জাকির নায়েকের মিথ্যাচার: - TopicsExpress



          

জাকির নায়েকের মিথ্যাচার: প্রসঙ্গ ‘বিবর্তন’ লিখেছেন: শিক্ষানবিস অনেক দিন ধরেই শুনছি, ইসলামের আকাশে ধূমকেতুর মত এক মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটেছে। তার নাম জাকির নায়েক। আমি ভার্সিটিতে বেশ কয়েকজনকে বোঝানোর চেষ্টা করেছি, “দেখ, জাকির নায়েক আসলে সাধারণ মানুষের স্বল্প জ্ঞানকে পুঁজি করে, সত্যকে মিথ্যা আর মিথ্যাকে সত্য হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করে।” কেউ মেনে নিল না। বলল, “অন্য কারও সম্পর্কে যা ইচ্ছা তাই বল, কিন্তু জাকির নায়েক সম্পর্কে কিছু বলার আগে “you better prepare yourself.” রীতিমত ভয় পেয়ে যাওয়ার মত কথা। কথাটার মধ্যে একটু সত্যতা আছে। জাকির নায়েকের ভণ্ডামি বুঝতে হলে সাধারণ মানুষের চেয়ে সামান্য বেশী জ্ঞান প্রয়োজন, কিন্তু খুব বেশী প্রিপারেশনের একেবারেই দরকার নেই। দ্বিজেন শর্মা ও বন্যা আহমেদের বই, এবং ইন্টারনেটে বিবর্তন বিষয়ক প্রচুর তথ্যের বদৌলতে আমি এ সম্পর্কে কিছুটা হলেও জানি। অন্তত এটুকু জানি যে, বিংশ শতকের প্রথমার্ধের মধ্যেই বিবর্তনবাদ একটি পরিপূর্ণ তত্ত্বের মর্যাদা পেয়েছে এবং এ নিয়ে বর্তমানে জীববিজ্ঞানীদের মধ্যে কোন সংশয় নেই। গ্যালিলিওর পড়ন্ত বস্তুর সূত্র যতটা সত্য বিবর্তনবাদও ঠিক ততটাই সত্য। কিন্তু, ইদানিং লোকমুখে শুনছি, জাকির নায়েক নাকি এই জাজ্জ্বল্যমান সত্যকে মিথ্যা বলেছেন, শুধু বলেই ক্ষান্ত হননি, সাধারণ মানুষের কাছে এটাকে মিথ্যা হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করার মিশনে নেমেছেন। এ কারণেই তার এই মিশনটা সম্পর্কে জানার আগ্রহ হল। তেমন কোন প্রিপারেশন ছাড়াই জাকির নায়েকের প্রশ্নোত্তর পর্বের একটা ভিডিও দেখতে বসে গেলাম। এক পর্যায়ে একজন মহিলা বিবর্তন নিয়ে প্রশ্ন করলেন। তার প্রশ্নটা ছিল এরকম: ডারউইনের বিবর্তনবাদ বলে, প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে মানুষ অন্য প্রজাতি থেকে বিবর্তিত হয়েছে। কিন্তু এটা তো ইসলামের মৌলিক শিক্ষার পরিপন্থী। এটাকে কিভাবে ব্যাখ্যা করবেন? প্রশ্ন শুনে জাকির নায়েক বীরের ভঙ্গিতে অর্থাৎ খুব কনফিডেন্স নিয়ে মাইক্রোফোনের সামনে এসে দাড়ালেন। শুরু হল তার কনফিডেন্ট মিথ্যাচার। আমি অবাক হয়েছি, বিস্মিত হয়েছি- একজন মানুষ কিভাবে এত কনফিডেন্টের সাথে মিথ্যা কথা বলতে পারে!? এ কোন যুগে বাস করছি আমরা? যেখানে মিলনায়তন ভর্তি মানুষের মধ্যে একজনও এই মিথ্যাগুলো ধরিয়ে দেয়ার মত জ্ঞান ও সাহস রাখে না। এতে অবশ্য আমি ঐ অনুষ্ঠানের শ্রোতাদের স্ট্যান্ডার্ড খুব ভালভাবে বুঝে গেছি। বুঝেছি কারা জাকির নায়েকের ভিডিও শুনে এবং কারাই বা তার অনুষ্ঠান দেখতে অডিটোরিয়ামে যায়। এখন আমি নায়েকের ভুল এবং মিথ্যার যে ফিরিস্তি দেব তা পড়লে আপনারাও তা বুঝে যাবেন। প্রথমেই প্রশ্নোত্তর পর্বের ভিডিওর ইউটিউব লিংকটা দিচ্ছি। আগ্রহীরা দেখে নিতে পারেন: প্রায় ৭ মিনিটের বক্তৃতায় জাকির নায়েক ২৮টি মিথ্যা কথা বলেছেন। অনেকে ভুলও বলতে পারেন। কিন্তু আমি ভুল বলতে রাজি না। কারণ যে ব্যক্তি ভডভড করে কুরআন-বাইবেল-গীতার অমুক চ্যাপ্টারের অমুক ভার্স বলে যেতে পারেন তার পক্ষে এত সহজ ভুল করা সম্ভব- এটা আমি মানতে পারব না। অবশ্য, আরেকটা যুক্তিতে এগুলোকে ভুল বলা যায়: তিনি বিবর্তনবাদ বোঝেন না এবং এ নিয়ে মূলধারার কোন লেখাই পড়েননি। এটা হলে ঠিক আছে। যাহোক, আমি প্রথমেই এক এক করে নায়েকের মিথ্যা/ভুলগুলো ধরিয়ে দিচ্ছি: (নায়েকের বক্তৃতার ট্রান্সক্রিপ্ট থেকে হুবহু উদ্ধৃতি দেয়া হবে। ইংরেজি ক্যাপিটাল অক্ষরের লেখাগুলোই জাকির নায়েকের বলা। উল্লেখ্য ট্রান্সক্রিপ্টটা নেয়া হয়েছে ইসলাম.