পড়ন্ত বিকেল। নিহাদ লেকের - TopicsExpress



          

পড়ন্ত বিকেল। নিহাদ লেকের পাশের বেঞ্চিতে বসে সূর্য ডুবা দেখছে আর গীটারে সুর তুলছে। হাতে যখন কোন কাজ থাকেনা, তখন প্রায়ই নিহাদ এ জায়গাটাতে বসে থাকে, আর কল্পনার সঙ্গীত জগত থেকে সুর বের করে গীটারে ফুটিয়ে তোলে। এই মুহূর্তে নিহাদ ওর লেখা “স্বপ্নে দেখা রাজকন্যা” গানটার সুর তোলার চেষ্টা করছে, কিন্তু হঠাৎ ওর কাজে বিঘ্ন ঘটালো একটি মেয়েলি কণ্ঠের কাশির খুক খুক শব্দ। এই সময়ে কেউ বিরক্ত করলে নিহাদের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়, ভ্রু কুঁচকে মেয়েটির দিকে তাকালো। -আসসালামুয়ালাইকুম নিহাদ তাকানোর সাথে সাথে থ বনে গেল, এর কারন দুইটা এক মেয়েটির সালাম শুনে, দুই মেয়েটি ছিল অপরূপ সুন্দরী। নিহাদের রাগ কর্পূরের মত উড়ে গেল, এক ধ্যানে মেয়েটির দিকে তাকিয়ে আছে সে.. মেয়েটির ডাকে ধ্যান ভাঙলো। -এই যে আসসালামুয়ালাইকুম -অলাইকুমআসসালাম। আপনি? -আমি “সুমাইয়া রাহা”। প্রতিদিন বিকেলে ছোট ভাইকে নিয়ে এখানে ঘুরতে আসি, আপনাকে প্রায় দেখি এখানে বসে গীটার বাজান, ভালোই বাজাতে পারেন, আমার গীটারের টোন ভীষণ ভালো লাগে, তাই ভাবলাম আপনার সাথে পরিচিত হয়ে নিই। - আমি নিহাদ হোসাইন। -আমি কি আপনাকে বিরক্ত করলাম? আপনার মুখ দেখে মনে হচ্ছে আপনি বিরক্ত। - No It’s Ok… - আমি কি আপনার বন্ধু হতে পারি? যদি আপনার কোন আপত্তি না থাকে। নিহাদের তেমন বন্ধু নেই, নিহাদ কিছুক্ষণ ভাবলো, মেয়েটিকে দেখে ভদ্র ঘরের মনে হচ্ছে। বন্ধুত্ব করা যায়। - ঠিক আছে, বন্ধু হতে পারেন। -থ্যাংকস” বলেই রাহা একটা হাসি দিল। নিহাদ ভাবছে চশমা পরা মেয়েটিকে হাসলে মনে হয় চারপাশে মুক্ত ঝরে পড়ছে। রাহার কণ্ঠ শুনে আবার ধ্যান ভাঙল -সন্ধ্যা হয়ে আসছে, আজ আসি আবার দেখা হবে। টাটা..... রাহা চলে যাচ্ছে, নিহাদ ওর গমন পথের দিকে তাকিয়ে ভাবছে “কে এই সুন্দরী মেয়ে? কথা নেই বার্তা নেই বন্ধু হয়ে গেল? আর আমিও বোকার মত হ্যাঁ বলে দিলাম” কিছুক্ষণ মন্ত্রমুগ্ধের মত বসে নিহাদ থেকে উঠে পড়ল, আজ আর সুর তোলা হবেনা। এভাবেই প্রথম পরিচয় হয় রাহা আর নিহাদের। রাহার সাথে প্রথম পরিচয়ে একধরণের ভালোলাগা কাজ করে নিহাদের ভেতর। মেয়েটির চাঞ্চল্য, হাসি, কথা সবকিছু নিহাদকে মুগ্ধ করে, আগে নিহাদ মাঝে মাঝে লেকে আসত, এখন প্রতিদিন আসে। ধীরে ধীরে ওরা ভাল বন্ধু হয়ে যায়। রাহার গীটারের টোন খুব পছন্দ, একবার গীটার ছাড়া লেকে গিয়েছিল নিহাদ, আর তা দেখে সে কি রাগ রাহার.... -আজ গীটার আনো নি কেন? -আসলে ক্লাস থেকে সোজা এখানে চলে এসেছি, আনার সুযোগ পাইনি। -কোন কথা শুনব না, যাও এখনি যাও গীটার নিয়ে এসো। -মাত্র তো আসলাম, এখনই যেতে হবে? -হে এখনই, এটা তোমার গীটার না আনার শাস্তি, তুমি