সামান্য মানুষ হিসেবে - TopicsExpress



          

সামান্য মানুষ হিসেবে আমাদের বুকটাই শুধু ফাটতে পারে। চোখে পানি ফেলতে পারি, কিছু করার ক্ষমতা নেই। অহিংস আন্দোলনের নেতা মহাত্মা গান্ধী তাঁর হরিজন পত্রিকায় ১৯৪৬ সালের ১৪ জুলাই একটি নিবন্ধ লিখেছিলেন, যার শিরোনাম ‘ইহুদি ও প্যালেস্টাইন’। তাঁর পক্ষে দিব্যদৃষ্টিতে দেখা সম্ভব ছিল না ঠিক, ৬৮ বছর পরে ১৪ জুলাই বা জুলাই মাসের দ্বিতীয় ও তৃতীয় সপ্তাহব্যাপী ফিলিস্তিনে কী ঘটবে। কিন্তু তাঁর মতো মহামানব ভবিষ্যতের কিছুই অনুমান করতে পারেন না, তাও নয়। যুক্তরাষ্ট্র ও ব্রিটেনের পরিকল্পনামতো ফিলিস্তিন ভূখণ্ডে কী ঘটতে যাচ্ছে, মানবজাতির জন্য তার পরিণাম কী হবে, তা উপলব্ধির ক্ষমতা না থাকলে তিনি মোহনদাস বাবু হয়ে থাকতেন, মহাত্মা গান্ধী হতেন না। ওই সময় বিখ্যাত মার্কিন সাংবাদিক লুই ফিসার মহাত্মা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। ভারতবর্ষের স্বাধীনতার প্রসঙ্গ ছাড়াও আরও কিছু আন্তর্জাতিক রাজনীতির বিষয়ে আলোচনাও হয় তাঁর সঙ্গে। ইহুদিদের নিয়ে আরবদের বিরুদ্ধে, আরবদের শায়েস্তা করতে, আমেরিকা ও ব্রিটেন যে দীর্ঘমেয়াদি ষড়যন্ত্র করছে, তা নিয়ে কথা হয়। তিনি বলেছিলেন, আমেরিকা ও ব্রিটেনের বুদ্ধিমতো ইহুদিরা যে আরব ভূখণ্ড দখল করে নিজেদের ‘বাসভূমি’ বানানোর পাঁয়তারা করছে, তা হবে তাদের জন্য ভয়াবহ ভুল—erred grievously; একটি নগ্ন সন্ত্রাসবাদী কাজ—naked terrorism. গান্ধীজি লিখেছিলেন: ‘এখন পর্যন্ত আমি আরব-ইহুদি বিবাদ নিয়ে প্রকাশ্যে কোনো মন্তব্য করিনি। তার সংগত কারণ রয়েছে। তার অর্থ এই নয় যে ওই প্রসঙ্গে আমার কোনো আগ্রহ নেই। আমি ওই প্রসঙ্গে কিছু বলিনি তার কারণ, ওই প্রসঙ্গে আমার জ্ঞান খুব সীমিত। লুই ফিসারের সঙ্গে প্রসঙ্গক্রমে কিছু কথা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, নির্মমভাবে তাদের একটি ভুল পথে পরিকল্পনা করা হচ্ছে—I do believe that the Jews have been cruelly wronged by the world. তারা ইউরোপে নির্মমভাবে নিপীড়িত হয়েছে, কিন্তু তাদের প্যালেস্টাইনে পাঠানোর প্রশ্ন আসতেই পারে না। পৃথিবীতে তারা অবদান রেখেছে, পৃথিবীর সবখানেই হবে তাদের বাড়ি, প্যালেস্টাইনে আমার দরকার কী? আমেরিকা ও ব্রিটেন এই ফন্দি আঁটছে। নগ্ন সন্ত্রাসবাদের আশ্রয় নিচ্ছে (তাদের দিয়ে মধ্যপ্রাচ্যে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার)। বিশ্বনাগরিক (citizenship of the world) হয়ে থাকাই তাদের জন্য বেশি সম্মানজনক ও বাস্তবসম্মত। সব দেশেই তারা সম্মানিত অতিথি হয়ে থাকবে (honoured guests of any country). তাদের মিতব্যয়িতা, তাদের মেধা ও তাদের পরিশ্রমের জন্য যেকোনো দেশে তারা সম্মানিত নাগরিক হয়ে থাকতে পারে। তাদের সবাই সমাদর করেই রাখবে।’ ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দুই বছর আগে গান্ধীজি বলেছিলেন: ‘তাদের মেধা আছে, কেন তারা আমেরিকার মুখাপেক্ষী হয়ে থাকবে। তাদের জাতিসত্তার জন্য অবাঞ্ছিত জায়গায় (unwelcomed land) যাওয়ার দরকার কী? সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপের মাধ্যমে প্যালেস্টাইনি ভূখণ্ড তারা কেন দখল করবে? Why should they resort to terrorism to make good thir forcible landing in Palestine? যেহেতু তারা ইউরোপে নির্যাতিত হয়েছে, এখন অহিংসার মাধ্যমে পৃথিবীতে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারে।’ বঙ্গীয় প্রবচন—চোরা না শোনে ধর্মের কাহিনি। অহিংসার দেবতা গান্ধীজির উপদেশ ইহুদিবাদী বা জায়নিস্ট নেতারা শুনবেন, তা যে বিশ্বাস করবে সে এখনো মাতৃগর্ভে। উনিশ শতকের শেষ দিক থেকে আরব ভূখণ্ডে ইহুদিদের চোখ পড়ে এবং তারা সেখানে এসে জড়ো হতে থাকে। হিটলার ক্ষমতায় আসার পর নাৎসিদের নিপীড়ন শুরু হলে জার্মানি থেকে ইহুদিরা পালিয়ে এদিকে আসে। আরবরা প্রতিবাদ করে, কিন্তু সাম্রাজ্যবাদী ব্রিটেনের মদদে তাদের এই অঞ্চলে আবাসন বাড়তেই থাকে। ১৯২০, ’২১, ’২৯ এবং ’৩৬ সালে ইহুদিদের সঙ্গে আরবদের সংঘর্ষ হয়। ১৯৪৭-এ জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ভোটাভুটিতে প্যালেস্টাইন দ্বিখণ্ডিত করে ইহুদিদের জন্য রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করা হয় পশ্চিমা সাম্রাজ্যবাদীদের নীলনকশামতো। ১৯৪৮-এ ব্রিটেন সেখান থেকে চলে যায়। ওই বছরের ১৪ মে ইসরায়েল আনুষ্ঠানিক স্বাধীনতা ঘোষণা করে। মিসর, জর্ডান, সিরিয়া, লেবানন, ইরাক, সৌদি আরব এভাবে জবরদখলের মাধ্যমে তাদের জমিতে ইহুদি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার বিরোধিতা করে। বহুবার যুদ্ধ হয়েছে ইসরায়েলের সঙ্গে আরবদের। আমেরিকা-ব্রিটেনের সহায়তায় ইসরায়েলের কোনো ক্ষতি হয়নি, পরাজিত হয়েছে আরবরা। পরাজিত হয়েছে সত্য ও মানবতা, বিজয়ী হয়েছে সাম্রাজ্যবাদ ও বর্বরতা। কারণ, মানবতার চেয়ে মারণাস্ত্রের মূল্য বেশি। আজ পৃথিবীর বড় বড় দেশ পরিচালিত হচ্ছে নিম্ন ও মাঝারি মানের নেতৃত্ব দ্বারা। গত শতাব্দীর পঞ্চাশ, ষাট, এমনকি সত্তরের দশক পর্যন্তও তৃতীয় বিশ্বে বিশ্বমানের উঁচু ব্যক্তিত্বসম্পন্ন নেতা ছিলেন অনেকেই। তাঁরা পশ্চিমা স্বৈরাচারের প্রতিবাদ করতে পারতেন। ভয় পেতেন না।
Posted on: Wed, 23 Jul 2014 08:39:09 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015