হারানো ফ্রেম.....................শেষ - TopicsExpress



          

হারানো ফ্রেম.....................শেষ পর্ব .......................................................................................... ভগবান মুখ তুলে তাকিয়েছিল কিনা বুঝা গেলনা,তাকালেও এ কেমন মুখ তুলে তাকানো ?? ২০০৯ সালের ৬ ই ডিসেম্বর সৌমিতার বিয়ের দিন,সে বুঝতেও পারেনি ঐ দিনটাই হবে তার জীবনের সবচেয়ে বিভীষিকাময় দিন।ধুমধাম করে মেয়ের বিয়ে দিচ্ছে বিধায় এলাকার ক্ষমতাধর ছেলেপেলেরা সৌমিতার বাবার কাছে চাঁদা চায়,বলে দেয় যে বিয়ের আগের দিনই টাকাটা দিতে হবে।সংখ্যালঘু ছিল বিধায় সৌমিতার বাবা সব সময় একটি বিশেষ দলের সমর্থক ছিল সে ভাবতো তারা বোধয় সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষা করে,কখনও ভাবতেই পারেনি সেই দলটি ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় তাদের গুন্ডা-পাণ্ডারা তার কাছে চাঁদা চাবে।ব্যাপারটা মেনে নিতে পারেনি সে বিচার দিয়েছিলো কয়েকজন এলাকার মুরুব্বীর কাছে সেই বিচারই কাল হয়ে দাঁড়ালো তার জন্য। বিয়ের দিন সকালে বাজারে ছেলেগুলো ধরে তাকে,এক কথায় দু কথায় কথা কাটাকাটি আর এক পর্যায়ে তার সাথে হাতাহাতি ...আর কিছুক্ষন পরেই লোকটি লাশ হয়ে গেলো। পণের টাকা নিয়ে আগের দিন থেকেই অসন্তোষ ছিল নিতেশের বাবা,ঘটক এসে গতকাল বলেছিল মেয়ের বাবা কাল ১ লাখ টাকা দিতে পারবে,অথচ ঘর সাজানোর আসবাবপত্র আর বিয়ের ৩ ভরি গহনা ঠিকই তৈরি ছিল তবুও নিতেশের বাবার মন ভরছিলনা।ছেলেকে বিয়ে পাশ করিয়েছেতো আর এমনি এমনি না... এর মধ্যে যখন শুনল মেয়ের বাবা মারা গেছে তখন আর কি ছেলেকে বিয়ে দিবে সে,তুলে দিলো "বাপ খেকোর" বদনাম মেয়ের ঘাড়ে,কারন সে জানত এখন পণের এক টাকাও আর সে পাবেনা... সমস্ত বাড়ি অন্ধকার,অথচ গতকালও এই বাড়িতে উৎসব হয়েছিল।একটু আগেই শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে ভদ্রলোকের,সৌমিতা ঘরে শুয়ে আশে চুপ করে...আর শুভ্র বাড়ির গেটের সামনে। কথায় আসে সময় মানুষকে সব সামলে নিতে সাহায্য করে,এখানেও তাই ঘটলো......কয়েক মাস পর সব স্বাভাবিক হয়েগেল।সৌমিতা এখন তার মায়ের সাথে থাকে,বড় দুই বোনের বিয়েতো অনেক আগেই হয়েছিল।একটা চাকরীও করে সে,তাছাড়া বাবার রেখে যাওয়া কিছু জমি বিক্রি করে সেই টাকা ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট করায় সেখান থেকেও টাকা আসে।দুজনের ভালোই চলে যায়,ইতিমদ্ধে সে মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছে...। শুভ্রর সাথে যোগাযোগ অনেক কমে গেছে,ভয়টা বদনামের আর বেঁচে থাকার।