১ = দিন তিনেক আগে ডি সি - TopicsExpress



          

১ = দিন তিনেক আগে ডি সি স্যার স্বাক্ষরিত একটা অফিস আদেশ পেয়ে একটু অবাক হলাম। ১৭ ও ১৮ তারিখ টিচার্স ট্রেনিং কলেজ কেন্দ্রে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষায় আমাকে ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে! অবাক এই জন্য যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের কোন পরীক্ষায় ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ করে পরীক্ষা নেয়ার কথা আমি আগে শুনি নাই কখনও! যাই হোক, আমার এসব দায়িত্ব পালন করতে ভালই লাগে। পরীক্ষা শুরু সকাল ১০ টায়। আমি তার আগেই টি টি সি র গেটে গাড়ি থেকে নেমে দায়িত্বরত এস আই কে কিছু নির্দেশনা দিয়ে প্রিন্সিপাল স্যার এর রুমের উদ্দেশে গেলাম! ( সাধারনত প্রিন্সিপাল স্যার এর রুমে গিয়ে একটু সাক্ষাত করাটা সৌজন্যবোধের পরিচায়ক!)... হাঁটতে হাঁটতে স্যার এর রুমের নীচতলায় গিয়ে আমার বয়সী প্রায় একজনকে পায়চারি করা অবস্থায় দেখে জিজ্ঞেস করলাম “ এক্সকিউজ মি, কাইন্ডলি একটু বলতে পারেন প্রিন্সিপাল স্যার এর রুমটা কোথায় ?” ভদ্রলোক ব্যাপক তাচ্ছিল্যের সহিত অত্যন্ত সিরিয়াস ভঙ্গিতে জবাব দিলেন “ I am here to conduct the admission test on behalf of Comilla University and I am a faculty of Comilla University.” আমি ব্যাপক থতমত খেয়ে দ্রুত সামলে নিয়ে নরম সুরে বললাম “ I am here for the same purpose and I am magistrate Saiful Islam, Nice to meet you! উনি “ ও আচ্ছা” বলেই ফোন বের করে কাকে যেন ডায়াল করার ভঙ্গি করলেন! ২ = প্রিন্সিপাল স্যার এর রুমে গেলাম। স্যার এর সাথে আগেই দুয়েকটা অনুষ্ঠানের কল্যাণে পরিচয় আছে এবং স্যার অল্প সময়েই কি এক কারনে আমাকে অত্যন্ত পছন্দ করে ফেলেছেন বুঝতে পারি! স্যার আরেকজন প্রফেসর এর সাথে পরিচয় করিয়ে দিলেন! আমি অত্তন্ত খুশি হয়ে আবিস্কার করলাম যে তিনি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের গনিতের শিক্ষক জুলফিকার স্যার। স্যারকে পরিচয় দিলাম এবং অবাক হয়ে জানলাম যে আমার বিভাগের স্যারদের কাছ থেকে স্যার আমার বিষয়ে অনেক শুনেছেন। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন ডাকসাইটে প্রফেসর আমার কথা শুনেছেন শুনেই গর্বে আমার বুকের ছাতি ফুলে উঠলো সত্যি! বিস্কিট, চা খেয়ে স্যারদের সাথে গল্প করতে করতে পরীক্ষার রুম গুলোর পাশ দিয়ে হাঁটছিলাম। উল্লেখ্য যে টি টি সি ক্যাম্পাস অত্যন্ত সুরক্ষিত হওয়ায় শান্তিপূর্ণ পরীক্ষা চলছিল। বেশ কিছু রুম দর্শন শেষে ফিরে আশার সময় আরেকজন তরুন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক কোথা থেকে যেন উদয় হলেন। আমাকে উদ্দেশ্য করে উনি বললেন “ আপনি ম্যাজিস্ট্রেট সাহেব না? আপনার তো রুমে যাওয়ার কথা না, আপনি বাইরে ঝামেলা হচ্ছে কি না এসব দেখবেন প্লিজ!” আমি আবারও ধাক্কা খেলাম বেশ! জুলফিকার স্যার ও প্রিন্সিপাল স্যার ও কিছুটা হতভম্ব! কিন্তু আমি কিছু বলার আগেই ভাইস প্রিন্সিপাল স্যার বলে উঠলেন “ কেন এতে সমস্যা কি? উনার দায়িত্ব উনি দেখবে। কোন সমস্যা কি হয়েছে?” আমি