কম এ THHuxley-র একটি লেখা থেকে। এই লেখার অনেক কিছু এখানে হুবহু অনুবাদ করা হয়েছে। সেই ট্রান্সক্রিপ্টের সাথে আবার নায়েকের কথাগুলোকে মিলিয়ে দেখা হয়েছে। এই ইংরেজি লেখার লিংক নিচের রেফারেন্স অংশে যুক্ত আছে।) ’THE ORIGIN OF SPECIES’ – IT SAYS THAT… “CHARLES DARWIN WENT ON AN ISLAND BY THE NAME OF ‘Calotropis’ ON A SHIP NAMED AS ‘HMS BEAGEL AND THERE HE FOUND BIRDS PECKING AT NICHES.’ ০১। প্রথমেই তিনি ভাব নিয়ে বলেছেন, “আপনারা যদি ডারউইনের “অরিজিন অফ স্পিসিস” বই পড়ে থাকেন তাহলে দেখবেন সেখানে বলা আছে…” – তার মানে উনি এই বইটা পড়েছেন। কেমন পড়েছেন সেটা তার মুখ থেকেই শোনা যাক: অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি, Calotropis নামে পৃথিবীতে কোন দ্বীপ নেই, উদ্ভিদের একটা গণের (genus) নাম calotropis. নায়েক সম্ভবত এখানে বিখ্যাত “গালাপাগোস” দ্বীপ বোঝাতে চেয়েছেন। আমি ডারউইনের “অরিজিন অফ স্পিসিস” পড়িনি, কিন্তু গালাপাগোস দ্বীপের নাম ঠিকই জানি। এটা সাধারণ জ্ঞান। ০২। “পেক অ্যাট নিচেস” বলতে তিনি কি বোঝাতে চেয়েছেন তা এখনও বুঝতে পারলাম না। পেক শব্দের অর্থ তো ঠোঁকর দেয়া। আর এখানে “ইকোলজিক্যাল নিচ” তথা বাস্তুতান্ত্রিক পরিবেশ বোঝানো হচ্ছে। পরিবেশকে কিভাবে ঠোকর দেয়া যায় এটা জাকির নায়েকের সাথে দেখা হলে শিখে নেব। তবে আপাতত আমার মনে হচ্ছে এখানে, pecking এর বদলে living হবে। অর্থাৎ পাখিরা বাস্তুতান্ত্রিক পরিবেশে বাস করে। নার্ভাসনেসের কারণেই কি তার মুখ দিয়ে এসব আবোল তাবোল কথা বেরিয়ে এসেছে। তিনি সম্ভবত এরকম কিছু একটা বলতে চেয়েছিলেন: Darwin did spend several years sailing around the entire world as ship’s naturalist in the HMS Beagle. One of his stops were the Galapagos Islands, where he found a number of finches (birds) that LIVED (not “pecked”) in different ecological niches. একি মিথ্যাচার! নাকি ইন্টারনেটের কোন অপবিজ্ঞান ও অন্ধ-ইসলামের প্রচারক সাইট থেকে মুখস্থ করা অংশটুকু হঠাৎ ভুলে গিয়েছিলেন! “DEPENDING UPON THE ECOLOGICAL NICHES THEY PECK, THE BEAKS KEPT ON BECOMING LONG AND SHORT. THIS OBSERVATION WAS MADE IN THE SAME SPECIES – NOT IN DIFFERENT SPECIES” ০৩। একে তো উনি দ্বীপ এবং পাখির নাম কোনটাই বলতে পারেননি, তার উপর পর্যবেক্ষণ করা পাখিগুলোকে একই প্রজাতির বলে আখ্যায়িত করেছেন। উনি এখানে গালাপাগোস দ্বীপের ফিঞ্চ পাখির কথাই বোঝাতে চেয়েছেন, এতে কোন সন্দেহ নেই। কিন্তু দুঃখের বিষয়, গালাপাগোস দ্বীপে ডারউইন ফিঞ্চ পাখির ১৪ টি ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতি পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। একটু গভীরে গেলে নায়েকের অজ্ঞতা আরও প্রকাশ পাবে। দ্বীপে পাখিগুলো দেখার সময় ডারউইন বুঝতে পারেননি যে, এগুলো একই পাখির ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতি, সেটা বোঝার কোন উপায়ও ছিল না। সবগুলো নমুনা লন্ডনে ফিরিয়ে আনার পরই একজন পেশাদার পক্ষী বিশারদের সহায়তায় তিনি ভিন্ন প্রজাতির বিষয়টি বুঝতে পেরেছিলেন। নায়েক এখানে আরও একটি ভুল করেছেন, একই প্রজাতির মধ্যে beak তথা ঠোঁটের দৈর্ঘ্যের পার্থক্য গণনার মধ্যেই আসে না। এই পার্থক্যটা কেবল ভিন্ন ভিন্ন প্রজাতির ক্ষেত্রেই আসে। একই প্রজাতির ফিঞ্চ পাখির একটার ঠোঁট ছোট আর অন্যটার বড় কেন- ডারউইন নাকি এই পর্যবেক্ষণ করেছিলেন। এসব শুনলে ডারউইন নির্ঘাত স্ট্রোক করে বসতেন। ০৪। ভিন্ন প্রজাতির বিষয়টা তো গেল। এবার পার্থক্যের কথায় আসা যাক। প্রজাতিগুলোর মধ্যে ঠোঁটের দৈর্ঘ্য ছাড়াও আরও অনেক পার্থক্য ছিল: রং, দেহের আকার, সঙ্গীর সাথে ব্যবহার, গান এবং খাদ্যাভ্যাস। এগুলো এতই পৃথক ছিল যে ডারউইন দ্বীপে থাকার সময় বুঝতেই পারেননি, এরা সবাই ফিঞ্চ পাখি। CHARLES DARWIN WROTE A LETTER TO HIS FRIEND THOMAS THOMTAN, IN 1861 SAYING ‘I DO NOT BELIEVE IN ‘NATURAL SELECTION’- THE WORD THAT YOU USE – I DON’T BELIEVE IN ‘THEORY OF EVOLUTION’ BECAUSE I