যখন এসেছিলে - TopicsExpress



          

যখন এসেছিলে অন্ধকার লিখেছেন-Odhora Shopno মেডিকেল এ পড়ার ইচ্ছা আমার কোন কালেই ছিল না । বাবা মা ডাক্তার তাই তাদের চাপে এক রকম বাধ্য হয়েই মেডিকেল এ ভরতি পরিক্ষা দিলাম , কেমন করে যেন টিকেও গেলাম একটা মেডিকেল কলেজ এ ! সেই সাথে শুরু হল আমার একাকি পথচলা , এক অচেনা অজানা শহরে …।। বাবা মা , বন্ধু বান্ধব ও নিজের ঘর ছেড়ে এক টি সম্পূর্ণ অচেনা শহরে এসে কিছুতেই মানিয়ে নিতে পারতাম না প্রথম দিকে , সেই সাথে ইচ্ছার বিরুদ্ধে এমন এক টি কঠিন বিষ্য় এ পরতে আসা … জীবন টা খুব অর্থহীন মনে হত | মেডিকেল এর পড়ার চাপে আর আমার বিষন্নতার ভিড়ে কখন যেন হাসতেও ভুলে গিয়েছি টের ও পাইনি ! এভাবে কাটছিল আমার দিন । একদিন বসে আছি কাফেটেরিয়া তে । সামনে পহেলা বৈশাখ । বান্ধবিরা সবাই উত্সব এর প্রস্তুতি তে ব্যস্ত । হঠাত পেছন থেকে মাথায় প্রচন্ড এক আঘাত , সেই সাথে একটা কন্ঠ ‘’ বেয়াদব তুই এইখানে ? আমি তোকে খুজতে খুজতে শেষ !’’ তাকিয়ে দেখি সুদর্শন এক ছেলে হাতে Pathology এর মোটা একটা বই হাতে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে আমার দিকে । ‘I am really sorry ! আমি ভেবেছিলাম… sorry sorry !’ ‘Its ok !’ ‘yah it should be !! 1st year ?’ ‘জি’ ওহ ! আসলে আমি আমার এক ফ্রেন্ড কে খুজছিলাম , মৌমী … পেছন থেকে ভাবলাম… ‘মৌমী আপু গানের rehersal এ আছেন” ও চিন নাকি ? অবশ ওকে সবাই চিনে ! আমি কিছু বললাম না , শুধু হাসলাম । By the way , আমি তুর্য্য , 4th year , মৌমী দের সাথেই ।। তুমি যাও নি rehersal এ ? ‘জি না আমার এসব এ interest নেই কেন ? মেডিকেল এ পড়ছ দেখে কি একেবারে এ রবোট হতে হবে নাকি ? আমি আবার কোন জবাব দিলাম না আচ্ছা আমি বোধহয় তোমাকে বিরক্ত করছি ! আসি , আবার দেখা হবে … তুর্য্য হেসে চলে গেল । তার মাঝে এমন কিছু ছিল যাতে আমার মনে হল আমি এত টা rude না হলেও পারতাম , হয়ত তার সাথে আর কিচ্ছুখন কথা বলতে পারতাম ! অনিচ্ছা সত্তেও বান্ধবি আর senior আপুদের জ়ুরাজুরি তে সেজেগুজে কলেজ এর বৈশাখ উতসব এ গেলাম , ্যদিও কোনকিছুতেই আমার তখন মন বসত না । হঠাত দেখি তুর্য্য … ‘আরে তুমি সেই না ? মৌমী দেখ তোর look alike ! আমি সেদিন সেদিন ওকে মৌমী ভেবে কি কাণ্ড টাই না করলাম !! ও নিশ্চয় অনেক রাগ করেছে তাই তো নাম টাও বলে নাই !! আমি লজ্জা পেয়ে গেলাম , মৌমী আপু বলল তাই বুঝি ? আমার look alike ? তাহলে আমি তো পরির মতন সুন্দর ! তুর্য্য হাসতে হাসতে বলল ,্ভুল হয়েছে , ও তোর একদিনের look alike , আজকে ওর সাথে তোর compare করলে আমার গুনাহ হবে …। শুনে মৌমী আপু হাসিতে ভেঙ্গে পরল , হাসতে লাগ্ল তুর্য্য ও , তাদের হাসির সাথে কেন যেন যোগ দিলাম আমিও …। তখন ও জানি না এই নতুন বছর আমার জ়ীবনে এক শুভ সুচনা করতে ্যাচ্ছে , তখন ও জানি না এই বৈশাখ আমার জ়ীবনে বসন্ত নিয়ে আসছে …। সেই থেকে হয়ত শুরু …। ধীরে ধীরে তুর্য্যর হাসি ঠাট্টা কথাবারতার মাঝে কখন যে নিজেকে হারিয়ে ফেললাম নিজেও জানি না , জীবন টা নতুন করে উপলদ্ধি করতে লাগলাম , আর জ়ীবন টা অনেক বেশি সুন্দর হয়ে ধরা দিল যখন জানতে পারলাম তুর্য্যও ঠিক একীটাই অনুভব করে আমার প্রতি …। যে আমার জ়ীবন টা কে একসময় অর্থহীন মনে হত সেই আমার নিজেকে মনে হতে লাগ্ল পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মেয়ে , তুর্য্য আমাকে শেখাল জীবন কে ভালোবাস তে , বাবা মার সপ্ন কে ভালবাস তে , মহান আল্লাহর রহমত ও তুর্য্যর প্রচেষ্টায় আমি অনেক ভাল করতে লাগলাম এমন একটি বিষয়ে যা আমি কোনদিন ভালবাসিনি ।