শুনেছি বাংলার - TopicsExpress



          

শুনেছি বাংলার অনলাইন আকাশে অদিতি ফাল্গুনী নামে কেউ একজন, আন্তর্জাতিকভাবে খ্যাতিমান ব্যাক্তিত্ব লেখক তসলিমা নাসরিনকে নিয়ে যুক্তিহীন সমালোচনা করে বিশাল একটি লেখা পোস্ট করেছে। প্রথমে ভেবেছিলাম কোন ছাগু বা নির্বোধ সমাজের কোন প্রতিনিধি এটা লিখেছে, তাই তেমন পাত্তা দেই নি। কি লিখেছে পড়তেও যাই নি। কারন নির্বোধ ও ছাগু সমাজের দৌড় কতটুকু সেটা আমার জানা আছে। তারপর শুনলাম আদিতি ফাল্গুনী নাকি অনলাইনে নারীবাদি নামে পরিচিত, শুনে তাড়াতাড়ি পোস্ট‘টি পড়তে লেগে গেলাম। পোস্টটি পড়ে তো আমি অবাক!! অদিতি, তসলিমা নাসরিনের সমালোচনা করেছে যেই পয়েন্ট গুলোর উপর, সেই একই পয়েন্টের উপর ভিত্তি করে ছাগু সমাজ তথা পুরুষতান্ত্রিক‘ তার প্রতিভূ প্রতিনিধিরা তসলিমা নাসরিনের ক্ষেত্রে এই ধরনের সমালোচনা করে থাকে। মৌলবাদ ও পুরুষতান্ত্রিকতার প্রতিভূ‘দের যুক্তি আর নারীবাদীর যুক্তি এক হয়ে যাওয়াতে খুব অবাক ও কষ্ট পেলাম। নারীমুক্তি ও নারীবাদ নিয়ে যারা লেখালেখি করে যাচ্ছে অনবরত এবং যারা দীর্ঘদিন যাবত রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম করে আসছে, তাদের জন্য এটা অনেক দু:খের এবং খুবই লজ্জারও বটে। পোস্টে অদিতি লিখেছেন, রুদ্রের সিফিলিস ছিল সেটা তসলিমা নাসরিন প্রকাশ করল কেন? //// নিকটাত্মীয়ের বা প্রিয়জনের যে ত্রুটি জীবন ধ্বংস করে দেয় বা দিতে পারে সেটা প্রকাশ্যে বলা উচিত কি অনুচিত এ বিষয়ে আমি স্পষ্ট নই...//// নিকটাত্মীয় বা প্রিয়জন রুদ্র তসলিমা নাসরিনের কাছ থেকে নিজের রোগের কথা গোপন করে তসলিমা নাসরিনকে কতটা দুঃখ দিলো সেটার বেলায় কি? আত্মজীবনীতে তো তার জীবনের কথা আসবেই, এটাও এসেছে। রুদ্র কর্তৃক এটা একটি প্রতারনা তসলিমা নাসরিন এর প্রতি । এছাড়া অহরহ সমাজের অসংখ্য ফ্যামিলিতে এই ধরনের প্রতারনা গুলি হয়ে আসছে । অদিতি শুধু ওইটুকই দেখেছে, কিন্তু তসলিমা নাসরিন যে ওই একই বইয়ে সমাজের নারী‘দের প্রতি প্রত্যেককেই বিয়ের আগে পুরুষের স্বাস্থ্য পরীক্ষার কথা বলেছেন এবং ডাক্তার কতৃক সার্টিফিকেট প্রদর্শন সাপেক্ষে বিয়ের পরামর্শ দিয়ে প্রতিটি মেয়েকে সচেতন করার চেষ্টা করেছেন, সেটা চোখে পড়েনি অদিতি‘র । অদিতির এই ধরনের সমালোচনার মানেই হচ্ছে ঘরে ঘরে যেন মেয়েরা প্রতিনিয়ত প্রতারিত হয় এবং তারা যেন মুখ বুজে থাকে । ধীক অদিতিকে, সে যে এই ধরনের গোপনিয়তার চেতনা নিয়ে নিজেকে নারীবাদি বলে দাবী করে । ছি............. লেখক অদিতি প্রশ্ন তুলেছেন, মাত্র ৩২ বছর বয়সে তসলিমা নাসরিনের আনন্দ পুরস্কার পাওয়া নিয়ে। আমার প্রশ্ন হল, আনন্দ পুরস্কার পাওয়ার জন্য কোন বয়স নির্ধারণ করা আছে কি? অদিতি লিখেছেন ////না ‘লজ্জা’য় না অন্য কোন গ্রন্থে তসলিমা কোনদিনই এমনকি মাঝারি মানের গল্পকার বা ঔপন্যাসিকও হতে পারেন নি। ////// রবীন্দ্রনাথ, বঙ্কিম, জীবনানন্দ, মাইকেল