লিখাটি একটু বড় আশা রাখি - TopicsExpress



          

লিখাটি একটু বড় আশা রাখি সময় নিয়ে পড়ে মতামত জানাবেন । আমরা নতুন প্রজন্ম- একদিন হোটেলে বসে খাচ্ছি।এমন সময় পিছনে দুইজন এসে বসলো,একজন পুরুষ আর মহিলা।কিছুক্ষন পর পুরুষ লোকটার ফোন আসলো।ফোনে সে বলতেছে,”শালা সব ডাক্তারই অমানুষ,একটু মাঝার(মহিলার কোমর ব্যথাকে ইঙ্গিত করে) ব্যথা হয়ছে বললাম আর হাজার টাকার রক্ত,পেশাব আর এক্সরের টেস্ট দিয়ে দিলো,সব শালাই কমিশনখোর।” শুনে খুব রাগ হচ্ছিলো,মনে হচ্ছিলো ঔ লোকটার গালে কষে একটা চড় মেরে বলি,শালা মূর্খ,কিসের কিসের জন্য টেস্ট দিছে তুই বুঝলে তো কাজই হইতো। মেজাজ খারাপ করে ঐ হোটেল থেকে বের হয়ে আসলাম। কিছুক্ষন পর এই বিষয়টা নিয়ে আরো কিছু ভাবনা মাথায় আসতে থাকলো।মনে হলো আমাদের দেশের মানুষ তো চিরকালই চিকিৎসাবিজ্ঞান বিষয়ে অজ্ঞ।এই হিসেবে আমাদের চিকিৎসকদের রোগীদের প্রতি দায়িত্ব বেড়ে যায় কিনা।মনে আছে একবার এক বিদেশী হাসপাতালে আসছিলো চিকিৎসা নিতে।এইদেশে আসার পর তার ডায়রিয়া শুরু হয়ছে।যখন তাকে তার অসুখের কথা বললাম সে খুবই অবাক হলো কারন তার দেশে নাকি কারোর ডায়রিয়া হয়না।তারপর সে আমাকে একে একে জিজ্ঞাসা করা শুরু করলো,এই রোগের কারন কি,কতদিন লাগবে তার সুস্থ হতে,যে যে ঔষধ দিলাম তার কোনটার কি কাজ,এবং ফলো-আপ আর এডভাইস কি কি হবে সে সম্পর্কেও খুটিনাটি প্রশ্ন করে জেনে নিলো। অবাক হতে হয় তাদের আগ্রহ দেখে।এরপর আমি কৌতুহলবসত পরীক্ষামূলকভাবে আমাদের দেশের কয়েকটা রোগীর সাথে কথা বলা শুরু করলাম।হাসপাতালে যে রোগীরা আসে তাদের অধিকাংশই গরীব আর অশিক্ষিত।হাসাপাতালের সামনে কলেজ প্যাথলজী থেকে একটা টেস্ট করতে দিলেও তাদের একদিন লেগে যায় কলেজ প্যাথলজী খুজে বের করতে।স্বভাবতই তাদের অধিকাংশরই চিকিৎসা বিষয়ক জ্ঞান শূন্য।আমি নিজে থেকেই তাদেরকে আগ্রহ করে তাদের রোগের কারন,কি কি পরীক্ষা দেওয়া হয়েছে আর কেন দেওয়া হয়েছে এবং তার কি ফল পাওয়া গেছে,কি কি ঔষধ দেওয়া হয়েছে,সুস্থ হতে কত সময় লাগবে আর পরবর্তীতে কি করতে হবে সহজ ভাষায় বুঝায়ে দিলাম। খুব অবাক হলাম।তারা হয়তো অশিক্ষিত ছিলো কিন্তু তাদের আগ্রহের একটুও কমতি ছিলনা।মনে হলো এই বিষয়গুলো জানার প্রয়োজনীয়তা তারা অনুভব করেছে ঠিকই কিন্তু হয়তো ভয় পেয়েছে,ডাক্তারকে উদ্ভট প্রশ্ন করে বিরক্ত করেছ অথবা কাকে এবং কি কি প্রশ্ন করতে হবে সেটা কোনভাবেই বুঝে উঠতে পারেনি। এই দেশের সাধারন মানুষের একটা সাধারন ক্ষোভ হচ্ছে ডাক্তারের ভিজিট আর চিকিৎসা খরচ নিয়ে।অথচ হিসাব মিলালে দেখা যাবে এইদেশের চিকিৎসা খরচ পৃথিবীর মধ্যে সর্বনীম্নদের মধ্যে অন্যতম। হ্যা সমাজে এক শ্রেনীর মানুষ আছে যারা ডাক্তারদের প্রতি ইর্ষান্বিত কারন বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে একমাত্র ডাক্তাররাই তার পেশার প্রতি একশত ভাগ শত থেকে বিত্তের অধিকারী হতে পারে।তবে তারপরও আমার মনেহয় তাদের ক্ষোভের সাধারন কারনটি হচ্ছে যে তারা এই যে টাকাগুলি খরচ করে ডাক্তারকে দেখালো সেটাতে কি পেলো তারা বুঝে উঠতে পারেনা।