পৃথিবী বদলের - TopicsExpress



          

পৃথিবী বদলের চুক্তি(আটলান্টিক সনদ): . ১৯৪১ সাল। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কেঁপে উঠেছে ইউরোপ। ব্রিটেন, ফ্রান্সের আধিপত্যের হাটে পসরা নিয়ে এসে গেছেন হিটলার। রক্তের দামে তিনি পাল্টে দেবেন পৃথিবী। নিজ হাতে লিখবেন নতুন ইতিহাস। হিটলারের গর্জনে থরথর করে কাঁপছে ব্রিটেন। এই কাঁপুনি থামাতে ব্রিটেনের সামনে একটাই রাস্তা খোলা আছে। যদি নতুন মহাশক্তি আমেরিকা তাঁদের পাশে দাঁড়ায়। সেই আশাতেই ব্রিটেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী উইন্সটন চার্চিল স্মরণ করলেন আমেরিকার রাষ্ট্রপতি ফ্রাংকলিন রুজভেল্ট সাহেবকে। . প্রাজ্ঞ রুজভেল্ট এই সুযোগের আশাতেই ছিলেন। তিনি তাঁর মত করে ছক তৈরি করে ফেলেছেন। এবার বলটা ঠিক জায়গায় ফেলতে হবে। তাহলেই তৈরি হবে নতুন ইতিহাস। সে ইতিহাস হিটলার নয়, লিখবেন আমেরিকানরা। . রুজভেল্ট আসলেন চার্চিলের ডাকে। না, লন্ডনে নয়। তিনি আসলেন আটলান্টিক মহাসাগরে। কানাডার নিউফাউন্ডল্যান্ড ঘেঁষে ভাসছিল ব্রিটেনের রণতরী ‘প্রিন্সেস অফ ওয়েলস’। সাগরের বুকে ভেসে ভেসে তিনদিন আলাপ করলেন তাঁরা। রুজভেল্ট সাহেব চার্চিলকে জানালেন তাঁর প্রস্তাব। আমেরিকা সব কিছু দিয়ে ব্রিটেনকে বাঁচাবে, কোন সমস্যা নেই। শর্ত একটাই – যুদ্ধ শেষ হলে সারা পৃথিবীতে ব্রিটিশদের অধীনে যত ভূখণ্ড আছে, সেখানে স্বাধিকার (সেলফ ডিটারমিনেশান) দিতে হবে। এর মানে হল - ব্রিটিশ উপনিবেশগুলোর মানুষ স্বাধিকার পাবে। তাঁরা নিজেরা চাইলে ব্রিটেনের অধীনে থাকবে, না চাইলে স্বাধীন হয়ে যাবে। আর ব্রিটেনকে মেনে নিতে হবে এই জনরায় – তাঁর প্রতিটি উপনিবেশে। . যুদ্ধ শুরু হবার পরেই চার্চিলের পায়ের নিচের মাটি সরে গিয়েছিল। এবার রুজভেল্টের প্রস্তাব শুনে তাঁর মনে হল – এর চেয়ে আটলান্টিকে ডুবে যাওয়াও ভাল। কিন্তু কী আর করা! রুজভেল্ট তো আর তাঁকে বাধ্য করছে না। চার্চিল সাহেব ইচ্ছা করলে এই প্রস্তাব না মানতেই পারেন। জাহাজের উপর দাঁড়িয়ে দুদিকে তাকালেন তিনি। একদিকে দেখলেন - হিটলার আসছেন লন্ডনের দিকে। রুজভেল্টের কথা না শুনলে তাঁর গোটা সাম্রাজ্যই চলে যাবে জার্মানির হাতে। অন্যদিকে দেখলেন – রুজভেল্ট হাসছেন মুচকি মুচকি। তাঁর কথা শুনলে যুদ্ধ শেষে একে একে স্বাধীন হয়ে যাবে সকল ব্রিটিশ উপনিবেশ। ব্রিটেনের রাণীর মুকুট থেকে ধীরে ধীরে খসে পড়বে একটি একটি পালক। এই শ্যাম-কুল অবস্থা তখন চার্চিলের। কোন উপায় নেই। . তিনি বললেন, এ কথা মানলে ব্রিটেনের মানুষ আমাকে ছাড়বে না। রুজভেল্ট জবাব দিলেন, কিন্তু যুদ্ধটা ব্রিটেন জিতে যাবে। চার্চিল মনে মনে বললেন, তা বটে। কিন্তু আমি মনে হয় আর প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারব না। আর হয়েছেও তাই। যুদ্ধশেষে তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারেননি। . সকাল বিকাল মহাত্মা গান্ধীকে নেকেড বেগার বলে গালি দেয়া চার্চিল নিজেই তখন ভিখারি। তবে মহাত্মা গান্ধীর মত ন্যাংটা না - কোট পরা, চুরুট মুখে ভিখারি। আটলান্টিকের বুকে দাঁড়িয়ে তাঁকে মানতে হল রুজভেল্টের কথা। স্বাক্ষর হল চুক্তি – আটলান্টিক সনদ। এটাই জাতিসংঘ প্রতিষ্ঠার প্রথম পদক্ষেপ। তাঁর চেয়েও অনেক গভীরের কথা হল, এতে নিশ্চিত হল - যুদ্ধ শেষে ইউরোপীয় দেশগুলো একে একে হারাবে তাঁদের সকল উপনিবেশ। হারাবে বিনা পয়সায় পাওয়া কাঁচামাল, মনোপলি মার্কেট। যে সাগরপথ তাঁরা আটকে রেখেছিল শতাব্দীর পর শতাব্দী, সেগুলো খুলে দিতে হবে সবার জন্য। অনেক নতুন স্বাধীন দেশ তৈরি হবে। সেখানে সস্তায় পাওয়া যাবে অনেক কাঁচামাল। যেই বাজারগুলো উপনিবেশের বাঁধনে দখল করে রেখেছে ইউরোপীয়রা, সেগুলো হবে উন্মুক্ত। আর যুদ্ধ শেষে একমাত্র বড় শক্তি হবে আমেরিকা। তাই ধীরে ধীরে এসবই আসবে আমেরিকার হাতে। . হিটলার মাঠ তৈরি করেছিলেন, বলও তিনিই মাঠে ঢেলেছেন। কিন্তু গোল দিলেন রুজভেল্ট। নিশ্চিত করলেন – যুদ্ধ শেষে যে দিন আসবে, সেই দিন হবে আমেরিকার দিন। তারপর রুজবেল্ট সাম্রাজ্যবাদ প্রতিষ্টার জন্য গণতন্তের লেবাস ধারণ করে ঢোল পেটাতে শুরু করলেন। এরপরতৎকালিন সোভিয়েত ইউনিয়ন এরসাথে ঠান্ডা যুদ্ধ শুরু। ১৯৪৯ সালে আমেরিকার নেতৃত্ব গঠন করা হয় NATO। এর প্রতিক্রিয়ায়সোভ িয়েত ইউনিয়ন১৯৫৫ সালে গঠন করে WARSAW PACT।
Posted on: Fri, 23 Jan 2015 19:11:24 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015