সকলেরই সাহিত্য রচনার স্টাইল ভিন্ন এবং স্বতন্ত্র। গল্প- উপন্যাস-কবিতা ও সাহিত্যের গুণ নির্ণয়ের সঠিক কোন মাত্রা কি কেউ নির্ধারণ করে দিয়েছে? অদিতি বলেছেন, /////যত ভাল কলামিস্টই হোন, কবি শামসুর রাহমানের আগে তিনি কি করে ‘আনন্দ’ পেলেন? ///// সাহিত্য লেখার জন্য তো অনেক অনেক লেখক আছে আমাদের দেশে, কিন্তু কয়জন লেখক আছে যে নিজের জীবনকে হুমকির মুখে ফেলে নারীর জন্য লিখে গেছেন? বাংলাদেশে নারী মুক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যু গুলো তসলিমা নাসরিনের মত করে আর কয়জন লেখক তুলে ধরতে পেরেছে? তসলিমা নাসরিন বলেছেন, “পুরুষতন্ত্র মনে রেখ, কব্জির জোর আমারও কম নেই- একটা চড় দিলে পাল্টা চড় আমিও দিতে জানি”। তসলিমা নাসরিনের মত করে এইভাবে বাংলাদেশে আর কোন নারী লেখক পুরুষতন্ত্রে আঘাত করতে পেরেছে? তসলিমা নাসরিনকে যেইসব আন্তর্জাতিক পুরষ্কারগুলো দেওয়া হইছে, তার বেশিরভাগই দেয়া হয়েছে তসলিমা নাসরিন এর সাহস, যোগ্যতা এবং নারী মুক্তির বিভিন্ন সনদ ও নারী মুক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যু গুলো তুলে ধরার জন্য... তসলিমা নাসরিন যেইসব ইস্যু তুলে ধরেছে তাঁর কলাম ও বইগুলোতে, সেসব অন্যরা তুলে ধরতে পারেনি সেইভাবে... এছাড়া জাতিসংঘ থেকে তসলিমা নাসরিন‘কে শান্তি পুরষ্কার দেওয়া হইছে (ইউনেস্কো) যেই পুরষ্কার নোবেল পুরষ্কার এর চাইতেও মুল্যমানে অনেক বেশি (নোবেল একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, কিন্তু জাতিসংঘ একট বিশ্ব জাতীর প্রতিষ্ঠান)। অদিতি ফাল্গুনী তার পোস্টে লিখেছে,তসলিমা নাসরিন এর লেখাগুলো নাকি সাধারন মাঝারি মানও উত্তির্ন করতে পারেনি... তাহলে PEN কি ঘোড়ার ঘাস কেটেছে ?? PEN বিশ্বের সবচাইতে বড় বড় লেখক ও সাহিত্যিক‘দের সবচাইতে বড় আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান... আর তসলিমা নাসরিন সেই PEN এর গুরুত্বপুর্ন পুরষ্কৃত মেম্বার। পেন কি তাইলে অন্ধ?? তসলিমা নাসরিন এর লেখাগুলো না দেখে এমনি এমনি তসলিমা নাসরিন কে পুরষ্কৃত করেছে ?? (International PEN, international organization of writers. The original PEN was founded in London in 1921 by the English novelist John Galsworthy, and it has since grown to include writers worldwide. The name PEN is an acronym standing for “poets, playwrights, editors, essayists, and novelists.” International PEN promotes international intellectual exchanges and goodwill among writers. It promotes freedom of expression for all writers regardless of their nationality, race, or religion, or of the political system under which they live. PEN is especially active in defending and supporting writers who are being harassed, persecuted, or oppressed by their government.) অদিতি