উনি আমাদের জাফর ইকবাল স্যার..…… গতকাল ২৭ সেপ্টেম্বর শুক্রবার। যুগান্তর পত্রিকার সম্পাদকীয়তে " অস্ট্রেলিয়ায় ঝটিকা সফর" শিরোনামে জাফর ইকবাল স্যারের একটি লিখা প্রকাশিত হয়েছে। আগ্রহ নিয়ে লেখাটি পড়লাম অস্ট্রেলিয়া সম্পর্কে জানার জন্য। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া সফরের চেয়ে আওয়ামী প্রীতি ও বি এন পি,হেফাজত বিদ্বেষই বেশী ফুটে উঠেছে তার এই লেখায়। তিনি লিখেছেন "মেলবোর্ন শহর পৃথিবীর সবচেয়ে বাসযোগ্য শহর। আমি সেখানে গিয়েছি ঢাকা শহর থেকে। যারা বাসযোগ্য শহরের সার্টফিকেট দেন, তারা ঢাকা শহরকে পৃথিবীর সবচেয়ে বাসের অযোগ্য শহরের সার্টিফিকেট দিয়েছেন। আসলে ঢাকা শহর দুই নম্বর, এক নম্বর বাসের অযোগ্য শহর হচ্ছে সিরিয়ার রাজধানী দামেস্ক। সেখানে..…..…..…..…্ । আমার ধারনা,যারা বাসের অযোগ্যতার সার্টিফিকেট দেন, তারা মে মাসের ৫ তারিখে ঢাকা শহরে হেফাজতে ইসলামের তান্ডব দেখার সুযোগ পেলে প্রথম পুরস্কারটা নির্ঘাত দামেস্ককে না দিয়ে ঢাকা শহরকে দিয়ে দিতেন" এতদিন জাফর স্যার যুদ্ধপরাধ ইস্যু দাঁড় করে শুধু জামায়াত-শিবিরের বিরুদ্ধেই লিখে যেতেন। এবার খোলস ছেড়ে বের হয়ে হেফাজতে ইসলাম তথা সকল ইসলামী দলগুলোর বিরুদ্ধেই তিনি কলম নাড়ছেন। এর মানে স্যার এখন সরাসরি আওয়ামী রাজনীতি সমর্থনে নেমে পরেছেন। তার ভাষায় ৫ ই মে তারিখে হেফাজতের ইসলামের তান্ডব অযোগ্যতার সার্টিফিকেট দানকারীদের চোখে পড়েনি,নইলে ঢাকাকেই তারা এক নাম্বার অযোগ্যের সার্টিফিকেট দিতেন। তাই অযোগ্যতার সার্টিফিকেট দানকারীরা ঢাকাকে অযোগ্যতার সার্টিফিকেট দিয়ে নিজেদের অযোগ্যতার পরিচয় দিয়েছেন। জাফর স্যার মনে হয় ৫ ই মের তথাকথিত তান্ডব স্বচক্ষেই দেখেছেন আর ভাল করেই দেখেছেন চশমার পাওয়ারের বদৌলতে। তাইত এই দেশপ্রেমিক নিজের শহরকে পৃথিবীর সবচেয়ে বাসের অযোগ্য শহরের সার্টিফিকেট দিয়ে নিজের দেশপ্রেমের পরিচয় তুলে ধরেছেন। লেখাটি পড়ে আরো জানতে পাড়লাম স্যারের মুচ নিয়ে আমার মত অনেকেরই কৌতুহল আছে। তাইতো অষ্ট্রেলিয়ার এক অনুষ্টানে স্যারের অবৈধ রকম গোঁফ বেড়ে যাওয়া নিয়ে এক দর্শক প্রশ্ন করেছিল। যার উত্তর তার স্ত্রী সামলিয়ে নিয়েছেন। যাই হোক স্যার ঐ লেখায় অস্ট্রেলিয়ার অনেক প্রশংসা করলেও শিক্ষাখাত নিয়ে তিনি সে দেশের সমালোচনা করতে ছাড়েননি। তার ভাষায় "সেখানে যথেষ্ট ভালো শিক্ষক নেই। শিক্ষকের বিশেষ অভাব গণিত বিজ্ঞান বিষয়ে। সমস্যার সমাধান হবে সেরকম আশা ও নাই। বিশ্ববিদ্যালয়ে বিজ্ঞান বিষয়ে ছাত্র ছাত্রী নেই, প্রায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এ বিষয়গুলোই তুলে দেওয়া হচ্ছে! শুনে মনে হয় হুবহু আমাদের দেশের কাহিনীই। এত সম্পদ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ার মত দেশ হিমশিম খাচ্ছে তাহলে আমরা কেন