ক্রিং ক্রিং - TopicsExpress



          

ক্রিং ক্রিং ক্রিং স্ক্রিনে এক পলক তাকিয়ে ফোনটা কানে দিল তওসিফ। ঃ২৬ তারিখ সকাল ৭ টার সুবর্ণা টিকিট করবা, ২টা। ২০/২১ তারিখের দিকেই টিকিট করে ফেলবা। ও ১৭ তারিখ চলে যাবে। এর মধ্যে দেখা হওয়ার সম্ভাবনা কম। সুতরাং আমাকে ঢাকা যেতে হবে। ঢাকায় গিয়ে ওর সাথে দেখা করে সরি বললে ও না বলতে পারবে না। ঠিক না বল... অপর প্রান্তে প্রিয়া ফোন কানে দিয়ে স্তব্ধ হয়ে বসে আছে। হাঁসবে না কাঁদবে বুঝতে পারছে না। ঃকি ব্যাপার, কথা বলছ না কেন? ঃনা, কি বলব বুঝতে পারছি না! ঃএ’কদিনে কথাগুলো সকাল বিকাল শুনতে শুনতে মুখস্ত হয়ে গেছে। কেমন মুখস্ত হল তারই একটা ছোটখাট পরীক্ষা দিলাম। ইতস্তত করে প্রিয়া বলল, “আ..আমি কি তোমাকে বেশি বিরক্ত করছি? ঃনা ম্যাডাম, আপনার সৌভাগ্য, আপনি একজন বাধ্যগত ‘কলুর বলদ’ খুঁজে পেয়েছেন যে সহজে কাউকে না বলতে পারে না! ঃআমি extremely sorry কিন্তু…… ঃওকে ওকে , নেক্সট থেকে আমাকে কাউন্ট শুরু করতে হবে তুমি এ’কদিনে আমাকে ক’বার ‘sorry’ আর ‘thanks’ বলেছ আর আমি ক’বার ‘okay’ বলেছি! ঃকি করব বল, আমি এ’কদিনে ওকে ২৩২ বার ফোন কল করেছি আর ৮৭টা মেসেজ পাঠিয়েছি! কিন্তু no reply, no response … ঃহুম, statistics শুনে মনে হচ্ছে এই কাজ কোন কবরের পাশে গিয়ে করলে মৃত ব্যক্তিটিও উঠে আসতে বাধ্য হত! ঃ ধুর এগুলো কি বল! ঃকেন ভয় পাচ্ছ? ঃনাআ... আচ্ছা তুমিই বল, আমি যদি এখানেই ওর সাথে দেখা করতে পারতাম তাহলে কি ঢাকা যেতে হত? ও ফোন ধরে না , বাসা থেকে বের হয় না, আমিও ওর বাসায় যেতে পারছি না , ওর আম্মুতো এমনিতেই আমাকে সহ্য করতে পারে না। ঢাকায় তো ও একা থাকে , সেখানেই যেতে হবে। no way…. ঃ হুম! এই কথাগুলোও অনেকবার শুনেছি, তারপর? ঃআমি যদি ওর সামনে গিয়ে সরি বলি , ও আমাকে মাফ করবে না? বল… ঃ হুম , করবে , অবশ্যই করবে, করাই উচিত! ঃ ইনশাআল্লাহ বল। ঃ ইনশাআল্লাহ। ঃতুমি কিন্তু টিকিট করে ফেলবা। ঃ হুম হুম! ঃবারবার হুম করছ কেন? দেখ, ফান করবা না কিন্তু। আমি সিরিয়াস তুমি বুঝতে পারছনা? আমি খেতে পারিনা , ঘুমাতে পারিনা। কারো দিকে তাকিয়ে কথা বলতে পারি না, চোখে পানি চলে আসে… ঃ ঠিক আছে তো! ২৬ তারিখ তুমি তার সাথে দেখা করছ at any cost. Okay? ঃ okay, bye. ঃ Bye. ফোন কাটল তওসিফ, স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে আপনমনেই বলল, “ক্ষ্যাপা”!! বসে বসে ভাবছে তওসিফ, এমনিতে একা থাকতেই পছন্দ করে সে। নিঃসঙ্গতাকে উপভোগ করে সে। নিজ ঘরে পড়ে পড়ে ঘুমানো, একা রাস্তায় হাঁটা, বৃষ্টিতে ভেজা আর বই পড়া... এগুলোকেই ভালবাসে সে। কিভাবে কিভাবে যেন প্রিয়ার সাথে বন্ধুত্ব হয়ে গেছে তার। বিষয়টাকে সে উপভোগ করে তবে এই বন্ধুত্বটা তার স্বভাব বিরুদ্ধ! মেয়েটা বিপদে পড়েছে, রীতিমত ঘর ভাঙার বেদনা! ২৬তারিখ আসতে এখনও ঢের দেরী, কিন্তু এরি মধ্যে সকাল বিকাল ফোন করে তা মনে করিয়ে দেয় প্রিয়া। টিকিটটা করে ফেলতে হবে। ভোর ছ’টার দিকেই বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েছে প্রিয়া। টেনশন হচ্ছে খুব। সবকিছু ঠিকঠাক মত হবে তো! এর মধ্যে তওসিফ আবার ফোন ধরছে না সকাল থেকে। মেজাজ খারাপ হয়ে যাচ্ছে তার। ছেলেটার কোন টাইমটেবল আছে! সবসময় দেরী করে। যদি না আসে! টিকিটটা অবশ্য গতকালই এসে দিয়ে গেছে। কিন্তু তারপরও একা এতটা পথ! দুশ্চিন্তায় রীতিমত হাত পা কাঁপছে তার। ষ্টেশনে পৌঁছে ওয়েটিং রুম, প্ল্যাটফর্ম সব আঁতিপাঁতি করে খুঁজল। নাহ, কোথাও নেই। এখন কি হবে? এখন ফিরেও যাবে না সে! ট্রেন ছাড়তে আর মাত্র পাঁচ মিনিট বাকী। টিকিট দেখে নির্দিষ্ট বগিতে উঠে পড়ল প্রিয়া। সীট নং ১০,১১। সীটের কাছাকাছি জেতেই থমকে গেল প্রিয়া। কে যেন বসে আছে ওখানে। আরেকটু কাছে গিয়ে যখন বুঝতে পারল, রাগে চারপাশ যেন অন্ধকার হয়ে এল। সীটে মাথা নিচু করে বসে আছে তওসিফ! মানে কি এসবের! কঠিন একটা ঝাড়ি দেয়ার সিদ্ধান্ত নিল মনে মনে। বেশ রাগত স্বরেই ডাকল, “তওসিফ!!” শূন্য দৃষ্টিতে প্রিয়ার দিকে এক পলক তাকিয়েই আবার মাথা নিচু করে ফেলল সে। সে দৃষ্টিতে কিছু একটা ছিল, প্রিয়া বুঝল সে ফান করছে না। একটু নরম হল প্রিয়া। ঃকি হয়েছে তওসিফ? কোন সমস্যা? ঃ হু? অসুখ টসুখ বাঁধিয়েছে কিনা কে জানে, কাল তো ঠিকই ছিল! তার কপালে হাত রাখল প্রিয়া, নাহ, জ্বর নেই, বরং শরীরটা যেন একটু ঠাণ্ডা! “তোমার শরীর ঠিক আছে?” উদ্বিগ্ন কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল প্রিয়া “শরীর? হু... ঠিক আছে।” ঘোলা স্বরে জবাব দিল তওসিফ। “কি হয়েছে তোমার? সকাল থেকে ফোন ধরোনি কেন?” জানতে চাইল প্রিয়া। “ও ফোন! কি জানি?” একঘেয়ে সুরে বলল তওসিফ। কি হল ছেলেটার? কোন সমস্যা হয়েছে? বলছেনা কেন? এমনিতে হাসি তামাশায় তার জুড়ি মেলা ভার। কিন্তু এখন কি হল? নাকি প্রিয়ার চাপাচাপিতে বিরক্ত সে, রাগ করেছে! তওসিফকে আর না ঘাঁটানোর সিদ্ধান্ত নিল প্রিয়া। এই পরিস্থিতিতে ওর পাশে আর কেউ নেই। ‘অন্ধের ষষ্ঠী’ শব্দটা বোধহয় ব্যাকরণ বই হতে উঠে এসে ওর পাশে বসে আছে! মনে মনে সৃষ্টিকর্তাকে ধন্যবাদ দিল সে, অন্তত একা একা যেতে হচ্ছে না। আর ওখানে ওর কাছে পৌঁছে গেলে আর কাউকে দরকার নেই! তারপরও পুরো পথ এটা ওটা নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করল প্রিয়া, চুপচাপ কতক্ষণ বসে থাকা যায়? কিন্তু ওই হু হাঁ করেই জবাব দিল তওসিফ, আলোচনা বেশিদূর এগুলো না। কোথায় যেতে হবে তার ঠিকানা