লিখেছেন,/////তরুণ নারী লেখকদের সামনে প্রায়ই দুটো সম্ভাবনা থাকে। একটি হলো সম্পাদকদের সাথে ব্যক্তি সম্পর্কে জড়িয়ে রাতারাতি প্রচার পাওয়া///// এইটা কি অদিতির নিজেস্ব চিন্তাধারা?? শুনেছি অদিতি ও নাকি অনলাইনে নারীবাদী লেখালেখি করে, এক্ষেত্রে তার ভবিষ্যৎ চিন্তা ভাবনা কি? পোস্টে সবচেয়ে হাস্যকর কথা ছিলো, তসলিমা নাসরিন নাকি লেখালেখিতে জনপ্রিয়তা পাওয়ার জন্য পত্রিকার সম্পাদককে বিয়ে করেছে!! বাংলাদেশের মত এমন মৌলবাদী দেশে নারীবাদী কথাবার্তা লিখে কেউ খ্যাতি অর্জন করতে পারে না, এই দেশে নারীবাদী কথা বললে খাঙ্কি-মাগী-বেশ ্যা ছাড়া কেউ কথা বলে না , নারীর স্বাধীনতার কথা বললে মোল্লারা তার মুণ্ডু কাঁটার জন্য তেড়ে আসবে সেটা কি তসলিমা নাসরিন জানতেন না? মোল্লারা যখন তার মাথার মূল্য নির্ধারণ করে তখন সরকার কোথায় মোল্লাদের শাস্তির ব্যবস্থা করবে, তা না, উল্টো তসলিমা নাসরিনের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করল। তার সেই সব অন্ধকার বইটিতে তিনি লিখেছেন কিভাবে আত্মগোপন করেছিলেন , কত কষ্টের, কত যন্ত্রণার ছিল সেসব দিন। এতসব কষ্ট সহ্য করেও তিনি লিখে গেছেন, কাদের জন্য লিখছেন? কেন লিখছেন? খ্যাতির জন্য? তসলিমা নাসরিন পেশায় ডাক্তার ছিলেন, অভাব ছিল না তার। তার কিসের দরকার পরেছিলও আমাদের দেশের নারীদের দুরাবস্থার কথা বলার, নারী মুক্তির জন্য লড়াই করার?? মৌলবাদী দেশে নারীর স্বাধীনতার কথা বললে তার কি পরিনতি হবে তা কি তিনি জানতেন না?? খ্যাতি ই যদি অর্জন করতে হত তিনি ডাক্তারি পেশায় মনযোগ দিতেন, খ্যাতনামা ডাক্তার হতে পারতেন, লেখালিখির জন্য নিজের সরকারি চাকরি বিসর্জন দিতেন না। তসলিমা নাসরিনের বই গুলো একের পর এক নিষিদ্ধ করেছে সরকার। সেই নিষিদ্ধ বই ই আবার দেদারসে বাজারে সেই সময়ে দ্বীগুন দামে বিক্রি হয়েছে। সরকার সে ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা দেইনি, শুধু বই নিষিদ্ধ করে আর তাকে নির্বাসিত করে ক্ষান্ত। তসলিমা নাসরিন তার লেখা বইগুলো বাবদ গত বিশ বছরে বাংলাদেশ থেকে কোন রয়ালিটি পাননা এখন । অথচ তসলিমা নাসরিন এর বই এখন হাটে মাঠে ঘাটে চলে পাইরেটেড হয়ে । তসলিমার বই বিক্রি করে সরকারের খাতে আয় যোগ হয় অথচ তসলিমাই নাকি সবচাইতে সুবিধা নিয়েছেন। হাস্যকর কথাবার্তা। তসলিমা নাসরিন লেখালেখি করে নিজে কি পেয়েছেন? দেশ থেকে নির্বাসন দণ্ড পেয়েছেন। অন্যের অধিকারের কথা বলতে গিয়ে নিজের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন, অন্যের স্বাধীনতার কথা বলতে গিয়ে নিজের স্বাধীনতা টুকু হারিয়েছেন। আর এইসব নাকি তিনি খ্যাতির জন্য করেছেন!! তিনি সমাজের প্রগতির কথা ভেবে, দেশের কথা দশের কথা ভেবে, নিজের জীবনকে হুমকির মুখে রেখে লিখে গেছেন। তসলিমা দেশের বাইরে গিয়েও দেশের মানুষের জন্য লিখে গেছেন, তার লেখা পড়ে অনেকে সচেতন হয়েছেন, তার লেখা পড়ে কিছুটা শিক্ষিত