- আচ্ছা, একটা কোয়েশ্চন - TopicsExpress



          

- আচ্ছা, একটা কোয়েশ্চন করি?? - হুম...কোয়েশ্চন করবে, এখানে অনুমতি চাওয়ার কি আছে! আমার কাজই তো তোমার প্রশ্নের উত্তর দেয়া। একটু থেমে, - আচ্ছা স্যার, আপনি মোবাইল ইউজ করেন না কেনো?... এ হলো আমার ছাত্রী মন্দীরা। এবার একাদশ শ্রেণীতে। আমি হলাম তার টিউটর। ৪র্থ মাস চলছে মন্দীরাকে পড়াচ্ছি। আমি হলাম তার ৩য় টিউটর। অর্থাৎ আমার আগেও ২জন তাকে পড়িয়েছে, কিন্তু ৪/৫ মাস পর তারা বিদায়! ছাত্রী হিসেবে সে ভালোই, কিন্তু সমস্যা হলো মেয়ে বড়ই বেপরোয়া। আমি তাকে ম্যাথ এবং ফিজিক্স পড়াই। সপ্তাহে ৪দিন, দেড় ঘন্টা করে। মাস শেষে খামে করে ৩০০০৳ পাই। আজ পর্যন্ত কোন সমস্যা হয়নি, তবে যেহেতু ৪র্থ তম মাস চলছে তাই একটু সাবধানে আছি। ... ... ... - আমি মোবাইল ফোন ইউজ করতে পারিনা তাই! - আপনার ফেসবুক একাউন্ট টা বলেন তো? - আমার তো মোবাইল নেই, ফেইসবুক থাকবে কি করে? - আপনি নিজেকে খুব স্মার্ট ভাবেন তাইনা? এ প্রশ্নের উত্তরে একটু হাসলাম। বিভ্রান্তকর হাসি, যা দ্বারা হ্যা অথবা না দুটোই হয় উত্তরে। এবং আমি সফল, মন্দীরা এক ভ্রু উঁচিয়ে তাকিয়ে আছে... সেদিনকার মত বেরিয়ে এলাম। মাসের মাঝামাঝি চলছে, আর এখনি পকেট ফাকা। আমি হাটছি মন্দীরাদের পাড়ার রাস্তা দিয়ে। গন্তব্য চট্টগ্রাম কলেজ, হোস্টেল গেইট। পথে টং দোকানে গরম গরম তেলেভাজা নাস্তা দেখে পেটটা মুচড়িয়ে উঠলো। পকেট ফাঁকা! ব্যপার নাহ্, পিরিচে করে দুটো ডালপুরি,বেগুনি আর চপ নিলাম। খেয়ে হাতের তেল মোছার জন্য কাগজ নিচ্ছি, দেখি দোকানি বড়ই ব্যস্ত। হাত মুছতে মুছতে সরে পড়লাম দোকান থেকে। এই শীতের সন্ধ্যাতেও বেশ গরম লাগছে। পড়নের জামা ভিজে লেপ্টে আছে পিঠের সাথে! - বাহ্...আপনিতো চুরিতে বেশ ওস্তাদ! কথাটা কেউ একজন আমার কানের পাশে বললো। তাকিয়ে দেখি সুন্দর করে হিজাব পড়া এক মেয়ে, আমার দিকে তাকিয়ে আছে। চিনতে পারলাম না, চেষ্টাও করছিনা! তবে যেহেতু পরিস্থিতি দেখে আঁচ করা যাচ্ছে যে, একটু আগের সাফল্যময় মিশনটি সে দেখে ফেলেছে, তাই তাকে আমার চিনে নেয়া জরুরি! সুন্দর করে হাসলাম। - হাসছেন কেনো? গরিবের হক মারতে লজ্জা করা উচিত ছিলো আপনার! আবারোও হাসলাম। - আপনি যে নাস্তা খেয়ে টাকাটা না দিয়ে চলে এলেন, এতে কি নিজের প্রতি গর্ব হচ্ছে? হাসি দেখেতো সেটাই মনে হচ্ছে! কিছু কিছু মানুষ আছে, যাদের বাধা না দিলে ক্রমশ জ্ঞান জাহির করতে থাকবে এবং একসময় নিজে থেকেই উত্তেজিত হয়ে যাবে। এই মেয়েটাও তেমন! তাই তাকে থামানোর চেষ্টা করা দরকার। - আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে, মিস্...? - মহুয়া!...