HAVEN’T GOT ANY PROOF. I ONLY BELIEVE IN IT BECAUSE IT HELPS ME IN CLASSIFICATION OF EMBRYOLOGY, IN MORPHOLOGY, IN RUDIMENTARY ORGANS’. ০৫। THOMAS THOMTAN? এই নামে গুগল সার্চ করে কাউকে পাওয়া গেল না। অবশেষে “The Correspondence of Charles Darwin” এর স্মরণাপন্ন হতে হল। ১৪ খণ্ডের এই জ্ঞানকোষে ১৮২১ থেকে ১৮৬৬ সাল পর্যন্ত ডারউনের সব লেখা স্থান পেয়েছে। চিঠি, ডায়রি, আত্মজীবনী সব ঘেটেও এই নামে কাউকে পাওয়া গেল না। তবে হ্যা, যিনি গালাপাগোসকে ক্যালাট্রপিস বলেছেন তার পক্ষে থমসনকে থমটেন বলাও বেশ স্বাভাবিক। তাই থমসন নামে সার্চ করা হল। হ্যা টমাস থমসন (১৮১৭-৭৮) নামে সে সময়ের একজনকে পাওয়া গেছে। ডারউইন কখনই থমসনকে চিঠি লিখেননি। কিন্তু থমসন ডারউইনকে একটি চিঠি লিখেছিলেন যা হারিয়ে গেছে। এই হারিয়ে যাওয়া চিঠি সম্পর্কে আমরা জানি কারণ, জোসেফ ডাল্টন হুকার ডারউইনের কাছে লেখা এক চিঠিতে থমসনের এই চিঠির কথা উল্লেখ করেছিলেন। অর্থাৎ ডারউইন ও হুকার পরস্পরকে যেসব চিঠি লিখেছেন কেবল সেগুলোতেই থমসনের নাম এসেছে। ০৬। নায়েক বলেছেন ডারউইনের এই চিঠি ১৮৬১ সালে লেখা, অর্থাৎ তার অরিজিন অফ স্পিসিস প্রকাশের (১৮৫৯) দুই বছর পর। এখানেও কন্ট্রাডিকশন এসে যাচ্ছে। ডারউইন তার বই প্রকাশের দুই বছর পর কখনই বলতে পারেন না যে, “I haven’t got any proof.” কারণ তার বই এই প্রমাণ জোগাড়ের কাজটাই করেছে। ১৮৩৯ সালে প্রাকৃতিক নির্বাচনের ধারণা তার মাথায় এসেছিল, ২০ বছর তিনি বই প্রকাশ করেননি কেবল প্রমাণ জোগাড়ের জন্যই। তিনি চাচ্ছিলেন প্রকাশের আগে সবকিছু সাজিয়ে নিতে যাতে বিষয়টা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়। এছাড়া এই বইয়ের মাধ্যমে তিনি “fact of evolution” তথা প্রাকৃতিক নির্বাচন ব্যাখ্যার জন্য একটি তত্ত্ব উপস্থাপন করেছিলেন। বই প্রকাশের পরই বিজ্ঞানীরা মেনে নিয়েছিলেন যে, প্রকৃতিতে বিবর্তন আসলেই ঘটেছে এবং ডারউইন তার বইয়ের মাধ্যমে সেটা দেখাতে সফল হয়েছেন। কিন্তু এই বিবর্তন ব্যাখ্যা করার জন্য তিনি যে তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন সেটা অধিকাংশ বিজ্ঞানীরাই সে সময় গ্রহণ করেননি। CHARLES DARWIN HIMSELF SAID THAT , THERE WERE MISSING LINKS. HE DID NOT AGREE WITH IT – HE HIMSELF SAID THAT THERE WERE MISSING LINKS. ০৭। সে সময় মিসিং লিংক অবশ্যই ছিল। কিন্তু সে কারণে ডারউইন তার বিবর্তনবাদ অস্বীকার করেননি। এ সম্বন্ধে কোন সন্দেহও পোষণ করেননি। এমনকি তিনি ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন যে, আফ্রিকায় মানুষের মিসিং লিংকগুলো পাওয়া যাবে। এবং আমরা জানি পরবর্তীতে আফ্রিকাতেই প্রাগৈতিহাসিক মানুষের জীবাশ্ম আবিষ্কৃত হয়েছে যেগুলো বিবর্তনবাদকে আরও জোড়ালো করেছে। THE REASON IS BECAUSE, THAT IF YOU ANALYSE, THE CHURCH… THE CHURCH WAS AGAINST SCIENCE PREVIOUSLY – AND YOU KNOW THE INCIDENCE THAT THEY SENTENCED GALILEO TO DEATH. ০৮। গ্যালিলিওকে চার্চ কখনই মৃত্যুদণ্ড দেয়নি। he was never sentenced to death. ১৬৩৩ সালের ২২শে জুন তাকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হয়েছিল। পরবর্তীতে তাকে শুধু গৃহবন্দী রাখা হয়। এরও অনেক পরে ১৬৪২ সালের ৮ই জানুয়ারি তিনি মৃত্যুবরণ করেন। THEY SENTENCED GALILEO TO DEATH – WHY? BECAUSE HE SAID CERTAIN STATEMENTS IN THE ASTRONOMY, ETC., WHICH WENT AGAINST THE BIBLE – SO THEY SENTENCED HIM TO DEATH , FOR WHICH THE POPE APOLOGIZED NOW. SO WHEN CHARLES DARWIN CAME UP WITH A THEORY WHICH GOES AGAINST THE BIBLE, THEY DID NOT… THEY DID NOT WANT ANY SUFFICIENT PROOF – AN ENEMY OF MY ENEMY IS MY FRIEND. SO ALL THE SCIENTISTS… MOST OF THEM – THEY SUPPORTED THE THEORY, BECAUSE IT WENT AGAINST THE BIBLE – NOT BECAUSE IT WAS TRUE. ০৯। ইতিমধ্যেই