সূরাটির প্রথম কয়েকটি আয়াত অবর্তীর্ন হয়েছিলো মহানবী (স:) যখন তাবুকের যুদ্ধ থেকে ফিরছিলেন তখন। সেটা হজ্জ্বের সময় ছিলো। মুশরিকরা সেই সময় তাদের অভ্যাস অনুযায়ী উলঙ্গ হয়ে কাবাঘরের চারিদিকে তাওয়াফ করতো। রসুলুল্লাহ (স:) তাদের এইসব আচরণ অপছন্দ করতেন বিধায় ঐ বছর হজ্জ্ব করা থেকে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেন এবং মক্কার মুশরিকদের মধ্যে হজ্জ্বের আককাম শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি এই সূরার প্রাথমিক আয়াতগুলির নির্দেশ প্রচার করার জন্য হজরত আবু বকর (রা:) এবং হযরত আলী (রা:) সেখানে পাঠান। ঐ সময় মক্কার মুশরিকদের সাথে চুক্তির সময়সীমা অতিক্রমের জন্য চারমাস বাকী ছিলো। সে কারণেই চারমাসের সময় নির্ধারণ করে দিয়ে তাদেরকে মুসলমান হতে অথবা নিরাপদ স্থানে চলে যেতে নির্দেশ জারি করা হয়েছিলো। এই পুরো বিষয়টি বুঝতে হলে সূরাটির প্রথম থেকে অন্তত ৩৬টি আয়াত তর্জমাসহ পাঠ করা অত্যন্ত জরুরী। যাই হোক আমি ৫ নং আয়াতটি এখানে উল্লেখ করছি- ১/ অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে মুশরিকদের হত্যা কর যেখানে তাদের পাও, তাদের বন্দী কর এবং অবরোধ কর। আর প্রত্যেক ঘাঁটিতে তাদের সন্ধানে ওঁৎ পেতে বসে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, নামায কায়েম করে, যাকাত আদায় করে, তবে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। ২/ অতঃপর নিষিদ্ধ মাস অতিবাহিত হলে অংশীবাদীদেরকে যেখানে পাও হত্যা কর, তাদেরকে বন্দী কর, অবরোধ কর এবং প্রত্যেক ঘাটিতে তাদের জন্য ওঁৎ পেতে থাক। কিন্তু যদি তারা তওবা করে, যথাযথ নামাজ পড়ে ও যাকাত প্রদান করে, তাহলে তাদের পথ ছেড়ে দাও। নিশ্চয় আল্লাহ চরম ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু। ৩/ And when the sacred months have passed, then kill the polytheists wherever you find them and capture them and besiege them and sit in wait for them at every place of ambush. But if they should repent, establish prayer, and give zakah, let them [go] on their way. Indeed, Allah is Forgiving and Merciful. [আরো তর্জমার জন্য দেখুন: quran/9/5 ] এখানে সেই সময়ে মক্কায় অবস্থানরত মুশরিকদের কথাই বলা হয়েছে, যারা ঐ চারমাস সময় অতিক্রম করার পরও জোর করে মক্কায় থেকে কাবা ঘরের তত্ত্বাবধানের চেষ্টা করবে। এই কঠোর শাস্তি ঐ মুশরিকদের জন্যই। তবে পরবর্তীতে প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা:) এই আয়াতটি ব্যবহার করেই যারা যাকাত দিতে চায় না তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন করার ঘোষনা দিয়েছিলেন। সুতরাং এই আয়াতকেও কোন ভাবেই সকল মুমিনদের