অদিতি ফাল্গুনীর ফেসবুক - TopicsExpress



          

অদিতি ফাল্গুনীর ফেসবুক পোস্ট থেকে : ............................................................................................................. জুয়া খেলতেন ফিওদর দস্তয়েভস্কি। খেলেছেন মহাভারতের ‘যুদ্ধে যিনি স্থির’ সেই সম্রাট যুধিষ্ঠির। একেই বলে আদ্যোপান্ত লেখক জীবন পার করা। ভাল থাকুন গুণদা। সুস্থ হয়ে উঠুন দ্রুতই। ............................................................................................................ ‘আমি যখন বাড়ি পৌঁছলাম তখন দুপুর চিকচিক করছে রোদে’...এমন এক অবিস্মরনীয় পংক্তি দিয়ে শুরু হয় কবি নির্মলেন্দু গুনের ‘হুলিয়া’ কবিতাটি। উনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানে মাথায় হুলিয়া নিয়ে ঘুরতে থাকা এক তরুণ রাজনৈতিক কর্মীর কবিতা এটি। কবিতায় লেখা আলেখ্যও বটে। শেষটা এত সুন্দর যেখানে গ্রামের বাড়িতে আত্মগোপন করে থাকা ছেলেটিকে স্থানীয় চায়ের দোকানে মানুষজন ‘শহরের মানুষ’ ভেবে দেশের নানা খোঁজ-খবর জানতে চায়: শেখ মুজিব জেল থেকে ছাড়া পাবেন কিনা, ভাসানী কি করবেন ইত্যাদি ইত্যাদি। এক সাধারণ আত্মগোপনকারী কর্মী কি এত কিছু জানে? লজ্জিত বোধ করছি এমন অসাধারণ কবিতা আজ সেভাবে মনে না থাকায়। এই কবিতা নিয়েই তানভির মোকাম্মেল পরে স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র ‘হুলিয়া’ নির্মাণ করেন। গুণদার কিছু কবিতা খুবই বিখ্যাত। ‘একটি কবিতা লেখা হবে... তার জন্য অপেক্ষা করছে সবাই। কখন আসবে কবি? কখন আসবে কবি?’ এই কবি আর কেউ নন। স্বয়ং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। কবিতাটি ৭ই মার্চের স্বাধীণতা সংগ্রামের ঘোষণা। তবে বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে লেখা গুণদার কবিতাগুলোর মাঝে আমার সবচেয়ে ভাল লাগে ‘তোমার পুত্ররা মারা গেছে প্রতিরোধের প্রথম পর্যায়ে/তারপর মুছে গেছে পুত্রবধূদের হাতের মেহেদির রং।’ এত নম্র আর বিষণœ কবিতা! কবি মুহাম্মদ সামাদ ভাই পছন্দ করেন গুণদার ‘রশিদ ও সরস্বতী’ কবিতাটি। ঐ যে কবিতায় ময়মনসিংহের রশিদ নামে এক ব্যক্তির হাতে সবচেয়ে সুন্দর সরস্বতী প্রতিমা তৈরির বাস্তব গল্পটি উঠে এসেছে! ২০০৫-এ দিল্লিতে ঢাকা থেকে যাওয়া একটি দলে গুণদার সাথে ছিলাম আমরা কয়েকজন। অধ্যাপক শফি আহমেদ স্যার, কবি সরকার আমিন, কবি জাহানারা পারভীন প্রমুখ। ছয় ফুট দুই ইঞ্চি গুণদার মুখে সাদা দাড়ি আর লম্বা চুল। পাজামা পাঞ্জাবি পরনে। তাকে দেখে পাকিস্থানী দলের কয়েকজন কবি-লেখক একবার আমাদের কাছে স্ট্রেইট জানতে চাইল, ‘আপকা টিম মে ও এক বুজুর্গ আদমি হ্যায় না?’ গুণদাকে তাদের ‘বুজুর্গ আদমি’ মনে হয়েছিল! কবিতা পাঠের সেশনে ওনার নিজের লেখা একটি কবিতার ইংরেজি অনুবাদ (ইন্টারকোর্স উইথ ফায়ার) পাঠের সময় এক অনেক সিনিয়র পাকিস্থানী নারীকবিকে দেখলাম মুচকি হাসছেন। সরকার আমিন ভাইয়ের আবার বদ্ধমূল ধারণা হয়েছিল গুণদা নিশ্চিত কোন ‘নতুন প্রেমে’ আছেন। নয়তো এত কি টেক্সট মেসেজ লেখালিখি সারাদিন? গুণদার প্রতি আমার একটা ছোট্ট ব্যক্তিগত কৃতজ্ঞতা অন্য কারণে। ঢাকা থেকে সারাদিন বাস জার্নি করার পর কলকাতায় পৌঁছে বিশাল স্যুটকেসটি আমার তিনিই তুলে দিয়েছিলেন ট্যাক্সিতে। উফ্...অত সিনিয়র মানুষ...এটা না করলেই বা কি হত তার? তসলিমা নাসরীণের ‘ক’-তে জুয়া খেলায় মত্ত নির্মলেন্দু গুণের কথা জানা যায় যিনি প্রায়ই টাকা-পয়সা হারেন। তাঁকে জুয়া খেলতে নিষেধ করা হলে তিনি জানান যে জুয়া না খেললে তাঁর বন্ধুরা তাঁকে ‘হারামজাদা’ বলে ডাকে। আমি গুণদার এক/আধটা ইংরেজি লেখা এদিক ওদিক পড়েছি। দুটো ভাষা এত ভাল জেনে এই প্রায় অর্দ্ধ-শিক্ষিতে ভরা দেশে কেউ চাকরি-বাকরি না করে বলতে গেলে জীবনভর কামরাঙ্গির চরের বস্তিতে কাটিয়ে, জুয়া খেলে কাটিয়ে দিতে পারে ভাবা যায় না। জুয়া খেলতেন ফিওদর দস্তয়েভস্কি। খেলেছেন মহাভারতের ‘যুদ্ধে যিনি স্থির’ সেই সম্রাট যুধিষ্ঠির। একেই বলে আদ্যোপান্ত লেখক জীবন পার করা। ভাল থাকুন গুণদা। সুস্থ হয়ে উঠুন দ্রুতই। এবার ফুটনোটে বলতে হবে পিয়াস করিম সম্পর্কেও। ব্যক্তিগত ভাবে পরিচয় ছিল। সামনা সামনি ব্যবহারে অসম্ভব সদালাপী, ভদ্র মানুষ ছিলেন। এদেশের অধিকাংশ চৈনিক বামের মত শেষজীবনে যোগ দেন বিএনপিতে। একটু অকালেই আজ সকালে মৃত্যু হলো তাঁর। তাঁর মতাদর্শ যেমনি হোক, ফেবুতে কাউকে কাউকে দেখলাম তাঁর মৃত্যুতে আনন্দ প্রকাশ করতে। সেটার দরকার নেই। তিনি ত’ অন্তত: গোলাম আজম ছিলেন না। তাঁর আত্মার শান্তি প্রার্থনা করি।
Posted on: Mon, 13 Oct 2014 07:53:54 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015