আমি স্পষ্ট দেখেছি আপনি টাকা না দিয়ে চোরের মত বেরিয়ে এলেন দোকান থেকে! এখন আবার অস্বীকারও করছেন! - নামটা মানায়নি, হওয়া উচিত ছিলো সাদিয়া টাইপ কিছু! সাধারণত সাদিয়া নামের মেয়েগুলো এরকম টিপিক্যাল হয়। - আমার পুরো নাম সাদিকাতুল বিনতে মহুয়া! And what do u mean by typical?? ... ... ... এভাবেই পরিচয় হয় মহুয়ার সাথে। মহুয়া হলো মন্দীরার বড় বোন। বেশ ছটফটে এক তরুণি। দেখলে বোঝাই যায়না, এই মেয়ে ভার্সিটিতে পড়ে। বরং ক্লাস টেন-এ পড়া কোন স্কুল পালানো ছাত্রীর সাথেই তার মিল বেশি। পরিচয়পর্বটা বেশ জটিল হলেও, পরবর্তি ঘটনাগুলো বেশ মনে রাখার মত . . সেদিন ছিলো বুধবার। মন্দীরাকে পড়িয়ে বের হবো, এমন সময় মহুয়া এসে একটা কাগজ হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো। মন্দীরা ব্যপারটা খেয়াল করলো। বাইরে এসে পকেটে কাগজটা রেখে হাটতে শুরু করলাম। বেশ কৌতুহল হচ্ছে কাগজটা দেখার জন্য, তবে পকেট থেকে বের করতে ইচ্ছা করছেনা। যদিও আঁচ করতে পারছি কি হতে পারে। একটু হাসলাম। সুন্দরি মেয়েগুলো নিজেদের বেশ স্মার্ট মনে করলেও, নিতান্তই বোকা হয়ে থাকে। পরদিন ইচ্ছা করে মন্দীরাকে পড়াতে গেলাম না। ঘুম দিলাম একটা। বিকালের দিকে রুমের দরজায় বেশ ডাকাডাকির পর ঘুমজড়ানো অবস্থায় কাঁথা গায়ে জড়িয়ে দরজা খুললাম। দেখি মেসের ম্যানেজার বেশ উত্তেজিত হয়ে আমার হাত ধরে টানতে টানতে নিচে নিয়ে গেলেন। গিয়ে দেখি মহুয়া দাড়িয়ে আছে। ম্যানেজার সাহেবের উত্তেজনার কারণটা বুঝলাম। এবং মহুয়ার ব্যপারে তিনি এতটাই উৎসাহ দেখিয়েছেন যে, কাঁথাসমেত এভাবে টেনে আনার পরেও খেয়াল নেই! যাহোক, মহুয়ার দিকে প্রশ্নবোধক দৃষ্টিতে তাকালাম। কিছু না বলে, সোজা সে আমার রুমের দিকে চলে গেলো। আমি ম্যানেজার সাহেবকে কিছু বলার আগেই তিনি বলে উঠলেন, - আরে যান যান...তিনি খুব ক্ষেপে রয়েছেন...মান ভাঙান যান..আমি স্পেশাল চা পাঠিয়ে দিচ্ছি! হেহেহে.. রুমে এসে দেখি মহুয়া দাড়িয়ে আছে। থাকবেও বা না কেনো, বসার কোন জায়গাইতো নেই! - কাল মন্দীরাকে পড়াতে যাননি কেনো? - মাথাব্যথা করছিলো তো খুব তাই! - মিথ্যা কথা! আপনাকে আমি ঐ কাগজটা দিয়েছি বলেই আপনি আসেন নি! কেনো? - সত্যি কথাটা কি জানো?...মানে, আমি এখনও ওটা পড়িনি! ভুলে গিয়েছিলাম। - নিজেকে খুব স্মার্ট ভাবেন তাইনা? আমি কিছু বলিনি... ... ... ... দ্বাদশ শ্রেণীতে মন্দীরা। কোন এক কারণবশত আমাকে বহাল রাখা হয়েছে এখনও। দিনটার বার,তারিখ মনে নেই তবে সময়টা মনে ছিলো। দুপুরের রোদের ভিতর আমি রাস্তায় ট্রাফিক পুলিশের পিছনে দাড়িয়ে আছি। হঠাৎ মন্দীরা একটা রিকশায় করে আমার সামনে এসে দাড় করালো। কলেজ ড্রেস দেখে বুঝলাম কলেজ ফাকি দিয়েছে আজ। রিকশায় উঠতে বলে, রিকশাওয়ালাকে বললো সি.