কার্ড ও - TopicsExpress



          

কার্ড ও কাব্য ----------------- লিখেছেন -পিয়াস- সকাল থেকেই মনে মনে অস্থির হয়ে আছে ঐশী। ইশ! বিকালটা আজ আসেই না। অবশ্য যথাসম্ভব চেষ্টা করছে সেটা গোপন রাখতে। তারপরেও কলেজ থেকে ফিরে, খেয়ে শোয়ার আগে চুপি চুপি গেটে গিয়ে খোজ নিয়ে এসেছে কুরিয়ারের লোকটা এসেছিল কিনা। না আসেনি। জানে যে লোকটা সাধারণত সন্ধ্যার আগে দিয়ে আসে, তারপরও ঘুম আসতে চায় না। এপাশ ওপাশ করতে করতেই দুপুর গড়িয়ে যায়। শেষে থাকতে না পেরে যখন একটা গল্পের বইয়ে মন দেওয়ার চেষ্টা করছে, তখনই রুমের দরজায় করাঘাত। এক লাফে উঠে সাবধানে দরজা খোলে ঐশী, যাতে রুমমেটের ঘুম না ভাঙ্গে। দরজা খুলতেই দেখে দারোয়ানের ভাতিজা পিচ্চিটা দাঁড়িয়ে। হাতে একটা খাম। এটার জন্যেই এত অস্থিরতা। দারোয়ান চাচাকে বলে রেখেছিল যাতে ও’র নামে কিছু আসলে হোস্টেলের কারো হাতে না দিয়ে উনার কাছে রেখে দেন। ও’র বারবার খোঁজ নেওয়া দেখে জরুরী ভেবে পিচ্চিকে দিয়ে পাঠিয়ে দিয়েছেন। পিচ্চিকে একটা পাঁচটাকা দিয়ে বিদায় করে দেয়। তারপর সাবধানে খামটা খোলে। জানে কি বেরোবে, একটা খুব সুন্দর কার্ড আর সাথে গোলাপ কিংবা অন্য কোন ফুলের পাপড়ি। তারপরও প্রতিবার খাম খুলে ও সারপ্রাইজ পাওয়ার আনন্দ পায়। কারণ কার্ডের ভিতর সবসময় একটা কবিতা লেখা থাকে। কবিতাটা ওকে নিয়ে লেখা। আজকেও খাম খুলে বেরুলো একটা কার্ড, উপরে খুবই সুন্দর একটা ল্যান্ডস্কেপ। আশে পাশে তাকিয়ে সাবধানে কার্ডটা খোলে ও। ভিতরে বেলী ফুলের পাপড়ি। আর এক টুকরো কাগজে একটা বিশাল কবিতাঃ সেদিন ভোরে, হঠাৎ করে, দরজা খুলে দেখি শাল জড়িয়ে, আদুল পায়ে, তুই দাঁড়িয়ে একী! হাত বাড়িয়ে, রিনঝিনিয়ে, ডাকলি আমায়, ‘আয়, সাত সকালে শিশির দলে, হাটবো খালি পায়।’ অবাক চোখে, তোকে দেখে, আটকে গেলো কথা কী হল যে, বুকের মাঝে, বাজল কেমন ব্যাথা। খাচ্ছি খাবি, হাবি জাবি, আসছে কত মনে চাচ্ছি যেটা, বলতে সেটা, পারছি না কী কারনে? সয়না যে তর, বুকের ভেতর, মন করে আনচান ভাব দেখে মোর, কণ্ঠে যে তোর, ঝরল অভিমান মুখ বাকিয়ে, চুল ঝাকিয়ে, বললি, ‘কিরে, এই আমার সাথে, হাটতে যেতে, সময় বুঝি নেই?’ কেমন করে, বলব তোরে, সুযোগ যদি পাই জয় করে ভয়, সকল সময়, তোকেই দিতে চাই ধুত্তুরি ছাই, কেমনে বোঝাই, হয়না কথা বের তার চেয়ে এই, নীরবতা-ই, লাগছে ভালো ঢের। থমকে গিয়ে, রই দাঁড়িয়ে, নামিয়ে চোখের পাতা বাকিয়ে ভুরু, করলি শুরু, উলটো দিকে হাটা এতক্ষণে, পড়ল মনে, ভাঙ্গল বুঝি ঘোর পা বাড়িয়ে, এগিয়ে গিয়ে, হাতটা ধরি তোর। রাগ দেখিয়ে, হাত ছাড়িয়ে, বললি অভিমানী ‘লাগবে না যাও, আমায় ছাড়াও, চলবে তোমার জানি। জোর করে তাই, মুখটা ফেরাই, টেনে আমার দিকে অবশেষে, আবেশ শেষে, ফুটল কথা মুখে- বলি যে তোর, অশ্রুকাতর, চোখের দিকে চেয়ে- ‘এমন ভোরে, নিঃস্ব করে, যাসনে ওরে মেয়ে তুই যে আমার, খুশির আঁধার, একমাত্র সুখ নয়নমণি, সোনার খনি, হৃদয়ের ধুকপুক। রাখব তোকে, চেপে বুকে, সারা জীবন ভর ভুল করেও, কোনো দিনও হোসনে যেন পর পাশে যদি, নিরবধি, থাকিস সবসময় রাত্রি শেষে, মুচকি হেসে, হবেই সুর্‍যোদয়। আরও কয়েকবার পড়ে ও কবিতাটা। যতই পড়ে ততই ভালো লাগে। কবিতাটা খুব ভালো না খারাপ তা ও জানে না। ও’র ভালো লাগার প্রধান কারণ হল কবিতাটা ওকে নিয়ে লেখা এই জন্য। মজার ব্যাপার হলো, এই কার্ড বা কবিতা কে পাঠিয়েছে তা ও জানে না। কবিতা সহ একটা কার্ড ও গত দেড় বছর ধরে পেয়ে আসছে। প্রথমে মাসে একটা করে আসতো। ছয় মাস পর মাসে দুইটা করে, এখন আসে সপ্তায় একটা। কার্ডে কোন ঠিকানা এমনকিকুরিয়ারের রিসিটেও খুঁজে কিছু পায়নি। কিন্তু প্রতি রবিবার নিয়ম করে কার্ড চলে আসে। প্রথম যেদিন কার্ড পেয়েছিল সেদিন ভেবেছিল ভুল করে চলে এসেছে। হাতে আঁকা খুব সুন্দর একটা মেয়ের ছবি তাতে। সাথে একটা কবিতা। তাও আবার ইংরেজিতেঃ When u bend your nice lip line Those cute dimples rise and shine. Shy face, low sight, chicks are red That’s called innocence everyone said. It is the best jewel u can get Always top that as your asset. Watching your happy face makes my day Colors my life and removes all gray. That makes my everything fresh and new In my dark life, the sun is u. আশেপাশের সবাইকে দেখিয়েছিল ডেকে। সবার সেকি ঠাট্টা তামাশা তা নিয়ে, ঐশী নিজেও অনেক মজা করেছে। অবশ্য সেই বেচারির জন্য আফসোস হয়েছিল, যার জন্যে পাঠানো কার্ড ভুল করে ও’র কাছে চলে এসেছে। কিন্তু তারপর যখন আসতেই থাকল, ও বুঝল ভুল করে না, ও’র জন্যই আসে খামগুলো। তারপর আর ফাজলামো করে না এটা নিয়ে। কাউকে ডেকে দেখায়ও না। শুধু রুমমেটদের দেখাতো, কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ কাউকেই দেখায় না। কেন যেন মনে হয় এর সবটুকু পুরোটা শুধু ও’র। আর কারো ভাগ নেই এতে। তাই এখন লুকিয়েই পড়ে কবিতাগুলো। বান্ধবীরা অবশ্য প্রায়ই জিজ্ঞেস করে, ‘কিরে, তোর দিওয়ানার কি খবর?’ ও শুধু মুচকি হেসে এড়িয়ে যায়। তবে প্রথম পাওয়া এই কবিতাটাই ও’র সবচে প্রিয়। আয়নায় মুখ দেখতে গিয়ে যখনই গালের টোল দুটোর দিকে নজর যায়, তখনই ও’র কবিতাটা মনে পড়ে। গালদুটোও একটু লাল হয়ে যায় কী! প্রথম কার্ড পাওয়ার পর ঐশীর ভেতর তেমন কোন প্রতিক্রিয়া হয়নি। তিন মাস পরও যখন কার্ড পেতে থাকল তখন ও খুব কৌতূহলী হয়ে উঠল। এমন না যে, এই প্রথম ও এই ধরনের কিছু পেল। এর আগেও অনেকেই ওকে নানাভাবে প্রপোজ করেছে, এরচে অনেক দামী ও সুন্দর গিফট ওকে দিয়েছে। হিসেবি ঐশী সযত্নে সেসব এড়িয়ে গেছে। কিন্তু কেউ যদি এরকম সম্পূর্ণ আড়ালে থেকে মনের কথা জানিয়ে যায়, তার প্রতি কৌতূহল তো জন্মায়ই। কিন্তু ভেবে পায়না কে হতে পারে। মাত্র চার মাস হয় মেডিকেল কলেজে ভর্তি হয়েছে তখন। সিনিয়র না ইয়ারমেট কিছুই ভেবে পায় না। ইয়ারমেটও তো কম না, এর মধ্যে কে তা খুঁজে বের করে কি করে? প্রথম দিকে তো ও সবাইকেই কার্ডগুলো দেখাত, তাই সবাইকেই বলা ছিল, কার্ডওয়ালার ব্যাপারে কিছু জানলেই যেন ওকে জানায়। আরও তিনমাস গেল কিন্তু কোন খবর আসে না। ততদিনে কৌতূহল ছাপিয়ে ঐশী ছেলেটার প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠেছে। ওরও খুব ইচ্ছে করতো কবিতাগুলোর জবাব দেওয়ার কিন্তু দেবে কিভাবে? এতদিনেও তো কোন খোঁজ বের করতে পারলো না। শেষমেশ ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়া শুরু করলো। যেদিন কবিতা আসতো সেদিন রাতে ও কবিতার জবাবে একটা স্ট্যাটাস দিত। নাম ঠিকানা উদ্দেশ্যহীন একটা স্ট্যাটাস। মেয়েরা এ ধরনের স্ট্যাটাস দিয়েই থাকে তাই কেউ গা করতো না। ও আশা করতো ছেলেটা অবশ্যই স্ট্যাটাস গুলো দেখবে। কারণ যে ছেলে তার জন্য এতো পাগল সে অবশ্যই তার খোজ রাখার জন্যে হলেও ফেসবুকে ওকে ফলো করবে। এসব উদ্দেশ্যহীন স্ট্যাটাসেও প্রচুর লাইক কমেন্ট পড়তো। ও সেসব কমেন্ট থেকে বের করার চেষ্টা করতো কে হতে পারে। কিন্তু কোন হদিসই বের করতে পারে না। তাহলে কি ছেলেটা দ্যাখে না ও’র স্ট্যাটাসগুলো? এবার জন্মদিনের আগে ঐশী স্ট্যাটাস দিল, ‘শোনেন, খুব সুন্দর একটা গিফট চাই আমার জন্মদিনে, বুঝলেন?’ জন্মদিনের দিন খুব আগ্রহ করে অপেক্ষা করে আছে, কিন্তু কিছুই এলো না। পরিচিত অনেকেই উইশ করলো, গিফট দিল। কিন্তু ও যেটার জন্য আশা করে ছিল তা আর এলো না। এমনকি একটা কার্ডও না। এলো ঠিক মাসের যেদিন আসার কথা সেদিন। একটা জন্মদিনের কার্ড আরঃ চাইছো কিছু আমার কাছে, কি দেই বলো তোমায়? নেইতো আমার তেমন কিছু, তোমাকে যা মানায়। আমার হল বাবুর জীবন, ষোল আনাই ফাকি