জাননা তোমার গীটারের টোন না শুনলে আমার ভালো লাগেনা। বলেই রাহা অন্যদিকে মুখ ঘুরালো, নিহাদ বুঝল মেয়েটি অভিমান করেছে, সামান্য কারনেই অনেক অভিমান করে মেয়েটি। -রাহা এই রাহা। সরি তো এই কান ধরলাম আর এমন হবে না। -সত্যি তো? -হুম সত্যি। এমন ভুল আর করবোনা। -ঠিক আছে, আজকের মত মাফ করে দিলাম। এভাবেই ওদের বন্ধুত্ব এগিয়ে যায়, ভালোলাগা থেকে কখন যে মনের মিল হয়ে যায় তা নিহাদ নিজেও বুঝতে পারেনা। নিহাদ চেষ্টা করে রাহাকে বোঝার, রাহাকে তার মনের কথা বোঝাবার। প্রতিদিন নিহাদ বাসা থেকে I Love You বলার প্র্যাকটিস করে আসে, কিন্তু বলতে পারেনা, রাহার সামনে গেলেই সব গুলিয়ে যায়। এমনি করে রাহার জন্মদিন চলে আসে, নিহাদ নিয়ত করে এবার রাহাকে তার মনের কথা জানাবে। রাহার জন্য বার্থডে গিফট নিয়ে নিহাদ বার্থডে পার্টিতে যায়। নীল শাড়ি পরে মুখে মিষ্টি হাসি নিয়ে রাহা নিহাদের কাছে আসে। -এত লেট করলে কেন? -কই লেট করলাম? -তুমি ৫মিনিট লেট। -রাস্তায় জ্যাম ছিল তাই একটু লেট হল। হ্যাপি বার্থডে রাহা। বলেই নিহাদ নীল মলাটে মোড়ানো একটা ডায়েরি রাহার হাতে দেয়। -তুমি তো লেখালেখি পছন্দ কর, মনের ভাবনা জগতের কথাগুলো এটাই লিখবে তাই দিলাম। - থ্যাংক ইয়ু.. Anyway আজ আমার বার্থডে তাই তোমাকে ছেড়ে দিলাম। -রাহা.. -হুম বল -না মানে একটা কথা...... -কি কথা বল -না আসলে.... এই রাহা কেক কাটবি না? সবাই তোর জন্য অপেক্ষা করছে। রাহার এক ফ্রেন্ড ওকে ডাক দেয়। -আসছি এক মিনিট, কি বলবা বল। -Happy Returns Of the Day -Thanks A lot… এখন চল কেক কাটি। আর এভাবেই প্রতিবার নিহাদ শত চেষ্টার পরও রাহাকে তার মনের কথা বলতে পারেনা। কখনো ওদের মাঝে বন্ধুদের প্রবলেম, আবার কখনো নিহাদের নিজস্ব ভয় যদি তাদের বন্ধুত্ব নষ্ট হয়ে যায়, নিহাদ রাহাকে হারাতে চায়না। বার্থডে পার্টিতে সবাই মিলে নিহাদকে ধরে গান গাওয়ার জন্য। নিহাদ গীটার নিয়ে রেডি হয় গান করার জন্য। -বন্ধুরা এই গানটি আমার একজন বিশেষ মানুষকে নিয়ে লেখা। [“একবার তাকাও প্রিয়তমা আমার দুই চোখে দেখ বড় ভালবাসি তোমাকে.....................। যখন তোমার দুই চোখে দেখি দুষ্টু হাসি, বলতে ইচ্ছে করে কতটা ভালবাসি। আমার ভালবাসার ছোঁয়ায় রাঙ্গিয়ে দেব হৃদয় তোমার। তুমি ভালবেসে হবে কি রাজকন্যা আমার?”] গান শেষ করার পর করতালিতে মুখরিত হয়ে উঠে চারদিক, সবাই নিহাদের কণ্ঠের প্রশংসা করে, নিহাদ রাহার দিকে তাকায় রাহা তার মিষ্টি হাসিটা হাসতে থাকে। সেদিন রাতে নিহাদের গিফট করা ডায়রিতে রাহা তার মনের কথাগুলো লিখে, লেখার সবটা জুড়েই ছিল নিহাদের কথা, ওদের বন্ধুত্বের কথা, নিহাদকে ভালো লাগার কথা। রাহাও নিহাদকে খুব পছন্দ করে, কিন্তু সে বলতে চায়না, সে চাই নিহাদ নিজের মুখে তাকে প্রপোজ করুক। এভাবেই