আদালতে কূটনীতিক তলব ও - TopicsExpress



          

আদালতে কূটনীতিক তলব ও সীমিত জ্ঞানের পরিধি আমিনুল ইসলাম শান্ত ২৭ আগস্ট ২০১৪, বুধবার, ৯:৩২ সরকারের কাজে নিয়োজিত বিভিন্ন বিভাগ, বিশেষ করে আইন ও শাসন বিভাগ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলো একটি দেশের জনগণের প্রতিনিধিত্ব যেমন করে, একইভাবে পুরো জাতির মান-মর্যাদাও বহন করে। রাষ্ট্রের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে নিয়োজিত শাসন কর্মকর্তা, আইন কর্মকর্তা, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের কার্যাবলি অবশ্যই রাষ্ট্রীয় সামগ্রিক দায়মুক্তির ঊর্ধ্বে নয়। আর সেসব ব্যক্তির কাজে কোনো প্রকার অদূরদর্শী ও আন্তর্জাতিকভাবে বিতর্কিত ঘটনার বহিঃপ্রকাশ ঘটলে জ্ঞানের অদূরদর্শিতার পরিচয় বিশ্বময় ছড়িয়ে পড়ে। পুরো জাতিকেই বহন করতে হয় সেই অজ্ঞতার দায়ভার। সাম্প্রতিককালে নয়া দিগন্তে প্রধান শিরোনাম হয়েছে ‘দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতকে আদালতে তলব’। কোনো প্রকার পূর্বাপর সূত্র ছাড়াই এ ধরনের শিরোনামে একজন পাঠক হিসেবে আমি হকচকিয়ে যাই এবং গুরুত্ব অনুভব করি। পত্রিকার প্রতিবেদনের প্রথমাংশে লেখা হয়েছে, ‘দক্ষিণ কোরিয়ার রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশের একটি আদলতে তলব করা হয়েছে। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কূটনৈতিকপাড়ায় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। এ নিয়ে দেশটির সাথে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। এ ছাড়া এ ঘটনায় আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ সম্পর্কে বিরূপ ধারণা সৃষ্টি হওয়ারও আশঙ্কা রয়েছে বলে জানিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কোনো রাষ্ট্রদূতের বিরুদ্ধে এ ধরনের সমন জারি ১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশনের সুস্পষ্ট বিরোধী বলে সশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন।’... ১৯৬১ সালের ভিয়েনা কনভেনশনে কূটনৈতিক প্রতিনিধির সুযোগ সুবিধা ও দায়মুক্তি (Privileges and Immunities of diplomatic envoys/Representatives) সংক্রান্ত অনুচ্ছেদ ২০-৪১ এর মৌলিক তথ্যগুলোর আংশিক উল্লেখ করছি। একজন কূটনীতিকের ব্যক্তিগত দায়মুক্তি ও তার মিশনের দায়মুক্তি পরিপূরক ও প্রাসঙ্গিক। ব্যক্তিগত দায়মুক্তি হলো : ‘কূটনৈতিক প্রতিনিধি ব্যক্তি হিসেবে অলঙ্ঘনীয়, তাকে কোনো প্রকার গ্রেফতার করা যাবে না। গ্রাহক রাষ্ট্র যথাযথ সম্মানসহকারে তাঁর সহিত আচরণ করবে এবং তার দেহ, স্বাধীনতা অথবা মর্যাদার উপর আক্রমণ রোধ করার সকল উপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। অর্থাৎ, ফৌজদারি বা দেওয়ানি যেকোনো প্রকার অপরাধের ক্ষেত্রে তিনি ব্যক্তিগতভাবে দায়মুক্ত হবেন।’ এরূপ দায়মুক্তির উদাহরণ দেয়া যায়, এক সময় নিউ ইয়র্কে পাপুয়া নিউগিনির রাষ্ট্রদূতের গাড়ি দুর্ঘটনার মাধ্যমে অনেক মানুষ মারা যায়। ফলে যুক্তরাষ্ট্র ওই রাষ্ট্রদূতকে অবাঞ্ছিত (Persona non grata) ঘোষণা করে। আইন অনুযায়ী তার পরও তার দায়মুক্ত হওয়ার কথা; কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র পাপুয়া নিউগিনির অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করে রাষ্ট্রদূতের বিচার করে। যুক্তরাষ্ট্রের এই বিচার ছিল রাষ্ট্রীয় প্রথার লঙ্ঘন। আর এসব ঘটনা আমাদের জন্য অনুসরণীয় হওয়ার কোনো যৌক্তিক কারণ নেই। যুক্তরাষ্ট্র তার অবস্থান থেকে অনেক কিছুই করে। যেমন সাম্প্রতিক কালে গত বছরের ১২ ডিসেম্বর নিউ ইয়র্কে ভারতের ডেপুটি কনসাল জেনারেল দেবজানি খোবরাগাডকে ভিসা জালিয়াতির অভিযোগে হাতকড়া পরায়; তথাপি এ ঘটনার জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে অনেক মূল্য দিতে হয়েছে এবং বিশ্ববাসীর কাছে সমালোচিত হতে হয়েছে। ভারত সরকার সে দেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কূটনীতিকদের সুযোগ-সুবিধা প্রত্যাহার করে এবং সংসদ সদস্যসহ রাজনীতিবিদেরা তীব্র নিন্দা জানান। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের মধ্যে সম্পর্কে টানাপড়েন শুরু হয়। যদি কূটনৈতিক মিশনের সুযোগ সুবিধা ও দায়মুক্তির কথা বলি, সে ক্ষেত্রে ভিয়েনা কনভেনশন অনুযায়ী ‘কূটনৈতিক মিশনের অঙ্গন অলঙ্ঘনীয়। গ্রাহক রাষ্ট্রের কোনো প্রতিনিধি মিশনপ্রধানের সম্মতি ছাড়া মিশনের অঙ্গনে প্রবেশ করবে না। আরো উল্লেখ আছে, ‘মিশনের অঙ্গন, উহার আসবাবপত্র ও সেখানে অবস্থিত অন্যান্য সম্পত্তি এবং মিশনের পরিবহন যান তল্লাশি, অধিকার, ক্রোক অথবা নির্দেশনামা হতে বিমুক্ত থাকবে। মিশনের অঙ্গন নিজ মালিকানাধীন হোক বা ভাড়াটিয়া হোক, প্রেরক রাষ্ট্র এবং মিশনপ্রধান সেই অঙ্গন সম্পর্কিত যাবতীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক এবং পৌর মাশুল ও কর হতে অব্যহতি পাবেন।’ এ সংক্রান্ত একটি উল্লেখযোগ্য উদাহরণ হলো, সান ইয়াত সেন ইনসিডেন্ট মামলা ১৮৯৬। সান ইয়াত সেন একজন চায়নিজ বিপ্লবী নেতা যিনি লন্ডনে পালায়ন করেন এবং আশ্রয় গ্রহণ করেন। লন্ডনে স্থাপিত চায়নিজ কূটনৈতিক মিশন থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং মিশনের অঙ্গনে তাকে আটকে রাখা হয়। সান ইয়াত সেনের একজন বন্ধু তার পক্ষে ইংল্যান্ডের আদালতে আটকের বিরুদ্ধে হেবিয়াস করপাস (Habeas corpus) রিট করেন। ব্রিটিশ আদালত রায় প্রদান করেন, ব্রিটেন বিদেশী কোনো কূটনৈতিক মিশন অঙ্গনে বল প্রয়োগ করার ক্ষমতা রাখে না এবং হস্তক্ষেপ করবে না। অতীতকাল থেকে অদ্যাবধি অসংখ্য উদাহরণ ও আন্তর্জাতিক মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। আমাদের দেখার বিষয়, বাংলাদেশের আদালতে একজন ব্যবসায়ীর ব্যক্তিগত ব্যবসায় স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে যে মামলা নথিভুক্ত করা হয়েছিল, তার অদূরদর্শিতা প্রসঙ্গ। বাদির আইনজীবী ও আদালত কি আন্তর্জাতিক আইন সম্পর্কে একটুও জানতেন না? পূর্বজ্ঞান না থাকলেও প্রথা অনুযায়ী মামলা গ্রহণের প্রাক্কালে অন্তত আইনজীবীর এ সংক্রান্ত আইন অধ্যয়ন করা উচিত ছিল। তাহলে আমরা কী বলব? সীমিত জ্ঞানের পরিধি নিয়ে চলছে পেশাদারিত্ব? আজ কূটনীতিকপাড়ায় আলোড়ন সৃষ্টিকারী এ ঘটনা বিশ্ববাসী, বিশেষ করে দক্ষিণ কোরিয়া জাতিগতভাবে জেনে গেল আমাদের অদক্ষতা ও অশোভন কাণ্ড সম্পর্কে। আমাদের সম্মান বিশ্বময় এভাবেই ভূলুণ্ঠিত হবে? যে দেশের পাবলিক পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হয়, যে দেশের নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নপত্র ফাঁসসহ নিয়োগের ক্ষেত্রে দলবাজির ঊর্ধ্বে উঠে মেধার গুরুত্ব দেয়া হয় না, সেখানে আমাদের আর কী প্রত্যাশা থাকতে পারে? পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও আইন মন্ত্রণালয়ের উচিত সংশ্লিষ্টদের জবাবদিহিতার মুখোমুখি করা। লেখক : গণমাধ্যমকর্মী
Posted on: Thu, 28 Aug 2014 06:02:08 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015