একান্ত-ই আমার বলে নেই কিছু আর বাকি। দিতে পারি আমার যত একলা জাগা রাত চাও যদি তা নিতে. তবে বাড়াও দুটি হাত রাত্রিগুলো প্রতীক্ষা আর দীর্ঘশ্বাসে আঁকা জড়িয়ে তোমায় রাখবে সদাই আমার একা থাকা। নীল রঙ্গা এক নদী আছে. চাও তার সবটুকক? ঢেউয়ের তোড়ে নিত্য যেটা ভাংছে আমার বুক নদীর নীলকে পাল্টে দিতে যেদিন নেবে শিখে সেদিন ঠিকই এই নদীটা তোমায় দেব লিখে। না বলা সকল কথা বুকে জমে জমে বেদনার এক মহাকাব্য হচ্ছে ক্রমে ক্রমে সেই কাব্যের প্রতি লাইন লেখা চোখের জলে সেটাও দিতে পারি তোমার নিতে ইচ্ছে হলে। পুরনো এক স্বপ্ন মেশিন আছে দুচোখেতে অনেক দিনের অবহেলায় জং ধরেছে তাতে নেবে সেটা? একটু খানি করতে হবে সারাই আমার এখন দিন কেটে যায় স্বপ্ন দেখা ছাড়াই। একটা সময় হৃদয় ছিল, এখনতো নেই অত সেথায় এখন ছোট বড় অযুত নিযুত ক্ষত ভালবাসা এখনতো আর হয়না সেথায় জমা তাইতো এত পাষান আমি, আমায় করো ক্ষমা। কবিতাটা পেয়ে ঐশী যতটা খুশি হল, ততটাই খুশি হল এটা বুঝে যে, ছেলেটা ওর কথাগুলো ফলো করে। এরপরে ও নানা ধরনের স্ট্যাটাস দিয়েছে, অনেক অনুরোধ করেছে পরিচয় জানতে চেয়ে, কিন্তু কোনোভাবেই কিছু বের করতে পারেনি। এর মধ্যে ঐশীর আগ্রহ এখন ধীরে ধীরে ভালো লাগায় রূপান্তরিত হয়েছে। কেউ তাকে নিয়ে ভাবে, তার জন্য কবিতা লেখে, তাকে নিয়ে স্বপ্ন দেখে, ভাবনাগুলোই কেমন যেন! চিন্তা করলেই একটা অন্যরকম ভালোলাগায় মনটা ভরে যায়। ছেলেটা কে তা খুঁজে বের করার চেষ্টা কিন্তু তখনও অব্যাহত আছে। তবে এক্ষেত্রে অভাবনীয় একটা অগ্রগতি হয়েছে। ছেলেটা যে ওরই ক্লাসমেট এটা ঐশী বের করতে পেরেছে। ওরা এক ক্লাসে ৪৫ জনের মত ছাত্র ছাত্রী। সেদিন ছিল এনাটমি থার্ড টার্ম পরীক্ষার ভাইবা। যে স্যারের কাছে পরীক্ষা, উনার স্বভাব খুব খারাপ। পরীক্ষায় স্টুডেন্টদেরকে বিশেষ করে ছাত্রীদেরকে কাঁদিয়ে উনি বিশেষ মজা পান। গ্রুপের সবাই ডিসেকশন রুমে বসে আছে আর একজন একজন করে ভাইভা দিচ্ছে। স্যারদের অপমান ছেলেদের গায়ে লাগে না কিন্তু মেয়েরা যথারীতি কান্না করতে করতে বেরুলো। পরের সপ্তায় যে কার্ডটা এলো তাতে লেখা ছিলঃ কাজল টানা চোখের কোণে অশ্রু যদি ঝরে, ভীষণ করে জড়িয়ে তোরে রাখব বুকে ধরে । হাত বাড়িয়ে মুছব না তোর চোখের জলের ধারা, রুমাল ও না, বুকের জামা ভিজে হোক সারা । অশ্রু বৃষ্টি রিমঝিমিয়ে আমার বুকে পড়ুক রৌদ্র জ্বলা বুকের মরু কানায় কানায় ভরুক । বাধনহারা নোনতা জলে আসুক নেমে বান অনেক দিনের ভীষণ খরার ঘটুক আবসান । এরপর থেকেই ঐশী