বলা হয়েছে, বইটি প্রকাশের পরপর কোন বিজ্ঞানীই বিবর্তন ব্যাখ্যার জন্য ডারউইনের তত্ত্বকে মেনে নেননি। এই বিজ্ঞানীদের অধিকাংশই ধার্মিক ছিলেন এবং চার্চকে ভুলেও নিজেদের শত্রু মনে করতেন না। কিন্তু প্রকৃতিতে যে বিবর্তন আসলেই ঘটেছে তা নিয়ে তাদের কোন সন্দেহ ছিল না। কারণ, অরিজিন অফ স্পিসিসে এর খুব ভাল প্রমাণ ছিল। প্রকৃতপক্ষে স্কুল-কলেজের পাঠ্যবইয়ে বিবর্তনবাদ পড়ানোর যে কারণ জাকির নায়েক বলেছেন তা সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত এবং বানোয়াট। ডারউইনের বই নিয়ে অনেক বিজ্ঞানী ও বিজ্ঞান লেখক রিভিউ করেছেন। আগেই বলেছি, তাদের অধিকাংশই সে সময় ধার্মিক ছিলেন। সুতরাং চার্চের বিরুদ্ধে যাচ্ছে এমন কিছু তারা কখনোই পাঠ্যপুস্তকে যোগ করতেন না। কিন্তু পরবর্তীতে তা পাঠ্যপুস্তকে যোগ করা হয়েছে, কারণ বিবর্তনবাদ নিয়ে আর কোন সন্দেহই অবশিষ্ট ছিল না। পাঠ্যপুস্তক থেকে বিবর্তনবাদ তুলে দেয়া আর নিউটনের মহাকর্ষ তত্ত্ব উঠিয়ে দেয়া একই কথা। দুটোর পক্ষেই এখন সমান প্রমাণ আছে। তাছাড়া আজ পর্যন্ত, এ ধরণের কন্সপাইরেসি থিওরির কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি। কারও কোন রিভিউ থেকে বোঝা যায়নি যে, তিনি চার্চের বিরোধীতা করার জন্য বিবর্তনবাদের সমর্থন করছেন। বরং উল্টোটাই সত্য বলা যায়। অর্থাৎ যথেষ্ট প্রমাণ থাকা সত্ত্বেও ষড়যন্ত্র করে পাঠ্যপুস্তক থেকে বিবর্তনবাদ তুলে দেয়া হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে বাংলাদেশের কথাই বলা যায়। একসময় এদেশের উচ্চ মাধ্যমিক জীববিজ্ঞানে “বিবর্তনবাদ” পড়ানো হতো। কিন্তু সরকারের অজ্ঞ-মুর্খ মন্ত্রী মহোদয়দের সিদ্ধান্তে একসময় তা তুলে দেয়া হয়। বিবর্তনবাদের বদলে জীববিজ্ঞান বইয়ে “জৈব প্রযুক্তি” অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এটা সুস্পষ্ট ষড়যন্ত্র। ALL THE STAGES … ‘LUCY’ – THERE WERE FOUR ‘HOMONITES’. SCIENCE TELLS US TODAY THAT THERE WERE FOUR ‘HOMONITES’ – FIRST IS ‘LUCY’ ALONG WITH ITS GUY ‘DOSNOPYTICHEST’, WHICH DIED ABOUT 3 AND A 1/2 MILLION YEARS – THE ICE AGE. THEN NEXT CAME THE ‘HOMOSEPIANS’, WHO DIED ABOUT 5 HUNDRED THOUSAND YEARS AGO. THEN CAME THE ‘NEANDERTHAL MAN’, WHO DIED HUNDRED TO FORTY THOUSAND YEARS AGO. THEN CAME THE FOURTH STAGE, ‘THE CROMAGNON’. ‘ ১০। হোমোনাইট বা হোমোনাইড বলে কিছু নেই। প্রকৃত শব্দটি হবে হোমিনিড (hominid)। কিন্তু এ নিয়ে আর নায়েককে দোষ দিচ্ছি না। কারণ, আমরা ইতিমধ্যেই দেখেছি, তিনি বিবর্তন সম্পর্কে কিছুই জানেন না। তার পক্ষে সঠিক শব্দ জানাটাই বিস্ময়কর। ১১। তিনি বলেছেন, মানুষের বিবর্তনের নাকি চারটি ধাপের কথা বলা হয়। এটা সম্পূর্ণ মিথ্যা কথা। বিবর্তনের কোন টেক্সটেই চার ধাপের উল্লেখ নেই। ধাপ আছে কমপক্ষে ১৪ টি। এর চেয়ে অনেক বেশীও অনেক স্থানে উল্লেখ আছে, কিন্তু কম নেই। ১২। DOSNOPYTICHEST নামে কোন হোমিনিড নেই। লুসি যে হোমিনিডের অন্তর্ভুক্ত তার নাম “Australopithecus afarensis” ১৩। ice age তথা বরফ যুগ মোটেই সাড়ে তিন মিলিয়ন বছর আগের ঘটনা না। ১.৬ মিলিয়ন বছর পূর্ব থেকে শুরু করে এই ১০,০০০ বছর পূর্ব পর্যন্ত বরফ যুগ ছিল। ১৪। হোমো স্যাপিয়েন্স নাকি ৫০০ হাজার বছর আগে মারা গেছে। হোমো স্যাপিয়েন্স তো আমরা, আর আমরা তো এখনও বহাল তবিয়তে বেচে আছি। ১৫। নিয়ানডার্থালদের সাথে আধুনিক মানুষের কোন সম্পর্কই নেই। অর্থাৎ মানুষের বিবর্তনের ইতিহাসে নিয়ানডার্থাল বলে কোন ধাপ নেই। বরফ যুগে নিয়ানডার্থালরা বিকশিত হয়েছিল। তাদের মস্তিষ্কের আকার আমাদের সে সময়কার পূর্বপুরুষদের তুলনায়ও বড় ছিল। কিন্তু ৩০ হাজার বছর আগেই তারা বিলুপ্ত হয়ে গেছে। আর নায়েক আমাদেরকে বলছেন, নিয়ানডার্থালরা মানুষের উৎপত্তির একটি ধাপ এবং তারা নাকি ১০০ থেকে ৪০,০০০ বছর আগে বিলুপ্ত হয়েছে। ১৬। ক্রো-ম্যাগনন