এবার যথাসাধ্য সংযম রেখে বললাম “ আমি আমার দায়িত্বের সীমানা ও আইনে প্রদত্ত ক্ষমতা সম্পর্কে ওয়াকিফহাল । আপনি আপনার দায়িত্ব পালন করুন ও আমাকে আমারটা করতে দিন!” (উনাকে এ কথা বলি নি যে পাবলিক এক্সামিনেশন এক্ত ১৯৮০ একজন ম্যাজিস্ট্রেট কে কতটুকু দায়িত্ব অর্পণ করেছে! এ কথাও বলিনি যে আমি পরীক্ষার হলে একজন ক্যাডার অফিসার হিসেবে যাই নি, গিয়েছি আইনে সংজ্ঞায়িত ম্যাজিস্ট্রেট হিসেবে!) ৩ = কুমিল্লা সদর দক্ষিনে যোগ দেয়ার পর থেকে গত ১০ মাসে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ৪০% শিক্ষক ও কর্তাদের সাথে আমার হৃদ্যতা হয়েছে। এখানে শিক্ষক হিসেবে আমার অত্যন্ত কাছের ছোটো ভাই আছে বেশ অনেকজন। শিক্ষক সমিতির সাধারন সম্পাদক মেহেদি ভাই বড় ভাইয়ের মত। প্রোক্টর আইনুল ভাই কাছের বড় ভাই। ভি সি স্যার এর চায়ের দাওয়াত খেয়েছি, দাওয়াত পেয়েছি। ট্রেজারার স্যার কুমিল্লা ক্লাবে দাওয়াত দিয়েছেন। প্রায় বেশ অনেকদিন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে গিয়ে ব্যাডমিন্টন খেলেছি। বাংলা বিভাগের প্রধান ডঃ মুনিরুজ্জামান সহ অনেক শিক্ষক আমার কাছে সেবা নিতে এসেছেন। সুযোগ পেলেই ছোটোভাই গুলো ডাকলে যাই আমি ক্যাম্পাসে! সব মিলিয়ে তাই প্রফেশনাল ইগোতে যতটুকু লেগেছে তার চেয়ে বেশি কষ্ট পেয়েছি মনে! মানুষের সাথে ভাল ব্যাবহার বিষয়ে, সোশ্যাল হিসেবে আমার একটা পরিচিতি আছে। ৪ = আমার লাইফে বেশ কয়েকবার এমন হয়েছে যে আমি কিছু একটা কিনতে গিয়েছি আজিজ সুপার মার্কেট বা বসুন্ধরায় আর কেউ একজন এসে আমাকে দোকানি ভেবে জিজ্ঞেস করেছে যে “ ভাই এইটা কি অন্য কালার হবে বা এইটার দাম কত রাখতে পারবেন? “ প্রত্যেকবার আমি বেশ কৌতুক বোধ করেছি। হাসিমুখে বলেছি যে ভাই আমি দোকানি না, আপনার মতই কাস্টমার”! দুয়েকবার এমনও হয়েছে যে আমি বলেছি “ নিবেন এইটা? দামের জন্য আটকাবে না, আপনি যা দিবেন তাই!” দোকানি হাসতে হাসতে এসে দাম বলেছে! প্রথমে উল্লেখিত ভদ্রলোক ভেবেছেন আমি তাঁকে টি টি সি র শিক্ষক ভেবেছি এবং এটা তার আত্মসম্মানে লেগেছে। তাই বেশ অপমানজনক ভঙ্গিতে ইংলিশ বলতে শুরু করেছেন। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আর তাঁকে কিনা কলেজের শিক্ষক ভাবলাম আমি! এখন আমার প্রশ্ন হল টি টি সি র শিক্ষকগন কি বানের জলে ভেসে এসেছেন? তারাও বি সি এস পরীক্ষা দিয়ে ক্যাডার হয়েই এসেছেন এবং তারাও প্রায় ৯০ ভাগ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ছিলেন! এই স্ট্যাটাস টা অনেকখানি ব্যাক্তিকেন্দ্রিক হয়ে গেলো! এই গল্প কেন শেয়ার করলাম? কারন হল আমি নিজেকেসহ সকলের জন্য একটা বার্তা দিতে চাই আর সেটা হল “ সেলফ এসটিম বা আত্মসম্মান, নিজের পেশার প্রতি আলাদা আবেগ মানুষকে এগিয়ে নিতে সাহায্য করে, কিন্তু আত্ম-অহমিকা ও অপরকে ছোটো করে দেখার মনোবৃত্তি শুধু নিচেই নামায়!” কেউ যদি আমার পরিচয় ভুল করে তাতে কি আমার পদবি নাই হয়ে যাবে? আমাকে ঢাকার এক ভদ্রলোক দোকানদার ভেবেছে বলে কি আমার এ সি ল্যান্ড পদ লুপ্ত হয়ে যাবে?
Posted on: Thu, 18 Dec 2014 14:10:22 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015