পার্বত্য চট্টগ্রাম - TopicsExpress



          

পার্বত্য চট্টগ্রাম স্বাধীন সার্বভৌম গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের এক ও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। অথচ, কারণে- অকারণে এই অমোঘ সত্যটিকে পাশ কাটিয়ে কতিপয় উপজাতীয় নেতা দেশে-বিদেশে নারারূপ বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছেন এবং নিরীহ সরলপ্রাণ পার্বত্যবাসী সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করে চলেছেন। দেশ যদি একই হবে, তবে পার্বত্য ভূমি বিরোধের কথা উঠবে কেন? বাংলাদেশের সংবিধান ও স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বকে সম্মান জানালেই সব বিরোধ মিটে যায়। অথচ, কতিপয় উপজাতীয় নেতা আজো বলে বেড়াচ্ছেন তারা বৃটিশ হিল ট্রাক্টস ম্যানুয়েল এক্ট ১৯০০ এবং প্রথাগত ভূমি অধিকারের অব্যাহত বাস্তবায়ন চান। তারাই জাতিসংঘ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা, এমনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল, জাইকা, বিশ্বব্যাংক, এডিবি ইত্যাদি সংস্থাগুলোকে অবিরত বিভ্রান্ত করে চলছেন। এসব উপজাতীয় নেতারাই বলে থাকেন- ‘‘পার্বত্য চট্টগ্রামে নাকি বাংলাদেশ সরকারের কোনই ভূমি অধিকার নাই। পার্বত্যাঞ্চল একটি সংরক্ষিত (Excluded) এলাকা। এখানে নাকি উপজাতীয় ছাড়া বাংলাদেশের অন্য কোন এলাকার নাগরিকদের বসবাস করার অধিকার নাই...’’ ইত্যাদি ইত্যাদি। বিগত ১৪ বছর যাবত পাহাড়ে শান্তি স্থাপন নিয়ে নানারূপ কথাবার্তা, সভা- সমাবেশ, বৈঠক ও সেমিনার হচ্ছে। ২ ডিসেম্বর ১৯৯৭ইং আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়টি অবগত আছি। চুক্তির পর থেকে এ যাবত সরকারিভাবে ধাপে ধাপে তিনটি পার্বত্য জেলা পরিষদ ও আঞ্চলিক পরিষদের হাতে অনেকগুলো মন্ত্রণালয়/ সংস্থাকে হস্তান্তর করা হয়েছে। সন্তু লারমাসহ সাবেক শান্তি বাহিনীর সকল নেতাকেই কমবেশী সরকারি পদমর্যাদা ও সুযোগ- সুবিধাদান অব্যাহত আছে। হাজার হাজার চাকমা শরনার্থীকে পুনর্বাসন করা হয়েছে। ২০০০ আত্মসমর্পণকারী বিদ্রোহী উপজাতীয় নেতাকে সরকারি চাকরি দেয়া হয়েছে। পাহাড়ে যত ঠিকাদারী, যত ব্যবসা, যত নিয়োগ হচ্ছে তার শতভাগই লুটে নিচ্ছে উপজাতীয় নেতাদের পরিবারবর্গ এবং দলীয় ক্যাডাররা। অথচ, এরপরও বিগত ১৪ বছর যাবত পাহাড়ে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাস, গুম, হত্যা, মুক্তিপণ, অপহরণ ইত্যাদি রাষ্ট্রবিরোধী ও অনৈতিক কর্মকান্ড লেগেই আছে। বেআইনী অস্ত্রের ভারে পাহাড়ের জনগণ আতঙ্কিত ও শঙ্কিত। এখনো, সন্তু লারমার জনসংহতি সমিতি ও প্রসিত বি. খীসার ইউপিডিএফ (UPDF) প্রকাশ্যেই বন্দুকযুদ্ধে লিপ্ত হচ্ছে। লুটপাটের অর্থ ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তারের জন্য তারা পার্বত্যবাসী জনগণকে জিম্মি করে রেখেছে। সন্তু লারমা প্রায়ই সরকারের কাছে দাবি করে থাকেন- ইউপিডিএফ জুম্ম জাতির শত্রু, একে বেআইনী ঘোষণা করতে হবে। অন্যদিকে ইউপিডিএফ নেতারা সন্তু লারমাকে বলে