আলাদা কিছু না। ইউরোপিয়ান আপার প্যালিওলিথিক অঞ্চলের হোমো স্যাপিয়েন্সদেরকেই ক্রো-ম্যাগনন নামে ডাকা হয়। THERE IS NO LINK AT ALL BETWEEN THESE STAGES’ ১৭। হোমিনিডদের ধাপগুলোর মধ্যে অনেক লিংক আছে। শুধু Australopithecus afarensis এবং Homo sapiens এর মধ্যেই অন্তত তিনটি লিংক আছে: Homo habilis, Homo ergaster এবং Homo heidelbergensis ACCORDING TO P. P. GRASSE IN 1971 WHO HELD THE CHAIR OF EVOLUTIONARY STUDIES IN PARIS, IN SOJERION UNIVERSITY. HE SAID… ‘IT IS ABSURD – WE CANNOT SAY WHO WERE OUR ANCESTORS BASED ON FOSSILS’. ১৮। Pierre-Paul Grasse এই কথা বলেছিলেন ১৯৭১ সালে, অর্থাৎ আজ থেকে ৩৭ বছর আগে। সে সময় মিসিং লিংক হিসেবে পরিচিত জীবাশ্মগুলোর অধিকাংশই আবিষ্কৃত হয়নি। গত ৩৭ বছরেই প্রায় সব জীবাশ্মের সন্ধান মিলেছে। সুতরাং গ্রাসে আজ থেকে ৩৭ বছর আগে কি বলেছিলেন তার আজ কোন মূল্যই নেই। ঠিক যেমন, এরিস্টটল আজ থেকে প্রায় দুই হাজার বছর আগে পরমাণু সম্পর্কে যা বলেছিলেন তার আজ কোন মূল্য নেই। সুতরাং এত আগের একটি উক্তি তুলে এনে জাকির নায়েক অসততার পরিচয় দিয়েছেন। এর মাধ্যমে তিনি আপাত অজ্ঞ মানুষদেরকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করেছেন। আরেকটি বিষয় বুঝতে হবে যে, গ্রাসে নিজেও বিবর্তন নিয়ে কোন সন্দেহ পোষণ করেননি। তিনি কেবল বলেছিলেন, সেটা প্রমাণের মত উপযুক্ত জীবাশ্ম আমাদের নেই। সেই জীবাশ্মগুলোই এর মধ্যে আবিষ্কৃত হয়েছে। তবে P. P. GRASSE-র কথা বলতে গিয়েও নায়েক একটি ভুল করেছেন। প্যারিসে SOJERION UNIVERSITY নামে কিছু নেই, সমগ্র বিশ্বের কোথাও এই নামের কোন বিশ্ববিদ্যালয় নেই। তিনি বলতে চেয়েছিলেন “University of Paris” এর কথা যাকে অনেক সময় “La Sorbonne” নামে ডাকা হয়। SIR ALBERT GEORGIE WHO GOT THE NOBLE PRIZE FOR INVENTING… FOR INVENTING THE VITAMIN ‘C’ – HE WROTE THE BOOK ‘THE CAVE APE AND MAN’, AGAINST DARWIN’S THEORY. ১৯। ALBERT GEORGIE নামে কোন নোবেল বিজয়ী বিজ্ঞানী নেই। তিনি এখানে বোধহয় ভিটামিন সি আবিষ্কারের জন্য নোবেল পুরস্কারপ্রাপ্ত বিজ্ঞানী Albert Szent-Gyorgyi von Nagyrapolt-র কথা বলতে চেয়েছিলেন। ২০। ভিটামিন সি উদ্ভাবন (invent) করা সম্ভব না। কারণ এটা প্রকৃতিতেই পাওয়া যায়। এখানে উদ্ভাবনের বদলে আবিষ্কার হবে। ২১। ‘THE CAVE APE AND MAN’ নামে কোন বই নেই। তবে হ্যা, Gyorgyi-র লেখা একটি বইয়ের নাম “The Crazy Ape” (১৯৭০)। নায়েক বোধহয় এটার কথাই বলতে চেয়েছিলেন। এই বই বিবর্তনবাদের বিপক্ষে লেখা কিনা আমি নিশ্চিত নই। এর বিষয় হিসেবে ব্রিটানিকাতে লেখা আছে, পৃথিবীতে মানুষের ভবিষ্যৎ নিয়ে লেখা একটি নৈরাশ্যবাদী গ্রন্থ যাতে বিজ্ঞানের সমালোচনা করা হয়েছে। অবশ্যই এই বই তিনি কোন বৈজ্ঞানিক তত্ত্ব হিসেবে লিখেননি। তবে Gyorgyi বিবর্তনবাদের সমালোচক ছিলেন এটা ঠিক। তিনি সৃষ্টিতত্ত্ববাদের পক্ষে Syntropy নামে একটি ধারণার জন্ম দিয়েছিলেন। কিন্তু এই ধারণা বৈজ্ঞানিক না। একে বরং অধিবিদ্যার (metaphysics) অন্তর্ভুক্ত বলা যায়। ফ্রয়েডের “অহম” বিষয়ক ধারণা যেমন অধিবিদ্যার অন্তর্গত তেমনি সিনট্রপির ধারণা অধিবিদ্যার অন্তর্গত। ফ্রয়েডের এসব ধারণাকে কিন্তু বর্তমানে অপবিজ্ঞান বলা হয়েছে। AGAIN , SIR FRED HOYLE’S WORK – HE WROTE SEVERAL WORKS AGAINST DARWIN’S THEORY. ২২। ফ্রেড হয়েল ছিলেন জ্যোতির্বিজ্ঞানী। জীববিজ্ঞানের উপর তার তেমন কোন দখল ছিল না। আর জ্যোতির্বিজ্ঞানেও তিনি যে মৌলিক অবদানটি রেখেছিলেন তা বর্তমানে ভ্রান্ত বলে প্রমাণিত হয়েছে। তিনি মহাবিশ্বের “স্থির অবস্থা তত্ত্ব” (Steady State Theory) উপস্থাপন করেছিলেন, বর্তমানে মহা বিস্ফোরণ তত্ত্ব এটাকে প্রতিস্থাপিত করেছে। আর জীববিজ্ঞানে তার কোন মৌলিক অবদানই ছিল না। তিনি রাসায়নিক বিবর্তনের সাধারণ ধারণা মানতেন না। তার