বরং নিজেকে ভাগ্যবতী ভাব তাম , মেডিকেল এ না আসলে হয়ত তুর্য্যর সাথে কখনও দেখা হত না … ! জীবনটা অনেক অনেক বেশি সুন্দর হয়ে ধরা দিচ্ছিল …।। দেখতে দেখতে তুর্য্যর MBBS ও Internship শেষ হল , ও চলে গেল ঢাকা তে আর আমি এখানে চালিয়ে গেলাম আমার internship . ঢাকা চলে গেলেও ও আমার পাশে থাকত সারাক্ষন । আমি কি খেয়েছি না খেয়েছি , কখন কোথাই duty পড়েছে সব খবর ও নিয়মিত নিত ।আর আমাকে guideline দিত । internship এর দীর্ঘ ক্লান্তিকর night duty এর রাত গুলো আমার কাছে আনন্দময় হয়ে ধরা দিত সুধুমাত্র তুর্য্যর কারনে । আমার মাঝে লক্ষ্য , সপ্নের অনুপস্থিতি ছিল , তুর্য্য ওর সপ্নটা ঢুকিয়ে দিয়েছিল আমার মাঝে । একজন সফল চিকিত্সক হওার সপ্ন । পরদিন ক্লাস থাকা সত্তেও সে ক্রমাগত phone e কথা বলে যেত পাছে আমি duty er মাঝে ঘুমিয়ে না পড়ি ! এভাবে কত রাত কত দিন পার হল আর আমার জ়ীবন টাও সুন্দর থেকে সুন্দরতম হতে লাগল ১৮ december তুর্য্যর জন্মদিন । আমাদের পরিচয় এর পর এই প্রথম ও আমাকে ছাড়া জন্মদিন celebrate করবে । ্যদিও আমার মনে মনে খুব খারাপ লাগছিল তবুও তা প্রকাশ করলাম না । হয়ত তুর্য্য বুঝতে পেরেছিল । জন্মদিন তার কিন্তু উপহার টা পেলাম আমি , তুর্য্য জানাল সে রাতের bus এ শহরে আসছে ! খুব খুশি লাগল তা শুনে ।। কতদিন পরে দেখব আমি আমার ‘’ও’’ কে !! ১৮ তারিখ সুবিধা মত duty change করে নিলাম সহকরমী এর সাথে , emergency এর duty টা change করে নিলাম কেয়ার সাথে । ১৮ december ! কত দিন পর তুর্য্য কে দেখব ! ভাবলাম phone এ আর নয় একেবারে সামনে গিয়েই দাড়াব তার ! তাই phone off করে দিলাম ও কলেজ এ রউনা হলাম । doctors room e কেউ নেই , তুর্য্য কি এখনও পৌছায়নি ? emergency এর সামনে অনেক ভীড় , হয়ত কোন নতুন case এসেছে ।। ‘অধরা তুই ?? ফোন অফ কেন !!!!’’ কেয়া বলল আমাকে , ‘ শুনেছিস কিছু ?’ না ! কি ? তুর্য্য ভাই … তুর্য্য ভাই bus accident করেছে … এখন emergency তে…।। আমি আর কিছু শুনতে পারলাম না , কেয়া আর কিছু বলছে , হয়ত আমাকে শান্তনা দিয়ে কিছু বলছে , আমার কানে কিছু আসছে না … কিচ্ছু না…। Emergency এর সামনে কত মানুষ , কত ডাক্তার কত বন্ধুবান্ধব কত আত্তিয়সজন … আমি অনেকখানি দূরে দাড়িয়ে , অনেক দূরে ।। যে emergency তে আমার আজ Duty করার কথা সেই emergency আমার অচেনা মনে হয় । কতজন আছে ওর পাশে , আমি ওর কাছে যেতে পারি না , ওর হাত টা ধরতে পারি না , ওকে বলতে পারি না ‘এই তুমি এভাবে চলে যেতে পার না আমাকে ফেলে , আমাদের অনেক সপ্ন আছে ওসব পুরন করতে হবে , আমার তো কোন সপ্ন ছিলনা তবে কেন আমার মাঝে সপ্ন বুনে দিলে ? সবসময়ে পাশে ছিলে এখন কেন ছেড়ে চলে যাবে ? তুমি কখনই আমাকে ছেড়ে যেতে পারবে না , আমার বাকি জ়ীবন টা আমি তোমাকে নিয়ে সাজিয়েছি , তোমাকে থাকতেই হবে আমার পাশে’ আমি কিছুই করতে পারি না , আমার দৃষ্টি ঝাপসা হয়ে আসে , হঠাত সবকিছু আবার অর্থহীন মনে হতে থাকে ।
Posted on: Fri, 19 Jul 2013 17:03:07 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015