রাত জেগে মুভি দেখাটা - TopicsExpress



          

রাত জেগে মুভি দেখাটা একটু নেশা হয়ে গিয়েছে। ল্যাপটপের পুরোনো মুভিগুলো সব দেখা শেষ তাই নতুন কিছু মুভির নাম দিয়ে নেটে সার্চ দিলাম। British Films Institute এর এনলিস্ট করা ৫০ টি মুভি পেলাম তার মাঝে কিছু মুভি দেখাও হয়েছে। সেরা ৫০টি মুভির মধ্যে একটি ওয়েস্টার্ন মুভিও স্থান পেয়েছে, নাম :The Searchers. আমি বরাবরের মতোই ওয়েস্টার্ন মুভির ভক্ত তাই লিস্টে স্থান পাওয়া ১৯৫৬ সালের এই মুভিটি দেখার লোভ সামলাতে পারলাম না। কিন্তু মুভিটি দেখে আমি খুবই হতাশ হলাম। বিখ্যাত আমেরিকান অভিনেতা জন ওয়েন অভিনীত এই মুভিটি আমাকে খুবই কষ্ট দিয়েছে। ছবিটিতে দেখানো হয়েছে ১৮৬৮ সালের টেক্সাসে রেড ইন্ডিয়ান কোমাঞ্চিদের হামলায় ইথান এডওয়ার্ড (জন ওয়েন) এর ভাইয়ের পুরো পরিবার নিহত হয় এবং পরিবারের ছোট মেয়ে ডেবিকে ধরে নিয়ে যায় তারা। এরপর ইথান এবং তার পালক ভাইপো ডেবিকে খুঁজতে বের হয় এবং অবশেষে কোমাঞ্চিদের পরাজিত করে তারা বাড়িতে ফিরে আসে। ছবির পরতে পরতে আমেরিকান আদিবাসী রেড ইন্ডিয়ান কোমাঞ্চিদের দেখানো হয়েছে সভ্যতার মাঝে বর্বর এক প্রজাতি হিসেবে যারা শ্বেতাঙ্গ নারী ধর্ষণ করে, মাথার খুলি ছিড়ে নিয়ে যায়। অবশেষে এক ইন্ডিয়ান মৃতদেহের চোখের উপর নির্দয়ভাবে গুলি চালানোর দৃশ্য বর্ণবাদের চূড়ান্ত উদাহরণ। কোমাঞ্চি ই্ন্ডিয়ানদের মিথ অনুসারে যদি কোন মৃতদেহের চোখ না থাকে তাহলে সে আত্মার পৃথিবী ত্যাগ করতে পারবে না, তার আত্মাকে ঘোরাফেরা করতে হবে পৃথিবীর বাতাসের মধ্যে। সবচেয়ে ঘৃণ্য যেটি লেগেছে তা হচ্ছে কোমাঞ্চি সর্দার দ্য স্কার যিনি যুদ্ধবাজ হিসেবে পরিচিত তার চরিত্রে অভিনয় করেছে একজন শ্বেতাঙ্গ (হেনরি ব্রেডন) এবং তার সহযোদ্ধা হিসেবে সত্যিকারের রেড ই্ন্ডিয়ান ব্যবহার করা হয়েছে। কঠোর এবং নিষ্ঠুরতার এক পরসা তাদের মাঝে সাজিয়ে রাখা হয়েছে চরমভাবে। মুভিটিতে সবাই কোমাঞ্চিদের বর্বরতা দেখে শিউরে উঠেছে পুরো পৃথিবীর মানুষ বিশেষ করে বাঘা বাঘা মুভি বোদ্ধারা। তাই তাদের নিহত করে ছোট মেয়েটিকে বাড়িতে ফিরিয়ে আনার এক ফালতু মুভিকে ভোটের মাধ্যমে স্থান দেয়া হয়েছে সেরা ৫০ এ। যেখানে সার্জিও লিওনির ডলার ট্রিলজি বা Once upon a time in west এর মতো মুভিগুলো স্থান পায়নি। জানি না ৮৪৬ জন সমালোচক, পরিচালক, মুভিবোদ্ধাদের ভোটে কিভাবে এটি স্থান পেয়েছে