হয়ে, নিজেদের মুক্ত মনা দাবী করছেন, কিন্তু ভুলে গেছেন তসলিমার অবদান। আজকে যারা নারীবাদ নিয়ে বড় বড় কথাবার্তা লিখছেন, কটা লাইন তসলিমা নাসরিনকে এড়িয়ে গিয়ে লিখতে পেরেছেন আপনারা ?? নিজেরা বড় বড় নারীবাদি সাজছেন, তসলিমা নাসরিনের মতো কতটুকু উপলব্ধি ও বোধ নিয়ে লিখতে পারছেন আপনারা?? এমন কয়টি লাইন লিখছেন আপনারা, যেই লাইন গুলো তসলিমা নাসরিন আগে লিখে রেখে যাননি ?? নারী’র জন্য কাঁদতে কাঁদতে ক’জন নারী লিখতে বসেছেন??? তসলিমা নাসরিন বার বার যে কথা বলে গিয়েছিলেন “জগতের সকল নারীকে বলছি- আসুন আমরা আমাদের জন্য কাঁদি, আমাদের জন্য আমরা একবার কাঁদি, একবার চলুন চিৎকার করে কাঁদি আমরা, ধুলোয় গড়িয়ে কাঁদি” আরও বলেছিলেন “এই জগৎ তোমার নারী, এই জগতে তুমি যেমন ইচ্ছে বাঁচ, জীবন যদি তোমার হয়, যা আসলেই তোমার, তবে এই জীবন তুমি যেমন ইচ্ছে যাপন কর, তোমার কতৃত্ব তুমি নাও নারী”। তসলিমা নাসরিনকে অস্বীকার করে নিজেরা বড় বড় প্রগতিশীল সেজেছেন, মুক্তমনা সেজেছেন.. লেখনির মাঝে কতটুকু সংগ্রাম করে গেছেন আপনারা তাঁর মতো করে?? তসলিমা নাসরিন নামটির পাশে অনেকে বিতর্কিত শব্দটি ব্যবহার করতে পছন্দ করে। আমার কাছে তসলিমা নাসরিন বিতর্কিত নন মোটেও। তার চিন্তা ভাবনা, তার বক্তব্য সবই স্পষ্ট আমার কাছে। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ তার নামের পাশে বিতর্কিত শব্দটি যোগ করেছে। তারাই সর্বদা তসলিমা নাসরিন সম্পর্কে অপপ্রচার চালিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেছে। তসলিমার লেখা পড়ে বোকা নারীদের ঘুম ভেঙ্গে যায় যদি? যদি নারী সচেতন হয়ে উঠে নিজের অধিকার সম্পর্কে, তবে তো পুরুষতন্ত্র টিকবে না বেশিদিন। তাই পুরুষতন্ত্র নিজের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে তসলিমা নাসরিন সম্পর্কে বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে, তার বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালিয়েছে, তাকে বিতর্কিত করেছে। অদিতি কেন তসলিমা নাসরিন সম্পর্কে এই ধরনের উদ্ভট কথাবার্তা লিখেছেন তার কারণ আমার কাছে স্পষ্ট নয়।। অদিতি ফাল্গুনী হয় তো সেই পুরুষতন্ত্রের পাতানো ফাঁদে পা দিয়ে এমন সব উদ্ভট যুক্তিহীন কথাবার্তা বলে তসলিমা নাসরিনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করেছেন। তবে অদিতির লেখাটি এক শ্রেণির মানুষের খুশি ও আনন্দের ব্যাপার হলেও ও আমরা যারা মুক্তবুদ্ধির চর্চা করি তদের জন্য লজ্জার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সর্বশেষ উপসংহার : অদীতি ফাল্গুনির লেখায় তসলিমা নাসরিন এর কিছুই আসে যায় না..... তবে তসলিমা নাসরিন‘কে নিয়ে লিখে ভিন্ন কিছু সমাজে অদীতি ফালগুনির স্ট্যাটাস অনেক বৃদ্ধি পায়....। (by: Etu Own )
Posted on: Tue, 02 Sep 2014 15:13:52 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015