হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ( Hubble - TopicsExpress



          

হাবল স্পেস টেলিস্কোপ ( Hubble Space Telescope) মহাকাশে স্থাপিত একটি দূরবীক্ষণ যন্ত্র। মহাকাশে দূরবীক্ষণ যন্ত্র স্থাপন করে- অতি- দূরের আকাশকে পর্যবেক্ষণ করার উদ্দেশ্যে– ১৯৪৬ সালে জ্যোতি-পদার্থবিজ্ঞানী ড. লিম্যান স্পিৎজার মহাকাশে টেলিস্কোপ স্থাপনের প্রস্তাব করেন। কিন্তু তখন পর্যন্ত মহাকাশে কোনো রকেট পাঠানো সম্ভব হয় নি, বলে এই প্রস্তাব বাতিল হয়ে যায়। স্পিৎজার পরে নাসাকে এই প্রস্তাব দিলে ইউরোপিয়ান স্পেস এজেন্সি এবং নাসা যৌথভাবে ১৯৭৫ সালে স্পেস টেলিস্কোপ উন্নয়নে উদ্যোগ গ্রহণ করে। লকহিড মার্টিন এরোস্পেস কোম্পানির সহযোগিতায় নাসার এ দূরবীক্ষণটি বানাতে সময় লাগে ৮ বছর। ১৯৮৩ সালে আমেরিকান জ্যোতির্বিজ্ঞানী এডউইন হাবলের নামানুসারে এর নাম রাখা হয় হাবল স্পেস টেলিস্কোপ। ১৯৯০ সালে এই টেলিস্কোপটিকে পৃথিবীর কক্ষপথে পাঠানো হয়। এটি প্রতি ৯৭ মিনিটে পৃথিবীকে একবার প্রদক্ষিণ করে। এটি ভূপৃষ্ঠে স্থাপিত টেলিস্কোপের চেয়ে ৫০ গুণ বেশি দক্ষ এবং ১০ গুণ বেশি নিয়মনে (resolution) ছবি তুলতে পারে। এতে রয়েছে প্রাইমারি মিরর, সেকেন্ডারি মিরর, কারেক্টিভ অপটিকস এবং সায়েন্টিফিক ইন্সট্রুমেন্টস ফাংশনে ওয়াইড ফিল্ড প্ল্যানেটারি ক্যামেরা ২ (ডবলিউএফপিসি২), নিয়ার ইনফ্রারেড ক্যামেরা অ্যান্ড মাল্টি অবজেক্ট স্পেকট্রোমিটার (এনআইসিএমওএস), স্পেস টেলিস্কোপ ইমেজিং স্পেকট্রোগ্রাফ (এসটিআইএস), অ্যাডভান্স ক্যামেরা ফর সার্ভস (এসিএস) ও ফাইন গাইডেন্স সেন্সর (এফজিএস)। অপরদিকে মহাকাশযান হিসেবে এতে রয়েছে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার অংশ, কম্পিউটার নিয়ন্ত্রিত বিভিন্ন ধরনের কার্যকরী ব্যবস্থা। হাবল স্পেস টেলিস্কোপের খোলা মুখ দিয়ে আলো ঢোকে এবং তা প্রাইমারি মিরর থেকে সেকেন্ডারি মিররে যায়। সেকেন্ডারি মিরর প্রাইমারি মিররের কেন্দ্রের একটি ফুটো দিয়ে এর ফোকাল পয়েন্টে আলোকে প্রতিফলিত করে। ফোকাল পয়েন্টে ছোট ছোট, হাফ রিফ্লেকটিভ, হাফ ট্রান্সপারেন্ট মিররগুলো এই আলোকে বিভিন্ন সায়েন্টিফিক ইন্সট্রুমেন্টে পাঠিয়ে দেয়। প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি মিররের ওজন যথাক্রমে ৮২৮ ও ১২.৩ কেজি। এই টেলিস্কোপে আলো ধারণ করার জন্য সায়েন্টিফিক ইন্সট্রুমেন্ট অংশে ফটোগ্রাফিক ফিল্মের বদলে চার্জ ক্যাপলড ডিভাইস (সিসিডি) ব্যবহৃত হয়। সিসিডি যে আলো শনাক্ত করে তা ডিজিটাল সঙ্কেতে পরিণত হয়ে দূরবীক্ষণযন্ত্রের ভিতরে রক্ষিত কমপিউটারে জমা হয়। পরে কম্পিউটার স্বয়ংক্রিয়ভাবে তা পৃথিবীতে পাঠায়। এই দূরবীক্ষণযন্ত্রের ক্যামেরার কাজে নিয়োজিত রেটিনার মতো ডবলিউএফপিসি২- তে আছে চারটি সিসিডি চিপ যা তিন ধরনের নিচু নিয়মনের আলো শনাক্ত করতে পারে। চারটি সিসিডি চিপ কোনো লক্ষ্যবস্তুকে একই সময়ে ধারণ করে। ডবলিউএফপিসি২ লাল, সবুজ, নীল প্রভৃতি রঙয়ের ফিল্টারের মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক রঙের ছবি তুলতে পারে। অবলোহিত রশ্মি নির্ণয় করার জন্য হাবল স্পেস টেলিস্কোপে এনআইসিএমওএস অংশে রয়েছে তিনটি সংবেদনশীল ক্যামেরা। এগুলি ধূলিকণা ও গ্যাসের মধ্যেও অবলোহিত রশ্মি শনাক্ত করতে পারে। কোন বস্তু কি দিয়ে তৈরি, তাতে কি ধরনের উপাদান রয়েছে তা এসটিআইএস নামক যন্ত্র দিয়ে শনাক্ত করা সম্ভব। ২০০২ সালের মার্সে ফেইন্ট অবজেক্ট ক্যামেরার (এফওসি) বদলে হাবলে অ্যাডভান্সড ক্যামেরা ফর সার্ভস (এসিএস) বসানো হয়। কারণ এফওসি’র চেয়ে এই ক্যামেরা ১০ গুণ পরিষ্কার ছবি তুলতে সক্ষম হয়। তারকারাজির অবস্থান ও তাদের আকার নির্ণয় করতে এফজিএস নামক সেন্সর ব্যবহৃত হয়। হাবলে তিনটি এফজিএস আছে। এদের মধ্যে দুটি লক্ষ্যবস্তুকে শনাক্ত করার জন্য ব্যবহৃত হয়। আর অপরটি ব্যবহৃত হয় অ্যাসট্রোমেট্রিক মেজারমেন্ট বা তারকারাজির অবস্থান নির্ধারণ করতে। সকল বৈজ্ঞানিক যন্ত্রপাতি ও দূরবীক্ষণে রক্ষিত কমপিউটারগুলো চালাতে প্রায় ২৪শ ওয়াট বিদ্যুৎ আসে। ৪০ ফুট দীর্ঘ বিশাল সৌর প্যানেল থেকে ৷ দূরবীক্ষণটি আকাশের অন্ধকারে অঞ্চলে চলে গেলে, ছয়টি নিকেল-হাইড্রোজেন ব্যাটারি এই বিদ্যুৎ সরবরাহ করে। এসব ব্যাটারি সৌর- প্যানেলের মাধ্যমে রিচার্জ হয়। এই দূরবীক্ষণযন্ত্র প্রতি ৯৭ মিনিটে পৃথিবী প্রদক্ষিণ করে। এতো দ্রুত ঘোরার কারণে যাতে ছবি নষ্ট না হয়, সেজন্য এ যানে রয়েছে তিনটি সিস্টেম-গাইরোস্কোপ (ছোট অথবা বড় মোশন বুঝতে পারে), রিয়েকশন হুইল (টেলিস্কোপের নড়াচড়ায় সহায়তা করে) এবং এফজিএস (নিখুত গতি বুঝতে পারে)৷ এ দূরবীক্ষণের দুটি প্রধান কমপিউটারের একটি পৃথিবীর নিয়ন্ত্রণ কেন্দ্রে উপাত্ত পাঠায় এবং নির্দেশ গ্রহণ করে। অন্যটি যানটিকে চালানোতে ভূমিকা রাখে। এছাড়াও জরুরি প্রয়োজনে রয়েছে একাধিক কমপিউটার। মহাকাশ দূরবীক্ষণটির বিভিন্ন যন্ত্রাংশ মাইক্রোপ্রসেসর নিয়ন্ত্রিত। ফিল্টার চাকা চালাতে, সাটার নিয়ন্ত্রণ করতে, উপাত্ত সংগ্রহ করতে সরাসরি প্রধান কমপিউটারের সহায়তা নেয়া হয়। হাবল স্পেস টেলিস্কোপের খোলসটি দৈর্ঘ্যে সাড়ে ১৭ ফুট, প্রস্থে ৯.৬ ফুট এবং এর ওজন ১১৪ কেজি। যে টিউবটি অপটিকস ও সায়েন্টিফিক ইন্সট্রুমেন্ট ধরে রাখে সেগুলো অ্যালুমিনিয়ামের তৈরি। এগুলোকে ইনস্যুলেটর দিয়ে আবৃত করে রাখায় তাপমাত্রার পরিবর্তনের হাত থেকে যানটি রক্ষা পায়। এর মূল অসুবিধা হলো- এই দূরবীক্ষণযন্ত্রটি সূর্যকে পর্যবেক্ষণ করতে পারে না এবং সূর্যের প্রচণ্ড আলো ও তাপ দূরবীক্ষণযন্ত্রের স্পর্শকাতর যন্ত্রাংশ সহ্য করতে পারে না৷ সূর্যের কাছাকাছি হওয়ায় বুধ এবং শুক্র গ্রহকেও হাবল স্পেস দূরবীক্ষণ পর্যবেক্ষণ করা অসম্ভব। যেসব তারা খুব বেশি উজ্জ্বল, সেগুলোর ছবিও তোলা সম্ভব হয় না। আরেকটি সীমাবদ্ধতা হলো ভ্যান অ্যালেন রেডিয়েশন বেল্টের কারণে কোনো কোনো সময়ে টেলিস্কোপটির পক্ষে কোনো বস্তু পর্যবেক্ষণ করা সম্ভব হয় না।
Posted on: Mon, 22 Sep 2014 04:01:28 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015