থাকেন-আপোষকামী, ক্ষমতার লোভী, উচ্চাভিলাষী অলস নেতা বলে। সন্তু লারমা মুখে ইউপিডিএফকে নিষিদ্ধ করার দাবি জানালেও কার্যকরিভাবে কখনোই তাদেরকে প্রতিরোধ করার কোনই ব্যবস্থা নেননি। বরং তারা যখন হরতাল, অবরোধ, মিছিল-মিটিং করেন, তখন তারা পরস্পরকে সহযোগিতা করে থাকেন। বাংলাদেশ বিরোধী প্রচারণাসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়েও সকল কর্মসূচিতে জেএসএস ও ইউপিডিএফ একাট্টা থাকে। ফলে, ঐসব অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা বরাবরই ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকছে এবং ক্ষেত্র বিশেষে আইন- শৃক্মখলা বাহিনী তাদেরকে আটক করলেও ছেড়ে দেয়ার তদ্বিরে তাদের মধ্যে যেন প্রতিযোগিতা লেগে যায়। এসব কারণেই মূলতঃ পাহাড়ে অস্থিতিশীলতা অব্যাহত আছে এবং ভূমি বিরোধ নিত্তিসহ অনেকগুলো বিষয় ঝুলে আছে। আমরা জানি না, যদি পার্বত্য চট্টগ্রামে বাংলাদেশ সরকারেরই কোন ভূমি না থাকে, তবে সাধারণ বাঙালিরা কিভাবে সেখানে ভূমির অধিকার পাবে? যেখানে পার্বত্য চট্টগ্রামকে উপজাতীয় নেতাদের ভাষায় বলা হয় জুম্মল্যান্ড, নিজেদের বলেন জুম্মজাতি, সাবেক শান্তিবাহিনীকে বলেন জুম্ম লিবারেশন আর্মি (JLA) পাহাড়ের বাঙালিদেরকে বলেন, বহিরাগত, মুসলিম অনুপ্রবেশকারী, সেটেলার বাঙালি, আমাদের সেনাবাহিনীকে তারা বলেন, দখলদার, বাংলাদেশী সামরিক জান্তা, জলপাই স্বৈরাচার ইত্যাদি নামে। সেক্ষেত্রে দ্বনদ্ব অবসানের সুযোগ কোথায়? উপজাতীয় নেতারা যখন সচিবালয়ে কিংবা জেলা সার্কিট হাউজে কিংবা অন্যত্র বাংলাদেশের সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে বৈঠকে বসেন, তখন তাদের হাবভাব দেখে মনে হয় না যে, তারা বাংলাদেশেরই এক ও অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ পার্বত্য চট্টগ্রামের অধিবাসী। তাদের উত্তেজিত কথাবার্তা ও দাবি-দাওয়ার বহর দেখে মনে হয়, অন্য কোন জাতি বা রাষ্ট্রের পক্ষে তারা কথা বলছেন। তারা মুখে বলছেন, বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধান লঙ্ঘিত হয়, এমন কোন কাজ তরা করবেন না। অথচ কার্যক্ষেত্রে বরাবরই তারা দেশের অখন্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন। এ থেকে কিভাবে দেশের মানচিত্র রক্ষিত হবে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। যদি বাংলাদেশের সংবিধানকে মর্যাদা ও সম্মান দেয়া হয়, তবে কিছুতেই পার্বত্য ভূমি বিরোধ থাকতে পারে না। আমাদের ভূমি মন্ত্রণালয় দেশের সকল নাগরিকের ক্ষেত্রে যে আইনী ব্যবস্থা অবলম্বন করে, পাহাড়ে একজন নাগরিকের ক্ষেত্রেও সেই আইন প্রয়োগে বাধা কোথায়? কেন, খাদেমুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম ভূমি বিরোধ নিত্তি কমিশনের সাথে গায়ে পড়ে বিরোধ লাগানো হচ্ছে? পাহাড়ে ভূমি জরিপ (CADASTRAL SURVEY) করতে বাধা দেয়া হচ্ছে কেন? তিন পার্বত্য জেলার ৫০০০ নাগরিক ভূমি কমিশনে দরখাস্ত করেছেন বিরোধ নিত্তির জন্য। অথচ, যেদিনই ল্যান্ড কমিশন সভা ডাকে, শুনানির দিন ধার্য্য