সেরা ৫০ এ যেখানে ব্যাটলশিপ পটেমকিন, এইট এন্ড হাফ, দ্য পেশন অব জোয়ান অব আর্ক, লা ডলচে ভিতা, রশোমন, সেভেন সামুরাই, দ্য বাইসাইকেল থিফ, পথের পাঁচালি এই মুভিগুলোর স্থান তার নিচে। তার অর্থ হচ্ছে ব্রিটিশ বা আমেরিকান বা পুরো পৃথিবীর সভ্যতা আদিবাসীদের এখনো মানুষ হিসেবে গণ্য করে না। হয়তো পৃথিবী Bury my heart at wounded nee পড়ার আগে রেড ইন্ডিয়ানদের বুঝতেই পারেনি। বুঝতে পারেনি কেন শ্বেতাঙ্গদের বিরুদ্ধে তারা অস্ত্র ধরেছিল, বুঝতে পারেনি কেন তারা যুদ্ধবাজ হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছিল। কিন্তু সভ্যদের এই একপাক্ষিক গ্রহণ বুঝিয়ে দেয় পৃথিবীর আদিবাসীরা তাদের কাছে এখনো বর্বর। রেড ইন্ডিয়ান মানেই খুনি, আমাজানের আদিবাসীরা যুদ্ধবাজ, পাপুয়া নিউগিনির আদিবাসীরা মানুষ খায় এসব সভ্যদের মুভিতে বারবার উঠে এসেছে। আদিবাসীদের ইতিহাস এভাবেই বিকৃত করে দেয়া হয়েছে বারবার, চলচ্চিত্রে-কবিতায়-উপন্যাসে। কিন্তু সত্যিকারভাবে তাদের দুঃখ-কষ্টকে বুঝতে পারার মতো মানুষ এসেছে বরাবরেই অল্প পরিমাণে। তাই আদিবাসী মানেই তাদের করুণার দৃষ্টিতে দেখতে হবে এই মানসিকতা গড়ে উঠেছে সভ্যদের মাঝে। ইদানিং বাঙালি জাতিও সভ্য হয়ে উঠছে তাই বাংলাদেশের আদিবাসীদের তারা গণ্য করে এখনো সাপ, ব্যাঙ ভক্ষণকারী হিসেবে। তাদের ২য় শ্রেণীর নাগরিক করে রাখার মাধ্যমে এটি বুঝিয়ে দিয়ে চাইছে যে বাঙালিরাও বর্তমানে আদিবাসীদের প্রতি সভ্যদের যে ধ্যান ধারণা তার সাথে নিজেকে মিলিয়ে বাহবা পেতে চাইছে। যদিও ধীরে ধীরে তার পরিবর্তন হচ্ছে। বর্তমানে পৃথিবীতে আদিবাসীদের প্রতি যে গোড়া ধারণা তার পরিবর্তনও কিন্তু দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সভ্য বাঙালিরা কি তাদের মনোভাব পরিবর্তন করবেন সময়ের সাথে, প্রগতির সাথে??? হ্যাঁ, ব্যতিক্রমও কিন্তু কম নয়। অনেক বাঙালি শুভানুধ্যায়ী আছেন যারা আমাদের বুঝতে চান, বুকে ধারণ করতে চান। তাদের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ রেখেই বলছি আপনারাও যদি আমাদের কষ্টকে আপনার পাশের মানুষকে না বুঝাতে পারেন তাহলে ব্যক্তি হিসেবে আপনার যে কষ্টবোধ আছে তার লাঘব কিছুতেই করতে পারবেন না। পৃথিবীর সকল নিপীড়িত জাতির মুক্তি হোক ............Ajal Dewan
Posted on: Sat, 24 Jan 2015 14:17:00 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015