মার বকায় সকাল ১১:৩০ টাই - TopicsExpress



          

মার বকায় সকাল ১১:৩০ টাই ঘুম ভেঙে গেল রাতুল এর। মাস্টার্স পাশ সে। পেশায় বেকার। আগে কোচিং এ পড়াইত এখন একটা টিউশনি করে অবশ্য। যে ছাত্রীকে সে পড়ায় তাকে দেখলেই বুঝা যায় সুন্দরীদের পড়াশুনা হয় না। তবুও সিগারেট আর পকেট খরচ জোগাড়ের জন্য টিউশনিটা করতেই হয়। এর বেশি হলে চাকরীর পড়া হয় না। প্রেম-টেম তার ভাগ্যে জোটেনি কখনও, তাই মোবাইল খরচ বাবদ বাংলাদেশে মনে হয় সবচে কম খরচ তারই। তবে নেট খরচ হয় ভালই। বাসায় অবসর সময়টা ল্যাপটপ (তার কোচিং পেশার একমাত্র সঞ্চয়) গুতিয়ে কাটায়। যেদিন থেকে বেকারত্বের শুরু সেদিন থেকেই সংসারের বাজারের থলেটা তাকেই নিতে হয়। জীবনে বাজার করার অভিজ্ঞতা তার হাতে গোনা। রুই,ইলিশ,মাগুর আর পাঙ্গাস ছাড়া অন্য কোন মাছ সে চিনে না। প্রথম প্রথম ফার্ম আর দেশি মুরগীর মধ্যে পার্থক্যও বুঝত না সে। যাই হোক…বেলা ১২:০০ ঘটিকার তার একটা কাজ পড়ে গেল। একটা খাম নিয়ে আসতে হবে তার খালুর অফিসে তাই সে রওনা দিল। দৃশ্যপটে বাসস্ট্যান্ড। ভ্যাপসা গরমে পিঠ ভিজে যাচ্ছে তার। মুখভর্তি চাপ দাড়ি। চুল এলোমেলো। পরনে তিন বছর আগে কেনা একটা টি-শার্ট (ভাল ব্র্যান্ডের কম কাপড় কিনলেও কিনলে সে ভালটাই কেনে) আর কবে কিনেছে ভুলে গেছে টাইপের একটা জিন্স।পায়ে বৃটিশ আমলের ব্র্যান্ডেড স্যান্ডেল। সাত নম্বর বাসের দেখা নেই। যেগুলো আসছে সেগুলোতে এত ভিড় যে বিশাল টাইপের সৌভাগ্য আর সুস্বাস্হ্য না থাকলে প্রবেশ করা দায়। অবশষে একটা অপ্রত্যাশিত বাস পাওয়া গেল। বাসটা বোধহয় বৃটিশরা বাংলা ছাড়ার সময় নিতে ভুলে গিয়েছিল এমন টাইপের। আর চালক মনে হয় আগে যুদ্ধবিমান চালাতো। কম্বিনেশন বড় বেশী বেমানান। কিন্তু….সিট পাওয়া গেল না। হায়..সিট…তুমি কতদূর পাঞ্জেরী?? বাইরের পাদানীতে পাদিয়ে টারজান স্টাইলে ঝুলে রইল। বাসখানা কদমতলী আসতেই বেশ কিছু যাত্রী নেমে গেল। অনেক কস্টের পর সে কোন পাবলিক ট্রান্সপোর্টে সিটের দেখা পেল। যাক বাচা গেল। বাসটা চলছে গরু গাড়িরর গতিতে। দেওয়ানহাট ব্রীজে উঠতেই যেন গররররর শব্দে তাহা ক্রাশ করল। হৃদযন্ত্রের ক্রিয়ার মত স্টার্ট বন্ধ হয়ে গেল। পাইলট সাহেব গাড়ি আর চলব না বলে দাফন-কাফনের ব্যবস্হা করতে লেগে গেল। ভাড়া দিতে গিয়ে সে খেয়াল করল তার মানিব্যাগের অস্তিত্ব নেই। অগ্যতা হেটেই রওনা হলো সে। হাটতে হাটতেই টের পেল তার লর্ড ক্লাইভের আমলের পলাশীর প্রান্তর থেকে সংগৃহীত স্যান্ডেলখানা ছিঁড়ে গেছে। চেছড়াতে চেছড়াতে নাছোড়বান্দার মত সে আগ্রাবাদ পর্যন্ত আসতে সক্ষম হল। আক্তারুজ্জামানের সামনে কিছু ঝলমলে পোশাকের ললনা দাড়িয়ে আছে। দুটো মেয়ে তাকে দেখে মুখ টিপে হাসতে লাগল। রাতুল তাদের সাথে হাসি বিনিময় করল। পকেটে ফুটো কড়ি নেই। এক বন্ধুকে ফোন দিয়ে স্যান্ডেল সেলাই করে কিছু টাকা ধার নিয়ে রিক্সা নিয়ে গেল অফিসে। তার পর জর্জিত রোদে পোড়া ঘামে সিক্ত শরীর নিয়ে গেল জিইসিতে। টিউশনি যাবে এমন সময় দেখতে পল তার এক সময়ের প্রেয়সী (যাকে বলতে পারে নি ভাল লাগার কথা কারন হয়ত তার মত ছাপোষা দিয়ে তার পোষায়তো না তাই ভেবে) একটা সুদর্শন রোদ চশমা পড়া ছেলের সাথে ইউনেস্কো সেন্টার থেকে বের হয়ে ভিড়ের মাঝে তাকে এক দৃষ্টিতে দেখে আছে। "যাক এই অবস্তায়ও আমাকে ছিনতে তো পেরেছে!!"
Posted on: Fri, 02 Aug 2013 13:11:36 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015