ম্যানুফ্যাকচারিং - TopicsExpress



          

ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে নতুন দিগন্ত ••••√ যাদের কাছে ম্যানুফ্যাকচারিং কথাটা খুব একটা পরিচিত না তারা হয়তো জেনে অবাক হবেন যে হয়তো তাদের দৈনন্দিন জীবনে সবচেয়ে কাছাকাছি থাকা ইঞ্জিনিয়ারিংটাই হচ্ছে ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিং! সহজ করে বলতে গেলে যে কোনো কিছু উৎপাদন করার যে ইঞ্জিনিয়ারিং- তা সকালে ঘুম থেকে উঠে হাতে নেওয়া টুথব্রাশ থেকে শুরু করে স্ক্রু ড্রাইভার,নাট-বোল্ট, বালতি, পানির ট্যাঙ্ক, বিল্ডিংয়ের রড, পাম্পের ইম্পেলার (ব্লেডের মত যে ঘূর্ণায়মান অংশ থাকে পাম্পে), ইলেকট্রনিক চিপ, গাড়ির ইঞ্জিন ব্লক, পেসমেকার এমনকি এইমুহূর্তে সামনে থাকা কম্পিউটারের মনিটর অথবা ঐ আকাশে উড়ে যাওয়া অ্যারোপ্লেনেরফিউসলেজ যা কিছু মাথায় আসে না কেন সব কিছু বানাতেই যে ইঞ্জিনিয়ারিংটা লাগে তা হচ্ছে ম্যানুফ্যাকচারিং। বিভিন্ন ধাতব বস্তু বানাতে হলেই ধাতু কাটার প্রয়োজন পড়ে, কখনো প্রয়োজন পড়ে ধাতু জোড়া লাগানোর,কখনো হয়তো গলন্ত ধাতুকে ঠান্ডা করে ছাঁচে ফেলে প্রয়োজনীয় আকার দেওয়া হয়, কখনো বা চাপ প্রয়োগ করে ধাতুকে প্রয়োজনীয় আকার দেওয়া হয়।ওয়েল্ডিং, কাস্টিং, এক্সট্রুশন, রোলিং, ফোর্জিং, শেপিং, ফর্মিং, টার্নিং, গ্রিন্ডিং, ড্রিলিং, মিলিংসহ আরো যে কত হাজারো রকমের প্রক্রিয়া আছে! সবই ব্যবহৃত হয় বিভিন্ন জিনিসপত্র উৎপাদনের ক্ষেত্রে। এসব কিছু নিয়ে বিস্তারিত পড়ানো হয় ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে। হুট করে শুনলেহয়তো মনে হতে পারে ওয়েল্ডিং আর ড্রিলিং এগুলোতো আমরা অনেকেই শুনেছি এমনকি এগুলো নিয়ে কাজও করতে দেখেছি। এ আর এমন কি!আচ্ছা এমনটা কি আমরা কখনো ভেবেদেখেছি যে ওয়েল্ডিংটা যদি করতে হয় কোনো জাহাজের বাইরের অংশে এমন এক সময় যখন তা পানিতে আছে অর্থাৎ ওয়েল্ডিংটা যদি করতে হয় পানির নিচে তখন কি হবে? ড্রিলিংকরে গর্ত করা হয় ঠিক আছে কিন্তু সেই গর্তের ব্যাস যদি হয় কয়েক মাইক্রন আর গভীরতা হয় বেশ কয়েক সেন্টিমিটার তখন কিভাবে গর্তটাকরা যাবে? এত চিকন ব্যাসের কিন্তু মোটামুটি গভীর একটা ড্রিল করতে গিয়ে যা দিয়ে ড্রিল করছি (ড্রিল বিট অর্থাৎ যে অংশটা ঘুরে ঘুরে ভেতরে ঢুকে ছিদ্রের সৃষ্টি করে) তা ভেঙ্গে যাবে না তো?