***হোম মেইড সুশীল*** আমাদের - TopicsExpress



          

***হোম মেইড সুশীল*** আমাদের মধ্য-বিত্তদের মাঝে নতুন এক সম্প্রদায় তৈরি হয়েছে, তা হলো রাজনীতি বিমুখ কিন্তু রাজনৈতিক টপিকে আগ্রহী --হোম মেইড সুশীল সমাজ! যাদের মতে, নতুন নেতৃত্ব না এলে, দেশের রাজনীতি নিয়ে কিছু বলা যাবে না, কিছু চিন্তা করা যাবে না! আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি ২টা দলই খারাপ, উনারা তাই এদের নিয়ে ভাবতেই রাজি না। কোন কথাও খরচ করতে আগ্রহী না। যেহেতু বিএনপি-আওয়ামী লীগই বর্তমান রাজনীতির কেন্দ্র, তাই এদের নিয়ে কেউ কিছু বললে, হোম মেইড সুশীলরা সেখানে এসে বেশ ধমক-ধামক দিয়ে যান। বলে, আপনি দুর্নীতি-গ্রন্থ রাজনীতিবিদদের কথা বলেন, আপনি ভালো না, আপনি পঁচা! এদের দেখলে বেশ লাগে! মনে হয়, হুমম এইতো সঠিক লোক উইথ বিবেক! নিশ্চয়ই এরাই আগামীকাল এমন কিছু করবে যা সবকিছু বদলে দিবে! এরাই হবে পরিবর্তনের কাণ্ডারি! কিন্তু কিসের কি, এরা প্রতিদিন একই কাজ করে, খায়, ঘুমায়, টয়লেটে যায় এবং ফ্ল্যাশ করে বেরিয়ে আসে। প্রতিদিন রাজনৈতিক সিদ্ধান্তগুলো নিজেদের কাঁধে বয়ে বেড়ায়, মাথা নিচু করে, মুখ বুজে সহ্য করে আর রাতের বেলায় ডাইনিং টেবিলে ঘুষি মেরে বলে, কেউই যোগ্য না, সব পঁচা, পঁচা, পঁচা! এরপর ঘুমাতে যায়! আমার মতে এরা হচ্ছে প্রচণ্ড ক্ষতিকর! হ্যাঁ, এই হোম-মেইড সুশীল দ্বারা যদিও অন্য কারো স্বার্থ নষ্ট হচ্ছে না, কিন্তু এরা ক্ষতিকর কারণ এরা হচ্ছে মরিচা! একবার বসে গেলে লোহা পর্যন্ত অকেজো করে ফেলে। এদের নেতিবাচক এবং অবাস্তব চিন্তা এবং অকর্মণ্যতা ভাইরাসের বেগে অন্যদের মাঝে ছড়িয়ে সবাইকে অকেজো করে ফেলে। এরা জানে না, দেশের ১৬ কোটি মানুষ মৌলিক চাহিদা পূরণের জন্য লড়াই করে। সুশাসন তাদের কাছে মূল্যহীন। উপকূলীয় মানুষ প্রতি বছর তাদের বাসস্থান হারায় এবং প্রতিদিনের ভাতের জন্য লড়াই করে। কোটি কোটি মানুষ আছে যারা প্রধানমন্ত্রী ছাড়া অন্য কোন মন্ত্রী চিনে না! ভোট দেয় মার্কা দেখে! ১৬ কোটি মানুষের ৪৯% (ইউএনডিপি-২০০৮) বাস করে দারিদ্রসীমার নিচে। এই দেশটায় কোন প্রাকৃতিক সম্পদ নাই, নদীমাতৃক দেশটা প্রতি বছর বন্যা কবলিত হয়, এমন দেশ আওয়ামী লীগ - বিএনপি না, বিশ্বের যে কোন ব্যক্তি বা গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে দিলেও সফলতা নিশ্চিত নয়। এই দেশের উন্নয়নের প্রথম শর্ত জনসংখ্যার ১০০% শিক্ষিত