দিল প্রিয়া, এক নজর তাকিয়েই তা পকেটে পুরে ফেলল তওসিফ, ভাল করে দেখলও না। হালকা রাগ লাগছে প্রিয়ার, না আসলে না আসত, এত ভাব দেখানোর কি আছে? কিন্তু মুখে কিছু বলল না। ট্রেন ঢাকায় পৌঁছাল দুপুর দু’টায়। ট্রেন থেকে নেমেই হন হন করে হাঁটা শুরু করল তওসিফ। তার পিছু নিতে রীতিমত দৌড়াতে হচ্ছে প্রিয়াকে। কি যন্ত্রণা! ষ্টেশন থেকে বেরিয়ে দেখল একটা ট্যাক্সি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তওসিফ। ট্যাক্সিতে ওঠার আগে প্রিয়া কিছু ফুল নিয়ে নিল ওর জন্য, যার জন্য এতদূর আসা। ফুল দেখে গলে না, এমন পাথর কমই আছে! একটা ছ’তলা বাড়ীর সামনে এসে থামল ট্যাক্সি। তওসিফের দিকে তাকিয়ে অবাক হচ্ছিল প্রিয়া, ঠিকানাটা ভাল করে দেখেওনি সে, কিন্তু ড্রাইভারকে এমনভাবে নির্দেশনা দিচ্ছিল যেন বহুদিনের চেনা সব! ট্যাক্সি থেকে নেমে তওসিফ বলল। “সোজা চারতলায়, B4 flat, best of luck.” মুখে একটা ক্ষীণ হাসির রেখা ফুটে উঠতেই মিলিয়ে গেল। মনে হল যেন বেদনার হাসি! প্রিয়াকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে উল্টো দিকে ঘুরে হাঁটতে শুরু করল সে। একটা দীর্ঘশ্বাস চেপে চারতলায় উঠে এল প্রিয়া। ডোরবেল বাজাল সে। দরজা খুলে গেল। ওপাশে ও দাঁড়িয়ে। প্রিয়াকে দেখে বিস্ময়ের চূড়ান্ত, “তুমি!!!” ফুলগুলো বাড়িয়ে ধরে প্রিয়া ঠোঁট ফুলালো, “তুমি আমার ফোন না ধরলে আমি কি করব?” ফুল না নিয়ে প্রিয়ার হাত চেপে সোজা নিজের রুমে নিয়ে এল সে, “তোমার না পরীক্ষা চলছে?” ঃ পরীক্ষা দেব না। তোমার সাথে থাকব! ঃ শোন, পাগলামি কোরো না। রাতেই আমি তোমাকে দিয়ে আসব। ঃ তাহলে তোমাকে প্রমিজ করতে হবে, সবসময় আমার ফোন রিসিভ করবে। ঃপ্রমিজ ঃ সবসময় আমার মেসেজ রিপ্লাই দেবে। ঃ প্রমিজ ঃআমার উপর রাগ করলেও কম রাগ করবে , বেশি রাগ করতে পারবে না। ঃপ্রমিজ ঃআর শোন… ঃহু!! ঃআমি সরি, আমি আর কখনও তোমাকে কিছু নিয়ে চাপাচাপি করবনা, তোমাকে বেশি বিরক্ত করবনা। ঃ ওকে ওকে, এখন রেস্ট নাও। আমি তোমার খাবারের ব্যবস্থা করছি। ছুটে বেরিয়ে গেল সে। মনটা পুরোপুরি ভাল হয়ে গেল প্রিয়ার। বিছানায় আজকের খবরের কাগজ। হাতে নিয়ে উল্টে পাল্টে দেখতে লাগল সে। পেছনের পাতায় একটা খবরে চোখ আটকে গেল তার। ছবির নিচে শিরোনাম, “বাস চাপায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র নিহত” ছবিটার দিকে বিস্ফোরিত নেত্রে চেয়ে রইল সে। ঠাণ্ডা হিমশীতল একটা স্রোত যেন শিরদাঁড়া বেয়ে নিচে নেমে গেল। ছবির মানুষটা তার অতি পরিচিত। ছবিটা ছিল তওসিফের!!! “সত্য ঘটনা অবলম্বনে” লিখা: শেখ তাশরীফ উদ্দিন
Posted on: Mon, 26 Jan 2015 03:10:15 +0000

Trending Topics



Recently Viewed Topics




© 2015