আবার ধরা যাক প্লেনের ইঞ্জিনের কোনো একটা পার্ট বানানোর সময় সামান্য ক্র্যাক থেকে গেলো। সেই ক্র্যাকে যখন চাপ পড়তে থাকলো তখন তা বিশাল বড় হয়ে হয়ত ভাঙ্গনের সৃষ্টি করলো। আর এই ঝামেলা হলো প্লেনটা আকাশে থাকার সময়। কত মানুষের জীবন তখনবিপন্ন হবে তার কোন হিসাব আছে? পেসমেকার বা আর্টিফিশিয়াল হিপ জয়েন্টের কথাই ধরা যাক। যার শরীরে এসব স্থাপন করা হবে তার নিজের দেহের বিভিন্ন মাপের সাথে মিলিয়ে এসব তৈরি করতে হয়। এসব ক্ষেত্রে দরকার হয় একেবারে নিখুঁত কাজের। ম্যানুফ্যাকচারিং-এর অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ প্রয়োগের মাত্র কয়েকটা এখানে বললাম।ম্যানুফ্যাকচারিং নিয়ে সারা বিশ্বেই অনেক গবেষণা চল ছে।বলা হয় যতদিন এই পৃথিবী থাকবে ম্যানুফ্যাকচারিংও থাকবে। আমাদের দেশের ইঞ্জিনিয়াররাও অনেকেই ম্যানুফ্যাকচারিং নিয়ে কাজ করছেন দেশে ও বিদেশে। University of Illinois-এ পোস্টডক্টরাল রিসার্চ অ্যাসোসিয়েট হিসেবে কর্মরত আমাদের দেশেরই একজন ইঞ্জিনিয়ারচন্দ্র নাথ ম্যানুফ্যাকচারিং ফিল্ডে বেশ বড়সড় একটা পুরস্কার পেয়েছেন। মূলত তাঁর অর্জন নিয়ে কথা বলতে গিয়েই এই লেখার সূত্রপাত। উনি বুয়েটের যন্ত্রপ্রকৌশল বিভাগের ছাত্র ছিলেন।উনি যে পুরস্কারটা পেয়েছেন তা হচ্ছে SME 2014 Outstanding Young Manufacturing Engineer Award (SME: The Society of Manufacturing Engineers)। ৩৫ বা তার কমবয়সী ম্যানুফ্যাকচারিং ইঞ্জিনিয়ারদের ম্যানুফ্যাকচারিং ফিল্ডে অবদানের জন্য এই পুরস্কার দেওয়া হয়। উনি এই পুরস্কার প্রাপ্ত ৬ জনের মধ্যে একজন, আমাদের দেশের একমাত্র মানুষ। এই পুরস্কারটি তিনি পেয়েছেন ম্যানুফ্যাকচারিং ফিল্ডে তার গবেষণা ও অর্জনের জন্য। বিভিন্ন ধাতু যেগুলো সাধারণ উপায়ে কাটা (কেতাবি ভাষায় বলা হয় ম্যাশিনিং করা) কঠিন সেগুলোরম্যাশিনিং নিয়ে তিনি কাজ করেছেন। যেমনঃ টাইটেনিয়াম ও নিকেলজাত সংকর, টাংস্টেন কার্বাইড, সিরামিকস এবং ন্যানো-কম্পোজিট নিয়ে তিনি কাজ করেছেন।তার অনেকগুলো রিসার্চের মধ্যে একটা নিয়ে সংক্ষেপে আলোচনা করবো। টাইটেনিয়াম ধাতুর নাম আমাদের অনেকেরই জানা। এর কয়েকটি ব্যবহার হচ্ছে এয়ারক্রাফটের ইঞ্জিন এবং ফ্রেমতৈরিতে, হিপ জয়েন্ট তৈরিতে, নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টে ব্যবহৃত পাইপ তৈরিতে, মেডিকেল অপারেশনের সময় ব্যবহৃত হওয়া বিভিন্ন উপকরণ তৈরিতে। টাইটেনিয়ামের অনেক ব্যবহার থাকলেও এসব ব্যবহারের জন্য একে উপযোগী করে তুলতে ম্যাশিনিং করতে হয়। আর সমস্যাটা এখানেই যেটাইটেনিয়াম ম্যাশিনিং করা বেশ কঠিন।এর পেছনে দায়ী হচ্ছে টাইটেনিয়ামের তুলনামূলক কম তাপপরিবাহকত্ব। এখন চটজলদি কয়েকটাশব্দ একটু জেনে নেই। ধরা যাক, আমরা ছুরি দিয়ে কাঁচা আম ছিলছি।এখানে ছুরিটা হচ্ছে কাটিং টুল। অন্যদিকে আমটার মধ্যে যতই ছুরি চালাচ্ছি আমের খোসাটাও আলাদা হয়ে যাচ্ছে। সবশেষে খোসা সব পড়েগেলে আমটা বের হয়ে আসছে।