প্রতি যে কোন মুশরিককে হত্যার পাইকারী নির্দেশ হিসেবে প্রচার করার কোন কারণ নেই। অথচ আমাদের দুর্ভাগ্য এই যে, সেই সময়ে কাবা দখল করে রাখা মুশরিকদের জন্য প্রযোজ্য আয়াতকে ভুল ব্যাখ্যা করে ইসলাম বিদ্বেষীরা পুরো ইসলাম ধর্মকে সন্ত্রাসী ধর্ম হিসেবে প্রমানের চেষ্টা করে। আর মর্মান্তিক বিষয় এই যে, আমাদের ইসলাম ধর্মাবলম্বী কিছু রাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্খী মানুষ এই আয়াতের ভুল ব্যাখ্যা করে যে বর্তমান সময়ের যে কোন মুশরিক বা আহলে কিতাবীকে হত্যার ফতোয়া প্রদান করে! অর্থাৎ এই আয়াতটির মাধ্যমে ইসলামকে একটি সন্ত্রাসী ধর্ম প্রমানে ইসলাম বিদ্বেষী পুল ফ্যাক্টর এর পাশাপাশি ফ্যানাটিক পলিটিকাল ইসলামিস্টদের পুশ ফ্যাক্টরও রয়েছে। একটি ৩০ পারার গ্রন্থ, যার মধ্যে ১১৪টি সূরা আছে, ৬হাজার ২শত ৩৬টি আয়াত আছে, আছে এর ওপর গবেষণা করে আলেমদের রচিত কয়েক হাজার পৃষ্ঠার শানে নুজুলসমেত তাফসির.... এমন কী যে গ্রন্থটি প্রায় দেড় হাজার বছর যাবত অবিকৃত অবস্থায় আছে, সেই গ্রন্থ থেকে আগে পিছের কোন আয়াত না দিয়ে, কোন তাফসির বা শানে নুজুল আলোচনা করে একটি, দুইটি আয়াত বিচ্ছিন্যভাবে কোট করে পুরো ধর্মকে সন্ত্রাসী হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা নিতান্তই মূর্খতা। আর যারা এই আয়াতের ওপর ভর করে মুশরিক ও আহলে কিতাবীদের হত্যার ফতোয়া দেন, তারা কী একবারও এই আয়াতের ওপর ভিত্তি করে যাকাত আদায় না করাদের বিরুদ্ধে হযরত আবু বকর (রা:) এর দৃষ্ঠান্তমূলক শাস্তির কথা স্মরণ করেন? ওনারা কী একবারও যাকাত আদায় না করাদের বিরুদ্ধে এমন কঠোর ফতোয়া দিয়েছেন? পরম করুনাময় আল্লাহ তায়ালা আমাদের সঠিক পথ চিনতে সহায়তা করুন, নিশ্চই তিনিই ভালো জানেন। [আমি কোন ইসলামী আলেম নই। এই কথাগুলো একান্তই আমার নিজের কথা। তবে এই কথাগুলো লেখার জন্য আমি যেখান থেকে রেফারেন্স নিয়েছি সেগুলো আপলোড করে দিলাম। যে কেউ এখানে আমার বক্তব্যের বিরোধিতা করে পর্যাপ্ত রেফারেন্সসহ আলোচনা করে এটিকে আরো সমৃদ্ধ করতে পারেন। তবে কোন রেফারেন্স ছাড়া এবং সেই রেফারেন্সের লিংক ছাড়া কোন বিভ্রান্তি বা বিদ্বেষমূলক মন্তব্য এখানে গ্রহণ করা হবে না।] ------------------------- তাফসিরসমূহ ১/ সূরা আল-আনফাল (আহসানুল বাইয়ান, বাংলা) goo.gl/el0E2w ২/ সূরা আল-আনফাল (ইবনে কাসির, ইংরেজী) goo.gl/zxlS4v ৩/ সূরা আল-আনফাল (ইবনে কাসির, বাংলা) goo.gl/cjXc1p ৪/ সূরা আত তাওবাহ (আহসানুল বাইয়ান, বাংলা) goo.gl/Wma1JY ৫/ সূরা আত তাওবাহ (ইবনে কাসির, ইংরেজী) goo.gl/1yDcpa ৬/ সূরা আত তাওবাহ (ইবনে কাসির, বাংলা) goo.gl/dcB34i
Posted on: Sat, 11 Oct 2014 11:11:39 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015