অটোমান সুলতান দ্বিতীয় - TopicsExpress



          

অটোমান সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ: যিনি এমনকী অসহায় ইহুদিদেরও আশ্রয় দিয়েছিলেন প্রগতিশীল নাস্তিক অনেকে বলে থাকে মুসলমানরা তরবারী দিয়া ইসলাম প্রতিষ্ঠা করেছেন। নন-মুসলিমদের কল্লা কাটা ছাড়া আর কোন কাজই নাকি তারা করেন নাই... তাহলে পড়ুন ...এবং সত্য জানুন...... বায়োজিদ। (১৪৪৭-১৫১২ খ্রিস্টাব্দ) বিশ্বের ইতিহাসে ইনি একজন মহানুভব এক তুর্কি সুলতান হিসেবে পরিচিত ; পূর্ব-পশ্চিমের মধ্যে ঘনিষ্ট সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য জীবনভর সচেষ্ট ছিলেন । এ ছাড়াও নিজস্ব উদ্যেগে যেসব মানবিক পদক্ষেপ নিয়েছেন -সেজন্য ইতিহাস চিরদিন অমর হয়ে থাকবেন এই মহৎ হৃদয়ের মানুষটি ... মধ্য এশিয়ার তুর্কিরা ছিল বর্তমান তুরস্কের তুর্কিজাতির পূর্বপুরুষ ; তুর্কিরা মধ্যএশিয়া থেকে মঙ্গোলদের তাড়া খেয়ে আনাতোলিয়া এসেছিল। (বর্তমান তুরস্কর আরেক নামই আনাতোলিয়া।) আনাতেলিয়ায় তুর্কিরা গড়ে তুলেছিল অটোমান সাম্রাজ্য, যে সাম্রাজ্য ত্রয়োদশ শতক থেকে প্রায় ৬০০ বছর ধরে বিশাল এক ভূখন্ড শাসন করেছিল । আনাতোলিয়ার ওগহুয তুর্কিদের কাঈই গ্রোত্রের গাজী এরতুগরুল (১১৯১/১২৮১ খ্রিস্টাব্দ) অটোমান সাম্রাজ্য প্রতিষ্ঠা করেন; যদিও তাঁর ছেলে প্রথম ওসমান থেকে সাম্রাজ্যের নাম হয়েছিল অটোমান বা ওসমানিয়। ১২৯৯ খ্রিষ্টাব্দে আনাতোলিয়ার মাটিতে প্রথম ওসমান অটোমান সাম্রাজ্যের ভিতটি প্রতিষ্ঠা করেন। গ্রিসের উত্তর পুবে জায়গার নাম থ্রাস । থ্রাস এখন বলকান নামে পরিচিত। সেই থ্রাসে এক অটোমান প্রাসাদে ১৪৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩ ডিসেম্বর সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ-এর জন্ম; মায়ের নাম: আমিনা গুলবাহার। গুলবাহার খাতুন নামেও ওই রত্মগর্ভাটি পরিচিত ছিলেন। সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ-এর বাবা ছিলেন সুলতান ২য় মোহাম্মদ । সুলতান ২য় মোহম্মদও ছিলেন উদার; জীবনভর পূর্ব-পশ্চিমের সংস্কৃতির মেলবন্ধন ঘটাতে সচেষ্ট ছিলেন। রোমান সম্রাট মারকাস অওরেলিয়াস (১২১/১৮০ খ্রিস্টাব্দ )ছিলেন স্টোয়িক দর্শনে বিশ্বাসী। বলেছিলেন: এমন কী রাজপ্রাসাদেও সুখি হওয়া যায়। এর মানে কি এই যে মানবতাবাদের চর্চা ভোগবিলাসে ডুবে থেকেও সম্ভব?সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ তাই করেছিলেন। তুর্কিরা ১৪৫৩ খ্রিস্টাব্দে পূর্ব রোমান সাম্রাজ্যের রাজধানী কনস্টানটিনপোল জয় করে নেয়; এরপর তারা শহরটির নতুন নাম দেয় ইস্তানবুল। তারপর ইস্তানবুলই হয়ে ওঠে অটোমান সাম্রাজ্যের কেন্দ্র। অটেমান সুলতানগণ বাস করতেন ইস্তানবুলের সুরম্য তোপকাপি প্রাসাদে । অটোমান সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ এর রাজত্বকাল ছিল: (১৪৮১-১৫১২ খ্রিস্টাব্দ ) ওই সময়ে অত্যন্ত বিস্ময়কর এবং মানবিক একটি ঘটনা ঘটেছিল। ওই ব্যতিক্রমী ঘটনাটি অটোমান সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ কে ইতিহাসে স্মরণীয় করে রেখেছে। সেই মানবিক