কোটা যখন মোটা - TopicsExpress



          

কোটা যখন মোটা ইস্যু! সরকারি চাকরি পাওয়ার ক্ষেত্রে ‘কোটা পদ্ধতি’ বাতিল করার দাবি করতে করতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন। ফেনা তোলার অধিকার আপনাদের আছে। কিন্তু, মুখ দিয়ে যখন ফেনার বদলে বিষ বের হওয়া শুরু হয়, তখন আমরা আর মুখ না খুলে পারি না। কোটা পদ্ধতি বাতিল করার দাবি জানাতে গিয়ে অনেকেই প্রশ্ন তুলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধ কি অভিশাপ?’ কারা এ সব প্রশ্ন তোলার স্পর্ধা দেখাচ্ছেন, তা খতিয়ে দেখা উচিত। এই তথাকথিত আন্দোলনে যারা ইন্ধন দিচ্ছেন, তাদের অনেককেই ইতোমধ্যে চিহ্নিত করা গেছে। ইন্ধনদাতাদের মধ্যে অনেকেই ‘আল্লামা সাঈদী মুক্তি পরিষদ’ ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের সক্রিয় সদস্য। পত্রিকায় সংবাদ বেরিয়েছে, ১১ জুলাই শাহবাগে গাড়ি-ভাঙচুর ও ককটেল বিস্ফোরণ, তাণ্ডবলীলায় ৩৪তম বিসিএস পরীক্ষার্থীদের পাশে ছিল শিবির ও ছাত্রদলের অসংখ্য নেতাকর্মী। যারা মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করেন, তারা সরকারি চাকরি তো দূরের কথা, বেসরকারি চাকরি করারও অধিকার রাখেন না। আর সরকারি চাকরি করে এই চার দশকে কে কয়টা তীর মেরেছেন, কারা দেশের মুখ উজ্জ্বল করেছেন, তা সবার জানা আছে। বুকে হাত দিয়ে বলুন, আপনি সরকারি চাকরি কেন চান? আমি হলফ করে বলতে পারি, উত্তর দিতে গিয়ে বেশিরভাগ প্রার্থীরই বুক কাঁপবে। কতটা দেশপ্রেম আর কতটা হীন লক্ষ্য থেকে সরকারি চাকরিকে সোনার হরিণ মনে করা হয়, তা সর্বজনবিদিত। যারা শাহবাগে দাঁড়িয়ে গর্জন করছেন, যারা গণজারণ মঞ্চের অনুকরণে শাহবাগের নাম ‘মেধা চত্বর’ করতে উঠে-পড়ে লেগেছেন, তাদের বা তাদের নিকট-আত্মীয় প্রতিবন্ধী হলে অথবা তারা মুক্তিযোদ্ধার সন্তান হলে ওই মোড়ের আশপাশেও থাকতেন না। আকস্মিকভাবেই গত ১০ জুলাই পরীক্ষার্থীরা আন্দোলন শুরু করেন। শাহবাগের রাস্তায় নেমেই সড়ক অবরোধ কর্মসূচি। কোনো আল্টিমেটাম নেই, নেই কোনো স্মারকলিপি! কোটাপ্রথা হঠাৎ করেই আকাশ থেকে পড়েনি। এতদিন আন্দোলন কোথায় ছিল? কোটাপ্রথাকে ইস্যু করা হচ্ছে। কিন্তু, প্রশ্নপত্র ফাঁস ও প্রশ্নপত্র বাণিজ্য নিয়ে কোনো কথা নেই; নেই কোনো আন্দোলন! কোটাপ্রথার সংস্কার অত্যন্ত জরুরি। কোটা যাতে যথার্থভাবে এবং নিয়ম অনুযায়ী পূরণ করা হয়, সে জন্য পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। কোটাকে রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নমুক্ত রাখতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া আবশ্যক। কিন্তু, কোথাও এ সব বুদ্ধিবৃত্তিক ও তাত্ত্বিক আলোচনা নেই। আসলে কোটাকে ইস্যু করে রাজনৈতিক ফায়দা নিতে চাইছে একটি প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠী। এই গোষ্ঠী নিঃসন্দেহে মুক্তিযুদ্ধ ও নারী স্বাধীনতার বিরোধী। তাদের এজেন্ডা কোটা নয়, তাদের নিশানা ‘মুক্তিযোদ্ধা’ ও ‘নারী কোটা’। সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে গোষ্ঠীটি সাধারণ পরীক্ষার্থীদের মগজ ধোলাই করছে। এই ইস্যুকে সামনে রেখে একটি জাতীয় সংকট তৈরির পাঁয়তারা চলছে। সরকারকে সতর্ক অবস্থান নিতে হবে। খতিয়ে দেখতে হবে, যারা হেফাজতে ইসলামকে দিয়ে দেশটিকে একটি মহাসংকটের মধ্যে ঠেলে দেওয়ার চেষ্টা চালিয়েছিল, তারাই নতুন ইস্যুর মধ্য দিয়ে সংকট তৈরির ষড়যন্ত্র করছে কিনা। আমি মনে করি, কেউ কেউ এই পরীক্ষার্থীদের ভোটব্যাংক হিসেবে ব্যবহারের চেষ্টা করবে। তাদের আশ্বাস দেওয়া হবে, আমি বা অমুক ক্ষমতায় গেলে কোটাপ্রথা বাতিল করা হবে। আশা করি, আত্মকেন্দ্রিক না হয়ে সাধারণ তরুণ-তরুণীরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে অনুধাবন করবেন। আন্দোলনের অনেকেই নারী। কোটা বাতিলের দাবি জানানো মানে, মুক্তিযোদ্ধা কোটার