ধাতু কাটার বা ম্যাশিনিং করার সময়েও কিন্তু এমন জিনিসই হয়। যেধারালো ও শক্ত জিনিসটা দিয়ে আমরা ম্যাশিনিং করি তা হচ্ছে কাটিং টুল(ছুরির সাথে মেলানো যায়), যাকে কাটি তাকে বলা হয় জব বা ওয়ার্কপিস(আমের সাথে মেলানো যায়), আর কেটে ফেলার ফলে যে অংশটা পড়ে যায় তাকে বলা হয় চিপ(আমের খোসার সাথে মেলানো যায়)।এই ছবিটায় কাটিং টুল,চিপ এবং ওয়ার্কপিস সবই দেখা যাচ্ছে।তো কাঁচা আমের খোসা ছাড়ানোর সাথে ধাতুর ম্যাশিনিং এ একটা অনেক বড় পার্থক্য হচ্ছে ধাতুর ম্যাশিনিং এর সময় যে ব্যাপক ঘর্ষণ হয় তা প্রচুর তাপের সৃষ্টি করে। এই তাপই হচ্ছে যাবতীয় সমস্যার পালের গোদা।একটু ভেবে দেখি যে চিপ যে উৎপন্ন হলো তা তো উৎপন্ন হয়ে নিজের জায়গায় বসে থাকবে না বরং টুলের গা ঘেঁষে সরে যেতে থাকবে ও একসময় পড়ে যাবে। যে অল্প জায়গা জুড়ে এই চিপ আর কাটিং টুল একে অপরের সংস্পর্শে থাকে তাকে বলা হয় টুল-চিপ ইন্টারফেস। এখন এই জায়গাটা যদি ঘর্ষণের ফলে গরমহয়ে যায় দেখা যাবে যে চিপটা ঐ তাপে গলে টুলের সাথে জোড়া লেগে গিয়েছে। ফলে কাটিং টুলের মাথাটার যে আকার তা এখন আর আগের মত থাকবে না এবং ম্যাশিনিং প্রক্রিয়াতেও গোলমাল শুরু হবে।আরো ঝামেলা হয় যদি ঐ জোড়া লেগে যাওয়া অংশটা কখনো উঠে যায়। সে উঠে যাওয়ার সময় একলা উঠে না, টুলের কিছু অংশকে ভেঙ্গে নিজের সাথে নিয়ে উঠে যায়। ফলে টুলের আকার পরিবর্তিত হয়ে যায়। ম্যাশিনিংটাও আগের মত হতে পারে না।তাই ম্যাশিনিং এর ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হচ্ছে কাটিং টুলটাকে গরম হতে দেওয়া যাবে না। টাইটেনিয়াম ম্যাশিনিং এ বড় চ্যালেঞ্জ এটাই। টাইটেনিয়ামের তাপ পরিবাহকত্ব কম। তাই টাইটেনিয়ামম্যাশিনিং এর সময় উৎপন্ন তাপের বড় অংশ টুলটাকেই নিতে হয়, টাইটেনিয়াম নিতে পারে না। তাই কাটিং টুলটা প্রচন্ড গরম হয়ে যায়। দেখা যায় যে টুল দিয়ে স্টিলের আধা ঘণ্টা ম্যাশিনিং করা যাচ্ছে টাইটেনিয়ামের ম্যাশিনিং হয়তো করা যাচ্ছে বড়জোর ৫-৬ মিনিট!যে কোনো ম্যাশিনিং এর সময়ই তাপ উৎপন্ন হবে আর এই তাপকে যতটা সম্ভব দূর করার জন্য ব্যবহার করা হয় কুল্যান্ট। এগুলো সাধারনত তরল তেল জাতীয় পদার্থ। ম্যাশিনিং এর সময় এগুলোকে ম্যাশিনিং এর জায়গায় প্রবাহিত করানো হয় যেন এরা উৎপন্ন তাপটুকু নিয়ে যেতে পারে। এই কুল্যান্ট প্রবাহিত করার আবার বেশ কিছু পদ্ধতি আছে কিন্তু সেগুলো নিয়ে খুব বেশি আলোচনা করছি না।