চলতে থাকে তাদের সম্পর্ক, একজন আরেকজনকে অসম্ভব ভালবাসে কিন্তু কেউ কাউকে বলতে পারেনা। অবশেষে একদিন.... নিহাদ, রাহার জন্য লেকে অপেক্ষা করছে। আজ অনেকক্ষণ হয়ে গেল কিন্তু রাহা আসছে না, নিহাদের টেনশন হচ্ছে, রাহার কিছু হল নাতো। অবশেষে রাহা এল। -আজ এত দেরি করলে কেন? -কোচিং ক্লাস ছিল, তাই আসতে লেট হল। -এটা আগে বললেই পারতে। (নিহাদের কণ্ঠে অভিমান) -সরি, সরি মনে ছিল না। - It’s Okay.. তোমার জন্য নতুন একটা সুর তুলেছি। -আজ শুনতে পারবোনা নিহাদ, এমনিতেই অনেক লেট হয়ে গেছে, পরে বাসায় আম্মু টেনশন করবে। -চলে যাবা? আর একটু বসো প্লিজ -নাহ, যেতে হবে। না হলে প্রবলেম হবে। -ঠিক আছে যাও। -ভালো থেকো। বলেই রাহা ঝটপট চলে যায়, শেষ বিকেলের সূর্যটাও ডুবতে শুরু করেছে, নিহাদ উঠতে যাবে, এমন সময় বেঞ্চের দিকে নজর পরে। রাহা ভুল করে ওর ডায়রিটা ফেলে গেছে। নিহাদ ডায়রিটা হাতে নিয়ে রুমের দিকে হাঁটা শুরু করে। রাতে রাহার ডায়রিটা খুলে পড়ার জন্য, ওকে নিয়ে লেখাগুলো পড়তে থাকে, নিহাদ বুঝতে পারে রাহাও তাকে পছন্দ করে, তাকে ভালবাসে। পরদিন নিহাদ লেকে যায়, গিয়ে দেখে রাহা উদাসীন ভাবে বসে আছে। -কখন এলে? -অনেকক্ষণ আগে - আজ দেরি করে আসার জন্য আমাকে বোকা দিবে না? -সবসময় ফান করো নাতো নিহাদ, ভালো লাগছে না। -কি হয়েছে তোমার? মন খারাপ? -কাল থেকে তোমার দেয়া ডায়রিটা খুঁজে পাচ্ছিনা, কোথায় যে পড়ল..... নিহাদ মুচকি হেসে বলে, -মন খারাপ করোনা, ওরকম আরেকটা ডায়রি তোমার নেক্সট বার্থডে তে গিফট করব। -স্টুপিড! ডায়রির জন্য না, আমার লেখাগুলোর জন্য খারাপ লাগছে। -ডায়রিতে কি লেখা ছিল জানতে পারি? -না, এটা পার্সোনাল। একি তুমি হাসছো কেন? আমার মন খারাপ আর তুমি হাসতেছো? থাক তুমি আমি গেলাম। বলেই রাহা উঠে দাঁড়াল। -রাহা শুনো -কি? -তোমার ডায়রিটা। নিহাদ ডায়রিটা রাহার দিকে এগিয়ে দেয়। রাহা চোখ বড় বড় করে জিজ্ঞেস করে, -এটা তোমার কাছে এল কিভাবে? -কাল ভুল করে এখানে ফেলে গিয়েছিলে। -তুমি ডায়রির সব লেখা পড়েছো তাইনা? -কোন সন্দেহ আছে? নিহাদ, রাহার কাছে যায়, হাঁটু গেড়ে তার পাশে বসে.. আর বলে -ভালোবাসো? -কোন সন্দেহ আছে? বলেই রাহা মুচকি হাসি দেয়। রাহা নিহাদের কাঁধে মাথা রেখে নিহাদের গান শুনছে , [তাঁরা ভরা জোছনার আলোতে, তোমাকে খুঁজে পাই......... আমার মনের ভাবনার জগতে তোমায় রাখতে চাই... রঙধনুর আভায় ছড়িয়ে দাও মনের ভাবনাগুলো....... আজ ভালবেসে ছিনিয়ে নাও অতৃপ্ত মনের ইচ্ছেগুলো.......................] শেষ বিকেলের সূর্যটা মনে হয় আজ ডুববে না, নিহাদের গান শেষ না হওয়া পর্যন্ত। লিখাঃ MD Nahid Hossain (NHD)
Posted on: Wed, 07 Jan 2015 15:06:13 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015