ক্লাসের সব ছেলের উপর নজরদারি বাড়িয়ে দিল। ২১ জন ছেলে ওদের ক্লাসে। এদের মধ্যে কেউ ও’র দিকে বেশি নজর রাখে কিনা, যখন তখন তাকিয়ে থাকে কিনা বা হাবে ভাবে কিছু বুঝাতে চায় কিনা! কিন্তু বের করতে পারে না কে হতে পারে। কারণ ক্লাসের অনেকেই কারণে অকারণে ও’র দিকে তাকায় থাকে। হাব ভাব অনেকেই দেখায় কিন্তু ওদের স্বভাবই এরকম। এর মধ্যে একজন যার নাম রিফাত, সে মাঝে মাঝে কবিতা লেখে, ফেসবুকে দেয় মাঝে মাঝে। ও কি হতে পারে? কিন্তু ও তো তারিনের সাথে ঘোরে সবসময়। তানজিম কি হবে? ও যেচে পড়ে সবসময় ঐশীকে সাহায্য করতে চায়। কিন্তু ও হলে তো এতদিনে বলেই দিত। তুর্‍্য, মিজান কিংবা আনোয়ার? সবাইকে নিয়েই ভাবে কিন্তু বের করতে পারে না। কয়েকজন আছে চরম মাত্রায় আতেল। ওদের দ্বারা এসব সম্ভব না। কয়েকজন আছে লেখাপড়ার ধারে কাছেও যায় না, রুবেল, সাইফুল কিংবা মোটকা আসিফ। এরা সারাদিন কি করে কে জানে? এদের মধ্যে আসিফকে দেখলেই ও’র গা জ্বলে। ব্যাটা ডাক্তার হবি অথচ নিজের স্ব্যাস্থের দিকে কোন নজর নাই। দিনে দিনে শুধু মোটাই হচ্ছে। ক্লাসে ঐশীর সবচে পছন্দ রাতুল। ক্লাসের মনিটর সে। মেয়েদের সাথে বেশ ফ্রী অবশ্য। এই একটা দোষ ছাড়া আর সব ভালো। এমনকি ও মনে মনে দোয়াও করেছে, ‘আল্লাহ, ছেলেটা যেন রাতুল হয়।’ আবার দোয়ার পরেই লজ্জায় লাল হয়েছে সে এসব কি ভাবছে চিন্তা করে। আজকেও কার্ডটা পেয়ে অনেকক্ষণ আবারো ক্লাসের সবার কথা ভাবল একবার। কিন্তু কিছুই বের করতে পারলো না। ও’র খুব অস্থির লাগতে লাগলো। এটা অবশ্য গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই হচ্ছে। ও’র খুব অসহায় লাগছে। একটা ছেলে তার আবেগ নিয়ে খেলছে। দূর থেকে সে সবই জানছে, দেখছে কিন্তু ঐশী কিছুই পারছে না। অস্থিরতা একসময় রূপ নিল রাগে। রাগ থেকে জেদে। ছেলেটা পেয়েছে কি? সারাজীবন কি আড়ালেই থেকে যাবে? এভাবে চলতে দেওয়া যায় না। গত কয়েক সপ্তাহ সে বহু অনুনয় বিনয় করেছে ও’র সাথে দেখা করার জন্যে। কিন্তু কোন জবাব পায়নি। ছেলেটা তো ঠিকই ও’র কথা জানছে। ও কেন জানবে না। ওরও তো ইচ্ছে করে। অনেক হয়েছে। খেলাটা এখানেই শেষ করতে হবে। আরও কিছুদিন গেলে ও আর নিজেকে সামলাতে পারবে না। তখন যদি ছেলেটা উল্টো কিছু করে তাহলে ও সইতে পারবে না। এখনই কিছু করতে হবে। হয় এটা বন্ধ হবে, নাহয় ঠিকভাবে চলবে, যাতে ওরও পুরো অংশগ্রহণ থাকবে। সেদিন রাতেই ও স্টাটাস দিল, ‘শোনেন, আপনার দেখা চাই। অনেক কথা জমে আছে বলার জন্য।’ পরের দিন আবার দিল, ‘শোনেন, এভাবে চলতে পারে না। আপনার দেখা চাই।’ তার পরের দিন, ‘শোনেন, প্লীজ আপনার পরিচয় দিন।’ তার পরের দিন, ‘শোনেন, আমাদের দেখা হওয়াটা জরুরী’ তার পরের দিন, ‘শোনেন, আমি আর দেখা না করে থাকতে পারবো না।’ তার পরের দিন, ‘শোনেন, দেখা করেন আমার সাথে, প্লীজ প্লীজ প্লীজ।’ তার পরের দিন, ‘শোনেন, আমরা কোথায় দেখা করব, কালকেই তা জানতে চাই।’ কিন্তু তার পরের দিন আবার যথারীতি খামে শুধু কবিতা। কোন মেসজ বা আর কিছু নেই। মনে মনে খুব ক্ষেপে গেল ঐশী, সেদিন রাতে লিখল, ‘শোনেন, আপনি যদি দেখা না করতে চান, তাহলে দয়া করে আমাকে আর কিছু পাঠাবেন না। আমি আপনার কাছ থেকে আর কিছু চাইনা।’ পরের দিন ক্লাসে একটা কাণ্ড করে বসল ও। টিফিন শেষে ওরা তখন স্যার আসার অপেক্ষা করছে, ও সোজা ছেলেদের বসার জায়গাটার দিকে এগিয়ে গিয়ে কালকে পাঠানো খাম সমেত কার্ডটা কুচি কুচি করে ছিড়ে উড়িয়ে দিল। সবাইতো অবাক। কিন্তু স্যার ঢুকে পড়ায় কেউ কিছু বলার সুযোগ পেল না। পরের সপ্তাহে যখন আবারো ও শুধু কবিতা পেল, পরের দিন আবারো একই কাণ্ড করল। পরের সপ্তাহেও এই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটালো। এবং স্ট্যাটাস দিল, ‘শোনেন, যদি আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে আমার সাথে দেখা না করেন, তাহলে আপনি যেই হন না কেন এবং এর পর আমার সাথে যখনই দেখা করেন না কেন, আমি আপনাকে কখনোই মেনে নেব না।’ এর পরের সপ্তায় কোন কার্ড এলো না। পরের সপ্তায়ও না। মনে মনে ঐশী খুব ভেঙ্গে পড়েছে। কিছুই ভালো লাগছে না ও’র। চারপাশের সবকিছু কেমন দমবন্ধ লাগছে। ছেলেটা ও’র সাথে এমন করবে ভাবতেও পারেনি। থাকবে না ও আর এখানে। বাড়ী চলে যাবে। কাল ক্লাস করে এসেই বাসে উঠবে। পরদিন গোছগাছ করে বেরুতে যাবে। তখনই পিচ্চিটা এসে হাজির। হাতে একটা খাম। দাঁতে দাঁত চেপে খামটা খুললো ঐশী। ভিতরে একটা সরি লেখা কার্ড। তবে কার্ডের ভিতরের কাগজে কোন কবিতা নেই আজ। তার বদলে লেখা, BROAST CAFE 6.00 pm খামটা পেয়ে খুশিতো হলই না বরং রাগ যেন আরও বেড়ে গেল ওর। আজ ছেলেটার খবর আছে। ওকে নিয়ে খেলার মজা হাড়ে হাড়ে টের পাইয়ে দেবে। রেস্টুরেন্টে একাই এসেছে ঐশী। ছেলেটা ও’র ক্লাসেরই কেউ, তাই চিনতে পারবে সহজেই। দরজায় দাঁড়িয়ে একটা লম্বা দম নিল, যা যা বলবে বলে এতক্ষণ ঠিক করেছে তা আবার মনে করে নিল, তারপর ঢুকল ভিতরে। মাত্র সন্ধ্যা নেমেছে। তাই এখনো লোক অত হয়নি। এদিক ওদিক তাকিয়ে পরিচিত কাউকে দেখল না ও। মেজাজ খারাপ করে ফিরতে যেতেই দ্যাখে উল্টো পাশে অন্ধকারমত জায়গায় একটা ছেলে বসে আছে। ও ভালো করে তাকাতেই ছেলেটা উঠে দাঁড়াল। ‘এই সাহস নিয়ে আমারে প্রেমের কবিতা পাঠাও? তোমার আজ খবর আছে!’ মনে মনে ভাবে ঐশী। এগিয়ে যেতেই অবাক হয়ে দ্যাখে, আরে এ যে মোটকাটা বসে আছে। একে দেখে তো ও’র মেজাজ আরও খারাপ হওয়ার কথা কিন্তু অবাক করা ব্যাপার হল, ও’র মেজাজ খারাপ হচ্ছে না। ভুরু টুরু কুচকে রাগি রাগি ভঙ্গি করে এগিয়ে গেলেও ও বুঝতে পারছে ওর রাগ ক্রমশ কমছে। মোটকার চেহারার দিকে তাকিয়ে রাগ বাড়ানোর চেষ্টা করলো, কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হল, মোটকাটাকে খুব কিউট লাগছে আজ। ধ্যুত! এভাবে চলতে থাকলে তো কিছুই বলতে পারবে না ও। এই ক্যাবলাটাও তো কিছু বলে না যাতে রেগে গিয়ে ও কিছু বলতে পারে। আরও কিছুক্ষণ চেষ্টার পর, বহু কষ্টে ও বলতে পারে, ‘দেখুন আপনাকে মানে তোমাকে আমি এক সপ্তাহের সময় দিসিলাম। আমি বলসিলাম যে, এর পর আমার সাথে দেখা করলে আমি তোমাকে মেনে নেব না। আমি এখানে আসছি শুধু তুমি কে তা জানতে। তোমার কবিতাগুলোর জন্যে ধন্যবাদ। আশা করি তুমি আমাকে আর বিরক্ত করবে না। কোন জবাব নেই। এবার সত্যি রাগ হয় ঐশীর। ‘গাধার বাচ্চা গাধা সব পিরীত কবিতায় না! এখন যে চলে যেতে চাচ্ছি, আটকানোর সাহস তো নাই।’ মনে মনে বলে ও, আর মুখে বলে, ‘ তোমার বোধহয় কিছু বলার নেই, আমি যাই তাহলে।’ মাথা ঘুরাতেই শুনতে পায়ঃ চলে যাব বললেই কি আর চলে যেতে দেব? তোর পথ ঘুরিয়ে আবার দেখিস আমার দিকেই নেব। রাগের চোটে করিস যদি চলে যাওয়ার খেয়াল, পথের মাঝে তুলব গড়ে, ভালবাসার দেয়াল। মুখ ঘুরিয়ে চলতে গেলে ধরব টেনে আচল আদর করে চোখে দেব পথ ভুলানো কাজল। এদিক সেদিক ঘুরে ফিরে দেখবি অবাক হয়ে তোর সামনে দাঁড়িয়ে আমি হাসছি মিটমিটিয়ে। এরপরেও যদি রে তোর পাগলামি না যায়, রক্ত জবার নূপুর গড়ে, পরাব তোর পায়। সেই জবার শিকড় আমার বুকেরি বাম পাশ রক্ত ঝরে পড়বে যদি আমায় ছেড়ে যাস। তোর রাস্তা পিছল হবে আমার রক্ত ঝরে ঝরে চলতে গেলেই যাবি দেখিস হোঁচট খেয়ে পড়ে। এর পরেও বলরে মেয়ে আমায় ছেড়ে যাবি? আমার মতন পাগল প্রেমিক আর কোথাও কি পাবি? তোর চলার সকল পথের আমিই শেষ সীমানা খোদার কসম, এই কথাটা রয় যেন তোর জানা। এই বুকেতেই ঠিকানা তোর, বসত বাড়ী ঘর, আগলে তোকে রাখবো, আসুক- রোদ, বৃষ্টি ঝড়। ঐশীর চোখের কোণায় কখন এক ফোটা পানি জমা হয়েছে তা ও নিজেও জানে না।
Posted on: Sat, 28 Sep 2013 16:30:59 +0000

Recently Viewed Topics




© 2015