তারা ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হয়ে জানেনা তাদের কি অসুখ হয়েছে,তাদের পরীক্ষাগুলো কেন দেয়া হলো আর তার কি ফলাফল আসলো তারা তা জানেনা,কি কি ঔষধ দেয়া হলো সে সম্পর্কেও সে কিছুই বুঝেনি।এমনকি ঔষধের দোকানদার তার প্রেসক্রিপশনে লেখা ঔষধ না দিয়ে অন্য ঔষধ দিয়ে দিলেও সে ধরতে পারেনা।অজ্ঞতার অন্ধকারে তারা এমনই নিমজ্জিত তারা যে অসুখ থেকে সুস্থ হলেও মনেকরতে থাকে চিকিৎসা বিষয়ে তাদের খরচ করা পুরা টাকাই বিফলে গেছে,কারন টাকাগুলো খরচ করে কি ফল পেল তারা তা বুঝে উঠতে পারে নাই। অথচ আমরা ডাক্তাররা এই দেশে কি অমানবিক পরিশ্রম করে যাচ্ছি।বছরের পর বছর লেখাপড়া করতে হচ্ছে,নামমাত্র বেতনে সরকারী চাকুরি করছি,মানুষের অপরিসীম ক্ষোভ সত্ত্বেও তাদের চিকিৎসা দিচ্ছি।দুঃখ যে আমাদের হতাশাগুলি আর প্রাপ্তিগুলি শুধু একজন চিকিৎসক আরেকজন চিকিৎসকের প্রতি অনুভব করেছে কিন্তু এইদেশের সাধারন মানুষকে বোঝাতে পারেনি।বর্তমানে চিকিৎসকদের প্রতি আর তাদের কোন শ্রদ্ধা নাই,সেজন্যে চেম্বার থেকে বেরিয়ে তারা ডাক্তারকে জঘন্য গালি দেয়,হাসপাতালে সুযোগ পেলে গায়ে হাত তোলো। এখন নতুন যুগ এসেছে,আমরা নতুন প্রজন্ম এসেছি।“দশ মিনিট”।হ্যা শুধুমাত্র দশ মিনিট।বিস্ময়ের ব্যপার মাত্র দশমিনিট ব্যয় করলেই আমরা নতুন প্রজন্ম এইদেশের চিকিৎসা খাতে বিপ্লব আনতে পারি।রোগী যতই অজ্ঞ আর অশিক্ষিত হোক না কেন আমরা দশ মিনিট অতিরিক্ত সময় দিয়ে তার অসুখের কারন,পরীক্ষার ফলাফল,চিকিৎসা পত্র,ফলো-আপ আর করনীয় বুঝিয়ে তাকে খুশিমনেই বিদায় করতে পারি।তার প্রশ্নগুলির সঠিক আর যথাযথ ব্যখ্যা দিতে পারি।রোগীর সকল জিজ্ঞাসা পূরন করে তাদের বুঝায়ে দিতে পারি বছরেরে পর বছর লেখাপড়া করে আমরা বসে বসে ঘাস কাটিনাই,তারা যে অর্থ খরচ করে তার প্রতিটির পয়সার উপর আমাদের যথাযথ হক আছে। এখন আমাদের নতুন প্রজন্মকে আমাদের রোগী দেখার প্রতি এই পরিবর্তনগুলো আনতেই হবে।না হলে এই দেশে এখন চিকিৎসাদাতার কোন অভাব নাই।কারন রোগী আপনের কাছে সন্তুষ্ট না হলে আরেকজন ডাক্তারের কাছে যাবে,তার কাছে সন্তুষ্ট না হলে হাতুড়ে ডাক্তারের কাছে যাবে তা না হলে হোমিও-কবিরাজের কাছে ছুটবে।এই ছুটার চক্র চলবেই আর সবচেয়ে বেশী গালি খাবো আমরা পাশ করা ডাক্তাররা,কারন আমাদের কাছে তাদের প্রত্যাশা সবচেয়ে বেশী ছিলো। এইদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থায়ও আধুনিক বিশ্বের মত পরিবর্তন আসবেই।যখন প্রতিটি রোগী যথাযথ চিকিৎসা পাবে এবং ডাক্তারের প্রতি তাদের পূর্ন আস্থা থাকবে।অপচিকিৎসা দাতাদের আর কোন অস্তিত্ব থাকবেনা।যদি আমরা বর্তমানে প্রতি রোগীদের যে সময় দিই তার থেকে তাদের সবকিছু বুঝায়ে দিতে আরো মাত্র “দশ মিনিট” সময় বেশী ব্যয় করি।আমি জানি আমার প্রবল বিশ্বাস আছে এই বিপ্লব এই দেশে আসবেই এখন ব্যপার হচ্ছে আমরা ডাক্তাররা এখনই আন্তরিকভাবে তা অভ্যাস করব নাকি আরো ঠকে আরো গালি খেয়ে এটি অভ্যাস করতে বাধ্য হবো। আব্দুর রহমান মুন রা.মে.ক.-৪৮ তম ব্যাচ
Posted on: Mon, 11 Nov 2013 13:51:32 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015