নিবিড় আহমেদ এর ধারাবাহিক - TopicsExpress



          

নিবিড় আহমেদ এর ধারাবাহিক উপন্যাস অন্য বসন্ত পর্ব-১২ ________________________________________________ অনেকটা ইচ্ছে করেই শুভর ফোনটা ধরলাম না । কারণ ও যখন শুনবে আমি এতো রাতে আলিফ ভাইয়ার সাথে উনার বাসায় যাচ্ছি । ও রাগ করবে । সেল ফোনটা সাইলেন্ট করে দিলাম । কি ব্যপার ! ফোনটা ধরলে না যে ! গার্ল ফ্রেন্ড নাকি ! না । এমনি অচেনা ফোন । আমি ইচ্ছে করেই বানিয়ে বললাম । ঠিক বলেছ । আজকাল এতো বেশি আজেবাজে ফোন আসে । পুরাই রাগ লাগে । বিরক্তি কর আর কি ! হুম । আমি সেল ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকালাম । আলো জ্বলে উঠেছে স্ক্রিনে । মেসেজ এসেছে । মেসেজ বক্স অন করে দেখি শুভর পাঠানো মেসেজ । “ jan, tumi bodhoy busy party te …. Ami aj khub tired … shuye porchi…enjoy your time…kal kotha hobe………………umaaah….miss you….dibyo….” আমি রিপ্লাই দিলাম “ok jan…shuye poro…kal kotha hobe…” গাড়ির জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছি আমি । পুরো শহর এখন নিস্তব্ধ, নিথর । কিন্তু কিছু কিছু মানুষ এখন নতুন করে জেগে উঠছে । কেউবা এই মাতাল রাতে নতুন করে শরীরের সাথে শরীর মিলাচ্ছে । কেউবা তার বুকের কাছের আদুরে মানুষটাকে ভেবে মনে মনে কাঁদছে । জীবন কি অদ্ভুত ! -কি ব্যপার ! কথা বলছ না যে । কিছু ভাবছ নাকি দিব্য ? -হুম অনেক কিছু ভাবছি । -ভালো ভালো । মাঝে মাঝে ভাবা ভালো । হা হা হা । আলিফ ভাইয়া হা হা করে হেসে উঠলেন । ঠিক ৩ মিনিট পরেই আমরা আলিফ ভাইয়ের বাসার সামনে চলে আসলাম । এর আগে আমি আলিফ ভাইয়ার বাসায় আসিনি । বিশাল বাড়ি । পুরোটাই ধবধবে সাদা । তিন তলা । গাড়ির হর্ন বাজাতেই দারোয়ান গেট খুলে দিল । ছেলেটার চোখে মুখে ঘুম । ঘুম ঘুম চোখেই সালাম দিল সে । -কিরে ! মা কি বাসায় ফিরেছে ? -না ভাইজান । আজ উনি রুমা খালার বাসায় থাকবেন । ফোন কইরা কইয়া দিসে । -ওকে । আলিফ ভাইয়া গাড়িটা বাড়ির ভেতরের এক পাশে পার্ক করে নামলেন । আমিও নামলাম । অবাক হয়ে দেখছি । চারপাশ । ঢাকা শহরে এমন বাড়ি আজকাল দেখা যায় না । পুরো বাড়িটার চারপাশ ঘিরে বড় বড় গাছ । আম, জাম আর পেয়ারা গাছই বেশি । একটা আমলকীর গাছও দেখলাম । নয়ন তারা, জবা, বেলি ফুল গাছও আছে । সব চাইতে অবাক হয়ে দেখলাম অনেক ক্যাকটাস এর গাছ । আমার এমনভাবে বাড়ি দেখা দেখে আলিফ ভাইয়া মুখ খুললেন । বাড়ির ডিজাইনটা আমার করা । আর আমি সবুজ খুব ভালবাসি । তাই এসব গাছ আর কাটি নি । বরং আরও গাছ লাগিয়েছি । দারুন, আলিফ ভাইয়া । আপনার প্রশংসা করতে হয় । আমি উচ্ছসিত গলায় বললাম । ভেতরে এস । এখনও অবাক করার অনেক কিছুই আছে । আলিফ ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন । ভেতরের মেইন দরজাটা ভারি সেগুন কাঠের । ঠেলে ঢুকতে বেশ শক্তির দরকার হয় । দরজার গায়ে পুরনো ধাঁচের কাজ করা । আমি শুধুই দেখছি । দরজা ঠেলে ড্রয়িং রুমে ঢুকতেই আরেক দফা অবাক হবার পালা । আমার মুখ থেকে মনের অজান্তেই বের হয়ে