আর.বি যেতে। আমি বসে আছি রিকশায়। - আপনি কি জানেন কেনো এখন আপনাকে রিকশায় করে ওখানে নিয়ে যাচ্ছি? - না.. - জানতে কি ইচ্ছাও করছেনা? হঠাৎ আপনার ছাত্রী কেনো এমন এগ্রেসিভ বিহেইভ করছে? - হুমম্...সুন্দর! সুন্দর!! - আপনি কি জানেন, আপনি খুব বিরক্তিকর একজন মানুষ?? - হ্যা...বিরক্তি করার মাঝে একটা এক্সপেরিমেন্টাল থিওরি আছে। বিরক্তির মাধ্যমে আমি... - থাক থাক...ফিলোসোফি বলতে হবেনা! মহুয়া আপু আপনাকে লাইক করে তাইনা? - ভাই একপাশে রাখেন তো একটু...মন্দীরা ভাড়াটা দিয়ে দাও। আমরা হেটে যাবো টাইগারপাস দিয়ে হাটছি, পাশে মন্দীরা। - আমার প্রশ্নটা এড়িয়ে গেলেন তখন..এবার উত্তর দিন - সেটাতো মহুয়া আপুই ভালো বলতে পারবে তাইনা? এখানে এনেছো কেনো তাই বলো? - আমি জানি মহুয়া আপু আপনার প্রতি উইক হয়ে গেছে...আচ্ছা আপুকে আপনারও ভালো লাগে তাইনা? কথাটা বেশ আকুতির স্বরে বললো মন্দীরা! কিছু কিছু এমন ব্যপার আছে যেগুলো না চাইতেই ঘটে যায়। এই যেমন এটা, আমি বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছি এই মেয়েও আমার উপর দূর্বল হয়ে গেছে। এটা ব্যাপার না, মজার কথা হলো, আমার মত ভ্যাগাবন্ডের উপর একই পরিবারের দুই বোন ক্র্যাশড্। নিজেকে আয়নায় দেখতে ইচ্ছা করছে খুব। যাহোক, ঘটনা হলো এখানে পারষ্পারিক দ্বন্দ কাজ করছে দুই বোনের ভিতর। মহুয়া আমার উদ্ভট জীবন যাপন বহুদিন যাবৎ ফলো করে আসছে। সে আমার মেসে গিয়েছে,আমাকে রাস্তায় ফলো করে বুঝতে চেয়েছে,খবর নিয়েছে...যে কোন ভাবেই হোক, সে আকৃষ্ট হয়ে পড়েছে। এবং যখন মন্দীরা এটা খেয়াল করলো, তখন নারীসুলভ দ্বন্দটা তৈরি হলো। সে ভাবতে লাগলো, এটা ঠিক না। আমার টিউটর, ও কেনো প্রেম করবে? Then she... মনের মত করে ব্যাখ্যাটা তৈরি করে, নিজেই হাততালি দিয়ে উঠলাম। মন্দীরাকে তখনই বুঝিয়ে রিকশায় তুলে বাসায় পাঠিয়েছি। . . মেসে এসে মহুয়ার কাগজটা বের করলাম। নাহ্ হাতে নিলেই পড়ার ইচ্ছাটা চলে যাচ্ছে! কাগজটা জানালা দিয়ে উড়িয়ে দিলাম। থাকনা সবকিছুই যে জানতে হবে,বুঝতে হবে এমন তো না... বাইরে সুন্দর জোছনা। এক্ষুনি হাটতে বের হতে হবে। কাল একবার তিথীর কাছে যেতে হবে, এই টিউশনিটাও ছেড়ে দিতে হলো! ওকে বলে আরেকটা জোগাড় করতে হবে। উফ্ ঠান্ডাটা বেশ। চাদর আনাটা উচিত ছিলো...
Posted on: Sat, 03 Jan 2015 05:28:59 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015