করে তোলা। যেটা এমনিতেই দীর্ঘ প্রক্রিয়া তার উপর আমাদের মত সম্পদ-হীন দেশের জন্য দীর্ঘতর! তাছাড়া আওয়ামী লীগ বা বিএনপি ছাড়া তৃণমূল পর্যায়ে সাংগঠনিক ক্ষমতা অন্য কারো নেই। এরশাদ ১০ বছর ক্ষমতায় থেকেও দেশব্যাপী সাংগঠনিক জাল বিস্তার করতে পারে নাই। বাম দলগুলা তো বিলুপ্ত হবার পথে। আর আছে জামাত, ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করে বিধায় দেশব্যাপী মাদ্রাসাগুলোর কল্যাণে ওদের সাংগঠনিক একটা ভিত্তি রয়েছে। আওয়ামী লীগ বা বিএনপির যদি পতন ঘটে তবে যেই পাওয়ার ভ্যাকুয়াম (en.wikipedia.org/wiki/Power_vacuum ) তৈরি হবে, সেটা ফিল-আপ সংক্রান্ত যেই জটিলতা এবং হুমকি দেখা দিবে তা বহন করার ক্ষমতা এবং সময় বাংলাদেশের নাই। দেশে শুধু ঢাকা বাসীরাই ভোটার না, বরং প্রত্যন্ত অঞ্চলের ভোটাররাই ফল নির্ধারক, তাই ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগ বা বিএনপির পরাজয় হবে ভাবার কোন কারণ নাই। তারা আদর্শ যাচাই করে না, তারা দেখে নির্বাচনী এলাকার জনপ্রতিনিধি কে? তার বাড়ি কোথায়? তার ব্যাকগ্রাউন্ড কি? অপরিচিত নেতা যতই ভাল হোক, গ্রামাঞ্চলে তার কোন মূল্য নেই! তাই বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের ভাল চাইলে গণতান্ত্রিক এবং তুলনামূলক শান্তিপূর্ণ স্ট্যাটাস কো (en.wikipedia.org/wiki/Status_quo) ধরে রেখে, শিক্ষা ও অর্থনীতিতে উন্নতি করার সাথে সাথে বর্তমানে যা আছে তার মাঝেই সংস্কারের বিকল্প নাই। আলোচনা না হইলে সংস্কারের টেবিলে পৌঁছানোর কোন রাস্তা নাই। এজন্যই বাংলাদেশের রাজনীতিতে অবাস্তব এবং ঝুঁকিপূর্ণ পরিবর্তন আশা না করে বর্তমান ব্যবস্থার মাঝে সংস্কার আশা করি। তৃতীয় শক্তির ধারনার সাথে বাস্তবতার পার্থক্য অগ্রাহ্য করে, রাজনৈতিক আলোচনার প্রতি নেতিবাচক মন্তব্য করে সেটা নিরুৎসাহিত করার পর লেপমুড়ি দিয়ে ঘুমিয়ে যাওয়া কোন কাজের না! বরং বর্তমান শক্তিগুলো নিয়েই ভাবনা-চিন্তা করা দরকার, কারণ এটাই বাস্তবতা! বিশেষ দ্রষ্টব্যঃ আমরা স্বাধীন কারণ আমাদের একটি মানচিত্র আছে। আমরা স্বাধীন আমাদের একটি পতাকা আছে। কিন্তু এই মানচিত্র আর পতাকার মধ্যে বসবাসকারী দোপেয়ে জীবগুলো তারা কেমন আছে এই প্রশ্নের উত্তর এদেশের মানচিত্র আর পতাকা দিতে পারেনা। বছরের পর বছর পেরিয়েছে। স্বাধীনতার সেই মরা-কাষ্ঠে পিঠ ঘষতে ঘষতে আমরা এখনো ধুকে মরছি। আর ধিক্কার দিচ্ছি নিজেদের ভাগ্যকে। ব্রিটিশ শোষণের বেড়াজাল ছিরে আমরা ফিরেছি স্বাধীন বাংলার স্বপ্নে। পাকিস্তানি তস্করদের হাত থেকে লাল সূর্যটাকে ছিনিয়ে এনে উদ্ভাসিত হতে চেয়েছি দিনের আলোয়। “কিন্তু যেখানে ভানু সেখানে দেখা গেছে হনু”। রামায়ণের লঙ্কাকাণ্ডের হনুমানের মতো বাংলাদেশের স্বাধীনতা সূর্য গ্রাস করে বন্ধুর মুখোশ-ধারী ভারত। আজ চল্লিশ বছরে পা দিয়েও আমার কি অর্জন করেছি তা কি একবারের তরেও ভেবে দেখার অবকাশ পান আমাদের রাজনীতিবিদগণ। দেশে বাকিরা হবে নীরব দর্শক। কর্তায় ইচ্ছেয় কর্ম, মানবতা এ কোন অধর্ম, আমরা বুঝি না তার মর্ম। জোর করে নাম জাহির করা, নির্দিষ্ট আদর্শ ভিত্তিক স্বার্থান্বেষী মহলের দৌরাত্ব, ইচ্ছা-খুশি বাকিদের ডাণ্ডা-পেটা করার বৈধতা। আজব এই প্রথা। এর নাম নাকি আবার গণতন্ত্র!!!! চলছে ক্ষমতা বদলের একটা মিউক্যাল চেয়ারের গেম শো। যার হাতে ক্ষমতার ঝাণ্ডা সেই কুশীলব। স্বাধীনতার চারটি দশক পার করার পরেও রাজনৈতিক দলগুলো তাদের অবস্থান পরিষ্কার করতে পারেনি। নিজেদের একটি শক্ত আদর্শিক কাঠামোতে দাঁড় করাতে পারেনি। বাংলার ত্রিশ লক্ষ শহীদ তাজা রক্তের বিনিময়ে পাকিস্তানি তস্করদের হাত থেকে বিজয় ছিনিয়ে পরিচিতি দিয়েছিলেন স্বাধীন দেশ হিসেবে। তাঁরা যে ভূখণ্ডের জন্য এই ত্যাগ স্বীকার করেছিলেন তার কোন মূল্যই দেয়নি। আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো। ঘুরে ফিরে একটা রজ্জু আবদ্ধ চতুষ্পদের মতোই কেবলই ঘুরপাক খেয়েছে এবং আজও খাচ্ছে, একটি নির্দিষ্ট দলীয় ফ্রেমওয়ার্ক বা গণ্ডির মধ্যে। স্বৈরাচারী বিশ্ব-বেহায়া এরশাদের কথা বাদ দেয়া যাক। যারা নিজেদের গণতান্ত্রিক দাবি করে স্বৈরাচারকে অবাধে খেঁউড় খিস্তি ঝাড়তে অভ্যস্ত তাদের কথা ধরি। তারা তো জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত সরকার, মুখে দাবি করেন গণতন্ত্রের কথা। তারপরেও তারা জনগণের চাওয়া পাওয়াকে লাথি মেরে কখনো আগ্রহী হয়েছেন নির্দিষ্ট দলীয় আধিপত্যবাদে। বয়ান আর প্রতিশ্রুতি কেন্দ্রিক অনুশীলক রাজনৈতিক অঙ্গনকে গণিকালয়ে পরিণত করেছে। এখানে প্রতিশ্রুতি দেয়া হয় ভাঙ্গার জন্য। আর কথা দেয়া হয় নিছক মুখের ব্যায়াম হিসেবে, যার বাস্তবতা নেই। তাইতো গণতন্ত্র এই আজব যন্ত্রটি হয়ে উঠেছে মুখের ভাষণ আর শ্লোগানে ব্যবহারের অনন্য টনিক। সূত্রঃ আন্তঃজাল থেকে।
Posted on: Tue, 28 Oct 2014 22:37:00 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015