চার মযহাবের মূল্যায়ন: - TopicsExpress



          

চার মযহাবের মূল্যায়ন: লা-মযহাবী ফিতনা (১৫তম পর্ব) [Dr Abdal-Hakim Murads online article Understanding the Four Madhhabs: The problem with anti-madhhabism - 15th episode] মূল: ড: আবদুল হাকিম মুরাদ (যুক্তরাজ্য) অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন এই সব (ভিন্ন চিন্তাধারার) লোকেরা পশ্চিমা বিশ্বের সাফল্যে চোখ ধেঁধে গিয়ে এবং ফ্রী-ম্যাসন তথা ইসলামের অন্তর্ঘাতী গোষ্ঠীর প্রতি নিজস্ব দলিল-প্রমাণভিত্তিক অঙ্গীকারবদ্ধতা দ্বারা সূক্ষ্ম পন্থায় (পরিস্থিতি সম্পর্কে) অবহিত হয়ে মুসলমানদেরকে ‘তাকলিদ’ (মযহাব অনুসরণ) বর্জন ও চার মযহাবের কর্তৃত্ব প্রত্যাখ্যান করার তাকিদ দিয়েছিল। আজকে কিছু কিছু আরব দেশের রাজধানীতে, বিশেষ করে যেখানে আদি ঐতিহ্যবাহী সুন্নী মতাদর্শভিত্তিক জ্ঞানচর্চা দুর্বল হয়ে পড়েছে, সে সব স্থানে সাধারণতঃ দেখা যায় আরবীয় তরুণরা হাদীসের সমস্ত সংকলন সংগ্রহ করে বাসায় নিয়ে আসছে এবং স্পষ্টতঃ সেগুলো পড়ছে এই ধারণা নিয়ে যে ইমাম শাফেয়ী (রহ:), ইমাম আহমদ (রহ:) ও অন্যান্য ইমামদের চেয়ে এই বিশাল ও জটিল হাদীসশাস্ত্র অপব্যাখ্যা করার সম্ভাবনা তাদের ক্ষেত্রে অনেক কম। যদিও এই দায়িত্বজ্ঞানহীন মনোভাব এখনো সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে নি, তবুও এ কথা সহজে বোধগম্য যে তা (মূল ইসলামে) ভিন্ন চিন্তাধারা প্রবেশের দ্বার উম্মুক্ত করেছে, যা ইসলাম ধর্মের ঐক্য, বিশ্বাসযোগ্যতা ও কার্যকারিতার মারাত্মক ক্ষতি সাধন করেছে; উপরন্তু তা সহস্রাধিক বছর আগে মহান ইমামবৃন্দের দ্বারা মীমাংসিত বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কেও তর্ক-বিতর্কের সূত্রপাত করেছে। বর্তমানে এ দৃশ্য সাধারণতঃ দেখা যায়, তরুণ (লা-মযহাবী) কর্মীরা বিভিন্ন মসজিদে হানা দিয়ে নিজেদের ধারণামতে অন্যান্য মুসুল্লীদের এবাদত-বন্দেগীতে কৃত ‘ভুল-ত্রুটির’ তীব্র সমালোচনা করছে, যদিও এই ক্ষেত্রে আক্রান্ত মুসুল্লীবর্গ ইসলামের মহান ইমামবৃন্দের কয়েকজনের ফয়সালা-ই অনুসরণ করছেন। এই অপ্রীতিকর পরিবেশ ও ভণ্ডামিপূর্ণ আচরণের ফলে অনেক সাধারণ মুসলমান মসজিদে যেতে একেবারেই নিরুৎসাহিত বোধ করবেন। কেউই আর এখন সামনে তুলে ধরে না প্রাথমিক যুগের উলামাবৃন্দের মতামত, যা ব্যক্ত করে যে মুসলমানগণ সুন্নাহের ভিন্ন ভিন্ন ব্যাখ্যার প্রতি ততোক্ষণ-ই সহিষ্ণু হতে পারবেন যতোক্ষণ তা প্রসিদ্ধ ইসলামী জ্ঞান বিশারদগণ কর্তৃক সমর্থিত হবে। এ প্রসঙ্গে হযরত সুফিয়ান সাওরী (রহ:) বলেন, “যদি তোমরা কাউকে দেখতে পাও এমন কোনো কাজ করছে যা নিয়ে উলামা-এ-কেরামের মধ্যে মতপার্থক্য বিরাজমান, আর তোমরাও বিশ্বাস করো যে তা নিষিদ্ধ, তবে তাকে ওই কাজে নিষেধ করবে না।” এই নীতির বিকল্প পন্থা অবশ্যই অনৈক্য ও ফিতনা-ফাসাদের জন্ম দেবে, যা মুসলমান সমাজকে ভেতর থেকে ধ্বংস করবে। পশ্চিমা দেশগুলোর প্রভাবিত বৈশ্বিক সংস্কৃতিতে, যেখানে শৈশবকালের শুরুতেই মানুষদেরকে নিজেদের ব্যাপারে চিন্তা করার ও প্রতিষ্ঠিত ব্যবস্থাকে চ্যালেন্জ করার জন্যে তাকিদ দেয়া হয়, সেখানে নিজের সীমাবদ্ধতা স্বীকার করার মতো পর্যাপ্ত বিনয় প্রদর্শন করাও কখনো কখনো দুষ্কর হয়ে দাঁড়ায়। আমরা সবাই কিছুটুকু ফেরাউনেরই মতো; প্রকৃতিগতভাবে আমাদের অহংবোধ এই ধারণার বশবর্তী যে, আমাদের চেয়ে বেশি বুদ্ধিমান বা জ্ঞানী আর কেউই হতে পারে না। সাধারণ মুসলমানগণ, এমন কি তাঁরা আরবী জানলেও, সরাসরি নিজে নিজে তাঁদের শরয়ী আইন-কানুন বের করার যোগ্যতাসম্পন্ন হওয়ার ধারণাটি ইমামবৃন্দের চেয়ে নিজেদেরকে শ্রেষ্ঠ বিবেচনার-ই লাগামহীন বহিঃপ্রকাশ। নিজেদের বিচার-বুদ্ধির ব্যাপারে গর্বিত তরুণ প্রজন্ম, যারা শরয়ী জ্ঞানের উৎসের জটিল বিষয়গুলোর সাথে এবং প্রকৃত পাণ্ডিত্যের শেষ্ঠত্বের সাথে পরিচিত নয়, তাদের জন্যে পাতা এটি একটি কার্যকর ফাঁদবিশেষ, যা তাদেরকে সুন্নী মতাদর্শভিত্তিক ইসলামের পথ থেকে সরিয়ে নিয়ে মুসলমানদের মধ্যে গভীর বিভক্তি উস্কে দেয়ার অনিচ্ছাকৃত পরিকল্পনাকারীতে পরিণত করবে। ইসলাম ধর্মের মুহাদ্দীসবৃন্দসহ সকল মহান আলেম-উলেমা যে চার মযহাবের অন্তর্গত ছিলেন, আর তাঁদের শিষ্যদের জন্যেও চার মযহাবের অনুসরণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করেছিলেন, এই বাস্তবতা মনে হয় বিস্মৃত হয়েছে। সাধারণ উপলব্ধি-জ্ঞান (common sense) ও ইসলামের প্রতি দায়িত্বের চেয়ে নিজের সম্পর্কে উত্তম ধারণাকে এখানে অধিক প্রাধান্য দেয়া হয়েছে। (চলবে)
Posted on: Sat, 08 Mar 2014 15:15:12 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015