প্রবাহমান সময়ের কাছে - TopicsExpress



          

প্রবাহমান সময়ের কাছে বন্দী আমরা সব। এই সময়ের আবর্তনে ঘটে যাওয়া গুচ্ছ গুচ্ছ স্মৃতি গুলো আমাদের সারা জীবনের রোমন্থনের খোরাক। কিছু কিছু স্মৃতির স্বাদ মধুর আবার কিছু স্মৃতির তেতো। অবাক করার বিষয় হচ্ছে মানুষের এই স্মৃতির সারিতে সবার সামনে স্থান পায় অপূর্ণতা গুলো। চাইলেও মধুর স্মৃতি গুলোকে সামনে দাড় করানো যায় না। তবে এটাও ঠিক, জীবন কখনোই থেমে থাকে না। যেমন থেমে নেই টুটুলের জীবন অথবা হৃদিকার। যার যার অবস্থান থেকে দু-জনেই সুখি আজ। তার পরেও থেকে যায় কিছু অপূর্ণতা, যে গুলো স্থান পায় স্মৃতির সারির প্রথম দিকে। অনেক পড়ালেখা ও ভালো রেজাল্ট থাকা পর ও পাবলিকে চান্স না পেয়ে টুটুল জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়। প্রথম প্রথম তাকে হতাশা ঘিরে ধরে, তাই ক্লাস শুরুর প্রায় দুই মাস পর সে ক্যাম্পাস এ যাওয়া শুরু করে তাও মাঝে মাঝে। Chemistry তে পড়তো সে। এই বিষয় টা অনেক জটিল নিয়মিত ক্লাস না করলে অনেক পিছিয়ে পড়তে হয়। যদিও সে ভালো ছাত্র ছিলো তবে প্রথম অবস্থায় তাকে হিমশিম খেতে হয়েছে। তখন তার ক্লাসের একজন মেয়ের সাথে তার পরিচয় হয়, নাম হৃদিকা। খুব অমায়িক তার ব্যবহার এবং ক্লাসের অন্যতম ভালো একজন ছাত্রী সে। সে টুটুল কে সবসময় হেল্প করতো। স্যারের বাসা, শীট সহ যাবতীয় সব বিষয়ে টুটুল, হৃদিকার হেল্প পেতো। তাদের মধ্যে ভালো বন্ধুত্ব হয়। তারা এক জন আরেক জনের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো। দীর্ঘ ৬ - ৭ বছর পড়ালেখা করেছে এক সাথে তারা। অনার্স ২য় বর্ষের দিকে হৃদিকার একটা রিলেশন হয় তার ডিপার্টমেন্ট এর এক বড় ভাইয়ের সাথে। তাতে টুটুল এর কোন সমস্যা ছিলো না কিন্তু তখন তাদের মধ্যে একটা গ্যাপ সৃষ্টি হয়। যেমন, আগে হৃদিকা ক্যাম্পাস এ আসার আগে অবশ্যই টুটুল কে ফোন দিতো। কিন্তু হৃদিকার রিলেশন হওয়ার পর সেটার পরিমাণ কমে যায় তারপর আগে হৃদিকা টুটুলের পড়ালেখা নিয়ে অনেক কেয়ার করতো তাও কমে যায়। এটা হওয়া স্বাভাবিক টুটুল জানে। এদিকে টুটুল, হৃদিকার বেস্ট ফ্রেন্ড হওয়ায় হৃদিকা প্রায় সময় তার ব্যাক্তিগত অনেক কিছুই টুটুল কে বলতো। ৪র্থ বর্ষের শুরুতে হৃদিকার রিলেশন টা কোন এক কারনে শেষ হয়ে যায়। খুব ভেঙে পরে সে, সেই সময় হৃদিকার পাশে সবসময়ের মত টুটুল দাড়ায়। তাকে বুঝায়, হয়তো টুটুল সেই সময় না থাকলে হৃদিকার জীবনে অনেক বড় ক্ষতি হয়ে যেতো। হৃদিকার প্রতি অনুভূতির জন্মটা ঠিক তখন। একটা সময় টুটুল উপলব্ধি করে যে সে হৃদিকাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। তার পৃথিবীতে এখন হৃদিকার বিচরন। কিন্তু টুটুল নির্বাক থাকে, কারন সে চায় না তার বন্ধুত্বের নষ্ট করতে। আবার এটা যদি হৃদিকা করুণা ভাবে তবে সবচেয়ে বেশী কষ্ট টুটুলই পাবে তাই সে কখনোই এই ভালোলাগা বা ভালোবাসার কথাটা হৃদিকা কে বলে নি। মাস্টার্স এর প্রথম দিকে হৃদিকার বিয়ে হয়ে যায়। কানাডা প্রবাসী এক ছেলের সাথে আর তখনো টুটুল হৃদিকার বেস্ট ফ্রেন্ড হিসেবেই ছিলো। এখন হৃদিকার সাথে টুটুলের অনেক দুরত্ব তৈরী হয়েছে। টুটুল জানে যে, এটা শুধুমাত্র দৈর্ঘের দুরত্ব মনের নয়। কারন বন্ধুত্ব সব কিছুর উর্ধে। আর এর জন্যই কিছু কিছু না বলা ভালোবাসার অপমৃত্যু গুলো মেনে নিতে হয়। যেমন টুটুল নিয়েছে। কারন এতে যদি হৃদিকা ভালো থাকে তবে ক্ষতি কি। আর এর ফলে থাক না নিজের ভিতর একটা চাপা কষ্ট, অনেক গুলো লুকানো অভিব্যক্তি আর হৃদয় নিংড়ানো কিছু বিশুদ্ধ ভালোবাসার না বলার অনুভূতি।
Posted on: Wed, 16 Jul 2014 05:12:07 +0000

Trending Topics




© 2015