প্রাণঘাতি ইবোলা ভাইরাস - TopicsExpress



          

প্রাণঘাতি ইবোলা ভাইরাস সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ন প্রাথমিক তথ্যঃ *ইবোলা ভাইরাস ডিজিজ(EVD),আগে ইবোলা হেমোরেজিক ফিভার(Ebola haemorrhagic fever)নামে পরিচিত ছিল, এতে আক্রান্ত রোগী প্রচন্ড অসুস্থ হয়ে অনেক সময় মারা যেতেন। *ইবোলা ভাইরাস ডিজিজ (EVD)মহামারীতে প্রতি ১০০ জন আক্রান্ত রোগীর মাঝে ৯০ জন পর্যন্ত রোগী মারা যাবার তথ্য পাওয়া যায় । *ইবোলা ভাইরাস ডিজিজ (EVD)মহামারী সাধারনত মধ্য ও পশ্চিম আফ্রিকার প্রত্যন্ত গ্রামগুলোতে দেখা যায়। *সাধারনত আক্রান্ত বন্যপ্রাণি থেকে ভাইরাসটি মানুষের শরীরে প্রবেশ করে এবং মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পরে। *সাধারণত বাদুড়(fruit bats)কে ইবোলা ভাইরাসের পোষক হিসেবে ধারনা করা হয়। *ভীষনভাবে অসুস্থ রোগীর নিবিড় পর্যবিক্ষনের প্রয়োজন হয়।এখন পর্যন্ত গ্রহণযোগ্য নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা ব্যবস্থা অথবা টিকার আবিস্কার হয়নি। *****ইবোলার প্রথম মহামারী দেখা গিয়ে ছিলো ১৯৭৬ সালে সুদানের নাজারায় আর কঙ্গোর ইয়াম্বুকে।কঙ্গোর ইবোলা নদীর তীরবর্তী একটি গ্রাম ও মহামারিতে আক্রান্ত হয়েছিলো। আর সেই ইবোলা নদীর নামেই ‘’ইবোলা ভাইরাসের” নাম । ইবোলা ভাইরাস গোত্রের পাঁচটি প্রজাতি দেখতে পাওয়া যায়। ১।Bundibugyo ebolavirus (BDBV) ২।Zaire ebolavirus (EBOV) ৩।Reston ebolavirus (RESTV) ৪।Sudan ebolavirus (SUDV) ৫।Taï Forest ebolavirus (TAFV). এর মধ্যে BDBV, EBOV, and SUDV প্রজাতিগুলো আফ্রিকাতে বড় ধরনের মহামারি ঘটিয়ে থাকে ,অন্য দিকে RESTV ,TAFV তেমনটা করেনা। কীভাবে মানুষ ইবোলা দ্বারা আক্রান্ত হয় ? ইবোলা ভাইরাস ইনফ্লুয়েঞ্জা বা মিজেলস ভাইরাসের মত অতোটা ছোয়াচে নয়। মানুষ আক্রান্ত বানর,সিম্পাঞ্জি অথবা বাদুর(fruit bat) এর স্কিন অথবা বডি ফ্লুইড এর সংষ্পর্শে আসলে আক্রান্ত হতে পারে । ঠিক একই ভাবে মানুষ থেকে মানুষে ছড়াতে পারে । যারা আক্রান্ত ব্যক্তির সেবা অথবা আক্রান্ত ব্যক্তিকে সমাধিত করে তারাও আক্রান্ত হতে পারে। এমনকি আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত সুচ ব্যবহারকারী সুস্থ মানুষ ও আক্রান্ত হতে পারেন। বাতাস ,পানি অথবা খাবার দিয়ে ইবোলা ছড়ায় না।লক্ষন ও উপসর্গ বিহীন ইবোলা আক্রান্ত রোগী থেকে ইবোলা ছড়ায় না। ইবোলা ভাইরাস রোগের লক্ষন ও উপসর্গগুলো কি কি? প্রাথমিক পর্যায়ে ইবোলাকে অনেকটা সাধারন সর্দি বা অন্য কোন রোগ বলে মনে হতে পারে। ইবোলা ভাইরাস দ্বারা আক্রান্ত হবার ২ থেকে ২১ দিন পর রোগের উপসর্জ্ঞুলো দেখা দেয়।উপসর্গগুলো হলঃ ঃ প্রচন্ড জ্বর ঃমাথা ব্যথা ঃঅস্থিসন্ধি ও মাংসপেশীতে ব্যথা ঃগলা ব্যথা ঃদূর্বলতা ঃপাকস্থলীতে ব্যথা ঃখাবার রুচি কমে যাওয়া/ক্ষুধামন্দা অসুস্থতা খারাপের দিকে গেলে শরীরের অভ্যন্তরে রক্ত ক্ষরণ হয় এমন কি সাথে সাথে নাক,চোখ ও কান দিয়েও রক্ত ক্ষরন হতে পারে।