করে, সেদিনই জেএসএস কিংবা ইউপিডিএফ পাহাড়ে ধর্মঘট ডাকে, অবরোধ ডাকে এবং পার্বত্যবাসীদেরকে কমিশনের সামনে আসতে বাধা দেয়া শুরু করে। তাহলে, এটা কি মগের মুল্লুক? ‘‘বিচার মানি তবে তালগাছটা কিন্তু আমার’’। এই যদি মনোবৃত্তি হবে, তবে সমাধান আসবে কোত্থেকে? দেশের সমতলের জন্য এক আইন এবং পাহাড়ের কতিপয় উপজাতীয় নেতাদের স্বার্থে আরেক আইন- এই নীতি আমাদের সংবিধানের সাথে সাংঘর্ষিক। অথচ, এরপরও তারা বলছেন- তারা নাকি বাংলাদেশের পবিত্র সংবিধানকে মেনে নিয়েই সব দাবি- দাওয়া করছেন। কী আশ্চর্য রসিকতা! পার্বত্য চট্টগ্রামে এযাবতকাল অধিগ্রহণ করা ভূমি, সরকারের রক্ষিত বনাঞ্চল, রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন শিল্প, কল-কারখানা, কাপ্তাই পানি- বিদ্যুৎ প্রকল্প এলাকা, বেতবুনিয়া ভূ-উপগ্রহ কেন্দ্র এবং সরকার বা স্থানীয় কর্তৃপক্ষের নামে রেকর্ডকৃত ভূমির মালিকানা ছেড়ে দেয়ার মানে কি এই নয় যে-ঐ এলাকায় আমাদের সরকারের কোন স্বাধীন ও সার্বভৌম নিয়ন্ত্রণ নেই। তাহলে-উপজাতীয় নেতাদের জুম্মল্যান্ড নামে স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি, আর কথিত শান্তিবাহিনীর ৫ দফার পার্থক্য কোথায় রইল? যে ৩৫ হাজার বাঙালি নরনারী পাহাড়ে শহীদ হল, ১০ হাজার সৈনিক দেশের জন্য জীবন দিল, শত শত আনসার বিডিআর, ভিডিপি, টিডিপি, হিল আনসার প্রাণ হারাল তাদের জীবনের মূল্য কি এই ছিল? রাষ্ট্রের ভৌগোলিক সীমারেখার অখন্ডতা ছেড়ে দিয়ে একোন আপোষকামিতাকে লালন হচ্ছে? আমরা জানি, সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে অর্জিত এই বাংলাদেশের অধিকাংশই দেশপ্রেমিক। সংসদ উপনেতা সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন গঠিত পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন কমিটি, ল্যান্ড কমিশন চেয়ারম্যান বিচারপতি খাদেমুল ইসলাম চৌধুরী, আইনমন্ত্রী শফিক আহমেদ, পার্বত্য মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাবৃন্দ, পার্বত্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি, ড. গওহর রিজভী কিংবা আমাদের ভূমি মন্ত্রণালয়, দেবাশীষ রায় গং, সন্তু লারমা গং এরা সবাই বাংলাদেশের জন্য একাট্টা। সবাই চান, দেশের অখন্ডতা, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে অটুট রাখতে। তাই যদি হবে- কেন সংবিধানকে লঙ্ঘন করে দেশের একটি অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এভাবে কিছু লোকের হাতে ছেড়ে দেয়ার সিদ্ধান্ত হচ্ছে? এর জন্য জাতীয় সংসদেও বিল আনার কথা হচ্ছে কেন? জেনেশুনে বিষপানের এই আনুষ্ঠানিকতাকে আমরা কিছুতেই স্বাগত জানাতে পারি না। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট সবাই সময় থাকতে যত তাড়াতাড়ি জেগে উঠবেন, ততদ্রুত দেশের মঙ্গল হবে। নতুবা এর সুকঠিন দায়-দায়িত্ব চিরদিনই পরবর্তী প্রজন্মকে বহন করতে হবে। আমরা আর কত নমনীয় হবো?
Posted on: Tue, 29 Jul 2014 14:30:00 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015