মতে, প্রথম প্রাণের উৎপত্তি হয়েছে মহাশূন্যে এবং প্যানস্পার্মিয়ার মাধ্যমে ক্রমেই মহাবিশ্বের বিভিন্ন স্থানে তা ছড়িয়ে পড়েছে; আর পৃথিবীতে রাসায়নিক বিবর্তন ঘটেছে ধূমকেতুর মাধ্যমে আগত প্রচুর ভাইরাসের মধ্যস্থতায়। RUPERTS ALBERT, THIS PERSON WROTE A NEW THEORY OF EVOLUTION AGAINST DARWIN’S THEORY. ২৩। রুপার্টস আলবার্ট?? এই নামে কাউকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। একজন লোক যে কি-না বিবর্তনের সম্পূর্ণ নতুন একটি তত্ত্বেরই জন্ম দিয়েছেন তার কোন নিশানাই পাওয়া যাচ্ছে না? বিস্ময়কর বটে!! তারপরও নায়েকের সাথে দেখা হলে রেফারেন্সটা জেনে নিতে হবে। ITS UNTHINKABLE… YOU CANNOT THINK THAT WE ARE CREATED FROM THE APES. ২৪। রুপার্টস আলবার্ট নামে এক অজ্ঞাত মানুষ নাকি এই কথা বলেছেন। এতেও ভুল আছে। “we are created from the apes“- জীববিজ্ঞানের দৃষ্টিতে আমরা শুধু এইপ ছিলামই না, এখনও এইপ আছি। আমরা এইপ, আবার গরিলা-শিম্পাঞ্জিরাও এইপ। বর্তমানে জীবিত সব এইপ একটি সাধারণ পূর্বপুরুষ থেকে এসেছে, এটাই জীববিজ্ঞানীদের ভাষ্য। আর নায়েক রুপার্টসের সূত্র ধরে বলছেন, এই ভাষ্য নাকি আনথিংকেবল। IF YOU KNOW OF SIR FRANK SALOSBURY… HE WAS A BIOLOGIST. HE SAID… ‘IT IS ILLOGICAL TO BELIEVE IN DARWIN’S THEORY’. SIR WHITEMEAT, HE WROTE A BOOK AGAINST DARWIN’S THEORY – HE WAS ALSO A BIOLOGIST. ২৫। একের পর এক অখ্যাত ব্যক্তিদের নাম বলে যাচ্ছেন। আসলেই অখ্যাত নাকি এ নামে কোন মানুষই নেই। এখানে SALOSBURY এবং WHITEMEAT দুজনের কাউকেই খুঁজে পাওয়া যায়নি। এরা সবাই বিবর্তনের বিরুদ্ধে কথা বলার যোগ্যতা রাখেন। এত যোগ্য ব্যক্তিদের কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। ও হ্যাঁ, Frank O. Salisbury নামে একজনকে পাওয়া গেছে। কিন্তু ইনি তো চিত্রশিল্পী। এখানে “appeal to authority” নিয়ে আসা যায়। নামগুলো ঠিকঠাক বলতে পারলে হয়ত ধারণা করা যেত, নায়েক এগুলোর রেফারেন্স প্রদানে অথরিটি হিসেবে কাজ করছেন। কিন্তু যে ৬ জন বিবর্তনবিরোধীর নাম তিনি নিয়ে আসলেন, তাদের মধ্যে মাত্র দুজনের নাম ঠিক হয়েছে। একজনের নাম একটু ভুল করেছেন। আর বাকি তিনটা একেবারেই হয়নি। AN AMEBA, AT LOWER SPECIES LEVEL… AMEBA CAN CHANGE TO PAREMISHIA. QUR’AN DOES NOT SAY…‘AMEBA CANNOT CHANGE TO PAREMISHIA’ – QUR’AN DOES NOT SAY. ২৬। paremishia নামে কিছু নেই। কেউ যদি গুগলে এটা লিখে সার্চ করেন তাহলে মুসলমানদের লজ্জায় পড়তে হবে। কারণ এটা লিখে সার্চ দিলে যতগুলো রেজাল্ট আসে তার সবগুলোই কোন না কোন ইসলামী সাইটের। এখানে বোধহয় নায়েক paramecium বোঝাতে চেয়েছিলেন। IF THEY HAVE GOT PROOF… IT CANNOT BE POSSIBLE… IT IS NOT AGAINST THE QUR’AN. BUT THERE IS NO PROOF AT ALL. ২৭। যতটুকু প্রমাণ থাকলে বিবর্তনকে একটি পরিপূর্ণ তত্ত্ব হিসেবে গ্রহণ করা যায়, তার চেয়ে অনেক বেশী প্রমাণ আছে। পদার্থবিজ্ঞানে “মহাকর্ষ” যতটা গ্রহণযোগ্য জীববিজ্ঞানে “বিবর্তন” এর গ্রহণযোগ্যতার মাত্রা ঠিক ততটুকুই। নায়েকরা সেই মহাকর্ষের বিরুদ্ধে কিছু বলেন না। কিন্তু নিজ ধর্মের বিরুদ্ধে গেছে বলেই বিবর্তনের মত একটি জাজ্জ্বল্যমান সত্যকে ঘৃণ্য উপায়ে মিথ্যা প্রমাণের চেষ্টা করছেন। PEOPLE TALK ABOUT MOLECULAR BIOLOGY THEORY – THEY TALK ABOUT GENETIC CODING. ACCORDING TO HENSES CRAKE WHO IS A AUTHORITY IN THIS FIELD – HE SAID… ‘IT IS UNIMAGINABLE’. AGAIN IF YOU DO THAT RATIO, THE PROBABILITY OF ONE DNA FORMING, ‘FROM APE TO HUMAN BEING, IS AGAIN ZERO’ ২৮। আণবিক জীববিজ্ঞান সম্পর্কে জাকির নায়েকের কোন ধারণাই নেই। নামটা শুনেছেন কেবল। আর এই Henses Crake টা-ই বা কে? ইনি নাকি আবার আণবিক জীববিজ্ঞানের প্রতিষ্ঠিত অথরিটি। আবারও ভুল করলেন নায়েক, এটা আসলে ফ্রান্সিস ক্রিক হবে। আমি ক্লাস