হিন্দু আইনে বিবাহের - TopicsExpress



          

হিন্দু আইনে বিবাহের ক্ষেত্রে যাবতীয় নিষেধাজ্ঞা ধর্ম হোক আর আইন হোক, সকলের দৃষ্টিতেই বিবাহ একটি পবিত্র বন্ধন। অন্যান্য ধর্মে বিবাহকে একটি দেওয়ানী চুক্তি এবং পবিত্রতা হিসেবে বিবেচনা করা হয়। কিন্তু, হিন্দু আইনে বিবাহকে কেবল মাত্র পবিত্রতা হিসেবে দেখা হয় এবং এটাকে কোনভাবেই চুক্তি হিসেবে দেখা হয় না। চুক্তি হিসেবে না দেখার একটি মজার এবং শক্তিশালী যুক্তি রয়েছে; আর তাহলে যখন চুক্তির কথা বলা হয় তখন চুক্তি ভঙ্গের কথা আপনাআপনি চলে আসে, কিন্তু হিন্দু আইনে বিবাহ বিচ্ছেদ বলে কোন ধাপ বা অধ্যায় নেই। একবার বিয়ে করলে তাই সারাজীবন চালিয়ে নিতে হবে, তাই বিবাহ কোন চুক্তি নয় কেবল পবিত্রতা মাত্র। অন্যান্য ধর্মের চেয়ে হিন্দু আইনে একটু বেশীই বাধা নিষেধ। ধর্ম এবং আইনে এর একটি রূপ রেখা রয়েছে। বিয়ের ক্ষেত্রে যে নিষেধ বা বারণ গুলো রয়েছে এগুলো মেনে চলা অপরিহার্য। কেউ এই নিষেধ অমান্য করে বিবাহ করলে, সেই বিবাহ বাতিল বলে গণ্য হবে। হিন্দু আইনে বিবাহের নিষেধাজ্ঞা সম্বন্ধে বললে, আমাদের প্রায় সকলের একটি নিষেধাজ্ঞার কথা মনে পড়ে যায় আর তা হল, বিধবা বিবাহ। হিন্দু আইনে বিধবা বিবাহ নিষেধ ছিল। বিবাহের ক্ষেত্রে হিন্দু আইনের একটা বিরাট ত্রুটি ছিল বিধবা বিবাহের উপর নিষেধাজ্ঞা। বিবাহের পরে স্বামী মারা যাওয়াটা ছিল তাদের জীবনের জন্য একটা কাল অধ্যায়ের সূচনা। সতীদাহ প্রথার পরে সবচেয়ে ভয়ংকর অধ্যায় ছিল এই বিধবাদের একাকীত্ব জীবন। কিন্তু, ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগরের বদলতে ১৮৫৬ সালে হিন্দু বিধবা পুনর্বিবাহ( Hindu Widow’s Remarriage Act, 1856) আইনের মাধ্যমে বিধবা বিবাহকে বৈধতা দেওয়া হয়। বিধবা বিবাহের পর হিন্দু আইনে আর একটি নিষেধাজ্ঞা ছিল একই গোত্রে বিবাহের উপর। কোন ছেলে একই গোত্রের কোন মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে না। নীচ জাত গুলো মধ্যে এই প্রথাকে তেমন মূল্যায়ন করা হয় না। কিন্তু, উচ্চ শ্রেণীর জাত গুলো এখনও এই প্রথাকে মেনে আসছে এবং একই গোত্রের মধ্যে বিবাহ সম্পাদন থেকে দূরে থাকছে। যদিও এই প্রথাটি সমাজ থেকে উচ্ছেদ করার জন্য Hindu Marriage Disabilities Removal Act, 1946 পাস করা হয় এবং একই গোত্রের বিবাহকে হিন্দু আইনে বৈধতা দেওয়া হয়। কিন্তু, এখনও হিন্দু সমাজে এই ধরনের বিবাহ প্রচলিত কেননা আমরা জানি কাস্টম আইনের একটি অংশ। যেই অঞ্চলের যেই রীতিনীতি চলে আসছে, তা মেনে চললে আইনের দৃষ্টিতে তাকে বৈধতা দেওয়া হয়। এখন আসা যাক, হিন্দু আইনে সরাসরি যাদের বিবাহ করার উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে বা নিষেধ রয়েছে, তাদের সম্বন্ধে জানা যাক। একটি ছেলে কখনোই তার স্পান্ডাকে বিয়ে করতে পারবে না। পাঠকের মনে নিশ্চয়ই প্রশ্ন জাগছে এই স্পান্ডা মানে কি? হিন্দু আইনে মূলত যাদের বিবাহ করার উপর নিষেধাজ্ঞা এখনও পর্যন্ত বলবত রয়েছে তাদেরকে চারটি ধাপে ভাগ করা হয়েছে এবং এদেরকেই স্পান্ডা বলা হয়ে থাকে। চারটি ধাপে স্পান্ডাগুলো হলঃ (১) একটি ছেলে কখনোই তার বাবার সাত উত্তরসূরির মধ্যে পড়ে এমন কোন মেয়েকে