বিয়ের প্রয়োজনীয়তা - TopicsExpress



          

বিয়ের প্রয়োজনীয়তা আদৌ আছে কি? - তসলিমা নাসরিন last part বিয়ের বিপক্ষে কথা বলেছেন অনেক নারীবাদী লেখক। আন্দ্রিয়া ডোরকিন তো মনেই করতেন, বিয়েটা স্রেফ ধর্ষণ করার জন্য। আর একজন বেশ চমৎকার বলেছিলেন, বিয়েটা নিতান্তই ‘ইনটিমেট কলোনাইজেশন’। অনেকেই মনে করেন, বিয়ের বাধাটা দূর না হলে মেয়েদের সত্যিকার স্বাধীনতা অনেকটা অসম্ভব। প্রায় সব নারীবাদীই বিশ্বাস করতেন, এখনও অনেকে করেন, যে, পুরুষতন্ত্র টিকিয়ে রাখার জন্য বিয়েটা বেশ অসাধারণ একটা প্রথা। নারীবাদীদের কেউ কেউ প্রেম নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন, প্রেমটা নাকি একরকম রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র, মেয়েরা সেই ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে বিয়ে করতে অর্থাৎ শত্রুর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। নারীবাদীদের কাছে বিয়েটা এত আপত্তিকর হতো না, স্ত্রীর ভূমিকা যদি এমন দাসী-বাঁদির না হতো। গ্লোরিয়া স্টাইনেমকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, ‘এই যে বিয়ের বিরুদ্ধে এত গীত গেয়েছো, শেষে নিজেই যে বুড়ো বয়সে একটা বিয়ে করে বসলে, কারণটা কি?’ গ্লোরিয়া যে বন্ধুটিকে বিয়ে করেছিলেন, ওঁর নাকি খুব বড় অসুখ করেছিল, বিয়ে করলে গ্লোরিয়ার স্বামী হিসেবে স্বাস্থ্য বীমা পেতে সুবিধে হবে ওঁর, সে কারণেই বিয়ে। গ্লোরিয়ার জায়গায় আমি হলে বন্ধুকে সাহায্য করার বিকল্প ব্যবস্থা নিতাম, কিন্তু বিয়ে নামক পুরুষতান্ত্রিক ব্যবস্থার সঙ্গে কিছুতেই আপোস করতাম না। বিয়ে যে জীবনে আমি করিনি তা নয়, করেছি, তখন করেছি যখন জানতাম না যে বিয়েটা আসলে নারীর ওপর পুরুষের প্রভুত্ব কায়েম করার একটা সামাজিক চুক্তিপত্র ছাড়া কিছু নয়। কেউ কেউ ঘা খাওয়ার আগে শেখে, কেউ কেউ আবার ঘা খেয়ে শেখে। আমার না হয় একটু ঘা খেয়েই শেখা হল। কিন্তু শেখা তো হল। কত কাউকে দিনরাত দেখছি, কোনওকিছুই যাদের কোনওকিছু শেখাতে পারে না। যখন সভ্য অসমকামীরা বিয়ে থেকে বেরিয়ে আসছে, তখন সভ্য সমকামীরা বিয়ের অধিকারের জন্য আন্দোলন করছে। সভ্য দেশগুলো ধীরে ধীরে সমকামীদের বিয়ে করার অধিকার দিচ্ছে। সভ্য মানুষেরা, এমনকী যারা বিয়েতে বিশ্বাসী নয়, তারাও সমকামীদের বিয়ের অধিকারের পক্ষে, যেহেতু সমকামীদের বিয়েটা সমাজের বেশির ভাগ লোক মেনে নেয় না। সমকামীদের বিয়ে সমর্থন করা মানে, ধর্মের শাসনকে আর রক্ষণশীল সমাজের চোখ রাঙানোকে মধ্যম আঙুল দেখানো। এ কথা ঠিক, সমকামীদের বিয়েতে সম-অধিকারের সম্ভাবনা অসমকামীদের চেয়ে বেশি কারণ ওদের মধ্যে লিঙ্গ-বৈষম্যের বালাই নেই। তবে এটা ঠিক, একসময় যখন সমকামীদের বিয়ে অসমকামীদের বিয়ের মতো ডাল-ভাত হয়ে উঠবে, তখন সমকামীরাও, যারা আজ বিয়ের জন্য মরিয়া হয়ে উঠছে, অর্থহীন এই বিয়ে ব্যবস্থাটির বিরুদ্ধে মুখ খুলবে। বিয়ে নামের অপ্রয়োজনীয় একটি প্রথা মরে পড়ে থাকবে একদিন। আগামী দিনের সমাজবিজ্ঞানীরা ইতিহাস খুঁড়ে বিয়ের ফসিল আবিস্কার করবেন, আলোকিত মানুষকে পুরোনো দিনের গল্প শোনাবেন। --‘পৃথিবীতে একটি যুগ ছিল, সে যুগের নাম অন্ধকার যুগ। সেই অন্ধকার যুগে একটি প্রথা দীর্ঘদীর্ঘকাল টিকে ছিল, প্রথাটির নাম বিয়ে’। বিয়েটা কী এবং কেন, এসব বোঝাতে গিয়ে পুরুষতন্ত্রের প্রসঙ্গ উঠবে, তখন নিশ্চয়ই ভবিষ্যতের সেই সব মানুষের গা কেঁপে উঠবে বীভৎস একটা সমাজ কল্পনা করে। ইউটোপিয়া? না হয় ইউটোপিয়াই। পাঠক তসলিমা নাসরিন এর এই লেখাটি সম্পর্কে আপনাদের মতামত আশা করছি।
Posted on: Mon, 28 Oct 2013 16:42:19 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015