ঘটনাটি উপলব্ধি করতে হলে আমাদের চোখ মধ্যপ্রাচ্যের ইহুদি জাতির ইতিহাস এবং ইউরোপের ইতিহাসের পূর্বাপর ঘটনাক্রমে ফেরাতে হবে ... আমরা জানি, মুসা নবীর নেতৃত্বে ইহুদিরা মিশর থেকে পালিয়ে এসেছিল। পরে তারা প্রাচীন ফিলিস্তিনে আশ্রয় পেয়েছিল। জুদাহ এবং জেরুজালেম হয়ে উঠেছিল তাদের রাজত্বের কেন্দ্র। জেরুজালেম কালক্রমে পারস্যের অধীন চলে গিয়েছিল। ৬৩ খ্রিস্টপূর্বে ফিলিস্তিন অঞ্চলটি রোমান সাম্রাজ্যের অধীনে চলে যায়। ইহুদিরা প্রথম থেকেই রোমান শাসনের বিরুদ্ধে অত্যন্ত বিরূপ ছিল; তারা রোমান শাসন-শোষনের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করছিল। ৭০ খ্রিস্টাব্দে রোমানরা ইহুদিদের ওপর ক্রদ্ধ হয়ে জেরুজালেম ও এর প্রধান উপাসনালয়টি সম্পূর্নরূপে ধ্বংস করে দেয়। রোমানরা এরপর বেশির ভাগ ইহুদিকে রোমে নির্বাসিত করে। ব্যাবিলনে ইহুদিদের একটি গে থাকায় ইহুদিদের একটি দল ওখানে চলে যায়; বিপুল সংখ্যক ইহুদি দলে দলে উত্তর আফ্রিকা ও স্পেনের উদ্দেশেও পাড়ি জমায়।বলাবাহুল্য, স্বদেশভূমি থেকে উৎখাত হয়ে যাওয়া অসহায় ইহুদিদের জন্য তৎকালীন কোনও শাসকই সীমান্ত বন্ধ রাখেননি! নির্বাসিত ইহুদিরা স্পেনেও আশ্রয় লাভ করেছিল। স্পেনকে হিব্রু ভাষায় বলা হয়; ‘সেফারাড’; কালক্রমে স্পেনের নির্বাসিত ইহুদিরা সেফারাড নামে পরিচিত হয়ে ওঠে। কিন্তু, স্পেনে বসবাসকারী সেই নির্বাসিত ইহুদিদের জীবন কেমন ছিল? রোমানরা ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দ অবধি স্পেন শাসন করেছিল। কাজেই, বলা যায় ৪৭৬ খ্রিস্টাব্দ অবধি ইহুদিরা স্পেনে মোটেও স্বস্তিতে ছিল না । এরপর ভিসিগথরা (এরা ছিল জার্মানিক ট্রাইব) স্পেন দখল করে নিয়েছিল। বোঝাই যায় এদের দুঃশাসনেও ইহুদি-জীবন অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছিল। কেন? কেননা, স্পেন সেসময় আরবদের অধীনে চলে যায়। Bertrand Russell তাঁর A HISTORY OF WESTERN PHILOSOPHY গ্রন্থে লিখেছেন: The Hegira, with which the Mohammedan era begins, took place in A.D. 622; Mahomet died ten years later. Immediately after his death the Arab conquests began, and they proceeded with extraordinary rapidity. In the East, Syria was invaded in 634, and completely subdued within two years. In 637 Persia was invaded; in 650 its conquest was completed. India was invaded in 664; Constantinople was besieged in 669 (and again in 716-17). The westward movement was not quite so sudden. Egypt was conquered by 642, Carthage not till 697. Spain, except for a small corner in the north-west, was acquired in 711-12. (পৃষ্ঠা,৪২৫) স্পেনের মুসলিম শাসকগণ ছিলেন উদার। ফিলিস্তিন থেকে উৎখাত হওয়ার ৭০০ বছর পর এই প্রথম স্পেনের সেফারাড ইহুদিরা উপলব্দি করল অ-ইহুদি শাসকের শাসনামলেও জীবন হতে পারে শান্তিময়, নিরাপদ এবং আনন্দমূখর । অনেক ঐতিহাসিক ওই স্পেনের ওই সময়টাকে ইহুদি ইতিহাসের স্বর্ণযুগ বলে অবহিত করেছেন। এ প্রসঙ্গে জনৈক ইউরোপীয় ইতিহাসবিদ লিখেছেন, ‌In the Iberian Peninsula, (আইবেরিয় উপদ্বীপ; স্পেন যার অর্ন্তগত), under Muslim rule, Jews were able to make great advances in mathematics, astronomy, philosophy, chemistry and philology. This era is sometimes referred to as the Golden age of Jewish culture in the Iberian Peninsula... Jews enjoyed great privileges, and their communities prospered. There was no legislation or social barriers preventing them from conducting commercial activities. Many Jews migrated to areas newly conquered by Muslims and established communities there. The vizier of Baghdad entrusted his capital with Jewish bankers. The Jews were put in charge of certain parts of maritime and slave trade. Siraf, the principal port of the caliphate in the 10th century CE, had a Jewish governor. এসব কারণেই স্পেনের মুসলিম শাসন ইহুদিদের স্বর্ণযুগ বলে বিবেচিত। অ্যাঞ্জেলা জি উড তাঁর হলোকাষ্ট বইতে লিখেছেন: ‘ The Hebrew word for Spain is Sefarad and Sephardic Jews are those who originated in Spain or Portugal. When under Islamic rule, there were good relations between Jews and Muslims, but under Catholic rule, there was great pressure for Jews to convert. In 1492, both Jews and Muslims were expelled from Spain, and Jews fled to Muslim countries and the Netherlands.(পৃষ্ঠা (১২) আল আন্দালুস। আব্বাসীয় মুসলিমরা স্পেনকে বলত আল আন্দালুস। ওই সময়কার মুসলিম-শাসিত স্পেনে বিভিন্ন ধর্মের মধ্যে চমৎকার সর্ম্পক ছিল । ইতিহাসের গতি বদলায় ... স্পেনে মুসলিম শাসনের অবসানের লক্ষে ইউরোপিয় রাজ্যগুলির তৎপরতা সেই সপ্তম দশক থেকেই অব্যাহত ছিল। একে বলা হয়- ‘রিকনকুয়েস্তা’ বা পুনরায় বিজয় লাভ করা; ৮০০ বছর ধরে চলেছিল ‘রিকনকুয়েস্তা’ । আমরা জানি, ১৪৯২ খ্রিষ্টাব্দে স্পেনের রানী ইসাবেলার উদ্যেগে ক্রিস্টোফার কলম্বাস নতুন-বিশ্বে প্রবেশ করেছিলেন।ওই একই বছরেই জারীকৃত আলহামরা ডিক্রি-র মাধ্যমে স্পেনের ইহুদিদের বলা হল ... হয় ক্যাথলিক ধর্ম গ্রহন কর নতুবা স্প্যানিশ ইনকুইজেশনের মুখোমুখি দাঁড়াও। ওই একই অজুহাতে স্পেন থেকে আরব-মুসলিমদেরও উৎখাত করা হয়েছিল। আমরা জানি, স্প্যানিশ ইনকুইজেশন বড় ভয়ংকর বিষয়-যা ধর্মের নামে অমানুষিক নির্যাতনেরই নামান্তর; ইউরোপের ইতিহাসে যা এক কলঙ্কজনক অধ্যায় হিসেবে চিহ্নিত হয়ে আছে। স্পেনের মর্মান্তিক ইহুদি নির্যাতনের সংবাদ যথাসময়ে অটোমান সাম্রাজ্যে পৌঁছেছিল। মহানুভব সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ ক্রোধে উন্মুক্ত হয়ে উঠলেন। এ কী ধরনের কথা! আমার রাজত্বেও তো কত কত জাতি বাস করে, বলকানে খ্রিস্টানেরা বাস করে-কই, কেউ কি কখনও শুনেছে যে তাদের ওপর নির্যাতন করা হয়? উদারপ্রাণ সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ স্পেনের ইহুদিদের মর্মান্তিক পরিস্থিতি থেকে কী করে বাঁচানো যায় তাইই ভাবতে লাগলেন। ১৪৯২ খ্রিস্টাব্দ। সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ অটোমান নৌবাহিনীকে নির্দেশ দিলেন স্পেন অভিমুখে যাত্রা করতে। সেই নৌঅভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন কেমাল রেইস। তাঁর সুযোগ্য নেতৃত্বে বহুসংখ্যক আরব ও ইহুদিদের উদ্ধার করা হয় । সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ স্বয়ং নৌবন্দরে উপস্থিত থেকে নির্বাসিতদের স্বাগত জানান। শুধু তাই নয়, ওই মহানুভব তুর্কি সুলতান অটোমান সাম্রাজ্যে এই মর্মে নির্দেশ জারী করলেন, ‘উদ্বাস্তুদিগকে স্বাগতম জানাইতে হইবে।’ শুধু তাই নয়,তিনি নির্বাসিতদের অটোমান সাম্রাজ্যে বসবাসের অনুমতি দিলেন, নাগরিকত্বও দিলেন। ইউরোপীয় গর্ভনরদের ফরমান পাঠালেন: ইহুদিদের উৎখাত করা চলবে না ; বরং স্বাগত জানাতে হবে। যারা ইহুদিদের সঙ্গে নিষ্ঠুর ব্যবহার করবে বা ইহুদিদের অটোমান সাম্রাজ্যে প্রবেশ করতে দেবে না তাদের জন্য রয়েছে মৃত্যুদন্ডসহ ভয়াবহ শাস্তি ... এই মানবিক ঘটনা আজও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করা হয়। অ্যাঞ্জেলা জি. উড তাঁর হলোকাস্ট বইতে অটোমান সম্রাট দ্বিতীয় বায়োজিদ- এর ছবি ছাপিয়ে তার পাশে লিখেছেন: ... A warm welcome ... In 1492, news reached the Ottoman (Turkish) Empire that Jews were banished from Spain. Sultan Beyazit II, shown here, granted Jews safe haven in his empire and personally greeted them at the port. Most Jews settled and flourished in the European parts of the empire. Many of the sultans’ doctors were Jewish, and it was Jews who set up the first printing presses. নির্বাসিত ইহুদিদের আশ্রয় দিয়ে অটোমান সাম্রাজ্যের লাভ হয়েছিল। এ প্রসঙ্গে জনৈক ইতিহাসবিদ লিখেছেন: ‘নতুন নতুন ধ্যানধারণা, পদ্ধতি ও কারিগরী দক্ষতার কারণে স্পেনের আরব ও ইহুদিরা অটোমান সাম্রাজ্যের বিকাশে সহায়ক হয়েছিল। ১৪৯৩ সালে সেফারাড ইহুদিরা ইন্তানবুলে প্রথম ছাপাখানাটি স্থাপন করে । এরও আগে ১৪৮৩ সালে ইস্তানবুলে ইহুদিদের ছাপাখানা ছিল। এর তিন বছর আগে জার্মানিতে গুটেনবার্গ যন্ত্রটি আবিস্কার করেন। সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ এর শাসনামলে ইহুদিদের অসামান্য সাংস্কৃতিক অগ্রগতি হয়।’ সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ অত্যন্ত রসিক ছিলেন। ইহুদিদের নির্বাসিত করার সময়ে স্পেন শাসন করতেন ২য় ফার্দিন্দানন্দ অভ আরাগন এবং ১ম ইসাবেলা। সুলতান দ্বিতীয় বায়োজিদ নাকি একবার হাসতে হাসতে দরবারে বলেছিলেন, ‘কী আজব! লোকে নাকি স্পেনের ফার্দিন্দানন্দ আর ইসাবেলাকে জ্ঞানী বলে। এই কথা শুনে হাসব না কাঁদব। তারা নিজেদের দেশকে নিঃস্ব করে আমাকে ধনী বানিয়ে দিল!’ ইস্তানবুলে লাদিনোভাষী ইহুদিরা। আজও ইস্তানবুলে ইহুদিরা বাস করে। এরা যে ভাষায় কথা বলে তার নাম লাদিনো। এরা আজও নিশ্চয়ই মহানুভব সেই তুর্কি সুলতানের কথা স্মরণ করে। তথ্যসূত্র:ইন্টারনেট
Posted on: Mon, 28 Oct 2013 15:23:36 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015