অনেক সময় আক্রান্ত ব্যক্তি রক্তবমি করতে পারেন,এমন কি তার কাশির সাথে রক্ত যেতে পারে,তিনি ব্লাডি ডাইরিয়া(পাতলা পায়খানা এবং পায়খানার সাথে রক্ত যাওয়া)করতে পারেন এবং তার শরীরে র‍্যাশ (রক্তের ফুসকুরি বা চামড়ায় রক্তের ছোপছোপ দাগ)দেখা দিতে পারে। রোগ নির্ণয়ঃ ইবোলা রোগ নির্ণয় নিশ্চিত করার আগে নিশ্চিত করতে হবে যে আক্রান্ত ব্যক্তি ম্যালেরিয়া,টাইফয়েড,সিগেলোসিস,কলেরা ,লেপ্টোসপরিওসিস ,প্লেগ,রিকেটসিওসিস ,রিলাপ্সিং ফিভার,মেনিঞ্জাইটিস ,হেপাটাইটিস অথবা অন্য কোন ভাইরাল হেমোরজিক ফিভারে আক্রান্ত নয়। নিম্নলিখিত কয়েকটি ল্যাব পরীক্ষার মাধ্যমে ইবোলা ভাইরাস ইনফেকশন নিশ্চিত করা যায়। ১।Antibody-capture enzyme-linked immunosorbent assay (ELISA) ২।Antigen detection tests ৩।Serum neutralization test ৪।Reverse transcriptase polymerase chain reaction (RT-PCR) assay ৫।Electron microscopy ৬।Virus isolation by cell culture. নিজেকে আক্রান্ত হবার হাত থেকে রক্ষা করতে ,ল্যাব পরীক্ষাগুলো করার সময় ল্যাব টেকনিশিয়ান অথবা ডাক্তারকে অবশ্যই সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত প্রতিরক্ষা মুলক ব্যবস্থা গ্রহন করতে হবে । চিকিৎসা ও টিকাঃ এখন পর্যন্ত কোন স্বীকৃত টিকা আবিস্কার হয় নি।যদিও বা কিছু টিকা নিয়ে এখন পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে । ভীষণ ভাবে অসুস্থ আক্রান্ত ব্যক্তির নিবিড় পর্যবেক্ষণ চিকিৎসার প্রয়োজন হয়। আক্রান্ত ব্যক্তি সাধারনত পানি সল্পতায় ভোগে তাই তাকে মুখে খাবার স্যালাইন দিতে হয়,অনেক সময় শিরা পথেও স্যালাইন দিতে হয়। নির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা প্রণালী এখনও প্রতিষ্ঠিত হয়নি । তবে কিছু ঔষধ নিয়ে গবেষনা চলছে। . নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধঃ যেহেতু প্রাথমিক অবস্থায় রোগী ইবোলা ভাইরাস এ আক্রান্ত এ ব্যাপার টা নিশ্চিত করা সম্ভব নয় তাই যে কোন রোগীর ক্ষেত্রে চিকিৎসক এবং সেবক সেবিকাদের পার্সোনাল প্রোটেক্টিভ মেজার নেয়া দরকার। যেমনঃ ১।আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে দেখা করা বা তার সেবা করার পর ঠিক ভাবে হাত ধোয়া। ২।গ্লাভস ব্যবহার করা। ৩।আক্রান্ত ব্যক্তির সাথে শারীরিক মেলামেশা না করা।আক্রান ব্যক্তির ১ মিটারের মধ্যে যেতে হলে এপ্রোন,মুখে মাস্ক,চোখে গগলস ও হাতে গ্লাভস ব্যবহার করতে হবে। ৪।আক্রান্ত ব্যক্তির ব্যবহৃত সুচ সঠিক প্রক্রিয়ায় ধ্বংস করে ফেলা। আর RAW Meat খাওয়ার অভ্যাস ত্যাগ করা।অথবা খাওয়ার আগে মাংস সঠিকভাবে সেদ্ধ করে নেয়া। ও ৫। সামাজিক সচেতনতা বৃদ্ধি করা। লিখেছেনঃ ডাঃ কিবরিয়া শামীম
Posted on: Fri, 08 Aug 2014 12:46:43 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015