ঢাকা শহরে থাকি। বড় বড় কথা বলি। দেশোদ্ধার করি। নন্দলালের মতো বলি, কী হবে দেশের গলাটিপুনিতে আমি যদি মরে যাই। একদিন আমার বুয়েটের বন্ধুরা আমাকে বলল, চলো, আগারগাঁও বস্তিতে। ওখানে চিত্রনায়িকা ববিতা আপা যাবেন। একটা প্রজেক্ট দেখতে। ওই প্রথম ওই বস্তিতে গেলাম। ববিতা আপাকে দেখতে অনেক বাচ্চা-কাচ্চা নারী ভিড় করল। আমি আশে-পাশের ঘরদোরগুলো দেখতে ঢুকলাম। আমি কী রকমভাবে বেঁচে আছি, তুই এসে দেখে যা নিখিলেশ। এখন দুদিন গেছি রায়ের বাজারে। বুদ্ধিজীবী স্মৃতিসৌধের উল্টোদিকে। ওখানেও বস্তি আছে। মা-বাবা সকাল সকাল কাজে যায়। কেউ বা গার্মেনটসে চাকরি করে। কেউ বা রিকশা চালায়। ছয় বছরের বাচ্চার কোলে দুই বছরের আরেকটা বাচ্চা। সারাদিন একা একা দুজন থাকে। মা ভাত রেঁধে রেখে গেছেন। ছয় বছরের বাচ্চাটা খায়। তারপর ছোটটাকে খাওয়ায়। ও স্কুল যাবে কী করে। যারা স্কুল যায়, ফিরে এসে কী করবে। আর যে মা গার্মেন্টসে যান, বা অন্য কোনো চাকরিতে, তার ৭ মাসের বাচ্চা থাকবে কই? দুই বছরের বাচ্চা? অনেক বাচ্চা স্কুলে যায়, কিন্তু তার পড়া দেখিয়ে দেওয়ার কেউ নাই। আমাদের বুয়েটের কয়েকজন বন্ধু, মূলত তারা আমেরিকাপ্রবাসী, একটা সংগঠন করেছে। দেশের কয়েকজন বন্ধু তাদের সঙ্গে হাত মিলিয়েছে। তারা স্পৃহা নামের একটা সংগঠন করেছে। রায়ের বাজারে তারা ফ্রি ক্লিনিক করেছে। গরিব মহিলাদের চিকিৎসা দেয়। বাচ্চাদের জন্য ডে কেয়ার সেন্টারের মতো করেছে। স্কুলের বাইরে ছেলেমেয়েরা এখানে আসে। টিচার আছেন। তারা বাচ্চাদেরর পড়ান। নানা রকমের কাজ করছে আমার বন্ধুরা। আমাকে ডাকে। আমি দূর থেকে বলি, খুব ভালো হচ্ছে, করো... বস্তিতে ঢুকি। ঘরে যাই। বাচ্চাগুলোর মুখের দিকে তাকাই। আমি সহ্য করতে পারি না। আমি পালিয়ে আসি। আমার বন্ধুরা পালায় না। তারা ওখানে ক্লিনিক চালায়, আফটার স্কুল প্রগ্রাম চালায়, ডে কেয়ার সেন্টার চালায়। তাদের স্বপ্ন, এই পরিবারগুলোকে তারা দারিদ্র্যচক্রের বাইরে নিয়ে যাবে। এইবার তারা বিলগেটসের মাইক্রোসফটকে সঙ্গে পেয়েছে। যদি কেউ নিচের এই প্রগ্রামে ডোনেট করেন, তাহলে মাইক্রোসফটও সমপরিমাণ টাকা ডোনেট করবে। এইভাবে আড়াই লক্ষ ডলার পর্যন্ত দিতে মাইক্রোসফট রাজি। তার আগে আমাদেরকে এখানে ডোনেট করতে হবে... রবীন্দ্রনাথের গানটা আমি শুনি। আমার জনম গেল বৃথা কাজে, আমি কাটানু দিন ঘরের মাঝে, তুমি বৃথাই আমায় শক্তি দিলে শক্তি দাতা... এবার বোধ হয় আমাদেরও কিছু একটা করার সময় এলো।
Posted on: Mon, 18 Nov 2013 03:43:23 +0000