পাশাপাশি নারী কোটাও বাদ দিতে হবে। সুতরাং আন্দোলনরত সাধারণ পরীক্ষার্থীদের নতুন করে ভাবতে হবে। বলার সময় শুধু নিজেরটা বলা আর যুক্তি প্রয়োগের সময় সমতাভিত্তিক সমাজের ভাবনা উপস্থাপন করা, এ দুটো পরস্পর বিরোধী। কোটা পদ্ধতি বাতিল করা কি সমতার লক্ষণ? নাকি সামাজিক সমতা নিশ্চিত করতেই কোটা পদ্ধতির প্রয়োজন, ভাবুন! নিজেকে প্রশ্ন করুন, যুক্তরাষ্ট্র ও অস্ট্রেলিয়ার মতো ধনী দেশেও কোটা পদ্ধতির কী প্রয়োজন? অনেক বুদ্ধি ব্যবসায়ী বলছেন, জাতির অনগ্রসর নাগরিকদের জন্য কোটা থাকতে পারে। কিন্তু, মুক্তিযোদ্ধারা বা তাদের সন্তানরা যেহেতু অনগ্রসর নয়, সেহেতু তাদের জন্য কোটা রাখা ‘অযৌক্তিক’ ও ‘অবৈধ’। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু সপরিবারে নিহত হওয়ার পর টানা প্রায় ২০ বছর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের কোনো শক্তি এই দেশের রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসতে পারেনি। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসে। আবার ২০০১ থেকে ২০০৬ পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত সরকার ক্ষমতা ভোগ করে। অর্থাৎ স্বাধীনতার পর থেকে মাত্র সাড়ে নয় বছর মুক্তিযুদ্ধের সপক্ষের শক্তি ক্ষমতায় ছিল। বাকি তিন দশকেরও বেশি সময় মুক্তিযোদ্ধারা ছিলেন অবহেলিত, সুবিধাবঞ্চিত ও নির্যাতিত। সেই মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের পরিবার অনগ্রসর নয়? ওই বুদ্ধি ব্যবসায়ীরাও ভালো করে জানেন, মুক্তিযোদ্ধা এবং তাদের সন্তানরা শুধু অনগ্রসরই নন, রীতিমতো তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যের বিষয় ছিলেন। আবার অনেক জ্ঞাপাপী এও বলেন যে, এ ধরনের কোটা নাকি সংবিধান বিরোধী। তারা সংবিধানের ‘২৯ (১)’ ও ‘২৯ (২)’ অনুচ্ছেদের দোহাই দেন। যেখানে বলা আছে, “প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ-লাভের ক্ষেত্রে সকল নাগরিকের জন্য সুযোগের সমতা থাকিবে”এবং “কেবল ধর্ম, গোষ্ঠী, বর্ণ, নারী-পুরুষভেদ বা জন্মস্থানের কারণে কোনো নাগরিক প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিয়োগ বা পদ লাভের অযোগ্য হইবেন না কিংবা সেই ক্ষেত্রে তাঁহার প্রতি বৈষম্য প্রদর্শন করা যাইবে না।”কিন্তু তারা ‘২৮ (৪)’ এবং ‘২৯ (৩)’ ধারা সচেতনভাবে চেপে যান। ‘২৮ (৪)’-এ স্পষ্টভাবে বলা আছে. “নারী বা শিশুদের অনুকূলে কিংবা নাগরিকদের যে কোনো অনগ্রসর অংশের অগ্রগতির জন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন হইতে এই অনুচ্ছেদের কোনো কিছুই রাষ্ট্রকে নিবৃত্ত করিবে না।” কোটা রাষ্ট্র কর্তৃক গৃহীত বিশেষ বিধান। সুতরাং, কোটা বাতিলের দাবি জানানোই সংবিধান পরিপন্থি। এ সব জেনেও বড় বড় বুদ্ধি ব্যবসায়ী মিথ্যা তথ্য বিলি করে বেড়াচ্ছেন। তাই, আবারও বলতে হয়- ‘বেশ্যাকে তবু বিশ্বাস করা চলে বুদ্ধিজীবীর রক্তে স্নায়ুতে সচেতন অপরাধ জাতির তরুণ রক্তে পুষেছে নিবীর্যের সাপ’ যারা কোটাপ্রথা প্রধানত ‘মুক্তিযোদ্ধা’ ও ‘নারী কোটা’ বাতিলের দাবি জানাচ্ছেন, তাদের বেশির ভাগই সরকারি চাকরির জন্য লাখ লাখ ঘুষ দিতে রাজি আছেন। পরীক্ষার আগে ব্ল্যাঙ্ক চেকে প্রশ্নপত্র কিনতে রাজি আছেন। কিন্তু, মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কোটা দিতে রাজি নন। যে স্বাধীন দেশের সরকারি প্রশাসনে তারা চাকরি করতে মরিয়া, সেই দেশ গড়লো যারা, তাদের একটি রাষ্ট্রীয় সুবিধা দিতে এত বাধে! এই সংকীর্ণ মানসিকতার ‘মেধাবী দিয়ে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক জাতি কী করবে? সুদীপ্ত সালাম- ফটোসাংবাদিক ও লেখক লিঙ্কঃ banglanews24/detailsnews.php?nssl=0d0fea3013170fee5cc8632b64ea950f&nttl=13072013210298
Posted on: Sat, 13 Jul 2013 12:49:30 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015