নাইন-টেন এর জীববিজ্ঞান বইয়ে ডিএনএ-র দ্বি-সূত্রক গঠনের আবিষ্কারক জেমস ওয়াটসন ও ফ্রন্সিস ক্রিক সম্পর্কে পড়েছিলাম। আর জাকির নায়েক মেডিক্যাল পাশ করে ফেললেন, তারপরও ক্রিক-কে চিনতে পারলেন না। একে তো নাম ভুল করেছেন, তার উপর আবার ক্রিক সম্পর্কে একেবারে আজগুবি একটা কথা অতি-কনফিডেন্সের সাথে বলে দিয়েছেন। ক্রিক নাকি বলেছেন “ইট ইজ আনইমাজিনেবল”। ক্রিক কখনই এমন কিছু বলেননি। ওয়াটসন-ক্রিকের ডিএনএ গঠন আবিষ্কারের পরই প্রাকৃতিক নির্বাচনের প্রক্রিয়া সবাই বুঝতে পেরেছে। ডিএনএ আবিষ্কারের পরই জিন আবিষ্কারের পথ সুগম হয়েছে, আর বিবর্তনবাদ প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এই পুরো কাজে ক্রিক নিজেই সক্রিয় ছিলেন, বিবর্তনের উপর তার শতকরা ১০০ ভাগ আস্থা ছিল। জাকির নায়েকের বাগ্মীতা-কৌশল এই সাধারণ ভুলগুলো বোঝার পর আমরা জকির নায়েকের বাগ্মীতা-কৌশল নিয়ে কিছুটা আলোচনা করতে পারি। মানুষকে ধোঁকা দেয়ার জন্য তিনি ঠিক কি কি পদ্ধতি অবলম্বন করেন- সেটাই প্রথমে দেখা যাক: # এই প্রশ্নের উত্তর দেয়ার সময় বলেছেন, তিনি নাকি কয়েক শত বিজ্ঞানী ও নোবেল বিজয়ীর রেফারেন্স দিতে পারেন, যারা বিবর্তনবাদের বিপক্ষে ছিলেন। এটা একটা সাধারণ পদ্ধতি। মানুষ কখনই ঘাটতে যাবে না যে, আসলেই কয়েক শত এমন বিখ্যাত বিজ্ঞানী আছে কি নেই। এই কথা বলে তিনি পার পেতে পারতেন, যদি কয়েক শতের মধ্য থেকে কয়েকজনের নাম বলতে পারতেন। একজনের নাম বলতে পেরেছেন, ভিটামিন সি-র “উদ্ভাবক(?)” জর্জি (?)। এ সম্পর্কেও আমরা আলোচনা করেছি। তার মানে তিনি বিবর্তন নিয়ে কথা বলার যোগ্য একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানীর নামও বলতে পারেননি যিনি বিবর্তনের বিরোধিতা করেছেন। ও হ্যাঁ, গ্রাশের কথা বলেছিলেন। কিন্তু সেটাও আমাদের আলোচনায় এসে গেছে। এভাবেই জাকির নায়েক প্রথম ধোঁকাটি দিয়েছেন। # জাকির নায়েক বিজ্ঞানের কিছুই বোঝেন না। তার প্রথম কথাতেই সেটা বোঝা গেছে। “থিওরি” কথাটা সাধারণ মানুষ যে অর্থে ব্যবহার করে তিনিও সে অর্থে ব্যবহার করেছেন। আমরা সাধারণত থিওরি বলতে এমন কিছুকে বোঝাই যার ব্যবহারিক কোন গুরুত্ব নেই, অনেককেই বলতে শোনা যায়, “জীবনটা তো থিওরি দিয়ে চলে না” কিংবা “থিওরি কপচাবেন না”। কিন্তু বিজ্ঞানে থিওরি মানে বৈজ্ঞানিক প্রক্রিয়ায় প্রমাণিত একটি হাইপোথিসিস। আর জাকির নায়েক বললেন, I have not come across any book which say “fact of evolution”, all books say “theory of evolution”. ঐ আমরা কথায় কথায় যা বলি আর কি। এই কথা থেকেই বোঝা যায়, জাকির নায়েক “থিওরি” পরিভাষাটির অর্থ জানেন না। বিবর্তনের ফ্যাক্টগুলো কিন্তু ডারউইন সেই ১৫০ বছর আগেই তার বইয়ে দেখিয়ে দিয়েছিলেন। তার সাথে উনি সেই ফ্যাক্ট ব্যাখ্যার জন্য একটি তত্ত্বও জুড়ে দিয়েছিলেন। সে তত্ত্ব প্রতিষ্ঠিত হতে সময় লেগেছে, কিন্তু ফ্যাক্টগুলো নিয়ে তখনও কেউ সংশয় পোষণ করতে পারেনি। অর্থাৎ ফ্যাক্ট বোঝার অনেক পরেই আমরা তত্ত্ব হিসেবে বিবর্তনকে গ্রহণ করেছি। এখানে নায়েক এ কি উল্টো কথা বললেন!! এটাও সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করার একটা উপায়। কারণ তারাও থিওরি কথাটির অর্থ জানে না। # সবশেষে নায়েকের কনফিডেন্স, বাচনভঙ্গির কথা তো না বললেই নয়। তিনি মিথ্যা কথাগুলো কত সাহসের সাথে বলেন, ভিডিও দেখলেই সেটা বুঝে যাবেন। তাকে খুব ভাল বিতার্কিক বলা যায়। ট্রেডিশনাল বিতর্কেও জ্ঞান মুখ্য থাকে না। মুখ্য বিষয় থাকে উপস্থাপনের ভঙ্গি। জাকির নায়েক কাদের সামনে কি নিয়ে বক্তৃতা দেন সেটাও এ থেকে বোঝা যায়। বিবর্তন নিয়ে তিনি এমন সব মানুষের সামনেই কথা বলেছেন যাদের বিবর্তন জ্ঞান তার চেয়ে কম। বিবর্তন বিষয়ে আমি কিছুটা জানতাম, তাই তার কথাগুলো odd লেগেছে। কিন্তু যে বিষয়ে খুব বেশী কিছু জানি না, সে বিষয়ে তার কথা শুনলে হয়ত মোটেও odd লাগতো না। হয়ত বাস্তবতার সাথে সেগুলোকে