বিবাহ করতে পারবে না। অর্থাৎ, তার বাবার নিচে সাত প্রজন্মের যারা তার বাবার উত্তরসূরি তাদের মধ্যে কোন মেয়েকে বিবাহ করতে পারবে না। (২) একটি ছেলে কখনোই তার বাবার ছয় পূর্বসূরির কারো সাত উত্তরসূরির মধ্যে পড়ে এমন কোন মেয়েকে বিবাহ করতে পারবে না। এক্ষেত্রে, ছেলের বাবার ছয় পূর্ব পুরুষের সাত উত্তরসূরি যতদূর পর্যন্ত গেছে ততদূর বিবাহ নিষিদ্ধ। কিন্তু যদি বাবার সপ্তম পূর্ব পুরুষের মেয়েকে বিয়ে করতে পারবে যদি তা বয়সের দিক থেকে অসম্ভব। আবার, বাবার ষষ্ঠ পূর্ব পুরুষের অষ্টম উত্তরসূরিকে বিবাহের ক্ষেত্রে কোন প্রকার নিষেধাজ্ঞা নাই। (৩) একটি ছেলে কখনোই তার নানার পাঁচ উত্তরসূরির মধ্যে পড়ে এমন কোন মেয়েকে বিবাহ করতে পারবে না। ১ নম্বর ধাপের সাথে এই ধাপটি সাদৃশ্য রেখে নানার পাঁচ উত্তরসূরি পর্যন্ত বিবাহকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। নানার পরবর্তী মামা, মামার পর মামার ছেলে-মেয়ে এমন পাঁচ প্রজন্ম পর্যন্ত বিবাহকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ষষ্ঠ উত্তরসূরিকে বিয়ের ক্ষেত্রে কোন বাঁধা নিষেধ নেই। (৪)একটি ছেলে কখনোই তার নানার চার পূর্বসূরির কারো পাঁচ উত্তরসূরির মধ্যে পড়ে এমন কোন মেয়েকে বিবাহ করতে পারবে না। ২ নম্বর ধাপটি এর মতই। এই ক্ষেত্রে নানার চার পূর্বপুরুষের কারো পাঁচ উত্তরসূরির মধ্যে পড়ে না এমন মেয়েকে বিয়ে করার ক্ষেত্রে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। চার্টের মাধ্যমে উপরিউক্ত পূর্বপুরুষ এবং উত্তরসূরিদের চেনার সহজ উপায় তৈরী করা হলঃ বাবার ষষ্ঠ পূর্বসূরি - বাবার পঞ্চম পূর্বসূরি - নানার চতুর্থ পূর্বসূরি বাবার চতুর্থ পূর্বসূরি - নানার তৃতীয় পূর্বসূরি বাবার তৃতীয় পূর্বসূরি - নানার দ্বিতীয় পূর্বসূরি বাবার দ্বিতীয় পূর্বসূরি - নানার প্রথম পূর্বসূরি বাবার প্রথম পূর্বসূরি - নানা বাবা মা/ মামা/ খালা (নানার প্রথম উত্তরসূরি) দেবদাস(বাবার প্রথম উত্তরসূরি)- মামার সন্তান (নানার দ্বিতীয় উত্তরসূরি) বাবার দ্বিতীয় উত্তরসূরি - নানার তৃতীয় উত্তরসূরি বাবার তৃতীয় উত্তরসূরি - নানার চতুর্থ উত্তরসূরি বাবার চতুর্থ উত্তরসূরি - নানার পঞ্চম উত্তরসূরি বাবার পঞ্চম উত্তরসূরি বাবার ষষ্ঠ উত্তরসূরি বাবার সপ্তম উত্তরসূরি দেবদাস ছদ্মনামের মাধ্যমে বিবাহ ইচ্ছুক বরকে বুঝানো হয়েছে। চার্টে দেবদাসের বাবার যেমন সাত প্রজন্ম উত্তরসূরি রয়েছে, তেমনি বাবার প্রথম পূর্বসূরি থেকে ষষ্ঠ পূর্বসূরি পর্যন্ত সকলেরই সাতটি প্রজন্ম করে উত্তরসূরি রয়েছে এবং সকলকেই বিবাহ নিষিদ্ধ। অনুরূপ, নানার যেমন পাঁচ প্রজন্ম উত্তরসূরি, ঠিক তেমনি নানার চার পূর্বসূরিদেরও পাঁচটি প্রজন্ম করে উত্তরসূরি থাকবে। এদের সকলকেই বিবাহের নিষেধাজ্ঞার আওতাভুক্ত করা হয়েছে। এর বাহিরে কাউকে বিয়ের ক্ষেত্রে কোন প্রকার নিষেধাজ্ঞা নাই। এখানে দেবদাস অর্থাৎ ছেলের জায়গায় যে কাউকে বসিয়ে আপনি দেখতে পারবেন কার সাথে বিয়ে করা তার জন্য নিষিদ্ধ এবং কাকে বিয়েতে কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। - তানভির চৌধুরী
Posted on: Mon, 09 Sep 2013 18:54:54 +0000

Recently Viewed Topics




© 2015