তাছাড়া শুভ্রর বাব-মাও চায়না শুভ্র ওর সাথে মিশুক,ছেলে বড় হয়েছে চাকুরী করে বিয়েতো দিতে হবে।তবুও শুভ্রও একদিন সৌমিতাকে বলতে গিয়েছিলো বিয়ের কথা... -শুনো মানুষের জীবন দুর্ঘটনা নেমে আসে,তাই বলেতো জীবন থেমে থাকেনা...একটা বিয়ে করো,তোমার কেমন ছেলে দরকার বল। -নাহ!!বিয়ে টিয়ে আমি আর করবোনা......ছেলের খুজার কথা বলছ,পারবে আমাকে একটা অমিত এনে দিতে ..... কি বলবে বুঝতে পারছিলনা শুভ্র,এখনও সৌমিতার চোখে শুভ্রের ছায়া পর্যন্ত পড়েনি এখনও তার চোখ খুজছে অমিত কে .....অথচ তার যোগ্যতা কোন দিক থেকে কম আছে অমিতের থেকে ... ওর ইচ্ছা করছিলো ঠাশ!!ঠাশ করে মেয়েটার গালে দুটো চড় বসিয়ে দিতে...দিলোনা,আর কিছু বলতেও চাইলোনা।।চলে আশার আগে শেষ কথাটা যা ছিল... "তোমার প্রায় সব ইচ্ছা আমি পূরণ করলেও অমিতকে খুজে দিতে পারবোনা,সারা জীবন প্রত্যেকটা জায়গায় জিতে এসে এখন অমিতের কাছে হারতে চাইনা...কারন আমাদের মতো বিজয়ী ছেলেদের বিজয়ের মাথার মুকুটের দামের দয়া দাক্ষিন্নে অমিতরা বেঁচে থাকে......যাও,কোন একজন অমিতকে তোমাকে দান করলাম,ভালো থেকো ..." সৌমিতা কথাগুলো বুঝেছিল কিনা জানিনা,কিন্তু হা করে তাকিয়ে ছিল,শুভ্র চলে গেলো।তারপর কেটে গেলো অনেকগুলো দিন...এর মধ্যে কেও কাউকে আর পায়নি,দুজনেই এক সাথে মোবাইল নাম্বার পরিবর্তন করেছিলো ...কেটে গেলো কয়েকটি বছর। "স্যার,আর কিছু লাগবে" ওদের খাবার প্রায় শেষে ওয়েটার এসে বলল ..."নাহ!!লাগবেনা আর কিছু আপনি বিল আনুন"একটা হাসি দিয়ে শুভ্র বলল। -তা আর কি খবর বল তোমার বৌ কেমন আছে? -আছে ভালোই,তোমার জামাইর খবর কি ??তোমার অমিতের ?? -আর অমিত পাইলাম কই !!!আছে ভালোই চাকরি করছে,চলছে সংসার ভগবানের কৃপায় ...তুমিতো এখন পুরাই মানিম্যান হয়ে গেছো ।।তোমার বৌ অনেক লাকি তোমার মত ছেলে পেয়েছে।। -ভাগ্য মানুষই গড়ে সৌমিতা (কথাটা বলার সময় চোখ জল জল করছিলো শুভ্রের) ,সে যাই হোক... বিলটা দিয়ে দিলো সৌমিতা ...ধন্যবাদ জানাতেও ভুল করলো না শুভ্র ...... হঠাৎ রাস্তায় নেমে সৌমিতা,"শুভ্র তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করার ছিল ......" -হ্যা,বল -তুমি সেদিন রাগ করে চলে আসার সময় যে কথাগুলো বলেছিলে তার মানে আমি আজও বুঝিনি।।তুমি কি আমাকে ভালবাসতে ?? গাড়ীতে উঠার আগে শুভ্র অট্টহাসিতে ফেটে পরল প্রশ্নটা শুনে ...... "ভালবাসতাম কিনা সে কথা শুনে এখন কি লাভ বল......আর সেদিন বলেসিলাম..................... মেয়েদের মিঃপারফেক্টরা সব সময়ই আমাদের মতো মিঃউইনারদের কাছে হেরে যায়...আর তারা বেঁচে থাকে আমাদের বিজয়ের মুকুট তোমাদের নিয়ে..."
Posted on: Tue, 08 Oct 2013 11:13:53 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015