একদম সাধারণ আর সবচেয়ে বেশি যেকুল্যান্ট প্রবাহ করার পদ্ধতিটা দেখা যায় সেটা হচ্ছে ফ্লাড কুলিং। ছবিটা লক্ষ্য করলেই দেখা যাচ্ছে আক্ষরিক অর্থেই এখানে যে জায়গাটাতে ম্যাশিনিং হচ্ছে কুল্যান্ট দিয়ে সে জায়গাটাকে একদম ভাসিয়ে ফেলা হচ্ছে, তাই এর নাম ফ্লাড কুলিং (Flood Cooling)। এছাড়া আরোকিছু পদ্ধতি আছে যেমন ক্রায়োজেনিক কুলিং, হাই প্রেসার কুলিং, মিনিমাম কোয়ান্টিটি লুব্রিকেশন ইত্যাদি।প্রকৌশলী চন্দ্র নাথ টাইটেনিয়াম ম্যাশিনিং এর সময় কুলিং এর একটা নতুন পদ্ধতি দেখান যাকে বলা হয় ACF(Atomization-based Cutting Fluid) Spray System। সাধারণ যে ফ্লাড কুলিং এর পদ্ধতিটা আছে তার বেশ কিছু সমস্যা আছে। যেমনঃপ্রচুর পরিমানে কুল্যান্ট প্রবাহিত করতে হয় তাই অপচয়ও হয় প্রচুর। আমাদের দেশে তো এই কুল্যান্টকে যেটা একটা রাসায়নিক পদার্থ তাকে যেখানে সেখানে ফেলে দেওয়া হয়, কিন্তু অনেক দেশেই এসব ফেলার ব্যাপারে আইন আছে। যেখানে সেখানে ফেললে জরিমানা গুনতে হয়। আবার ম্যাশিনিং করার সময় যে তাপ উৎপন্ন হয় তা কিন্তু টুলের সব জায়গা জুড়ে সমানভাবে উৎপন্ন হয় না। টুল চিপ ইন্টারফেসে সবচেয়ে বেশি পরিমান উৎপন্ন হয়। তাই কুল্যান্টটাকে সেখান পর্যন্ত পৌঁছাতে হয় যা অনেক সময় সঠিকভাবে সম্ভব হয় না। ঐ জায়গা পর্যন্ত কুল্যান্টটাকে পৌঁছাতে তাই অনেক সময় উচ্চ চাপেকুল্যান্ট প্রবাহিত করা হয় যাকে হাই প্রেসার কুলিং বলে। কিন্তু এর জন্য মেশিন সেটআপ এর বড়সড় খরচা আছে।ACF Spray System এ যা করা হয় তা সংক্ষেপে বলছি।দুই ধরনের নজল (পাইপের মত অংশ যা দিয়ে কোনো প্রবাহী পদার্থকে প্রবাহিত করানো হয়) থাকে। নজল দুইটি একই অক্ষের উপর অবস্থিত কিন্তু ব্যাস ভিন্ন। একটি নজল বড় ব্যাসের এবং অপরটি ক্ষুদ্র। অপেক্ষাকৃত কম ব্যাসের নজলের মধ্যে দিয়ে উচ্চ বেগে গ্যাস প্রবাহিত করা হয়। অন্যদিকে বড় ব্যাসের নজলটির মধ্যে দিয়ে প্রবাহিত করা হয় কুল্যান্ট। এই কুল্যান্টকে আবার অ্যাটোমাইজারের মাধ্যমে ছোট ছোট কুয়াশার মত কণায় পরিণত করা হয় যাকে বলা হয় ড্রপলেট এবং এ কারণেই এই নজলকে বলা হয় ড্রপ্লেট নজল। এই ড্রপলেটগুলোরবেগ তুলনামূলকভাবে কম থাকে। কিন্তু যখন অনেক বেগে আসা গ্যাসের সাথে এদের দেখা হয় তখন এরা সেই গ্যাসের সাথে মিশে উচ্চবেগ লাভ করে ও প্রবাহিত হয় টুল চিপ ইন্টারফেসের দিকে।এখানে যে ব্যাপারটা হয়ে গেল তাহচ্ছে ফ্লাড কুলিং এর মত এত বেশি কুল্যান্ট এর অপচয় হয় না। সাধারণ ফ্লাড কুলিং এ যখন মিনিটে চার লিটার কুল্যান্ট প্রবাহিত করতে হয় এখানে প্রয়োজন হয় মাত্র ১০-২০ মিলিলিটার। কাটিং টুলের স্থায়িত্বও আগের থেকে প্রায় ৩০-৫০% বেড়ে যায়।এই গবেষণামূলক পেপারটার নাম ছিল ‘Characterization of Fluid Film Produced by Atomization
Posted on: Sun, 14 Dec 2014 09:01:44 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015