২০১২ সালের অক্টোবর মাসের - TopicsExpress



          

২০১২ সালের অক্টোবর মাসের কথা। পাকিস্তানের ওয়াজিরিস্তানের সুন্দর একটা দিন। নাবিলা নামক শিশু তার দাদীর সাথে মাঠে কাজ করছে, ঈদের প্রস্তুতি হিসেবে। সেই সময় সি আই এর ছুড়ে দেওয়া ড্রোনে মারা যায় নাবিলার দাদী, সাথে আহত হয় ৭ জন শিশু। এরপর এই তো গত সপ্তাহে, এই হত্যার বিচার চাইতে ওয়াশিংটনে যায় নাবিলা, তার শিক্ষক বাবার হাত ধরে। চোখে একরাশ প্রশ্ন, সে কি শিশু নয়! তবে কেন তার সাজানো বাগান তছনছ করা হলো! কিন্তু দুঃখের বিষয় হলো- নাবিলা তো আর মালালা নয়! তাই ৪০৩ জন কংগ্রেস সদস্যের মধ্যে মাত্র ৫ জন নাবিলাকে সমবেদনা দেখাল। একই পৃথিবীতে , একই রক্তের, একই জাতিরই ২ মেয়ের প্রতি ২ রকম আচরণের কারন কি? কারন, একজনকে তালেবানরা মেরেছে, আরেকজনকে আমেরিকানরা। তাই নিজের নাক কেটে হলেও অন্যের যাত্রা ভঙ্গ করতে মালালাকে নিয়ে নাচানাচি পশ্চিমাদের জন্য ফরয। এটা অবশ্য ইতিহাসে নতুন কিছু নয়। সালমান রুশদি মুসলিম বংশোদ্ভূত হলেও তাকে নিয়ে পশ্চিমারা আহ্লাদ করেছে, তার প্রচার প্রসারে উল্ল্যেখ যোগ্য ভূমিকা রেখেছে। নবী (সাঃ) এর কুৎসা রটনা একজন ইহুদী খৃস্টান না করে একজন মুসলিম করলে কি তার দামটা অনেক বেশী হয়ে যায় না? তালেবানরা তো আমেরিকার চির শত্রু। শত্রু শত্রুর কুৎসা রটাবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু একই রক্তের, নিজ জাতির কেউ তাদের বিপক্ষে কলম ধরলে লোহা গরম থাকতে থাকতে কাজ শেষ করবেনা এটা কি আমেরিকানদের দাসদের কাছে আশা করা যায়! হুম! ১৭ বছর বয়সে নোবেল দেওয়া কিছুটা বাড়াবাড়ি বটে। কিন্তু পৃথিবী যেমন ভুলে যায়, মালালা বড় হতে হতে এই ইস্যু ও একদিন ভুলে যেতো। তাই নোবেলটা দেওয়া চাই ইস্যু থাকতে থাকতেই। তারপরেও ঘটনার প্রকৃত বাস্তবতা অনুধাবন করতে তালেবানদের নিজস্ব যুক্তি পড়ার দরকার ছিল। তালিবান নেতা আদনান রাশিদের লেখা চিঠি পড়ে ব্যাপারটা অনেক ক্লিয়ার হয়ে গেলো। মালালাকে তিনি লেখেছেন- আপনি বলেছেন মালালা দিবস আপনার দিন না, এটা যারা তাদের অধিকার এর কথা বলবে তাদের, আমি প্রশ্ন করি কেন এইরকম একটা দিন Rachel Corrie -এর নামে নির্ধারিত হয় নি? কারন বুলডোজরটা ছিল ইসরাইলদের। কেন এইরকম একটা দিন আফিয়া সিদ্দিকা -এর নামে নির্ধারিত হয় নি? কারন কী এই যে ক্রেতা ছিল আমেরিকা? কেন এইরকম একটা দিন Faizan and Faheem -এর নামে নির্ধারিত