মিলিয়ে দেখার চেষ্টাই করতাম না। তবে এক বক্তৃতাতেই নায়েক ধরা খেয়ে গেছেন। তিনি কতটা মুর্খ, ধূর্ত, মিথ্যাবাদী ও প্রতারক তার প্রমাণ পেয়ে গেছি। পাঠকরাও আশাকরি কিছুটা প্রমাণ পেয়েছেন। এখন জাকির নায়েকের কোন কথাই বিশ্বাস হতে চাইবে না। আমি ভবিষ্যতে নায়েকের আর কিছুই বিশ্বাস করব না। আসলে তার কোন বক্তৃতা শোনার প্রয়োজনীয়তাও আছে বলে মনে হচ্ছে না। তারপরও সাধারণ বাঙালিদের ভুল ভাঙানোর জন্য হয়ত মাঝে মাঝে শুনতে হবে। এসব দেখে-শুনে মুসলিমদের দুর্দশার কারণও কিছুটা আঁচ করতে পেরেছি। মুসলিমরা কেন অন্যদের চেয়ে পিছিয়ে আছে সেটা বুঝতে পারছি। সত্যিই তো, যাদের মহানায়ক জাকির নায়েকের মত এক মুর্খ ও চতুর ব্যক্তি তাদের উন্নতি হবে কি করে? যারা বিবর্তন এবং বিজ্ঞানের অন্যান্য খুটিনাটি প্রশ্ন নিয়ে জাকির নায়েকের কাছে যায় তারা আলোর মুখ দেখবে কি করে? যারা আবদুস সালামকে কাদিয়ানি বলে গালি দেয়, আর জাকির নায়েককে নিজেদের নেতা হিসেবে ঘোষণা করে তাদের কোন অগ্রগতি কি আদৌ সম্ভব? ডিসক্লেমার: এই rebuttal এর মূল কৃতিত্ব THHuxley-র (এটা অবশ্যই তার ছদ্মনাম)। তার লেখা থেকে অনেক কিছুই হুবহু অনুবাদ করা হয়েছে। তবে সেক্ষেত্রে অবশ্যই প্রাইমারি রেফারেন্সের সাথে সেগুলোকে মিলিয়ে নেয়া হয়েছে। তথ্যসূত্র: # Darwin believe in evolution without proof? – James Randi Foundation forum (জাকির নায়েকের উত্তর দেখা ও শোনার পর আমি ইন্টারনেটে সার্চ শুরু করি। প্রথমে এই ফোরামের আলোচনাটা নজর কাড়ে। এজন্যই এটা প্রথমে উল্লেখ করলাম।) # Dr. Zakir Naik: The Rising Star of Incompetent Muslim Science – Islam (এই সাইটে THHuxley জাকির নায়েকের ৭ মিনিটের বক্তৃতায় “২৭টি মিথ্যা” পয়েন্ট আউট করেছেন। এটা দেখেই আমার মনে এই বাংলা রিবাটালটা লেখার ইচ্ছা জাগে। এটা থেকেই সবচেয়ে বেশী সাহায্য নিয়েছি। তবে হাক্সলির প্রতিটি যুক্তিকে আবার নিভর্রযোগ্য রেফারেন্সের মাধ্যমে খতিয়ে দেখা হয়েছে। সেখানকার ২৭ মিথ্যার সাথে সংযোজন বিয়োজনের মাধ্যমে এখানে ২৮টি মিথ্যা তুলে ধরা হয়েছে।) # উইকিপিডিয়া (অনেকগুলো নামের উইকিপিডিয়া নিবন্ধের লিংক দেয়া আছে। সেখান থেকে বিষয়টি সম্পর্কে নিশ্চিত হয়েছি।) # এনসাইক্লোপিডিয়া ব্রিটানিকা (দ্য ক্রেজি এইপ সহ আরও বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে এর সাহায্য নেয়া হয়েছে।) # The Correspondence of Charles Darwin (ডারউইনের সবকিছু যেখানে আছে। এটাকেই বলা যায় প্রাইমারি সোর্স বা প্রাইমারি রেফারেন্স।) # Rebuttals to Zakir Naik – WikiIslam (এই সাইটের খোঁজ পেয়েছিলাম অনেক আগে। তবে নায়েকের রিবাটাল দেখেছি এই গত সপ্তাহে। এখান থেকেও অনুপ্রাণিত।) # Dr Zakir Naik is a FRAUD – ফেইসবুক গ্রুপ (এই গ্রুপের সবকিছু সম্পর্কে আমি এখনও নিশ্চিত নই। সবকিছু খতিয়ে দেখা হয়নি। এজন্যই এ থেকে আমি কোন তথ্য নেইনি। অন্যদেরকে গ্রুপটা সম্পর্কে জানানোর জন্যই এখানে লিংক দিলাম।) পরিশিষ্ট বিবর্তন নিয়ে বিজ্ঞানীদের মধ্যে কোন সংশয় নেই। কিন্তু সাধারণ মানুষ এই বিষয়টাই জানেন না। না জানলে মেনে নেবেন কিভাবে? অনেকে কিছু না জেনেই বিবর্তনের বিরুদ্ধে কিছু লেখার চেষ্টা করেন। তাদের তথ্যসূত্র হয় ইন্টারনেটের কিছু সস্তা ধর্মীয় প্রচারণামূলক ওয়েবসাইট। অনেকে মরিস বুকাইলির “মানুষের আদি উৎস” (The Origin of Man)-কে উৎস হিসেবে উল্লেখ করেন। Pierre-Paul Grasse কে তারা নিজেদের নেতা মনে করেন। মুক্তমনায় কিশোর এ ধরণেরই একটি লেখা দিয়েছিলেন। “ডারউইনবাদ একটা ভ্রান্ত মতবাদ” নামের এই লেখাটির প্রত্যুত্তরে অভিজিৎ রায় লিখেছেন “এক বিবর্তনবিরোধীর প্রত্যুত্তরে“। অভিজিৎ রায়ের লেখাটি বিবর্তন সম্পর্কে সাধারণ্যে প্রচলিত ভুল ধারণাগুলো দূর করার ক্ষেত্রে বিশাল ভূমিকা রাখবে।
Posted on: Mon, 22 Sep 2014 05:11:16 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015