আসল, ও মাই গড । পুরোটা ড্রয়িং রুম পুরনো জমিদারি আসবাবে সাজানো । ঘরের ঠিক মাঝখানটাতে লাল রঙের মখমল কার্পেট । তার ঠিক সুজাসুজি সাদা ধবধবে দুটো চেয়ার । আমি কাছে গিয়ে বুঝলাম এ মামুলি কোন চেয়ার নয় । এর হাতল দুটো হাতির দাঁতের । অদ্ভুত কাজ করা । দেয়ালের এক পাশে সারি সারি ঘণ্টা ঝুলানো । কম করে হলেও বিশ পচিশেক । এর মাঝে পিতল, ব্রোঞ্জ, রুপা আর তামার ঘণ্টাও আছে । আমাকে আলিফ ভাইয়া বললেন, এই বেশিরভাগ ঘণ্টা গুলোই বিভিন্ন দেশ থেকে আনা । ঘণ্টা সংগ্রহের প্রতি আমার একটা অদ্ভুত নেশা কাজ করে । তাই যখন যে দেশে গিয়েছি ঘণ্টা সংগ্রহ করেছি । এর মাঝে একটা ঘণ্টা আছে মঙ্গলিয়ান । প্রায় কয়েকশ বছরের পুরনো । আলিফ ভাই । আমি স্তব্ধ । আপনি যে এতটা শিল্পমনা । এটা জানতাম না । আসলে দিব্য! সবাই আমার বাইরের রূপটা দেখে । আমার ভেতরের মানুষ টাকে কেউ বুঝে না । বুঝতে চায় না । সবাই ভাবে আমি খুব সুখি । পরিপূর্ণ একটা মানুষ । আমার চারদিকে কেবল সুখ আর সাচ্ছন্দের মেলা । কিন্তু আমি জানি আমি ভেতরে ভেতরে কতটা একা । কি ভীষণ একা । আলিফ ভাই এর গলা ভারি হয়ে আসে । উনি নিজেকে সামলে নিয়ে বললেন, চল তোমাকে আমার লিভিং রুম টা দেখাই । আমি আলিফ ভাইয়ার পেছন পেছন ঢুকি । গুটি শুটি পায়ে । আমি ছা পোষা সাধারন পরিবারের ছেলে । আমার দু চোখ এতো ঐশ্বর্য দেখে অভ্যস্ত নয় । ছোটবেলায় বাবা মারা জান । তাই বড় হয়েছি মামাদের পরিবারে । আলিফ ভাইয়ের বাসার আনাচে কানাচে ঐশ্বর্য আর আভিজাত্তের ছড়াছড়ি । আলিফ ভাইয়া তার রুমের একটা ঝারবাতির দিকে আঙ্গুল তুলে বললেন, দিব্য । এই ঝাড়বাতিটা লখনউ থেকে আনা । আমার বড় দাদা জমিদার ছিলেন । শুনেছি তার নাকি দুজন বাঁধা বাইজিও ছিল । আমার মা কিন্তু এদেশের নয় । উনি রাজস্থানের । আমি হা হয়ে আলিফ ভাইয়ের কথা শুনছি । মনে হচ্ছে আমি রুপকথার গল্প শুনছি । -দিব্য । বেশ রাত হল । তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও । আমিও ফ্রেশ হই । এরপর রাতের খাবার সেরে জমিয়ে আড্ডা দেয়া যাবে । ওকে ? আলিফ ভাইয়া তার ব্যাড রুমে ঢুকলেন । আমি গেস্ট রুমের সাথে লাগোয়া ফ্রেস রুমে ঢুকলাম । এখন একটা গোসল দেয়া দরকার । শার্ট প্যান্ট খুলে বাথরুমের হেংগারে রাখলাম । পরনে শুধু আন্ডার ওয়্যার । এই রে । বাথরুমে তো তোয়ালে নেই । এখন কি করি ? এমন সময় বাইরে থেকে আলিফ ভাইয়া দরজা নক করল । -দিব্য । বাথরুমে তোয়ালে নেই । তোয়ালে টা নাও । আমি দরজা ফাক করে এক হাতে তোয়ালে নিলাম । আলিফ ভাইয়া আমার খোলা বুকের দিকে তাকিয়ে বললেন, নাইস বডি ! আমি হালকা লজ্জা পেয়ে থ্যাংকস বলে দরজা লাগিয়ে দিলাম । শাওয়ার ছেড়ে চোখ বুজে দাঁড়িয়ে ভাবছি নিজেকে কতক্ষন এভাবে কন্ট্রোল করতে পারব কে জানে । ও গড । প্লিজ হেল্প মি । আমি যেন শুভর বিশ্বাসের অমর্যাদা না করি । কিন্তু এভাবে কতক্ষন পারব ? নিজের শরীরের উপর সব সময় সবার নিয়ন্ত্রণ থাকে না । আমার থাকবে কি ?
Posted on: Sun, 04 Aug 2013 19:35:30 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015