হয় নি? কারন হত্যাকারী ছিল Raymond Davis. কেন এইরকম একটা দিন সেই ১৬ আফগান মহিলা ও শিশুর নামে নির্ধারিত হয় নি যাদেরকে গুলি করে হত্যা করেছিল আমেরিকান রবার্ট বেলাস? আমি এখন আপনাকে একটা প্রশ্ন করব, দয়া করে সততার সাথে উত্তর দিবেন-আপনি যদি আমেরিকান ড্রোন হামলার শিকার হতেন তাহলে কি দুনিয়া আপনার শরীরের অবস্থার খবর জানতে পারত? আপনাকে কী জাতির কন্যা হিসাবে ডাকা হতো? মিডিয়া কী আপনাকে নিয়ে এরকম ব্যস্ত হতো? জেনারেল কিয়ানি কি আপনাকে দেখতে আসতেন? জাতিসঙ্ঘ কি আপনাকে ডাকতো? ৩০০ -এর বেশি নিস্পাপ মহিলা ও শিশুকে ড্রোন হামলা করে হত্যা করার পরও কেউ খোজ নেয় না কারন হত্যাকারীরা উচ্চশিক্ষিত, অহিংস, শান্তিপ্রিয় আমেরিকান!!! আমি আশা করি, যেই সমবেদনার শিক্ষা আপনি নবীজি মুহাম্মআদ (স) -এর নিকট থেকে শিখেছেন তা যেন পাকিস্তান আর্মি ও শিখতে পারে যাতে করে তারা ফাতা ও বেলুচিস্তান এ মুসলিম রক্তপাত বন্ধ করে। আমি আশা করি, যেই সহানুভূতির শিক্ষা আপনি যীশু খ্রিস্টের নিকট থেকে শিখেছেন তা যেন USA ও NATO বাহিনী শিখতে পারে যাতে করে তারা সারা দুনি রক্তপান বন্ধ করে। একই ভাবে আশা করি বুদ্ধরাও শিখতে পারে যাতে তারা বার্মার মুসলিম নিধন বন্ধ করে। অনুরূপভাবে ইন্ডিয়ান আর্মিরা তাদের গান্ধিজীর পথ অনুসরন করে কাশ্মীরেরে গণহত্যা বন্ধ করে। ঠিক এই যায়গায়ই নাবিলা আর মালালার পার্থক্য, ঠিক এই যায়গায়ই মিশরের আসমা বেলতিগ আর মালার পার্থক্য। গাজা যুদ্ধের সময় একটা গান প্রায়ই দেখতাম। মিন গাইরি ফিলিস্তিন নামক একটা গান। বাচ্চাদের দেখে , আর গানের কথাগুলো শুনে গায়ের রোম শিহরিত হতো। ভাবতাম- কোন সেই শিক্ষা যার পরশে শিশুরা নিজেদের দেশের জন্য জীবন দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে! কিন্তু ইউটিউবে যখন সেই গানের নীচেই এই শিশুদের নিয়ে পশ্চিমাদের মন্তব্য দেখতাম- how they teach their children terrorism এবং, অনেকেই তাদের সন্ত্রাসী হিসেবে আখ্যা দিয়েছে , মন্তব্যে। তখন ভাবতাম - এরা কি আসলেই মানুষ! এই পশ্চিমারা কখনোই মুসলিম শিশুদের শিশু মনে করেনি। সব সময়ই এভাবেই সন্ত্রাসী বলেছে, বাচ্চাদের মায়াময় মুখ তাদের বুকে কোন মমতা জাগ্রত করেনি, তারাই আজ শিশুদের জন্য শান্তির পুরষ্কার দিলে জানতে মনে চায়- পৃথিবীতে আসলে অশান্তি কোনটা?
Posted on: Sun, 12 Oct 2014 14:16:08 +0000

Recently Viewed Topics




© 2015