সাইবারক্রাইম নিয়ে কথা - TopicsExpress



          

সাইবারক্রাইম নিয়ে কথা বলতে গেলেই চলে আসে ক্লিক ফ্রড (Click fraud) এর কথা। খুব নিম্নমানের ক্রাইমের তালিকায় প্রথমেই আসে এটা। বাংলাদেশে সাইবারক্রাইমের বিস্তার নিয়ে আগের দুই লেখায় লাইক ফ্রড ও ক্যাপচা সল্ভ সহ অন্যান্য ফ্রডের কথা লিখেছিলাম। কিন্তু খুব বেশি চালু ক্লিক ফ্রড এর সাথেও অনেকে জড়িত হয়ে পড়ছেন, তাই সেটা নিয়ে আজকে লিখছি। ইন্টারনেটে বিজ্ঞাপন দেয়া যখন শুরু হয়, তখন সেটার বিল কিভাবে করা হবে তা নিয়ে অনেক সিস্টেম গড়ে উঠেছে। এর মধ্যে খুব জনপ্রিয় হলো pay per click, অর্থাৎ বিজ্ঞাপন দাতা কোনো বিজ্ঞাপনে কয়বার ক্লিক করা হয়েছে, তার ভিত্তিতে পয়সা দেন ওয়েবসাইট মালিককে। গুগলের এডসেন্স এভাবেই কাজ করে। অসাধু ওয়েবসাইট নির্মাতারা এটার সুযোগ নেয়। ভুয়া ক্লিক করে আদায় করে নেয় টাকা। কিন্তু বাংলাদেশের তরুণদের অনেকে এটাকে আউটসোর্সিং বা ফ্রিল্যান্সিং হিসাবে ভেবে নিয়ে এসব অসাধু ব্যবসায়ীর অপরাধে জড়িয়ে পড়ছেন। নানা সময়ে নানা ব্লগে বা ফোরামে এই ব্যাপারে অনেককে প্রলোভন দেখাতে দেখেছি। কয়েকজনে মিলে গ্রুপ করে একে অন্যের সাইটের বিজ্ঞাপনে ক্লিক করা তো মামুলি ব্যাপার, অনেকেই প্রতিষ্ঠিত ক্লিক-সাইটের সদস্য হন। সেখান থেকে প্রতিদিন কোন বিজ্ঞাপনে ক্লিক করতে হবে, তার তালিকা আসে, আর সেই অনুযায়ী ক্লিক করলে প্রতি ক্লিকে ১-২ সেন্ট বা বাংলাদেশের হিসাবে ১-২ টাকা জমে। নির্ধারিত অংক পেরুলে (যেমন ১০০ ডলার) সেই টাকা ফেরত নেয়ার সুযোগ থাকে। এই কাজগুলা অভাবনীয় রকমের unproductive হলেও অনেকেই ঘরে বসে ইন্টারনেটে পয়সা কামানোর সুযোগ হিসাবে এটাকে লোভনীয় ভাবেন, ঘণ্টার পর ঘণ্টা কম্পিউটারে বসে ক্লিক করে চলেন বিজ্ঞাপনে, ক্লিক প্রতারণায় জড়িত মাফিয়াদের হয়ে জেনে বা না জেনেই কাজ করেন। ইন্টারনেটের ১০-২০% ক্লিকই এরকম নকল ক্লিক!! প্রশ্ন হলো - এর সমস্যা গুলা কোথায়? অনেকেই কুযুক্তি দেখান, এতে সমস্যা কোথায়, দেশে টাকা আসছে, আসুক, ইত্যাদি ইত্যাদি। ভেবে দেখুন, ব্যাপারটা অনেকটা এরকম, কক্সবাজার বিচে বিদেশী কাউকে দেখতে পেলেই তার টাকা পয়সা কেড়ে নিয়ে বা পকেট মেরে টাকা ভাগ করে নেয়ার মতো, সেটাতেও দেশে কিন্তু টাকা আসে!! ক্লিক করার জন্য কেউ তো আর এমনি এমনি টাকা দিবেনা, টাকাটা আসবে বিজ্ঞাপনদাতাকে ঠকিয়ে, ভুয়া ক্লিকের বিল করে। আর এই ক্লিকফ্রডের মতো আনপ্রোডাকটিভ কাজে তরুণদের যে সময় নষ্ট হচ্ছে, সেটাও দেশের এক অপূরণীয় ক্ষতি। ভুয়া ক্লিক করে করে ঘণ্টায় যে টাকাটা আয় করা সম্ভব, তা বেশ হাস্যকর রকমের কম। সেই সময়টা অন্য কোনো কাজে দিলে সম্ভব অনেক বেশি উপার্জন। ইন্টারনেটে সৎভাবে আয় করে ফ্রিল্যান্সিং এর কাজ করার সুযোগ অনেক আছে। ক্লিক ফ্রড, লাইক ফ্রড, বা ক্যাপচা ফ্রডে লেগে থাকার কোনো প্রয়োজন নাই, আর এসব সাইবারক্রাইমের সাথে জড়িত হয়ে নিজের ও দেশের জন্য সারা বিশ্বে কুখ্যাতি অর্জন করাটা আরো দুঃখজনক। আশা করি সবাই ইন্টারনেটে অর্থ উপার্জনের কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার আগে ব্যাপারটা দুবার ভেবে দেখবেন, আর বাংলাদেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাও এরকম অপরাধের বিস্তার রোধে কাজ করবেন।
Posted on: Tue, 29 Oct 2013 08:39:03 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015