আমাদের - TopicsExpress



          

আমাদের বিদ্বৎসমাজ =========== #০১ ... সেই তিনি (শওকত ওসমান - K.K) ছিলেন মুক্তিযুদ্ধের, আওয়ামী লীগের হয়ে গেলেন। আমার কাছে কিন্তু এ সত্যি ভারি আশ্চর্য্যের মনে হয়। আওয়ামী লীগ ভারি মজার এক বুড়ো শিশু পেয়েছিল। তাকে খুব আদর করল, নাওয়াল-খাওয়াল, কাজল পরাল, যাতে অন্যের নজর না লাগে, কপালের বাম কোণায় টিপ দিল। বুড়ো খোকাও তার অকালমৃত্যুর আগের কটা বছর খুব লোক হাসালেন। খবরের কাগজও পেয়েছিলেন বশংবদ, শিশু-হাতের আঁকরা-বাঁকড়া লেখায় যা পাঠাতেন ছেপে দিতেন তারা। আমি ভাবতাম ওই কাগজগুলো কি বিনা-সম্পাদকে চলে? কলম-ঝাড়া দু-ফোঁটা কালিও যদি যত্রতত্র পড়ে যেত, ভবিতব্যের অমোঘ বাণীর মতো তারা তা স-সম্ভ্রমে ছেপে দিতেন। খিস্তি-খেউড় আর ক্ষুধার্ত শিশুর মতো বাংলায় নয়, আন্তর্জাতিক ভাষায় চিৎকার আর রাগ, আবার ফোকলা দাঁতের হাসি, শিশু যেমন নিজের কীর্তি দেখে নিজে হাসে। আবার কপি করে ওগুলো জনে জনে বিলি করতেন গাঁটের পয়সা খরচ করে, শেষ বয়সে ওই জিনিসের তার অভাব ছিল না। যেন কী সাংঘাতিক এক মিশনে নেমেছেন। অকালমৃত্যু বলেছি এইজন্যে যে, ওটা তো তার দ্বিতীয় জন্মের মৃত্যু। শওকত ওসমান তো আগাগোড়া এই ছিলেন না। মুক্তিযুদ্ধের পরের তার জন্মটা তো অন্যরকম হওয়ার দরকার ছিল। একাত্তরের আগের আমাদের প্রণম্য প্রবল বিদ্দজ্জনগুলি একে একে চলে গেলে একজন এই শওকত ওসমান ছিলেন। তার তো এই ভয়ঙ্কর অন্ধকার সঙ্কটের কালে দেশের কাছে, জাতির কাছে, উৎকন্ঠ-তরুণ জিজ্ঞাসু প্রজন্মের কাছে ডাক পড়েছিল। বিদ্বৎসমাজের তিনিই তো তখন সর্বজ্যেষ্ঠ নেতা। তৃতীয় নয়ন রয়েছে তার। কিন্তু অমন কলঙ্কিত ভালে তো সে থাকে না, সে পালাল। দ্বিতীয় চোখটিও নিজের হাতে উপড়ে ফেলে দিলেন। একচোখা হরিণ ছুটলেন দিগবিদিকজ্ঞানশুন্য হয়ে। মুক্তিযুদ্ধ মানুষকে জাগায়, তাকে খেপিয়ে দিয়েছিল। ক্ষ্যাপা বুড়ো ক্রমাগত ক্ষ্যাপামি করছিলেন। লোকে হাসত, কেউ-কেউ রাগও করত। আমার খুব খারাপ লাগত। ... মৃত্যুর পরও কত বড় ভাগ্য তার। আওয়ামী লীগ, জীবনে যেমন করেছিল, মরণেও তার জন্যে অনেক কিছু করল। কিন্তু এক বেগম খালেদা জিয়া ছাড়া আওয়ামী লীগ বৃত্তের বাইরের আর কাউকে দেখলাম না শোক-বিবৃতি দিতে, আমি যত দূর দেখেছি। এই আশ্চর্য অনীহা ভারি লক্ষণীয় হয়ে উঠেছিল। শোকসভার জন্যে জাতীয় কমিটি গঠিত হয়েছিল। কিন্তু তাতে আওয়ামী লীগের লোক ছাড়া কাউকে রাখা হয়নি। সেই শোকসভায় লোক এত কম কেন, এক বক্তা প্রশ্নই করে বসেছিলেন। তার উত্তর দেয়ার দরকার হয়নি। তাকে যে আওয়ামী লীগ গ্রাস করেছিল। সেই মগ্ন মৌতাতেই তার চিরনিদ্রা হয়েছে॥ - বশীর আলহেলাল / আমাদের বিদ্বৎসমাজ ॥ [ দিব্য প্রকাশ - ফেব্রুয়ারী, ২০০৬ । পৃ: ১৪৭-১৪৮ ] #০২ ... বাংলাদেশের একজন বুদ্ধিজীবির বেশকিছু ঘটনা আমাদের জানা। তার নামের দিক থেকে তিনি এখনো ফোটার অপেক্ষায় (মুকুল - K.K)। একাত্তরে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে তিনি একটি উদ্দীপনামূলক কৌতুক অনুষ্ঠান করতেন। দরকার ছিল সে অনুষ্ঠান, সন্দেহ নেই। কিন্তু স্বাধীনতার পরে জানলাম যে, সম্মানী বাড়ানোর জন্য তিনি অনুষ্ঠান বন্ধ করে দেয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন। পাশাপাশি অনেককে দেখা গেছে নামমাত্র সম্মানী নিয়ে দিনরাত পরিশ্রম করতে। প্রবাসী সরকারকে আর কেউ অন্তত: ব্ল্যাকমেইল করতে চাননি। তিনি একটি বইও লিখেছেন। এরশাদ আমলে প্রকাশিত সেই গ্রন্থে অবাঞ্ছিত ও অপ্রাসঙ্গিকভাবে তিনি কিছু প্রসঙ্গ বার বার টেনেছেন যাতে এরশাদ খুশি হতে পারে। সম্ভবত: খুশি হয়েছিলেনও। এই লেখকের একটি বইয়ের দোকানও রয়েছে। ভেতরে ঢুকলে ঠাহর করতে কষ্ট হবে এটা ঢাকার একটি জায়গা নাকি কলকাতার কলেজ স্ট্রীট॥ - আহমেদ মুসা / একান্ত সমকালের ॥ [ ঝিঙেফুল - ফেব্রুয়ারী, ২০০৮ । পৃ: ৬৬ ] #০৩ ... যারা এখনও জীবিত আছেন তারা হচ্ছেন কবীর চৌধুরী, শওকত ওসমান, শামসুর রহমান প্রমুখ। এরা প্রত্যেকে সম্পূর্ণ সজাগ প্রক্রিয়ায় আইয়ুবের গণতন্ত্র বিরোধী কর্মকান্ডে নিজেদের যুক্ত করেছিলেন। সে সময় কিছু পুঁজিবাদী ব্যক্তিদের অর্থানুকূল্যে কয়েকটি পুরস্কার প্রবর্তন করা হয়েছিল। যেমন আদমজী পুরস্কার এবং দাউদ পুরস্কার। সকলেই এ সমস্ত পুরস্কার পাওয়ার জন্য লোলুপ ছিলেন। বোধ হয় তৎকালীন সমগ্র পাকিস্তানে আমিই একমাত্র ব্যক্তি যে, সব পুরস্কার প্রত্যাখ্যান করেছিলাম। তৎকালীন সময় আমার কি মানসিকতা ছিল তা আমি পরিষ্কারভাবে বলতে পারি। আমি বিশ্বাস করতাম, যিনি যথার্থ লেখক তিনি নিজেকে বিক্রয় করতে পারেন না। এবং যিনি যথার্থ গণতান্ত্রিক তিনি স্বৈরতান্ত্রিক নায়কের আজ্ঞাবহ দাস হতে পারেন না। আমাদের দূর্ভাগ্যক্রমে যে সমস্ত লেখক এ দাসত্ব গ্রহণ করেছিলেন জনতা থেকে ছিন্নমূল এ সমস্ত লেখক আজও প্রতাপ প্রকাশ করে চলেছেন নিজেদের অপরাধকে ঢাকার জন্য এবং অশ্লীলতাকে আড়াল করবার জন্য। কবীর চৌধুরী ঢাকায় বিএনআর-এর যে অফিস তার ডেপুটি ডিরেক্টর ছিলেন। কলেজের প্রিন্সিপাল থেকে এই পদে তিনি আসেন সেই সময়। সুতরাং বিএনআর-এর কর্মকান্ড তখন যা তৈরি হয়েছিল সেই কর্মকান্ডের সম্পূর্ণ দায়-দায়িত্ব কবীর চৌধুরীকে নিশ্চয়ই নিতে হবে। ... মৌলিক গণতন্ত্রকে প্রচার করার জন্য আইয়ুব ভাড়াটে লেখক তৈরি করলেন অনেকগুলো। পশ্চিম পাকিস্তানের অনেকগুলো এবং বাংলাদেশের অনেকগুলো। বাংলাদেশে যারা এই লেখার মধ্যে যুক্ত হলেন তারা হচ্ছেন - গোলাম মোস্তফা, নুরুল মোমেন, মুনীর চৌধুরী, শওকত ওসমান এবং তারপরে আরও, আরও, আরও অনেক। বেসিক ডেমোক্রেসির উপর শওকত ওসমানের গল্প আছে। গোলাম মোস্তফার কবিতা আছে। নুরুল মোমেনের নাট্যাংশ আছে - ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি। এরা মহা আনন্দে এই কাজগুলো করেছেন। এরা কোন বিচার-বিবেচনা করেননি। আনন্দটা কিসের? টাকা পাচ্ছেন সেজন্য। ওরা ভাল টাকা দিয়েছিল। ... পাক-জমহুরিয়াত বলে একটা ট্রেনের নাম দিয়েছিলেন তিনি (আইয়ুব)। পাক-জমহুরিয়াত করাচি থেকে যাত্রা আরম্ভ হয়। সিন্ধের মধ্য দিয়ে যেয়ে একেবারে ফ্রন্টিয়ার পেশাওয়ার টেশোয়ার ঘুরে আসে। দশ পনের দিনের সফর। সেই সফর সঙ্গী ছিলেন পশ্চিম পাকিস্তানের অনেক লেখক। পূর্ব পাকিস্তানের যারা ছিলেন তাদের আমি জানি। শকত ওসমান ছিলেন, মুনীর চৌধুরী ছিলেন, তার পরে গোলাম মোস্তফা ছিলেন, নুরুল মোমেন ছিলেন, জসিম উদ্দিন ছিলেন, এরকম আরো অনেকে, আরো ৪/৫ জন এবং ঐ গল্পগুলো সবাই জানে॥ - সৈয়দ আলী আহসান / মনীষার মুখ ॥ [ সম্পাদনা: আবদুল হাই শিকদার। ঝিঙেফুল - ফেব্রুয়ারী, ২০০৩ । পৃ: ২২-২৪ ] - Kai Kaus
Posted on: Sun, 30 Nov 2014 19:54:24 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015