ওইসব প্রাকৃতিক - TopicsExpress



          

ওইসব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে ভ্রমণের তালিকায় প্রথম স্থানে রাখে যে জায়গায় সাধারণত সবার পদচারণা ঘটে না, কিংবা নাম জানা থাকে না। এবার রাঙ্গামাটি জেলার দুর্গম ও গহিন পাহাড় অরণ্য পেরিয়ে গিয়েছিলাম সৌন্দর্যের রানী সিজুক জলপ্রপাতে। আগের দিন রাতে রওনা হয়ে পরের দিন সকাল ৭টায় দীঘিনালা পৌঁছাই। দীঘিনালা গেস্ট হাউসে সাফসুতরা হতে হতেই চান্দের গাড়ি ও গাইড এসে হাজির। ওদের সঙ্গে আগে থেকেই কথাবার্তা হয়ে থাকায় দর-দাম নিয়ে খুব একটা সময় নষ্ট হয়নি। সকাল ৮টার মধ্যেই রাঙ্গামাটির নন্দরাম গ্রামের উদ্দেশে বের হয়ে যাই। পার্বত্য জেলার পিচঢালা পাহাড়ি পথে লক্কড়-ঝক্কড় চান্দের (চাঁদের) গাড়ির ছাদে চড়ার যে কি আনন্দ তা লিখে বোঝানো সম্ভব নয়। কখনও গভীর গিরিখাদ, কখনও গগনচুম্বী বৃক্ষের গভীর অরণ্য আবার কখনও বা ঢেউ খেলানো সারি সারি পাহাড় পেছনে ফেলে দে-ছুট ভ্রমণ সংর্ঘের দামাল বন্ধুদের নিয়ে জিপ এগিয়ে যায়। পাহাড়ি পথের বাঁক খুবই রোমাঞ্চকর। যতদূর চোখ যায়, শুধু মেঘের ভেলা, ঘন সবুজ পাহাড়ে আছড়ে পড়ে যেন আপন মনে লুটোপুটি খাচ্ছে। বেশ কয়েকটি আর্মি চেক পোস্ট পার হয়ে ঘণ্টা খানেকের মধ্যেই নন্দরাম গ্রামে এসে হাজির হই। বাজার থেকে আরও দুজন গাইড নিয়ে এবার সুশৃংখলভাবে ট্র্যাকিং শুরু। এত সময় যে পাহাড় সারি ছিল দৃষ্টির সীমানায়, সেই দিগন্ত ছোঁয়া পাহাড়ের ওপর দিয়ে হাঁটছি। চারপাশে চমৎকার আর দীর্ঘদিন মনে রাখার মতো সব প্রাকৃতিক দৃশ্য! কখনও ওপরে কখনও নিচে, কখনও বা আবার ঝুম ঘরে কিংবা আকাশছোঁয়া গাছের ছায়ায় বসে খানিকটা সময় জিবিয়ে নিয়ে দে-ছুট বাহিনী সিজুকের পথে এগিয়ে যায়। দীর্ঘপথ পরিক্রমায় মোস্তাকের চাটনির মতো চুটকি [কৌতুক], আর ঝুমের ফরমালিনমুক্ত মারফা, বাঙ্গি দেহমনের শক্তি জুগিয়েছে। প্রায় আড়াই ঘণ্টা হাঁটার পর সিজুক জলপ্রপাতের প্রথমটির দেখা পাই। বাহ্ কি সুন্দর! বিশাল গাছের নিচে পাহাড়ের ফাঁক গলে অবিরাম পানি ধারা বইছে। চারপাশ নিশ্চুপ। ঝরনার রিমঝিম শব্দে বন্ধুরা উদ্বেলিত। সবাই গা ভেজাতে চায়, আমি বারণ করি, কারণ আমাদের জন্য রয়েছে প্রকৃতির আরেক বিস্ময়। আরও প্রায় এক ঘণ্টা হাইকিং-ট্র্যাকিং করার পর সিজুক ঝরনা থেকে সৃষ্ট ঝিরির দেখা পাই। আশ্বর্য! অন্যান্য ঝিরি পথের চেয়ে এ পথটা যেন খুব বেশি রোমাঞ্চকর। লতাগুল্ম পানিতে আছড়ে পড়েছে। প্রয়োজনীয় রসদ কাঁধে-মাথায় নিয়ে নেমে পরি অজানা ঘোলা জলে। পানির নিচে কর্দমাক্ত, হাঁটুু-কোমর পানিতে কোথাওবা পা প্রায় ১র্০র্ থেকে ১র্৫র্ পর্যন্ত দেবে যায়। ভয় পাই পুরো দেহ না আবার দেবে যায়। তবে সঙ্গে মোতাহের থাকায় সাহস হারাই না। ঝিরির পানিকে অজপাড়া গাঁয়ের পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া খাল ভেবে নতুন বন্ধুরা আনন্দে মেতে উঠে আর প্যাচ প্যাচে কাদায় জসিমের পা আটকে যাওয়ার পর ওরা সাভাইরা নৃত্য শাহরুখ-দীপিকার লুঙ্গি ড্যান্সকেও হার মানায়। ৩০ মিনিট হাঁটার পর সিজুক জলপ্রপাত (২)-এর দেখা পাই। ওয়াও! সিজুক সত্যিই তুমি রূপের পসরা সাজিয়ে রেখেছ এ গহিন বন-জঙ্গল ঘেরা পাহাড়ে! প্রায় ৭০ ফিট ওপর থেকে পানির ধারা গড়িয়ে পড়ছে পাহাড়ের পাদদেশে। ঝরনার পানির প্রবল চাপে চমৎকার বেসিন সৃষ্টি হয়েছে। দীর্ঘ সময় সাঁতার কাটলেও মন ভরবে না, সে এক অপার্থিব সুখ। সুনসান নীরবতা খান খান করে দিচ্ছে ঝরনার রিমঝিম শব্দ। শিকারি জোঁক পালিয়েছে আমাদের উদ্দীপনার কাছে হার মেনে। আনন্দের জোয়ারে নির্ভয়ে, কাঁধের বোচকা রেখে সবাই নেমে যাই অবগাহনে। দীর্ঘক্ষণ জলকেলিতে মেতে থাকি। এরই মধ্যে দে-ছুটের নতুন বন্ধু আলুর দেশের মুন্সীগঞ্জ ভদ্র মহাশয় নুডুলস রেঁধে মহাকাব্য রচনা করে ফেলেছেন। গভীর জঙ্গলে মায়াবী প্রকৃতি দিয়ে ঘেরা ঝরনার পাশে কলাপাতায় নুডুলস খাওয়া, আহ্ কি পরম স্বাদ! মনে থাকবে বহুদিন। এবার ফেরার পালা, শুধু ওপর দিকে উঠতে হবে। বারবার ফিরে তাকাই আর আপন মনে বিড় বিড় করে বলি, প্রকৃতি তুমি কত সুন্দর করে সাজিয়েছ আমাদের দেশটাকে, অথচ বিনিময়ে তোমাকে দিচ্ছি বুল ডোজারের আঘাত। দে-ছুট ভ্রমণ সংঘকে সিজুক ভ্রমণে বিভিন্ন পরামর্শ দিয়ে সহযোগিতা করার জন্য দীঘিনালার সামির, ঢাকার মনা ও চাঁদপুরের আবু বক্করকে কৃতজ্ঞতা জানাই। কীভাবে যাবেন সিজুক ঝরনার অবস্থান রাঙ্গামাটি জেলায় হলেও খাগড়াছড়ি দিয়ে যাতায়াতে সুবিধা বেশি। ঢাকা থেকে বিভিন্ন পরিবহনের বাস খাগড়াছড়ি যায়, তবে শান্তি পরিবহনে দীঘিনালা পর্যন্ত যেতে পারবেন। থাকার মতো বেশ কয়েকটি আবাসিক হোটেল আছে, এর মধ্যে দীঘিনালা গেস্ট হাউসের মান তুলনামূলক ভালো। দীঘিনালা থেকে নন্দরাম চাঁদের গাড়ি রিজার্ভ যাওয়া-আসা ভাড়া নেবে ৩ হাজার থেকে ৩ হাজার ২০০ টাকা। গেস্ট হাউসে রুমভাড়া কাপল বেড ৬০০ টাকা, গাইড বাবদ খরচ হবে ১ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার টাকা। ঢাকা থেকে নন-এসি পরিবহনে দীঘিনালা পর্যন্ত ভাড়া ৫৮০ টাকা। টিপস সিজুক জলপ্রপাতে এখনও পর্যটকদের পদচারণা খুব বেশি হয়নি। সুতরাং ভ্রমণকালীন দলবদ্ধ থাকুন। পর্যাপ্ত পরিমাণ শুকনো খাবার এবং পানি, টর্চ, মশা ও জোঁক প্রতিরোধের ক্রিম এবং শক্ত লাঠি রাখুন। আদিবাসীদের সঙ্গে বিনয়ের সঙ্গে কথা বলুন। ১০নং আর্মি ক্যাম্পে নাম-ঠিকানা খাতায় লেখার সময় সঙ্গে থাকা গাইডের সঙ্গে কথা বলে নিন। প্রয়োজনে দায়িত্বরত আর্মি অফিসারদের সঙ্গে গাইডকে দিয়ে কথা সেরে নিন।
Posted on: Wed, 05 Nov 2014 09:55:39 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015