সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও - TopicsExpress



          

সার্বভৌমত্ব, গণতন্ত্র ও ইসলাম -শাহ আব্দুল হান্নান সকল ইসলামী দল গণতন্ত্রকে গ্রহণ করেছে। এটা তারা খিলাফতে রাশেদার নীতি ও কুরআনের শুরার (পরামর্শ করার)বিধান থেকে গ্রহণ করেছে। ইসলামের সংগে গণতন্ত্র ও জনগণের সার্বভৌমত্বের কি কোন মৌলিক সংঘাত আছে? আমি এটাই আলোচনা করব। বাংলাদেশ সংবিধানের ১ ধারায় বলা হয়েছে, বাংলাদেশ একটি সার্বভৌম প্রজাতন্ত্র। বাংলাদেশ সংবিধানের ৭ ধারায় বলা হয়েছে, প্রজাতন্ত্রের সকল ক্ষমতার মালিক জনগণ। এইসব ধারা কি আল্লাহর সার্বভৌমত্বের সাথে সাংঘর্ষিক? এ বিষয়টি আমি আলোচনা করব। আল্লাহ যে বিশ্বজাহানের ওপর সার্বভৌম তাতে কোন সন্দেহ নেই। এটি কুরআনে অনেকবার বলা হয়েছে। কুরআনে বলা হয়েছে , ‘লাহু মা ফিস্সামাওয়াতে ওয়ামা ফিল আরদ’। অর্থাৎ আল্লাহই দুনিয়া ও আসমানের সব কিছুর মালিক (সুরা বাকারা:২৫৫)। সুরা নাসে বলা হয়েছে, ‘মালিকিন্নাস’ (মানবজাতির শাসক)।আল্লাহকে বলা হয়েছে, ‘মালিকাল মুলক’ (রাজত্বের মালিক)। এ কারণেই বিশ্বের প্রায় সব ইসলামী রাষ্ট্রের সংবিধানে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের কথা বলা হয়েছে। পাকিস্থান ও ইরানের সংবিধানে তা সুস্পষ্ট ভাবে বলা হয়েছে। অন্যান্য দেশে রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম বলা হয়েছে বা আইনের প্রধান উৎস ইসলামি শরিয়াহ বলা হয়েছে। এ সবই প্রকারান্তরে আল্লাহর সার্বভৌমত্বের কথা বলা। কোনো মুসলিমই আল্লাহর ‘সার্বভৌমত্ব’ (Sovereignty) অস্বীকার করতে পারেনা। একজন রাষ্ট্রবিজ্ঞানের ছাত্র ও শিক্ষক হিসেবে এখন আমি সার্বভৌমত্ব (Sovereignty) তত্বের আলোচনা করব। পাশ্চাত্যেই এ তত্ব বিশেষভাবে বিশ্লেষিত হয়। অস্টিন এমন এক সার্বভৌমত্বের কথা বলেছিলেন যার ক্ষমতার কোন সীমাবদ্ধতা নেই। তিনি সাম্রাজ্যের অধিপতিদের ক্ষেত্রেই তা প্রযোজ্য মনে করতেন। কিন্ত ক্ষমতা ভাগ করা যায় না এমন সার্বভৌমত্ব (indivisible sovereignty) কেবল স্রষ্টার ক্ষেত্রে প্রযোজ্য, অন্য কারো ক্ষেত্রে তা বাস্তবে প্রযোজ্য হতে পারেনা। যা হোক পরবর্তীকালের রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা এ তত্ব থেকে সরে যান। তারা মনে করেন যে সার্বভৌম ক্ষমতা কারো একার কাছে থাকেনা। ক্ষমতা বহু ভাগে বিভক্ত থাকে। যেমন আজকের যুগে কিছু ক্ষমতা পার্লামেন্টের, কিছু ক্ষমতা আদালতের, কিছু ক্ষমতা মন্ত্রি পরিষদের ইত্যাদি। একক কোন শক্তিই সার্বভৌম নন। আর একটি বিষয় পরিস্কার করা দরকার। সার্বভৌমত্বের যে বিতর্ক পাশ্চাত্যে হয়েছিল তা স্রষ্টা বনাম জনগণের ছিল না। বিতর্কটি ছিল সার্বভৌম কি রাজা না জনগন? এখানে গণতন্ত্রীরা বললেন যে সার্বভৌম জনগণ। রাজা নন। এ বিতর্কে স্রষ্টার অবস্থান বা মর্যাদা নিয়ে কোন বিতর্ক ছিল না। এ প্রেক্ষিতে একই সাথে আল্লাহর চূড়ান্ত সার্বভৌমত্ব এবং জনগণের সার্বভৌমত্ব থাকতে পারে। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব কেবল বাংলাদেশে নয়, সব স্থানে। বাংলাদেশের জনগণের সার্বভৌমত্ব কেবল বাংলাদেশে এবং তা চূড়ান্ত নয়। কেননা জনগণই তাদের প্রতিনিধিদের মাধ্যমে যে সংবিধান তৈরি করেছে তাতে রাষ্ট্রধর্ম ইসলামের স্বীকৃতি দিয়েছে। সুতরাং বাংলাদেশের জনগণের সার্বভৌমত্বও আল্লাহর দেয়া বিধানের আওতাধীন। ইরানের সংবিধানেও আল্লাহর চূড়ান্ত সার্বভৌমত্বের কথা বলা হয়েছে এবং জনগণের সার্বভৌমত্ব ইসলামের বিধানের আওতায় স্বীকার করা হয়েছে। পরিশেষে বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলোকে বলব, আল্লাহর সার্বভৌমত্ব কারো মর্জির উপর নির্ভর করেনা। আল্লাহর সার্বভৌমত্ব চূড়ান্ত ও চিরন্তন। এটা কোন মানুষ নিয়ে নিতে পারবেনা। যদি পরিস্থিতির কারণে তাদের গঠনতন্ত্রে আল্লাহর সার্বভৌমত্ব উল্লেখ না করতে হয় তাতে কিছু যায় আসেনা। তাদের হুদায়বিয়ার সন্ধির কথা মনে করতে হবে, যেখানে রাসূল সা: প্রয়োজনের প্রেক্ষিতে ‘রাসূলুল্লাহ’ শব্দ চুক্তি থেকে নিজের হাতে মুছে দিয়েছিলেন। আরো মনে রাখতে হবে, কুরআনে কোন সংশোধন করা যায় না; কিন্তু বাংলাদেশের এবং সব দেশের সংবিধান সংশোধন করা যায়। সুতরাং ইসলামী দলগুলো জনগণের রায় পেলে প্রয়োজনমতো বাংলাদেশের সংবিধান সংশোধন করতে পারবেন। লেখক: সাবেক সচিব, বাংলাদেশ সরকার
Posted on: Fri, 21 Nov 2014 08:05:12 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015