অভিযোগ করছি? শিক্ষার পিছনে জিডিপির মাত্র ২,২ শতাংশ খরচ করে আমরা তো খুব খারাপ করিনি! আরেকটু বেশী হলে না জানি কি হতো! অস্ট্রেলিয়ার জনসংখ্যা দুই কোটি। আর আমাদের স্কুলেই পড়ে তিন কোটি বাচ্চা কাচ্চা। সরকার যদি লেখাপড়ার গুরুত্বটা বুঝে সেনাবাহীনির বাজেট না বাড়িয়ে শিক্ষার বাজেট বাড়াত ,তাহলে এ দেশে কি বিপ্লব ঘটে যেতে পারত কেউ কি কখনও কল্পনা করে দেখেছে" উনার এই বক্তব্যের সাথে একমত হওয়া সম্ভব নয়। কারন তারই ভাষ্যমতে তাদের দুই কোটি জনসংখ্যার তুলনায় আমাদের শিক্ষার্থীরাই তিনকোটি! তাহলে তো আমাদের অন্তত এই ক্ষেত্রে তাদের চেয়ে উন্নত হওয়া উচিৎ ছিল। কেন তাদের তুলনায় আমাদের শিক্ষিতরা বেশী হওয়ার পরও আমরা পিছিয়ে? কেন কলেজ ভার্সিটিতে শিক্ষিত যুবকদের দাঙ্গা মিটাতে গ্রামের মূর্খ মানুষদের যেতে হয়? কেন শিক্ষিত হওয়ার পরও ক্যডার ও সন্ত্রাসী লোক তৈরী হয়? কেন তাদের গণিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষক না থাকার পরও এমন হচ্ছেনা? কারন আমাদের গনিত ও বিজ্ঞানের শিক্ষকের অভাব নেই কিন্তু মনুষত্বের শিক্ষকের বড়ই অভাব। আমাদের শিক্ষকরা হলেন পরিমল,পান্না,এম কে আনোয়ার হোসেন গং..…্। আমাদের শতকরা একশজন শিক্ষার্থীর মধ্যে ১০ জন হয় সুশিক্ষিত। বাকীদের কেউ হয় দূর্নীতিবাজ, কেউ সন্ত্রাসী, কেউ সুরঞ্জিত , কেউ আবুল হোসেন, কেউ বাপ্পাদিত্য বসু, কেউ এরশাদ শিকদার, কেউ রাজীব হায়দার। তাই এখানে যতই শিক্ষাখাতে ব্যয় করা হয়না কেন, যতই শিক্ষার্থীর সংখ্যা বৃদ্ধি পায়না কেন দূর্ভাগ্যজনকভাবে সেই হারে উপরোল্লিখিত বস্তুও বৃদ্ধি পাবে। আমাদের এখানে ছাত্রীদের ধর্ষনকারী শিক্ষক, কুত্তার বাচ্চা বলে গালি দানকারী শিক্ষক, রিকশাওয়ালাকে থাপ্পর মারনে ওয়ালা শিক্ষক আছেন কিন্তু মনুষত্বের শিক্ষক খুবই কম। আর অস্ট্রেলিয়ায় গনিতের শিক্ষকের অভাব আছে তবে মনুষত্বের শিক্ষকের অভাব নেই। আমার দৃষ্টিতে পৃথিবীর সকল দাড়িবিহীন মূচ-ওয়ালা ব্যক্তিদের মধ্যে ব্যতিক্রমী কিছু প্রতিভা থাকে। আইনস্টাইন,হিটলার থেকে শুরু করে শাহরিয়ার কবীর,মিজানুর রহমান,আনোয়ার হোসেনদের দেখলে এটাই প্রমানিত হয়। আমাদের জাফর স্যারও এর ব্যতিক্রম নয়। মিথ্যা প্রকাশের যে দূরন্ত সাহস ও ব্যতিক্রমী প্রতিভা তার মধ্যে বিদ্যমান তা সত্যি-ই বিস্ময়কর! বাচ্চাদের জন্য মিথ্যা ও ইনিয়ে বিনিয়ে গালগল্প লিখার যে গুন উনার আছে, সম্ভবত তার বাস্তব জীবনেও তা যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। ইদানিং তার লেখাগুলোতে এটাই প্রতিয়মান হচ্ছে। যদিও স্বাভাবিক মানুষদের মিথ্যা আর উচ্চশিক্ষিত ডিগ্রীধারীদের মিথ্যার মধ্যে নিরপদ পার্থক্য বিদ্যমান রয়েছে। তারপরও ঠোঁটের উপর মুচের বাঁধা অতিক্রম করে যে সত্যটুকু বের হয় তা ও আবার কম কিসে?
Posted on: Sat, 28 Sep 2013 12:52:24 +0000